www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

নির্যাতনের শেষ কোথায়

নির্যাতন, দমন, পীড়ন এসব নতুন কোনো কথা নয়। অনেক আগে থেকেই এসব আমাদের সকলের জানা। সকালে ঘুম থেকে উঠেই কানে বেজে ওঠে এসবের করুণ সুর। পত্র পত্রিকার পাতা খুলতেই চোখে ভেসে ওঠে এসবের নানান খবর। শারীরিক নির্যাতন, মানসিক নির্যাতন, শিশু-কিশোর নির্যাতন, নারী নির্যাতন আরও কত কি। একেকটা নির্যাতনের মডেলও কিন্তু একেক রকম। এসব শুনতে শুনতে কান একেবারেই তালা লেগে যায়, দেখতে দেখতে চোখ একেবারেই বন্ধ হয়ে আসে। সত্যিই তখন খুব খারাপ লাগে যখন সবকিছুই বুঝে ওঠার পরও কিছু করার থাকেনা। নির্বাক দর্শকের মতো দাঁড়িয়ে থেকে নিঃশ্চুপ সব সয়ে নিতে হয়। বড় আশ্চর্যবোধ হয় এই ভেবে যে, মানুষ আজও মানুষকে ভয় করে। মানুষের ভয়ে মানুষ প্রতিবাদ করতে ভুলে যায়। আবার মানুষই এসে পাশে ভীড়ায়। আমরা কী এক আজব জাতের প্রাণী। আমাদের দ্বারা সবকিছুই সম্ভব। আবার সামান্যতম প্রতিবাদ করার ক্ষমতাটুকুও আমাদের মাঝে নেই। কিছুই করতে না পেরে দোষ দেই গিয়ে নিয়তিকে। আমার জানা এমনই একটি ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরন দিচ্ছি; মেয়েটির নাম ছামিনা(ছদ্মনাম)। বাড়ী শিমুলবাড়ীতে। ছামিনা গরীব ঘরের সন্তান হওয়ায় লেখাপড়া করতে পারে নি। স্বল্প আয়ের পরিবারে সদস্য সংখ্যা বেশী থাকায় অল্প বয়সেই বাবা মায়ের কাঁধের বোঝা হয়ে ওঠে ছামিনা। পঞ্চম শ্রেনীর ছাত্রী থাকা অবস্থায় তার বিয়ে হয়ে যায়। বাবার বাড়ী থেকে মাত্র তিন সারে তিন কিলোমিটার দূরেই স্বামীর বাড়ী। এত কম বয়সে সংসারের কি আর বুঝবে মেয়েটি। তবুও তার চিন্তা, তারও একদিন সন্তান হবে। তাকে মা মা করে ডাকবে। সন্তানকে সে বড় করে তুলতে পারবে কি? সন্তানকে লেখাপড়া করিয়ে উচ্চ শিক্ষিত করে তুলতে পারবে কি? ছোট্ট ছামিনার মাথায় এসব চেতনা সারা বেলা শুধু ঢেউ খেলে যায়। সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে অর্থ জমাতে শুরু করে সে। এভাবে বছর দু’য়েক কেটে যাবার পর সে অন্তঃসত্তা হয়ে গেল। তার মাথায় চিন্তা আরও বাড়তে লাগল। সে মনে মনে সিদ্ধান্ত গ্রহন করল দু’টো মুরগি কিনে পালন করা শুরু করবে। স্কুলের বইয়েতে সে পড়েছে, আজও তার মনে আছে সেই পড়ার কথা; মুরগি পালন করে অনেক লাভবান হতে পারবে সে। এতে সাংসারিক চাহিদাও মেটাতে পারবে। তার এই সিদ্ধান্তটা স্বামীকে একবার জানানো উচিত। রাতে খাওয়া-দাওয়া সেরে শুয়ে স্বামীর সাথে পরামর্শ করবে সে। রাতে যখন স্বামীকে বলল কথাটা, তুলকালাম বেঁধে গেল সাথে সাথে। স্বামী প্রচন্ড রেগে বলে উঠল আমার সংসারে থেকে তুমি টাকা কোথায় পাও! সংসারের যা কিছু আছে তার সবই আমার। কোনো মুরগি কেনা হবে না, যা টাকা আছে তা আমায় দিয়ে দাও। স্বামীর কথায় দ্বিমত পোষণ করায় সেই পাষন্ড স্বামী হাতের নাগালে থাকা লোহার রড দিয়ে এলোপাতারিভাবে মারধর শুরু করে। এবং স্বীকে তালাক দেয়ারও বন্দোবস্ত ঠিক করে ফেলে। ছামিনার বাবা মা সকালে সংবাদ পেয়ে ছামিনাকে নিয়ে আসে এবং হাসপাতালে ভর্তি করায়। থানায় মামলা দিতে গিয়েও নানান বাধার সম্মূখীন হয়ে ফিওে আসতে হয়েছে ছামিনা ও তার বাবা মাকে। তারা নিজেও জানেনা কোথায় গিয়ে তারা বিচার চাবে। কার কাছে গেলে তারা সুবিচার পাবে। তাদের আশ^স্ত করার মত কোনো লোক নেই। পরে গ্রামের মোড়লদের খপ্পরে পরে আপোষ মিমাংসা করে আবার সংসারমুখী হয়ে ওঠে ছামিনা। তবে সুক্ষ বিচারের দেখা মেলেনি। শুধু ছামিনাই নয়, এরকম হাজারো ছামিনা আজ পরাধীনতার শিকার। অনেকেই অবহেলিত হয়ে পড়ে আছে গ্রামের এক কোণে। আমরা কেউই তাদের খবর রাখি না বা রাখতে পারি না। রাখবই বা কি করে? আমরা প্রত্যেকেই তো নিজের বানিজ্য নিয়ে ব্যাস্ত। কি হবে এই ছামিনাদের এসব নিয়ে ভাবার সময় কারও হয় না। নারী ক্ষমতায়নের লক্ষে কত এনজিও, কত সংস্থা, কত সোসাইটি নিরলসভাবে তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছে। কাজের কাম কিছুই নেই! সমাজের নারীরা আজও কেন এত হেয় প্রতিপন্ন। নারীদের এই দুঃখ দুর্দশা কবে ঘুঁচবে।
বিষয়শ্রেণী: সমসাময়িক
ব্লগটি ৬৭৯ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২১/০২/২০১৮

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

 
Quantcast