সে কে তাহলে
-নুরনবী সরকার
রংপুর অফিসে পত্রিকার প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত হবে। প্রধান বার্তা সম্পাদক ভাইয়ের ফোন পেলাম অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে হবে। কিন্তু আমার শরীরটা বেশ খারাপ। একদিনে যাওয়া আসা করা আমার পক্ষে সম্ভব ছিলনা। তাই মনস্থির করলাম প্রোগামের একদিন আগে যাবো আর সেদিন থেকে পরেরদিন ফিরব। পরিকল্পনানুযায়ী একদিন আগেই বাড়ি থেকে বের হয়ে পড়লাম। যখন লালমনিরহাটে পৌঁছলাম তখন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা প্রায়। ভাবনা ছিল রাতেই বাসে উঠে রংপুরে চলে যাবো। রংপুরে এক বন্ধুকে ফোন করে জানিয়ে দেয়া শেষ। এদিকে লালমনিরহাটের এক বন্ধু জোরালো ভাবে ধরেছে রাতে যাবার দরকার কি! এখানে রাতটা থেকে সকালের ট্রেন ধরতে। আমি খুব ভালোভাবেই জানি ঘুম থেকে উঠে ছয়টার ট্রেন ধরা আমার পক্ষে সম্ভব না। তাই আমি থাকতে নারাজ। বন্ধু বলল সকালে আমাকে ডেকে তুলে ট্রেন ধরিয়ে দেয়ার দায়িত্ব তার। অবশেষে তার জোরা জুরিতে থাকতেই বাধ্য হলাম। রংপুরের বন্ধুকে ফোন করলাম সকালের ট্রেনে যাবো। তারপর আমি ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে শুয়ে পড়লাম। দুই বন্ধুর মাঝে কথা চলছে অনর্গল। আমাকে অযথা আটকে রাখার কারন জানতে চাইলাম। সে বলল অনেকদিন থেকে দেখা সাক্ষাত নাই। আজকে যেহেতু এসেছি তাই গল্প করার জন্য আটক করেছে। কিন্তু মাথায় একটা কথাই বিরবির করতেছে। প্রোগাম কিছুতেই মিস যেন না হয়। অফিসে ফোন করে জানতে পারলাম প্রোগাম শুরু হবে বিকেল ৪টায়। তখন কিছুটা হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। চিন্তা মুক্ত হলেও সকালেই যেতে হবে। দুজনের মাঝে বিভিন্ন প্রকার আলাপ চলতেছে। বন্ধু তার গালফ্রেন্ড বিষয়ে কথা বলে দুঃখ প্রকাশ করতেছে! মাসখানিক হলো দুজনার ব্রেকাপ হয়েছে। বর্তমানে সে একাকী, খুবই অসহায়ত্ববোধ করে। অবশেষে আমি বুঝতে পারলাম যে এই আজাইরা কষ্টের ভাগাভাগি করতেই আমাকে আটক করেছে। রাত গভীর হয়েছে, দুজন দু বেডে ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুম ভাঙ্গার পর ঘড়িতে দেখি নয়টা বাজে! আমার তো ছয়টার ট্রেনে ওঠার কথা ছিল। পাশের বেডের দিকে তাকিয়ে দেখি আমার বন্ধু তখনও নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। আসলে কথা ছিল সেই আমাকে ডেকে ঘুম ভাঙ্গিয়ে ট্রেনে তুলে দিবে। যাই হোক, ওকে ডেকে তুলে সময় দেখালাম। ও তবুও বলে চিন্তা করেন না ভাই, ১০টায় একটা লোকাল ট্রেন আসবে সেটাতে যাবেন। পরে দুজনে ফ্রেশ হয়ে স্টেশনের দিকে চলতে শুরু করলাম। সময় হয়েছে তবে ট্রেন তখনও আসেনি। তাই স্টেশনেই সকালের নাস্তা সারলাম। ইতোমধ্যে ট্রেন এসেগেছে। ট্রেনে উঠে দেখি কোনো সিট খালি নাই। তাই দরজার পাশে দাড়িয়ে বাইরে তাকাচ্ছি। ট্রেন খুবই ধীর গতিতে ছুটে চলেছে। দরজায় দাড়িয়ে আমি প্রকৃতিকে উপভোগ করতেছি। কিন্তু হটাত আমার সমবয়সী এক যুবক এসে আমার পাশে দাঁড়ালেন। পোশাকটা দেখেই মনে হল হয়ত কোথাও সিকিউরিটির চাকুরী করেন। আমি একপাশে সরে গিয়ে তাকেও দরজায় দাড়ানোর জায়গা করে দিলাম। তারপরে দেখি সে দরজা ধরে বাইরে ঝুলে ঝুলে দোল খাচ্ছে। কিছু বললাম না। শুধু জানতে চাইলাম আপনার বাসা কোথায়। উত্তর দিল দিনাজপুরে। তখন আর কিছু না বলে আমার মতে আমি রইলাম। কিছুক্ষণ পরে বাইরের গ্রামের একটা মেয়েকে টোন করল সে। মনে হল তাকে কিছু বলি। বাইরের দিকে তাকিয়ে দেখি মেয়েটাও হাত নাড়িয়ে সাড়া দিচ্ছে! তখন ভাবলাম যে হয়ত ছেলেটা প্রেম করার জন্যই দিনাজপুর থেকে এসেছে। কিন্তু না আমার ভাবনাগুলো পন্ড করে দিয়ে পরক্ষনেই সে পকেট থেকে কাগজ কলম বের করে বলছে ভাই আপনার টিকিট টা দেখি। বললাম নাই, গাড়িতেই টিকিট নেব বলে উঠেছি। তখন বলল ঠিক আছে ১২টাকা দেন তাহলে। পকেট থেকে ১২টাকাই বের করলাম কিন্তু ১০টাকা নিয়ে চলে গেল অন্যদের কাছে টিকিট চেক করতে। আমি তখন দরজায় একা দাড়িয়ে আছি। বাইরে তাকাচ্ছি. খুবই ভালো লাগতেছিল। সামনে দেখতে পেলাম ৭/৮বছর বয়সী ৪টা ছেলে দাড়িয়ে আছে। তাদের কাছাকাছি যেতেই তারা এলোপাতারিভাবে ঢিল ছুঁড়তে লাগল। আমি দরজায় থাকায় আমাকেও ২টা ঢিল লেগেছিল। তবে নরম মাটির ঢিল হওয়ায় কোনো ব্যথা লাগেনি। মাটি লেগে জামা কাপড়ে দাগ লেগে গেছে। ঝারাঝারি করে মুছে ফেলতে গেলাম তো আরো বেরে যায়। তখন আমার সামনের সীটে বসা এক আপু বললেন এখন পরিষ্কার করার চেষ্টা করলে হবে না ভাইয়া। একটু পরে শুকিয়ে গেলে ঝাড়া দিয়েন পড়ে যাবে। আমার আবার কারো কথায় কান দেয়ার অভ্যাস নাই। তবুও ট্রাই করে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে তাই করতে হয়েছে। স্টেশনে গিয়ে নেমেই দেখি একটা ডানা কাটা পরী দাড়িয়ে আছে। চোখে চোখ পড়াতেই কেন জানি মুচকী একটা হাসি দিল। তার হাসিতে পাগল না হয়ে সোজা চলে গেলাম অটো ষ্ট্যান্ডে। একটা আটোয় উঠে বসে আছি। ট্রেনের সেই আপুটিও এসে আমার অটোটিতেই উঠল। তারপর অনেক কথাই হলো। অটো যখন আমার অফিসের গেটের সামনে আসলো আমি নেমে পড়লাম। গেটেই দাঁড়িয়ে আছি। আটো চলে যাচ্ছে আপুটি বার বার ফিরে তাকাচ্ছে। কিন্তু মিনিটের মধ্যেই অটোটি দুরে কোথাও মিলিয়ে গেল। অফিসে ঢোকার খেয়াল নেই আর। অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। আবার ভাবনা এল, ডানা কাটা পরীটা আমাকে দেখে হাসলো কেন? এমন সময় হটাত পেছন থেকে আমার ঘারে হাত। প্রথমে চমকেই উঠেছিলাম। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি সেই আর কেউ নয়!
রংপুর অফিসে পত্রিকার প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত হবে। প্রধান বার্তা সম্পাদক ভাইয়ের ফোন পেলাম অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে হবে। কিন্তু আমার শরীরটা বেশ খারাপ। একদিনে যাওয়া আসা করা আমার পক্ষে সম্ভব ছিলনা। তাই মনস্থির করলাম প্রোগামের একদিন আগে যাবো আর সেদিন থেকে পরেরদিন ফিরব। পরিকল্পনানুযায়ী একদিন আগেই বাড়ি থেকে বের হয়ে পড়লাম। যখন লালমনিরহাটে পৌঁছলাম তখন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা প্রায়। ভাবনা ছিল রাতেই বাসে উঠে রংপুরে চলে যাবো। রংপুরে এক বন্ধুকে ফোন করে জানিয়ে দেয়া শেষ। এদিকে লালমনিরহাটের এক বন্ধু জোরালো ভাবে ধরেছে রাতে যাবার দরকার কি! এখানে রাতটা থেকে সকালের ট্রেন ধরতে। আমি খুব ভালোভাবেই জানি ঘুম থেকে উঠে ছয়টার ট্রেন ধরা আমার পক্ষে সম্ভব না। তাই আমি থাকতে নারাজ। বন্ধু বলল সকালে আমাকে ডেকে তুলে ট্রেন ধরিয়ে দেয়ার দায়িত্ব তার। অবশেষে তার জোরা জুরিতে থাকতেই বাধ্য হলাম। রংপুরের বন্ধুকে ফোন করলাম সকালের ট্রেনে যাবো। তারপর আমি ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে শুয়ে পড়লাম। দুই বন্ধুর মাঝে কথা চলছে অনর্গল। আমাকে অযথা আটকে রাখার কারন জানতে চাইলাম। সে বলল অনেকদিন থেকে দেখা সাক্ষাত নাই। আজকে যেহেতু এসেছি তাই গল্প করার জন্য আটক করেছে। কিন্তু মাথায় একটা কথাই বিরবির করতেছে। প্রোগাম কিছুতেই মিস যেন না হয়। অফিসে ফোন করে জানতে পারলাম প্রোগাম শুরু হবে বিকেল ৪টায়। তখন কিছুটা হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। চিন্তা মুক্ত হলেও সকালেই যেতে হবে। দুজনের মাঝে বিভিন্ন প্রকার আলাপ চলতেছে। বন্ধু তার গালফ্রেন্ড বিষয়ে কথা বলে দুঃখ প্রকাশ করতেছে! মাসখানিক হলো দুজনার ব্রেকাপ হয়েছে। বর্তমানে সে একাকী, খুবই অসহায়ত্ববোধ করে। অবশেষে আমি বুঝতে পারলাম যে এই আজাইরা কষ্টের ভাগাভাগি করতেই আমাকে আটক করেছে। রাত গভীর হয়েছে, দুজন দু বেডে ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুম ভাঙ্গার পর ঘড়িতে দেখি নয়টা বাজে! আমার তো ছয়টার ট্রেনে ওঠার কথা ছিল। পাশের বেডের দিকে তাকিয়ে দেখি আমার বন্ধু তখনও নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। আসলে কথা ছিল সেই আমাকে ডেকে ঘুম ভাঙ্গিয়ে ট্রেনে তুলে দিবে। যাই হোক, ওকে ডেকে তুলে সময় দেখালাম। ও তবুও বলে চিন্তা করেন না ভাই, ১০টায় একটা লোকাল ট্রেন আসবে সেটাতে যাবেন। পরে দুজনে ফ্রেশ হয়ে স্টেশনের দিকে চলতে শুরু করলাম। সময় হয়েছে তবে ট্রেন তখনও আসেনি। তাই স্টেশনেই সকালের নাস্তা সারলাম। ইতোমধ্যে ট্রেন এসেগেছে। ট্রেনে উঠে দেখি কোনো সিট খালি নাই। তাই দরজার পাশে দাড়িয়ে বাইরে তাকাচ্ছি। ট্রেন খুবই ধীর গতিতে ছুটে চলেছে। দরজায় দাড়িয়ে আমি প্রকৃতিকে উপভোগ করতেছি। কিন্তু হটাত আমার সমবয়সী এক যুবক এসে আমার পাশে দাঁড়ালেন। পোশাকটা দেখেই মনে হল হয়ত কোথাও সিকিউরিটির চাকুরী করেন। আমি একপাশে সরে গিয়ে তাকেও দরজায় দাড়ানোর জায়গা করে দিলাম। তারপরে দেখি সে দরজা ধরে বাইরে ঝুলে ঝুলে দোল খাচ্ছে। কিছু বললাম না। শুধু জানতে চাইলাম আপনার বাসা কোথায়। উত্তর দিল দিনাজপুরে। তখন আর কিছু না বলে আমার মতে আমি রইলাম। কিছুক্ষণ পরে বাইরের গ্রামের একটা মেয়েকে টোন করল সে। মনে হল তাকে কিছু বলি। বাইরের দিকে তাকিয়ে দেখি মেয়েটাও হাত নাড়িয়ে সাড়া দিচ্ছে! তখন ভাবলাম যে হয়ত ছেলেটা প্রেম করার জন্যই দিনাজপুর থেকে এসেছে। কিন্তু না আমার ভাবনাগুলো পন্ড করে দিয়ে পরক্ষনেই সে পকেট থেকে কাগজ কলম বের করে বলছে ভাই আপনার টিকিট টা দেখি। বললাম নাই, গাড়িতেই টিকিট নেব বলে উঠেছি। তখন বলল ঠিক আছে ১২টাকা দেন তাহলে। পকেট থেকে ১২টাকাই বের করলাম কিন্তু ১০টাকা নিয়ে চলে গেল অন্যদের কাছে টিকিট চেক করতে। আমি তখন দরজায় একা দাড়িয়ে আছি। বাইরে তাকাচ্ছি. খুবই ভালো লাগতেছিল। সামনে দেখতে পেলাম ৭/৮বছর বয়সী ৪টা ছেলে দাড়িয়ে আছে। তাদের কাছাকাছি যেতেই তারা এলোপাতারিভাবে ঢিল ছুঁড়তে লাগল। আমি দরজায় থাকায় আমাকেও ২টা ঢিল লেগেছিল। তবে নরম মাটির ঢিল হওয়ায় কোনো ব্যথা লাগেনি। মাটি লেগে জামা কাপড়ে দাগ লেগে গেছে। ঝারাঝারি করে মুছে ফেলতে গেলাম তো আরো বেরে যায়। তখন আমার সামনের সীটে বসা এক আপু বললেন এখন পরিষ্কার করার চেষ্টা করলে হবে না ভাইয়া। একটু পরে শুকিয়ে গেলে ঝাড়া দিয়েন পড়ে যাবে। আমার আবার কারো কথায় কান দেয়ার অভ্যাস নাই। তবুও ট্রাই করে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে তাই করতে হয়েছে। স্টেশনে গিয়ে নেমেই দেখি একটা ডানা কাটা পরী দাড়িয়ে আছে। চোখে চোখ পড়াতেই কেন জানি মুচকী একটা হাসি দিল। তার হাসিতে পাগল না হয়ে সোজা চলে গেলাম অটো ষ্ট্যান্ডে। একটা আটোয় উঠে বসে আছি। ট্রেনের সেই আপুটিও এসে আমার অটোটিতেই উঠল। তারপর অনেক কথাই হলো। অটো যখন আমার অফিসের গেটের সামনে আসলো আমি নেমে পড়লাম। গেটেই দাঁড়িয়ে আছি। আটো চলে যাচ্ছে আপুটি বার বার ফিরে তাকাচ্ছে। কিন্তু মিনিটের মধ্যেই অটোটি দুরে কোথাও মিলিয়ে গেল। অফিসে ঢোকার খেয়াল নেই আর। অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। আবার ভাবনা এল, ডানা কাটা পরীটা আমাকে দেখে হাসলো কেন? এমন সময় হটাত পেছন থেকে আমার ঘারে হাত। প্রথমে চমকেই উঠেছিলাম। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি সেই আর কেউ নয়!
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
অধীতি ২৩/০২/২০১৯কি দারুণ লিখেছেন।
-
নাসরীন আক্তার রুবি ১৩/০২/২০১৯বেশ ভালো লাগলো
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ১০/০২/২০১৯কয়েকটি অনুচ্ছেদ রাখলে পড়ে আরও সুখ পেতাম!