www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

প্রিয়ার বিয়ে

"প্রিয়ার বিয়ে"

ছেলেটির নাম তনয়। সে এক মেয়েকে খুব পছন্দ করত। কিন্তু কোনো দিনও মনের কথাগুলো বলা হয়নি তার। মেয়েটিকে প্রথম দেখেছিল ফুলবাড়ী সদরেই। দেখতে ফর্সা না হলেও মেয়েটির টগবগে চেহারাটা একেবারেই মুগ্ধ করে তুলেছিল তনয়কে।

ও... মেয়েটির নাম বলতে একেবারে ভুলেই গেছিলাম, মেয়েটির নাম হচ্ছে হিয়া! হিয়াকে দেখলেই ছেলে সবাই প্রিয়া প্রিয়া করে ডাকত। এতে কিন্তু হিয়া মোটামুটিভাবে ক্ষেপে যেত। যাই হোক, প্রিয়া থাকত হাসপাতাল মোড়ের একটি ভারা বাসায়। পরিবারের সকলে মিলেই থাকত সেখানে। প্রিয়ার গ্রামের বাড়ী ছিল সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে। লেখাপড়ায় খুবই চৌকশ থাকায় বাবা মা প্রিয়াকে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিল শহরের এক নামিদামি হাইস্কুলে। আর সেখান থেকেই এই গল্পের সূচনা।

বাসা থেকে বের হয়ে প্রিয়া বাই-সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাওয়া আসা করত। সেই সুবাদে তনয় বাজারের তিনকোণা মোড়ে অপেক্ষা করত প্রিয়াকে এক নজর দেখার। মাঝে মধ্যে পিছুও নিত। এভাবে বেশ কিছুদিন কেটে যাবার পর প্রিয়ার আর বুঝতে বাকি রইল না। প্রিয়াও এসে তনয়কে না দেখলে এদিক সেদিক কী যেন খোঁজে। এভাবে প্রায় দেড়টা বছর কেটে যাবার পর দুজনার মাঝে একটা ভাবের জন্ম নিয়েছিল। কিন্তু তখনও ভালোবাসার কথাটা বলা হয় নি। ধীরে ধীরে ভালোলাগা আরও গভীরে প্রবেশ করতে লাগল। কানাকানির মাধ্যমে তনয়ের বন্ধু মহলের সকলেই জেনে গেল ব্যাপারটা। প্রিয়ার বাবা মার কানে পৌঁছতেও সময় লাগল না। তনয় যদিও সাহসী ছেলে তবুও মনে ভয়ের সঞ্চার জমাট বাঁধতেছিল। তনয়ের খুব কাছের বন্ধু ইমন মাঝে মধ্যে তনয়কে বিষণ্ণতা দেখে ঘটনা জেনে নেয়। ঘটনা শুনে তনয়ের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে অভয় প্রদান করে। দুজনে বুদ্ধি গুটিয়ে একদিন চিঠি লিখে প্রিয়ার খালাত ভাই ও তনয়ের বন্ধু জনির মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয় প্রিয়ার বাসায়। চিঠিটা গিয়ে প্রিয়ার মায়ের হাতে পড়ায় ঘটনা আর ধামাচাপা থাকল না।

সবকিছু বুঝতে পেরে প্রিয়ার বাবা মা প্রিয়াকে বিয়ে দিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত পাকা করে ফেলে। আবার জনিকেই পাঠিয়ে দেয় তনয়কে ডাকতে। তনয়ের বাসায় এসে জনি খবর দিয়ে যায় সাথে বিয়ের কথাটা আবছা শুনে এসেছে বলে জানায়। তনয় ভাবল কপালটাবুঝি এবার খুলে গেল। এক চিঠিতেই কাজ ওকে! মহা খুশি নিয়ে খবর শোনার আধা ঘন্টার মাঝেই দৌড় দিয়ে উপস্থিত হয় প্রিয়ার বাসায়। কিন্তু না তনয়ের ধারনা ভুল ছিল! ডেকে তাকে শোনিয়ে দিল কিছু ভাষণ আর কড়া শাসন! শেষে প্রিয়ার মা তনয়কে কড়া মেজাজে বলে দিল তোমার বিয়ের বয়স হবার আগেই আমার মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দেব। পরে তনয় আর কোনো যোগাযোগ রাখতে পারল না প্রিয়ার সাথে। ওসব নিয়ে তনয়ের কোনো মাথাব্যাথাও হয় না। হিয়াকে তনয়ের ভালো লেগেছে মাত্র ভালোবাসাটা গভীরে প্রবেশ করেনি।

সাড়ে পাঁচ বছর কেটে যাবার পর এক ভদ্রলোক তনয়কে এসে জানালো, তোমার প্রিয়ার বিয়ে হতে চলছে। ওর বাবা একটা বাবরি চুলওয়ালা ছোঁকড়ার সাথে বিয়ে ঠিক করে রেখেছে। বিয়ের দিন তারিখটা ঠিক জানাতে পারল না। শুনেই তনয়ের কানে একটা কথা বাজতে লাগল। তনয়ের বিয়ের বয়স হবার আগেই প্রিয়াকে বিয়ে দেয়া হবে! বিষণ্ণ মন নিয়ে নিকোটিনের ধোঁয়া উড়াতে উড়াতে বাসায় ফিরছে তনয়। বাসায় ফিরে দেখল অচেনা লোকের আগমন। কথা শেষে জানতে পারল তারা তাকে বর হিসেবে দেখতে এসেছে। তনয়কে তাদের পরিবারের সকলের পছন্দ হয়েছে। তাই তনয়কে জামাই বানাতে চায়। তনয় একেবারেই সম্মতি দিলনা, তবুও মনের বিষণ্ণতা কেটে গেল। প্রিয়ার মায়ের বকুনি আর কানে বাজবে না। তনয়ের মনে একটা প্রতিজ্ঞার ধ্বনি তার প্রিয়াকে না পেলে চিরকুমার থাকবে।

কিন্তু লোকটি চলে যাবার পর হটাৎ প্রিয়ার ফোন। রিসিভ করেই শুনতে পেল; তনয় আমি বাসায় বলে দিয়েছি, তোমাকে ছাড়া বাঁচব না। তাই আজ আমার খালু তোমার বাসায় গেছে আমাদের দুজনার বিয়ের ব্যাপারে কথা বলে আসতে। শুনেই তনয়ের বুকে ব্যাথা অনুভব হতে লাগল। কষ্টে মুখ দিয়ে আর কোনো কথাই বলতে পারল না। ফোনটা কেটে দিল। আত্মহত্যা করার জন্য প্রস্তুতি নিল। আত্মহত্যা মহাপাপ জেনে বিবেকে বাধা দিল। তারপর থেকেই সংসার জীবন ছেড়ে দিয়ে চিরকুমার থাকার স্বপ্ন নিয়ে, পাগলের মতো আজো ঘুরে বেড়াচ্ছে বনে বাদারে।

[বি.দ্র: এটি সম্পূর্ণ #কাল্পনিক, এর সাথে #বাস্তবতার কোন মিল নেই। কোনো অংশ কারও জীবনের সাথে মিলে গেলে অনিচ্ছাকৃত ত্রুটির কারণে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি]

#লেখকঃ #nurnobifulkuri
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৭৯৩ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২২/০২/২০১৮

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • নীল-অভিজিৎ ০৭/০৩/২০১৮
    বাঃ দারুণ
  • nice
  • আরো গুছালো লেখা চাই।নিঃসন্দেহে ভাল লিখেছেন।
 
Quantcast