www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ভগৎ সিং স্মরণে

ভগৎ সিং
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে সংকলিত

ভগৎ সিংহ (২৮ সেপ্টেম্বর ১৯০৭ – ২৩ মার্চ ১৯৩১) ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন পুরোধা ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিযুগের শহীদ বিপ্লবী। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে তিনি ছিলেন অন্যতম প্রভাবশালী বিপ্লবী। তিনি ছিলেন এক জাতীয়তাবাদি। ভারতের জাতীয়তাবাদিরা তাকে অত্যন্ত সম্মানের সাথে শ্রদ্ধা করে।
ভগৎ সিংহের জন্ম একটি জাট শিখ পরিবারে। তার পরিবার পূর্ব থেকেই ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিল। কৈশোরেই ভগৎ ইউরোপীয় বিপ্লবী আন্দোলনের ইতিহাস সম্পর্কে পড়াশোনা করেন এবং নৈরাজ্যবাদ ও কমিউনিজমের প্রতি আকৃষ্ট হন। এরপর তিনি একাধিক বিপ্লবী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন। হিন্দুস্তান রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশনের (এইচআরএ) সঙ্গে যুক্ত হয়ে মেধা, জ্ঞান ও নেতৃত্বদানের ক্ষমতায় তিনি অচিরেই এই সংগঠনে নেতায় পরিণত হন এবং সংগঠনটিতে ব্যাপক পরিবর্তন এনে এটিকে হিন্দুস্তান সোশ্যালিস্ট রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশনে (এইচএসআরএ) রূপান্তরিত করেন। তাকে এবং তার সংগঠনকে নৈরাজ্যবাদী আখ্যা দেওয়া হলে তিনি ক্ষুরধার যুক্তিতে তা খন্ডন করেন। জেলে ভারতীয় ও ব্রিটিশ বন্দীদের সমানাধিকারের দাবিতে ৬৪ দিন টানা অনশন চালিয়ে তিনি সমর্থন আদায় করেন। প্রবীণ স্বাধীনতা সংগ্রামী লালা লাজপত রায়ের হত্যার প্রতিশোধে এক ব্রিটিশ পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট মিস্টার স্যান্ডার্সকে গুলি করে হত্যা করেন ভগৎ। বিচারে তার ফাঁসি হয়। তার দৃষ্টান্ত শুধুমাত্র ভারতীয় যুবসমাজকে স্বাধীনতা সংগ্রামে উদ্বুদ্ধই করেনি, ভারতে সমাজতন্ত্রের উত্থানেও প্রভূত সহায়তা করেছিল।

প্রথম জীবন
ভগৎ সিংহের জন্ম পাঞ্জাবের লায়ালপুর জেলার বাঙ্গার নিকটস্থ খাতকর কালান গ্রামের এক সান্ধু জাট পরিবারে। তার পিতার নাম সর্দার কিসান সিংহ সান্ধু ও মায়ের নাম বিদ্যাবতী। ভগতের নামের অর্থ "ভক্ত"। তিনি যে পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন সেটি ছিল এক দেশপ্রেমিক শিখ পরিবার। এই পরিবারের কোনো কোনো সদস্য ভারতের বিভিন্ন স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। অতীতে এই পরিবারের কোনো কোনো সদস্য আবার মহারাজা রঞ্জিত সিংহের সেনাবাহিনীতে কাজ করতেন। ভগতের ঠাকুরদাদা অর্জুন সিংহ ছিলেন দয়ানন্দ সরস্বতীর হিন্দু সমাজ সংস্কার আন্দোলন আর্যসমাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।ভগতের উপরেও এই সংগঠনের গভীর প্রভাব লক্ষিত হত। ভগতের বাবা ও দুই কাকা অজিত সিংহ ও স্বরণ সিংহ কর্তার সিং সরভ গ্রেওয়াল ও হরদয়াল নেতৃত্বাধীন গদর পার্টির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। অজিত সিংহের নামে একটি মামলা দায়ের করা হলে তিনি পারস্যে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। অন্যদিকে ১৯২৫ সালের কাকোরি ট্রেন ডাকাতির ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় ১৯২৭ সালের ১৯ ডিসেম্বর স্বরণ সিংহের ফাঁসি হয়।
ভগতের বয়সী ছেলেরা সাধারণত লাহোরের খালসা হাইস্কুলে পড়াশোনা করতেন। কিন্তু ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের প্রতি এই স্কুলের আনুগত্যের কারণে তার ঠাকুরদাদা তাকে এখানে পাঠাননি।পরিবর্তে ভগতের বাবা তাকে আর্যসমাজি বিদ্যালয় দয়ানন্দ অ্যাংলো-বৈদিক স্কুলে ভর্তি করেন। মাত্র তেরো বছর বয়সে ভগৎ মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন। এই সময় তিনি প্রকাশ্যে ব্রিটিশ রাজশক্তির বিরোধিতা করেন এবং তার সরকারি স্কুলবই ও বিলিতি স্কুল ইউনিফর্ম পুড়িয়ে ফেলেন। চৌরিচৌরার গণ-হিংসার ঘটনায় কয়েকজন পুলিশকর্মীর মৃত্যু হলে গান্ধীজি আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন। এতে হতাশ হয়ে ভগৎ যুব বিপ্লবী আন্দোলনে যোগ দেন এবং সশস্ত্র বিপ্লবের পন্থায় ভারত থেকে ব্রিটিশ শাসন উৎখাত করার কথা প্রচার করতে থাকেন।

১৯২৩ সালে ভগৎ সিং পাঞ্জাব হিন্দি সাহিত্য সম্মেলন কর্তৃক আয়োজিত প্রবন্ধ রচনা প্রতিযোগিতায় জয়লাভ করেছিলেন।এটি পাঞ্জাব হিন্দি সাহিত্য সম্মেলনের সাধারণ সম্পাদক সহ অন্যান্য সদস্যদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তিনি পাঞ্জাব লেখক দ্বারা রচিত অনেক কবিতা এবং সাহিত্য পাঠ করেন এবং তার পছন্দের কবি ছিলেন আল্লামা ইকবাল। ভগত সিং মার্ক্সবাদী সাহিত্য, টলস্টয়, বাকুনিন, আপটম সিনক্লেয়ার ছাড়াও রবীন্দ্রনাথ নজরুল গভীর মনযোগের সাথে পাঠ করেছিলেন।
ভগৎ সিং কিশোর বয়সে লাহোরের ন্যাশনাল কলেজে পড়াশুনা আরম্ভ করেন কিন্তু বাল্য বিবাহ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে পালিয়ে যান এবং 'নওজাওয়ান ভারত সভা' (ভারত যুব সভা) এর সদস্য হন।এই সংস্থায় ভগৎ সিং এবং তার আর বিপ্লবী সহকর্মীরা যুবকদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠে। ইতিহাস শিক্ষক, প্রফেসর বিদ্যালংকরের সাথে পরিচিত হওয়ার মাধ্যমে ভগৎ হিন্দুস্তান রিপাবলিক এসোশিয়েসন এর সাথে যুক্ত হন যেখানে রামপ্রসাদ বিসমিল, চন্দ্রশেখর আজাদ এবং আসফাক উল্লা খানের মত বিশিষ্ট নেতারা ছিলেন। এটা বিশ্বাস করা হয়ে থাকে যে, তিনি কানপুর থেকে কাকরি গিয়েছিলেন 'কাকরি ট্রেন লুট' করার জন্য কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তিনি লাহোর ফিরে আসেন। ১৯২৬ সালের অক্টোবর মাসের নবরাত্রিতে লাহোরে বোমা বিস্ফোরিত এবং ভগৎ সিং এই বোমা বিস্ফোরণে জড়িতদের দায়ে গ্রেফতার করা হয় এবং গ্রেফতারের পাঁচ সপ্তাহ পর তাকে ৬০০০০ টাকা জামিন নিয়ে মুক্তি দেওয়া হয়। তিনি অমৃতসর থেকে উর্দু ও পাঞ্জাব পত্রিকায় লিখেন এবং সম্পাদনা করেন। ১৯২৮ সালের অক্টোবর মাসে 'কৃতি কিষান পার্টি' একই পতাকাতলে সমগ্র ভারতের বিভিন্ন বিপ্লবী নেতারা একটি সভায় মিলিত হয়েছিল। ভগৎ সিং ওই সভার সম্পাদক ছিলেন। পরবর্তীতে তার বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ডদের জন্য তাকে সমিতির নেতা বানানো হয়
বিষয়শ্রেণী: অন্যান্য
ব্লগটি ২৬৫ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৩/০৩/২০২২

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast