যাই হোক আমেরিকা মহান জয় আমেরিকা
জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকান্ডের বিচার হতে যাচ্ছে, খুবেই খুশি এবং স্বস্তির বিষয়। অন্যায়ের শাস্তি হওয়া এবং নির্যাতিতের সঠিক বিচার পাওয়া, ন্যায় তো এইকথাই বলে। শুধু তাই নয়, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বাইডেন স্যার হাঁটুগেড়ে ফ্লয়েডের পরিবারের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন, অভিযুক্ত পুলিশের বউ পুলিশের কপালে লাথি দিয়ে তাকে ডিভোর্স দিয়ে চলে গেছেন এইরকম আরও অনেক মহান কর্মকান্ড ফ্লয়েড হত্যার পরে সংঘটিত হয়েছে। ভাগ্য ভালো ফ্লয়েড হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছিল, নাহলে আমেরিকা যে মহান তা প্রমান করার জন্য এতগুলো কাজ সমাধা করা সম্ভব হত না। এবং আমরা আনন্দে আহ্লাদিত হয়ে বলতে পারতাম না, যাই হোক না কেন আমেরিকা কিন্ত মহান।
প্রশ্ন হল আমেরিকা মহান এইটা সরাসরি না বলে আমাদের কেন বলতে হচ্ছে যাই হোক না কেন আমেরিকা মহান।সেই অর্থনীতির সূত্রের মত ইফ আদার থিংস রিমাইনিং দ্যা সেম।
তাহলে যাই হোক না কেন বলতে আসলে কি বুঝাচ্ছি আমরা। যাই হোক বলতে আসলে কি হচ্ছে সেখানে।আমরা কি বলতে চাচ্ছি যে, আসলে সেখানে ভয়াবহভাবে দক্ষিণপন্থিদের উত্থান হয়েছে। যারা ইহুদিদের কোলে নিযে মধ্যপ্রাচ্যের দখলের রাজনীতি করলেও তারা মনে করে যে হিটলার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যা করেছিল তা ঠিক ছিল। তারা মনে করে যে কৃষ্ঞাঙ্গদের আসলে দাস হিসেবেই থাকা উচিৎ এবং প্রতিদিনই কোন না কোন রাজ্যে পুলিশের গুলিতে কৃষ্ণাঙ্গ নিহত হচ্ছে বা পুলিশের দ্বারা নির্যাতিত হচ্ছে। সেখানে শুধু মুসলিম না বর্তমানে এশিয়ানদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ এত চরমে যে আত্মরক্ষার জন্য এশিয়নরা মার্শাল আর্ট শিখছে। সেখানে সবার হাতে হাতে অস্ত্র। কেউ যদি কাউরে তার নিরাত্তার জন্য হুমকি মনে করে তবে আইনত গুলি করতে পারে।
সেই জাপানিজ যুবকের কথা মনে নেই আপনাদের, যে দাওয়াত খেতে গিয়েছিল এক আমেরিকানের বাড়িতে। কিন্তু বেচারা ভুল করে চলে গিয়েছে অন্য বাড়িতে।বাড়ির মালিক অপরিচিত লোক দেখে বন্দুক নিয়ে দরজা খুলে প্রশ্ণ করেছে, এখানে কি জন্য এসেছে? ভোলাভালা জাপানি জানে না ইংরেজি। উত্তর দিতে পারে নাই। বাড়ির মালিক গুলি করে মেরে ফেলেছে সেই জাপানি যুবককে। আমার দেশে অনেক ধরনের অন্যায় হয়, অনেক ধরনের সমস্যা আছে তবু এত সমস্যার এই দেশেও তো ভুল করে অন্য বাড়িতে যাওয়ার কারনে কেউ কাউকে গুলি করে মেরেছে এই নজির নাই। মহান আমেরিকায় এই ধরনের ঘটনা ভুরিভুরি আছে।
সেখানে স্কুলের বাচ্চারাও বন্দুক কিনতে পারে এবং সেই বন্দুক নিয়ে পরিবার এবং স্কুল কলেজের বন্ধুবান্ধবকে গুলি করে মেরে ফেলতে পারে।
আমেরিকায় নারী স্বাধীনতা তুঙ্গে। তবে সেখানে বেশিরভাগ কলেজের মেয়েদের সর্বোচ্চ স্বপ্ন চিয়ার গার্ল হওয়া। পাশাপাশি ভাল এবং টাকাওয়ালা স্বামী ধরা (হুমায়ুন আহমেদের ভ্রমণ কাহিনী পড়ুন)। এইরকম আরও দারুন দারুন আভ্যন্তরীন ঘটনা আমেরিকায় সংঘটিত হয়।
এটা তো শুধু আমেরিকার ভেতরের ঘটনা বাইরে। সেসব ঘটনা লিখতে গেলে কয়েক খন্ডে আমেরিকার গুনগান করতে হবে। শুধু কয়েকটি কথা বলি এই প্রেক্ষিতে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট স্যার বুশ স্বপ্নে দেখলেন সাদ্দাম সাহেব তেলের টাংকির ভেতর বোমা বানিয়ে জড়ো করে ফেলছে। ব্যাস উনি ইরাকে-কে বোমামুক্ত এবং ইরাকি জনগনকে শয়তান সাদ্দামের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য রক্ষাকর্তার ভূমিকায় অবতীর্ন হলেন। ইরাকি জনগনও তাদের রক্ষাকর্তার বদৌলতে বর্তমানে নরক যন্ত্রনা ভোগ করছে।
আরব বসন্তের কথা মনে নাই। আমেরিকা আরবকে বসন্ত গিফ্ট করল।ব্যস আমরা নেচে কুদে অস্থির। তারপর কই গেল আরব বসন্ত? আমরা আরব বসন্ত নিয়ে আর কথা বলি না, কারন আরব বসন্ত শুধুমাত্র মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের শ্রমিক কমে যাওয়া ছাড়া আমাদের জীবনে অত বেশি প্রভাব ফেলেনি। কিন্তু আরব বসন্তের ফলে মধ্যপ্রাচ্যের কত মানুষ নিহত হয়েছে, কত মানুষ পঙ্গু হয়েছে, কত নারী নির্যাতিত হয়েছে, কত শিশু পরিবারহীন হয়েছে, কত মানুষ ঘর এবং দেশ হারিয়ে শরনার্থী হয়েছে তার সঠিক হিসাব আমরা জানি না। তাছাড়া আইএস এর যে উত্থান তার ভিত্তিও তো আরব বসন্তই গড়ে দিয়েছে। জয় আরব বসন্ত জয় আমেরিকা।
তালেবান আসল কই থেকে। সোভিয়েত ইউনিয়নের হাত থেকে আফগানিস্তান কেড়ে নেয়ার জন্য একসময় আমেরিকায় তালেবান মুজাহিদীন গড়েছিল। সেই তালেবান দমনের জন্য এবং তালেবান থেকে আফগানবাসীকে মুক্তি দেয়ার জন্য ২০০১ সালের পর আমেরিকা তাদের সৌন্য পাঠিয়েছিল আফগানিস্তানে । বিশ বছর পর আফগানিস্তানে আমেরিকার অভিযান ব্যর্থ। সেখানে তালেবান দমন তো হয়ইনি, বরং তালেবানদের প্রতাপ বেড়েছে। এই বিশ বছরে তালেবান এবং আমেরিকাসহ অন্যান্য বাহিনীর হামলাম ষাট হাজারের উপরে নিরীহ আফগান নিহত হয়েছে, জনজীবন বিপর্যস্ত হয়েছে। এখন তালেবানের মুখে আফগানিস্তানের সাধারণ মানুষকে ফেলে রেখে আমেরিকা তাদের সব সৌন্য প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। ইতিমধ্যেই তালবানের দাবির মুখে আফগান সরকার বারো বছরের বেশি বয়সই মেয়েদের গান গাওয়া নিষিদ্ধ ঘোষনা করেছে। আফগানিস্তানের মানুষকে, নারীকে, শিশুকে এগিয়ে নেয়ার জন্য আমেরিকা এসেছিল, তাদেরকে আরও কত বছর পিছিয়ে দিয়ে আমেরিকা চলে যাচ্ছে তা আসলে ভবিষ্যতে বোঝা যাবে।
এরকম মহান আমেরিকার কত কত গল্প পৃথিবীতে সৃষ্টি হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও হবে। আমেরিকার আবিষ্কারক (?) কলম্বাসের নোট বইয়ে তার স্বহস্তে লিখিত নোটের খানিকটা বর্ননা দিয়ে আমার এই লেখার ইতি টানব। বিখ্যাত লেখক এবং ইতিহাসবিদ হাওয়ার্ড জিন কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কারের ৫০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে “কলম্বাস: অন্য চোখে” (অনুবাদ:শাহাদুজ্জামান) নামে একটি লেখা লিখেছিলেন। সেখানেই এই নোটবুকের কথা উল্লেখ আছে।হাওয়ার্ড জিন তার নিবন্ধে লিখেছেন-
কলম্বাস নোটবুকে সেসময়ে তার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা লিখে রেখেছেন। তিনি বর্ণনা করেছেন বাহামা দ্বীপে পেীছানোর পর কিভাবে আরোয়াক অধিবাসীরা তাদের অভ্যর্থনা জানিয়েছিল। আরোয়াকরা কলম্বাসের জন্য নানারকম উপহার এনেছিল। কলম্বাসের মনে হয়েছিল আরোয়াকরা খুবই ভদ্র এবং শান্তিপ্রিয় মানুষ। কলম্বাস লিখেছিলেন-তাদের হাতে কোন অস্ত্র নেই, অস্ত্র তারা চেনে না। আমি যখন ওদের হাতে একটি তলোয়ার তুলে দিলাম, ওরা তলোয়ারের ধার করা দিকটাতেই ধরল আর হাত কেটে একাকার করে ফেলল।। পুরো নোট জুড়ে কলম্বাস আদিবাসীদের গুনকীর্তনই করেছেন। কলম্বাস লিখেছেন-আমার মনে হয় এরাই হচ্ছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ এবং সবচেয়ে ভদ্র। অপরাধ, অন্যায়, পাপ এরা জানে না। এদের মধ্যে চুক্তি বা খুনের কোন ঘটনা ঘটে না। প্রতিবেশিকে এরা নিজের মতো ভালবাসে। এরা সবসময় মধুর ভাষায় কথা বলে আর আমি লক্ষ করি ওরা সবসয়ই হাসছে।এই আদিবাসীরা খুব সরল আর সৎ এবং নিজেদের সম্পত্তি অন্যদের দিয়ে দেয়ার ব্যাপারে এরা খুবই উদার।
আসল চমক হল এর পরেই
এরপরই কলম্বাস লিখেছেন-হ্যাঁ এরা দাস হিসেবে হচ্ছে খুবই চমৎকার। এদের সবাইকে বশে আনার জন্য আমাদের জনা পঞ্চাশেক মানুষই যথেষ্ট।
আমেরিকার ইতিহাস বইয়ে লেখা আছে যে কলম্বাস সেখানে গিয়েছিল খ্রিষ্টধর্ম প্রচারের জন্য। সেকথা আংশিক সত্য। আসলে সে সেখানে গিয়েছিল সোনার লোভে। সেখানে তারা ক্রসচিহ্ন বসিয়েছে ঠিকই কিন্তু অগনিত ফাঁসির মঞ্চও বসিয়েছে। ১৫০০ খ্রিষ্টব্দে ঐ দ্বিপগুলোতে সব মিলিয়ে কলম্বাসের বসানো ফাঁসির মঞ্চ ছিল ৩৪০ টি। একদিকে ফাঁসির মঞ্চ অন্যদিকে ক্রস, ইতিহাসের কি অদ্ভুত সমাপাতন।
আসলে বর্তমান আমেরিকা ৫০০ বছর আগের তাদের মহান আবিষ্কারক কলম্বাসের দেখানো পথ থেকে একচুলও সরে আসেনি। তারা যখন কোথাও যায় তাদের মুখোশ থাকে শান্তি বা উদ্ধারের বার্তা, আর লুকানো থাকে বোমা, অস্ত্র আর গোলাবরুদ। তারা কোন দেশের দিকে যখন তাকায় তখন দুইটি উদ্যেশ্য থাকে একটি রাজনৈতিক কর্তৃত্ব কায়েম করা অর্থাৎ সেই জাতিকে দাসে পরিনত করা আর দুই নম্বর সেখানকার সম্পদ দখল করা। তারপর যখন সেই যায়গা ছিবড়ে হয়ে যায় তখন সেখান থেকে চলে এসে ভুল স্বিকার করে সমস্ত পাপ মোচন করে নেয়। পড়ে থাকে সেই ভূখন্ডের মানুষের আহাজারি আর আর্তি। এবং তখন আমাদের মধ্যে তাদের গনতন্ত্র আর মানবিকতা বাহবা দেয়ার ধুম পড়ে যায়। আমরা বলি যাই হোক না কেন আমেরিকা মহান।
আমিও বলতে চাই যাই হোকনা কেন ফ্লয়েডকে হত্যা করার পরও ফ্লয়েডের সামনে হাঁটুগেড়ে বাইডেন যেহেতু ক্ষমা চেয়েছেন সুতরাং আমেরিকা মহান।
প্রশ্ন হল আমেরিকা মহান এইটা সরাসরি না বলে আমাদের কেন বলতে হচ্ছে যাই হোক না কেন আমেরিকা মহান।সেই অর্থনীতির সূত্রের মত ইফ আদার থিংস রিমাইনিং দ্যা সেম।
তাহলে যাই হোক না কেন বলতে আসলে কি বুঝাচ্ছি আমরা। যাই হোক বলতে আসলে কি হচ্ছে সেখানে।আমরা কি বলতে চাচ্ছি যে, আসলে সেখানে ভয়াবহভাবে দক্ষিণপন্থিদের উত্থান হয়েছে। যারা ইহুদিদের কোলে নিযে মধ্যপ্রাচ্যের দখলের রাজনীতি করলেও তারা মনে করে যে হিটলার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যা করেছিল তা ঠিক ছিল। তারা মনে করে যে কৃষ্ঞাঙ্গদের আসলে দাস হিসেবেই থাকা উচিৎ এবং প্রতিদিনই কোন না কোন রাজ্যে পুলিশের গুলিতে কৃষ্ণাঙ্গ নিহত হচ্ছে বা পুলিশের দ্বারা নির্যাতিত হচ্ছে। সেখানে শুধু মুসলিম না বর্তমানে এশিয়ানদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ এত চরমে যে আত্মরক্ষার জন্য এশিয়নরা মার্শাল আর্ট শিখছে। সেখানে সবার হাতে হাতে অস্ত্র। কেউ যদি কাউরে তার নিরাত্তার জন্য হুমকি মনে করে তবে আইনত গুলি করতে পারে।
সেই জাপানিজ যুবকের কথা মনে নেই আপনাদের, যে দাওয়াত খেতে গিয়েছিল এক আমেরিকানের বাড়িতে। কিন্তু বেচারা ভুল করে চলে গিয়েছে অন্য বাড়িতে।বাড়ির মালিক অপরিচিত লোক দেখে বন্দুক নিয়ে দরজা খুলে প্রশ্ণ করেছে, এখানে কি জন্য এসেছে? ভোলাভালা জাপানি জানে না ইংরেজি। উত্তর দিতে পারে নাই। বাড়ির মালিক গুলি করে মেরে ফেলেছে সেই জাপানি যুবককে। আমার দেশে অনেক ধরনের অন্যায় হয়, অনেক ধরনের সমস্যা আছে তবু এত সমস্যার এই দেশেও তো ভুল করে অন্য বাড়িতে যাওয়ার কারনে কেউ কাউকে গুলি করে মেরেছে এই নজির নাই। মহান আমেরিকায় এই ধরনের ঘটনা ভুরিভুরি আছে।
সেখানে স্কুলের বাচ্চারাও বন্দুক কিনতে পারে এবং সেই বন্দুক নিয়ে পরিবার এবং স্কুল কলেজের বন্ধুবান্ধবকে গুলি করে মেরে ফেলতে পারে।
আমেরিকায় নারী স্বাধীনতা তুঙ্গে। তবে সেখানে বেশিরভাগ কলেজের মেয়েদের সর্বোচ্চ স্বপ্ন চিয়ার গার্ল হওয়া। পাশাপাশি ভাল এবং টাকাওয়ালা স্বামী ধরা (হুমায়ুন আহমেদের ভ্রমণ কাহিনী পড়ুন)। এইরকম আরও দারুন দারুন আভ্যন্তরীন ঘটনা আমেরিকায় সংঘটিত হয়।
এটা তো শুধু আমেরিকার ভেতরের ঘটনা বাইরে। সেসব ঘটনা লিখতে গেলে কয়েক খন্ডে আমেরিকার গুনগান করতে হবে। শুধু কয়েকটি কথা বলি এই প্রেক্ষিতে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট স্যার বুশ স্বপ্নে দেখলেন সাদ্দাম সাহেব তেলের টাংকির ভেতর বোমা বানিয়ে জড়ো করে ফেলছে। ব্যাস উনি ইরাকে-কে বোমামুক্ত এবং ইরাকি জনগনকে শয়তান সাদ্দামের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য রক্ষাকর্তার ভূমিকায় অবতীর্ন হলেন। ইরাকি জনগনও তাদের রক্ষাকর্তার বদৌলতে বর্তমানে নরক যন্ত্রনা ভোগ করছে।
আরব বসন্তের কথা মনে নাই। আমেরিকা আরবকে বসন্ত গিফ্ট করল।ব্যস আমরা নেচে কুদে অস্থির। তারপর কই গেল আরব বসন্ত? আমরা আরব বসন্ত নিয়ে আর কথা বলি না, কারন আরব বসন্ত শুধুমাত্র মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের শ্রমিক কমে যাওয়া ছাড়া আমাদের জীবনে অত বেশি প্রভাব ফেলেনি। কিন্তু আরব বসন্তের ফলে মধ্যপ্রাচ্যের কত মানুষ নিহত হয়েছে, কত মানুষ পঙ্গু হয়েছে, কত নারী নির্যাতিত হয়েছে, কত শিশু পরিবারহীন হয়েছে, কত মানুষ ঘর এবং দেশ হারিয়ে শরনার্থী হয়েছে তার সঠিক হিসাব আমরা জানি না। তাছাড়া আইএস এর যে উত্থান তার ভিত্তিও তো আরব বসন্তই গড়ে দিয়েছে। জয় আরব বসন্ত জয় আমেরিকা।
তালেবান আসল কই থেকে। সোভিয়েত ইউনিয়নের হাত থেকে আফগানিস্তান কেড়ে নেয়ার জন্য একসময় আমেরিকায় তালেবান মুজাহিদীন গড়েছিল। সেই তালেবান দমনের জন্য এবং তালেবান থেকে আফগানবাসীকে মুক্তি দেয়ার জন্য ২০০১ সালের পর আমেরিকা তাদের সৌন্য পাঠিয়েছিল আফগানিস্তানে । বিশ বছর পর আফগানিস্তানে আমেরিকার অভিযান ব্যর্থ। সেখানে তালেবান দমন তো হয়ইনি, বরং তালেবানদের প্রতাপ বেড়েছে। এই বিশ বছরে তালেবান এবং আমেরিকাসহ অন্যান্য বাহিনীর হামলাম ষাট হাজারের উপরে নিরীহ আফগান নিহত হয়েছে, জনজীবন বিপর্যস্ত হয়েছে। এখন তালেবানের মুখে আফগানিস্তানের সাধারণ মানুষকে ফেলে রেখে আমেরিকা তাদের সব সৌন্য প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। ইতিমধ্যেই তালবানের দাবির মুখে আফগান সরকার বারো বছরের বেশি বয়সই মেয়েদের গান গাওয়া নিষিদ্ধ ঘোষনা করেছে। আফগানিস্তানের মানুষকে, নারীকে, শিশুকে এগিয়ে নেয়ার জন্য আমেরিকা এসেছিল, তাদেরকে আরও কত বছর পিছিয়ে দিয়ে আমেরিকা চলে যাচ্ছে তা আসলে ভবিষ্যতে বোঝা যাবে।
এরকম মহান আমেরিকার কত কত গল্প পৃথিবীতে সৃষ্টি হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও হবে। আমেরিকার আবিষ্কারক (?) কলম্বাসের নোট বইয়ে তার স্বহস্তে লিখিত নোটের খানিকটা বর্ননা দিয়ে আমার এই লেখার ইতি টানব। বিখ্যাত লেখক এবং ইতিহাসবিদ হাওয়ার্ড জিন কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কারের ৫০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে “কলম্বাস: অন্য চোখে” (অনুবাদ:শাহাদুজ্জামান) নামে একটি লেখা লিখেছিলেন। সেখানেই এই নোটবুকের কথা উল্লেখ আছে।হাওয়ার্ড জিন তার নিবন্ধে লিখেছেন-
কলম্বাস নোটবুকে সেসময়ে তার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা লিখে রেখেছেন। তিনি বর্ণনা করেছেন বাহামা দ্বীপে পেীছানোর পর কিভাবে আরোয়াক অধিবাসীরা তাদের অভ্যর্থনা জানিয়েছিল। আরোয়াকরা কলম্বাসের জন্য নানারকম উপহার এনেছিল। কলম্বাসের মনে হয়েছিল আরোয়াকরা খুবই ভদ্র এবং শান্তিপ্রিয় মানুষ। কলম্বাস লিখেছিলেন-তাদের হাতে কোন অস্ত্র নেই, অস্ত্র তারা চেনে না। আমি যখন ওদের হাতে একটি তলোয়ার তুলে দিলাম, ওরা তলোয়ারের ধার করা দিকটাতেই ধরল আর হাত কেটে একাকার করে ফেলল।। পুরো নোট জুড়ে কলম্বাস আদিবাসীদের গুনকীর্তনই করেছেন। কলম্বাস লিখেছেন-আমার মনে হয় এরাই হচ্ছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ এবং সবচেয়ে ভদ্র। অপরাধ, অন্যায়, পাপ এরা জানে না। এদের মধ্যে চুক্তি বা খুনের কোন ঘটনা ঘটে না। প্রতিবেশিকে এরা নিজের মতো ভালবাসে। এরা সবসময় মধুর ভাষায় কথা বলে আর আমি লক্ষ করি ওরা সবসয়ই হাসছে।এই আদিবাসীরা খুব সরল আর সৎ এবং নিজেদের সম্পত্তি অন্যদের দিয়ে দেয়ার ব্যাপারে এরা খুবই উদার।
আসল চমক হল এর পরেই
এরপরই কলম্বাস লিখেছেন-হ্যাঁ এরা দাস হিসেবে হচ্ছে খুবই চমৎকার। এদের সবাইকে বশে আনার জন্য আমাদের জনা পঞ্চাশেক মানুষই যথেষ্ট।
আমেরিকার ইতিহাস বইয়ে লেখা আছে যে কলম্বাস সেখানে গিয়েছিল খ্রিষ্টধর্ম প্রচারের জন্য। সেকথা আংশিক সত্য। আসলে সে সেখানে গিয়েছিল সোনার লোভে। সেখানে তারা ক্রসচিহ্ন বসিয়েছে ঠিকই কিন্তু অগনিত ফাঁসির মঞ্চও বসিয়েছে। ১৫০০ খ্রিষ্টব্দে ঐ দ্বিপগুলোতে সব মিলিয়ে কলম্বাসের বসানো ফাঁসির মঞ্চ ছিল ৩৪০ টি। একদিকে ফাঁসির মঞ্চ অন্যদিকে ক্রস, ইতিহাসের কি অদ্ভুত সমাপাতন।
আসলে বর্তমান আমেরিকা ৫০০ বছর আগের তাদের মহান আবিষ্কারক কলম্বাসের দেখানো পথ থেকে একচুলও সরে আসেনি। তারা যখন কোথাও যায় তাদের মুখোশ থাকে শান্তি বা উদ্ধারের বার্তা, আর লুকানো থাকে বোমা, অস্ত্র আর গোলাবরুদ। তারা কোন দেশের দিকে যখন তাকায় তখন দুইটি উদ্যেশ্য থাকে একটি রাজনৈতিক কর্তৃত্ব কায়েম করা অর্থাৎ সেই জাতিকে দাসে পরিনত করা আর দুই নম্বর সেখানকার সম্পদ দখল করা। তারপর যখন সেই যায়গা ছিবড়ে হয়ে যায় তখন সেখান থেকে চলে এসে ভুল স্বিকার করে সমস্ত পাপ মোচন করে নেয়। পড়ে থাকে সেই ভূখন্ডের মানুষের আহাজারি আর আর্তি। এবং তখন আমাদের মধ্যে তাদের গনতন্ত্র আর মানবিকতা বাহবা দেয়ার ধুম পড়ে যায়। আমরা বলি যাই হোক না কেন আমেরিকা মহান।
আমিও বলতে চাই যাই হোকনা কেন ফ্লয়েডকে হত্যা করার পরও ফ্লয়েডের সামনে হাঁটুগেড়ে বাইডেন যেহেতু ক্ষমা চেয়েছেন সুতরাং আমেরিকা মহান।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
এস এম আলমগীর হোসেন ১০/০৭/২০২১ভালো লেখা
-
মোহাম্মদ মাইনুল ০৪/০৭/২০২১অসাধারণ। খুবই ভালো লাগলো। আমরা কোন প্রতিবাদ করতে না পারলেও আপনার এ লেখাই আমাদের প্রতিবাদ।
ধন্যবাদ। -
রাফিয়া নূর পূর্বিতা ০৩/০৭/২০২১দারুণ
-
সানাউল্লাহ ২৯/০৬/২০২১চমৎকার লেখনী।
-
মাহতাব বাঙ্গালী ২৮/০৬/২০২১আসলে কী বলব বুঝতে পারছিনা; শুধু এতটুকু বলতে পারি- অসাধারণ লিখেছেন; আমার সত্যিই ভালো লেগেছে। অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ। ঠিক আমেরিকার ব্যাপারে বলা যায়- অতি সভ্যতায় পাশবিকতার লালন।
-
শঙ্খজিৎ ভট্টাচার্য ২২/০৬/২০২১সুন্দর লেখা