‘আমার জন্মদিন ও জন্মকথা’
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ খুব গুরত্বপূর্ণ একটি ঘটনা ঘটল । একটি জাতি একটি দেশ স্বাধীন হিসেবে জন্মগ্রহণ করল । তার ঠিক ২৮ বছর পর ১৯৮৯ সালের ২৬ মার্চ সকাল ৫ ঘটিকায় খুব দুর্বল, দারিদ্র পীড়িত এক মহিলার প্রসব বেদনা উঠল এবং টানা তিন ঘণ্টা বেদনা ভোগ করার পর অবশেষে ঠিক ৮ ঘটিকায় একটি সন্তান প্রসব করল । সদ্যজাত সন্তানটি নাকি এতোটাই ছোট এবং শীর্ণ ছিল যে, তার পেটের নাড়িভুঁড়ি পর্যন্ত দেখা যাচ্ছিল । তারপরও সেই শিশুটি চিৎকার করেছিল এবং পরবর্তীতে নানা ঘাত প্রতিঘাত পার হয়ে তার জীবনের ২৬ টি বছর পার করল। এখন সে ২৬ বছরের পরিপূর্ণ যুবক। যদিও শারীরিক শীর্ণতার কারনে তাকে কিশোর বলে ভ্রম হয় । সেই শিশুটিই আমি।
জন্মের সময় মায়ের পক্ষ থেকে আমার নাম রাখা হয়েছিল তরুণ । বাবা ধার্মিক মানুষ ।নবীর নামে নাম রাখলেন ইউসুফ। দাদিও একখানা নাম দিয়েছিল মানিক কিন্তু এই দুই নামের চাপে সে নাম বেসিদিন টিকতে পারেনি। একটু হাত পায়ে বেড়ে ওঠার পর যখন বুদ্ধি সুদ্ধি কিছু গজালো, একটু আধটু কবিতা লিখতে শুরু করলাম তখন খায়েশ হল নাম পরর্তনের । তবে বাবা মা কাউকেই হতাশ করিনি। মায়ের দেয়া তরুণ এবং বাবার অংশের ইউসুফ যুক্ত করে নাম ধারন করলাম তরুণ ইউসুফ ।অবশ্য সেটা লেখালেখির ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ ।
জন্মদিনের কথা আসলে জন্মদিন পালনের কথা চলে আসে । এখন অবশ্য জন্মদিন পালন হয় জন্মদিনের পার্টি করে। আমার জীবনের ১৬ তম জন্মদিন পর্যন্ত জন্মদিন বা জন্মদিন পালনের ব্যাপারের সাথে পরিচিত ছিলাম না। একে তো অজপারাগায়ে জন্মগ্রহণ করেছিলাম তার উপর পারিবারিক অবস্থা ছিল নুন আনতে পান্তা ফুরায় এই আর কি। নানা বাড়ীর অবস্থা বেশ ভালো ছিল। তাদের ওখানে কখনও জন্মদিনের কোন অনুষ্ঠান হয়েছে কি না বলতে পারব না। তবে আমার ১৭ তম জন্মদিনটা ছিল অন্যরকম। তখন কলেজের মেছে থাকি। বিকেলে ঘুমিয়ে ছিলাম। আমার খুব ভালো একজন বন্ধু সন্ধ্যার দিকে ডেকে তুলে আমাকে সারপ্রাইজ দিল। একটা ছেলে যে জন্মদিন পালন তো দূরে থাক জন্মদিনের ব্যাপারটাই জানতোনা, তাকে যদি ঘুম থেকে ডেকে তুলে, খোলা মাঠের মধ্যে সামনে খুব সুন্দর ছোট্ট একটা কেক দিয়ে, মাথায় জাতীয় পতাকা বেধে দিয়ে happy birtday বলে একবার চিন্তা করে দেখেন তার কেমন লাগবে। তখন সূর্য ডুবে আকাশে লালিমাটুকু ছিল। সেই সন্ধ্যা, আরজুর দেয়া সেই সুন্দর ছোট্ট কেক, লাল সবুজ পতাকা আমি সারা জীবন আমার স্মৃতিতে রেখে দিব। এই স্মৃতিটুকু মিষ্টি স্মৃতির একটি হয়ে থাকবে। এখন আমি ইচ্ছে করলেই অনেক বড় কেক কিনতে পারি, অনেক আয়োজন করে জন্মদিন পালনের সামর্থ্য রাখি কিন্তু আরজুর দেয়া সেই মিষ্টি কেকের আনন্দ কখনও ভুলতে পারব না।
বিশ্ববিদ্যালয়য়ে ভর্তি হওয়ার পর ক্লাসের বন্ধুরা মিলে আমার জন্মদিন পালন করল। আমি হলফ করে বলতে পারি আমার ব্যাচে আমার জন্মদিনই প্রথম সবাই মিলে একসাথে পালন করে এবং সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বন্ধু সেখানে উপস্থিত ছিল। খুব মজা হয়েছিল সেদিন।আজকে এই ২৬ তম জন্মদিনে এসে বন্ধুদের কথা খুব মনে পড়ছে।
বল্টুর মায়ের সাথে প্রেম হওয়ার পর জন্মদিনটা ছিল একটু আলাদা, অন্যরকম, মিষ্টি.......সময় গুলো কত তারাতারি চলে যায় তাই না। ব্যস্ততা, দূরত্ব......। চাকরি পাওয়ার পর এটা আমার প্রথম জন্মদিন । ইচ্ছে ছিল ঘটা করে পালন করব। বিভিন্ন কারনে হয়ে উঠল না। তাই এবারের জন্মদিনটা সধারন হয়েই অসাধারণ হয়ে থাক।তবে আমি খুব ভাগ্যবান। যে দিন একটি জাতি নতুন করে জন্মগ্রহণ করল সেই দিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি। আমি জন্মদিন পালন না করলেও চারিদিকে উৎসব হবে, আলোকসজ্জা হবে,পালন করা হবে পুরো জাতি তথা দেশের জন্মদিন । তাই জন্মদিন পালন করতে না পারার দুঃখটা থাকল না ।
আমার মা কে স্বার্থপরের মত ধন্যবাদ জানাচ্ছি, খুব শারীরিক দুর্বলতা, খুব আর্থিক কষ্ট নিয়েও আমাকে আমাকে গর্ভে ধারণ করে অবশেষে সফলতার সাথে জন্মদেয়ার জন্য।
আর কেন জানি না আমার খুব কান্না পাচ্ছে। বুকের ভিতর একটু একটু করে বাস্প জমা হচ্ছে। জানি না বাস্প মেঘ হয়ে বৃষ্টি হবে কি না। তবে হলে সেটা হবে নিভৃতে, গোপনে। অনেক বড় হয়ে গেছি যে। ২৬ বছর আগে যখন জন্মগ্রহণ করেছিলাম তখনও কেঁদেছিলাম। সেই কান্নায় চিৎকার ছিল আস্রু ছিল না । আজ ২৬ তম জন্মদিনে যদি কান্না পায় অশ্রু থাকবে চিৎকার থাকবে না ।
আর হ্যাঁ শুভ জন্মদিন বাংলাদেশ । তুমি না জন্মগ্রহণ করলে জন্মদিনের কথাগুলো এতো নিশ্চিতে বসে লিখতে পারতাম না কিংবা হয়ত লেখাই হতো না । সবাইকে অনেক অনেক সুভেচ্ছা । ভালো থাকবেন সবাই । (লেখাটি ২৬ মার্চ এ লিখেছিলাম। অনেকটা অপ্রাসঙ্গিক ভাবেই এখন শেয়ার করছি)
জন্মের সময় মায়ের পক্ষ থেকে আমার নাম রাখা হয়েছিল তরুণ । বাবা ধার্মিক মানুষ ।নবীর নামে নাম রাখলেন ইউসুফ। দাদিও একখানা নাম দিয়েছিল মানিক কিন্তু এই দুই নামের চাপে সে নাম বেসিদিন টিকতে পারেনি। একটু হাত পায়ে বেড়ে ওঠার পর যখন বুদ্ধি সুদ্ধি কিছু গজালো, একটু আধটু কবিতা লিখতে শুরু করলাম তখন খায়েশ হল নাম পরর্তনের । তবে বাবা মা কাউকেই হতাশ করিনি। মায়ের দেয়া তরুণ এবং বাবার অংশের ইউসুফ যুক্ত করে নাম ধারন করলাম তরুণ ইউসুফ ।অবশ্য সেটা লেখালেখির ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ ।
জন্মদিনের কথা আসলে জন্মদিন পালনের কথা চলে আসে । এখন অবশ্য জন্মদিন পালন হয় জন্মদিনের পার্টি করে। আমার জীবনের ১৬ তম জন্মদিন পর্যন্ত জন্মদিন বা জন্মদিন পালনের ব্যাপারের সাথে পরিচিত ছিলাম না। একে তো অজপারাগায়ে জন্মগ্রহণ করেছিলাম তার উপর পারিবারিক অবস্থা ছিল নুন আনতে পান্তা ফুরায় এই আর কি। নানা বাড়ীর অবস্থা বেশ ভালো ছিল। তাদের ওখানে কখনও জন্মদিনের কোন অনুষ্ঠান হয়েছে কি না বলতে পারব না। তবে আমার ১৭ তম জন্মদিনটা ছিল অন্যরকম। তখন কলেজের মেছে থাকি। বিকেলে ঘুমিয়ে ছিলাম। আমার খুব ভালো একজন বন্ধু সন্ধ্যার দিকে ডেকে তুলে আমাকে সারপ্রাইজ দিল। একটা ছেলে যে জন্মদিন পালন তো দূরে থাক জন্মদিনের ব্যাপারটাই জানতোনা, তাকে যদি ঘুম থেকে ডেকে তুলে, খোলা মাঠের মধ্যে সামনে খুব সুন্দর ছোট্ট একটা কেক দিয়ে, মাথায় জাতীয় পতাকা বেধে দিয়ে happy birtday বলে একবার চিন্তা করে দেখেন তার কেমন লাগবে। তখন সূর্য ডুবে আকাশে লালিমাটুকু ছিল। সেই সন্ধ্যা, আরজুর দেয়া সেই সুন্দর ছোট্ট কেক, লাল সবুজ পতাকা আমি সারা জীবন আমার স্মৃতিতে রেখে দিব। এই স্মৃতিটুকু মিষ্টি স্মৃতির একটি হয়ে থাকবে। এখন আমি ইচ্ছে করলেই অনেক বড় কেক কিনতে পারি, অনেক আয়োজন করে জন্মদিন পালনের সামর্থ্য রাখি কিন্তু আরজুর দেয়া সেই মিষ্টি কেকের আনন্দ কখনও ভুলতে পারব না।
বিশ্ববিদ্যালয়য়ে ভর্তি হওয়ার পর ক্লাসের বন্ধুরা মিলে আমার জন্মদিন পালন করল। আমি হলফ করে বলতে পারি আমার ব্যাচে আমার জন্মদিনই প্রথম সবাই মিলে একসাথে পালন করে এবং সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বন্ধু সেখানে উপস্থিত ছিল। খুব মজা হয়েছিল সেদিন।আজকে এই ২৬ তম জন্মদিনে এসে বন্ধুদের কথা খুব মনে পড়ছে।
বল্টুর মায়ের সাথে প্রেম হওয়ার পর জন্মদিনটা ছিল একটু আলাদা, অন্যরকম, মিষ্টি.......সময় গুলো কত তারাতারি চলে যায় তাই না। ব্যস্ততা, দূরত্ব......। চাকরি পাওয়ার পর এটা আমার প্রথম জন্মদিন । ইচ্ছে ছিল ঘটা করে পালন করব। বিভিন্ন কারনে হয়ে উঠল না। তাই এবারের জন্মদিনটা সধারন হয়েই অসাধারণ হয়ে থাক।তবে আমি খুব ভাগ্যবান। যে দিন একটি জাতি নতুন করে জন্মগ্রহণ করল সেই দিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি। আমি জন্মদিন পালন না করলেও চারিদিকে উৎসব হবে, আলোকসজ্জা হবে,পালন করা হবে পুরো জাতি তথা দেশের জন্মদিন । তাই জন্মদিন পালন করতে না পারার দুঃখটা থাকল না ।
আমার মা কে স্বার্থপরের মত ধন্যবাদ জানাচ্ছি, খুব শারীরিক দুর্বলতা, খুব আর্থিক কষ্ট নিয়েও আমাকে আমাকে গর্ভে ধারণ করে অবশেষে সফলতার সাথে জন্মদেয়ার জন্য।
আর কেন জানি না আমার খুব কান্না পাচ্ছে। বুকের ভিতর একটু একটু করে বাস্প জমা হচ্ছে। জানি না বাস্প মেঘ হয়ে বৃষ্টি হবে কি না। তবে হলে সেটা হবে নিভৃতে, গোপনে। অনেক বড় হয়ে গেছি যে। ২৬ বছর আগে যখন জন্মগ্রহণ করেছিলাম তখনও কেঁদেছিলাম। সেই কান্নায় চিৎকার ছিল আস্রু ছিল না । আজ ২৬ তম জন্মদিনে যদি কান্না পায় অশ্রু থাকবে চিৎকার থাকবে না ।
আর হ্যাঁ শুভ জন্মদিন বাংলাদেশ । তুমি না জন্মগ্রহণ করলে জন্মদিনের কথাগুলো এতো নিশ্চিতে বসে লিখতে পারতাম না কিংবা হয়ত লেখাই হতো না । সবাইকে অনেক অনেক সুভেচ্ছা । ভালো থাকবেন সবাই । (লেখাটি ২৬ মার্চ এ লিখেছিলাম। অনেকটা অপ্রাসঙ্গিক ভাবেই এখন শেয়ার করছি)
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
কামরুজ্জামান সাদ ১৭/০২/২০১৮সুন্দর লিখেছেন।
-
সবুজ আহমেদ কক্স ০৯/০৪/২০১৫পড়ে ভাল লাগলো
ভাল ভাবনার প্রকাশ -
অ ৩১/০৩/২০১৫বেশ ভাল লাগল আপনার জীবন কথা ।
-
দীপঙ্কর বেরা ৩১/০৩/২০১৫বেশ
ভাল কথা -
আবিদ আল আহসান ৩০/০৩/২০১৫Waaaoooo awesome