www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

আগামী দিনের শিশু

আজকের শিশুরাই আগামী দিনে দেশের নাগরিক এতটুকু আমাদের কাছে খুবই পরিচিত। যদি আমরা বলি আগামী দিনে দেশ পরিচালনা করবে কারা? তাহলে সবাই উত্তর দিবে আজকের শিশুরা। তাহলে আজকের শিশুরাই আগামী দিনে দেশের নাগরিক এতটুকু বলি তাহলে কিছুটা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। তারা কিš‘ আগামী দিনে দেশের কর্ণধার, সমাজের ধারক, বাহক, পরিচালক, তাদের উপর ন্যস্ত হতে হবে এই জাতিকে। একটি সুন্দর সমাজ, সমৃদ্ধ দেশ, শান্তিময় বিশ্ব, সমৃদ্ধশালী এবং বসবাস যোগ্য গড়ে তোলার দায়িত্ব পরবে তাদের উপর। যদি একটি ছোট্র ফুলের চারাকে সুন্দরভাবে পরিচর্যা করা যায়, তাহলে ঐ ফুলের চারা হতে সুন্দর প্রস্ফুটিত ফুল পাওয়া যাবে। শিশুরা হ”েছ ফুলের কুঁড়ির মতো তাদের যদি শিক্ষা ও চরিত্রের শিক্ষা দিয়ে বড় করা যায় তাহলে সুন্দরের পতাকাবাহী শিশুরা তাদের চরিত্রের সুবাসে বিশ্বকে করবে মুগ্ধ। একটি সুন্দর কল্যাণকর জাতি গঠনের জন্য প্রয়োজন সুন্দর পরিবেশ যেখানে শিশুরা থাকবে সু¯’, স্বাধীন, স্বাভাবিক, শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিকভাবে পূর্ণ বিকাশ লাভ করার মতো পরিবেশ। শিশুর অন্ন-বস্ত্র, বাস¯’ান, চিকিৎসা, শিক্ষা ইত্যাদি অধিকার পূর্ণাঙ্গভাবে মেটানোর দায়িত্ব রাষ্ট্রের। সমাজ ও পরিবারে শিশুকে নিরাপত্তা দিয়ে বড় করে তোলার দায়িত্ব সমাজ ও পরিবারের।

কেমন আছে শিশুরা?
যেসব পরিত্যক্ত শিশুরা অভিভাবকহীন অব¯’ায় রাস্তার পাশে ঘুমিয়ে থাকে, প্রচন্ড্র ঝড়-বৃষ্টি, শীতে গরম বস্ত্রহীন অব¯’ায় শীতে কাঁপে, রোদে পোড়ে, ডাস্টবিন থেকে খাবার কুঁড়িয়ে খায়, তাদেরও কিš‘ অধিকার রয়েছে। তারা কিš‘ রাষ্ট্র ও সমাজের অংশ। তাদের বাদ দিয়ে আমাদের এ সমাজ কল্পনা করা যায় না।
যখন রাষ্ট্র দ্বারা মানুষের স্বীকৃত অধিকার লঙ্ঘিত হয়, তখনই আমরা বলে থাকি মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে।
 জাতিসংঙ্ঘের টহরঃবফ ঘধঃরড়হং ঈযরষফৎবহ’ং ঋঁহফ (টঘওঈঊঋ) এর শিশুদের উপর গবেষণা মূলক রিপোর্টে এসেছে- শারীরিকভাবে অক্ষম নারী শিশুরা এবং পথ শিশুরা সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করে।
 ক্যাম্পেন ফর পপুলার এডুকেশনের (গণস্বাক্ষরতা অভিযান) সম্প্রতি এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে এখনও ৪৯ লাখ শিশু শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত।
 ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালের ২০০৯ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৮০ ভাগ শিশু রক্তস্বল্পতায় ভুগছে। সাইমন এম মেশার জে অ্যালকোহল, এনার্জি ড্রিংকস অ্যান্ড ইয়ুথ এ ডেঞ্জারাস মিক্স ক্যালিফোর্নিয়া মেন ইন্সটিটিউট ২০০৭ সালে দেখিয়েছেন, ১৪০ টি দেশে ২০০ ব্রান্ডের এনার্জি ড্রিংক তৈরী হ”েছ এবং বিশ্বের ১২-১৭ বছর বয়সী ৩১ শতাংশ এনার্জি ড্রিংক গ্রহণ করে। প্রতিবছর ৫ বছরের কম বয়সের প্রায় ৮ লক্ষ শিশু নানা প্রতিরোধ যোগ্য রোগে মৃত্যুবরণ করে। এদেশে ১২-১৮ মাস বয়সের মধ্যে শতকরা ৯০ জনের বেশি শিশু পুষ্টিহীন হয়ে পড়ে।
 সারাদেশে প্রায় ৪৫ লাখ শিশু, নিষিদ্ধ শিশু শ্রমের শিকার।
 এদেশে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা এখন প্রায় ৭৯ লাখ।
 বাংলাদেশের পরিসংখ্যান ব্যুরো ও আইএলও’র জরিপ অনুযায়ী কর্মক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে অংশগ্রহণ করছে শিশুরা।
 ইউনিসেফের ২০০৯ সালের নারী ও শিশু সংক্রান্ত একটি গবেষণা প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে প্রতিমাসে ৪ শত নারী শিশু পাকিস্তান, ভারত, লেবানন, আরব-আমিরাত সহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে পাচার হয়ে যা”েছ। পাচার শিকার হওয়াদের প্রায় ৬০ ভাগই শিশু যাদের বয়স ১২-১৬ বছর।
সেন্টার ফর উইমেন অ্যান্ড চিলড্রেন স্টাডিজের (সিডব্লিউসিএস) তথ্যানুসারে স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ১৫ লাখ নারী শিশু পাচার হয়েছে। পাচার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর একটি গড় হিসাব মতে, গত ২০ বছরে প্রায় ৪ লাখ শিশু মধ্যপ্রাচ্যে পাচার হয়েছে।
 ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব লেবার স্টাডিজ বিলসের এক যৌথ গবেষণায় দেখা যায় যে, শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত রয়েছে দেশের শতকরা ৬৬ দশমিক ৬৭ ভাগ শিশু।

বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় শিশুশ্রমের হার
ঢাকা বিভাগ:
ঢাকা বিভাগের শরীয়তপুর জেলায় ছেলে ২.৭ ও মেয়ে ১.৪ ভাগ, গাজীপুর জেলায় ছেলে ২.৩ ও মেয়ে ২.৯ভাগ, নারায়ণগঞ্জে ছেলে ৪.৪ ও মেয়ে ২.২ ভাগ, মানিকগঞ্জে ছেলে ২.২ ও মেয়ে ০.৯ ভাগ, টাঙ্গাইলে ছেলে ১.১ ও মেয়ে ০.৭ ভাগ, ময়মনসিংহে ছেলে ২.৯ ও মেয়ে ১.৩ ভাগ, নেত্রকোণায় ছেলে ৩.১ ও মেয়ে ১.১ ভাগ, কিশোরগঞ্জে ছেলে ২.৬ ও মেয়ে ১.৫ ভাগ, শেরপুরে ছেলে ২.১ ও মেয়ে ১.২ ভাগ, ফরিদপুরে ছেলে ২.৭ ও মেয়ে ০.৭ ভাগ, মাদারীপুরে ছেলে ১.৭ ও মেয়ে ০.৭ ভাগ, গোপালগঞ্জে ছেলে ২.৮ ও মেয়ে ১.৭ ভাগ, রাজবাড়ীতে ছেলে ২.২ ও মেয়ে ০.৩ ভাগ, মুন্সিগঞ্জে ছেলে ২.১ ও মেয়ে ১.৪ ভাগ, জামালপুরে ছেলে ২.৫ ও মেয়ে ০.৮ ভাগ, নরসিংদীতে ছেলে ৩.৩ ও মেয়ে ০.৭ ভাগ শিশু শ্রমের স্বীকার।
চট্রগ্রাম বিভাগ:
চট্রগ্রাম বিভাগের কক্সবাজারে ছেলে ৪.৯ ও মেয়ে ২.৪ ভাগ, ফেনীতে ছেলে ৩ ও মেয়ে ৩.১ ভাগ, নোয়াখালীতে ছেলে ৩.৪ ও মেয়ে ২.৩ ভাগ, চট্রগ্রামে ছেলে ২.৯ ও মেয়ে ৩.৩ ভাগ, লক্ষ্মিপুরে ছেলে ৩.৫ ও মেয়ে ২.৩ ভাগ, কুমিল্লায় ছেলে ৩.৯ ও মেয়ে ২ ভাগ, বি-বাড়িয়ায় ছেলে ২.৭ ও মেয়ে ১.৬ ভাগ, রাঙ্গামাটিতে ছেলে ২.২ ও মেয়ে ১.৮ ভাগ, বান্দারবানে ছেলে ২.৯ ও মেয়ে ১.৭ ভাগ, খাগড়াছড়িতে ছেলে ২.৮ ও মেয়ে ১.৩ ভাগ, চাঁদপুরে ছেলে ৫ ও মেয়ে ২.৯ ভাগ শিশু শিশু শ্রমের স্বীকার।

খুলনা বিভাগ:
খুলনা বিভাগের বাগেরহাটে ছেলে ৩.৪ ও মেয়ে ১.৩ ভাগ, চুয়াডাঙ্গাতে ছেলে ২.৬ ও মেয়ে ০.৪ ভাগ, যশোরে ছেলে ৩.৯ ও মেয়ে ১.১ ভাগ, ঝিদাইদহ জেলায় ছেলে ২.৪ ও মেয়ে ০.৪ ভাগ, খুলনায় ছেলে ২.৮ ও মেয়ে ১.১ ভাগ, কুষ্টিয়ায় ছেলে ২ ও মেয়ে ০.৭ ভাগ, মাগুরায় ছেলে ২.৬ ও মেয়ে ০.৬ ভাগ, মেহেরপুরে ছেলে ১.৯ ও মেয়ে ০.১ ভাগ, নড়াইলে ছেলে ৩.৯ ও মেয়ে ২.৪ ভাগ, সাতক্ষীরায় ছেলে ৩.৪ ও মেয়ে ১ ভাগ শিশু শ্রমের স্বীকার।

বরিশাল বিভাগ:

বরিশাল বিভাগের বরগুনায় ছেলে ২ ও মেয়ে ০.৬ ভাগ, পটুয়াখালীতে ছেলে ৩.২ ও মেয়ে ১.১ ভাগ, ভোলায় ছেলে ২.৮ ও মেয়ে ০.৯ ভাগ, ঝালকাঠিতে ছেলে ২.৫ ও মেয়ে ১.৫ ভাগ, পিরোজপুরে ছেলে ৪ ও মেয়ে ০.৯ ভাগ, বরিশালে ছেলে ৩.৯ ও মেয়ে ১.২ ভাগ শিশু শ্রমের স্বীকার।

সিলেট বিভাগ:
হবিগঞ্জে ছেলে ৩.১ ও মেয়ে ২.১ ভাগ, মৌলভীবাজারে ছেলে ২.২ ও মেয়ে ০.৭ ভাগ, সুনামগঞ্জে ছেলে ১.৯ ও মেয়ে ১.৩ ভাগ, সিলেটে ছেলে ২.২ ও মেয়ে ১ ভাগ শিশু শিশুশ্রমের স্বীকার।

রাজশাহী ও রংপুর বিভাগ:
বগুড়ায় ছেলে ৩.১ ও মেয়ে ১.৬ ভাগ, দিনাজপুরে ছেলে ১.৬ ও মেয়ে ০.৮ ভাগ, গাইবান্ধায় ছেলে ১.৩ ও মেয়ে ০.৮ ভাগ, কুড়িগ্রামে ছেলে ৩.৯ ও মেয়ে ১.৯ ভাগ, লালমনিরহাটে ছেলে ১.৪ ও মেয়ে ০.৬ ভাগ, নওগাঁয় ছেলে ২.৭ ও মেয়ে ০.৯ ভাগ, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ছেলে ৪.৯ ও মেয়ে ২.৮ ভাগ, নীলফামারীতে ছেলে ৩.৬ ও মেয়ে ১.২ ভাগ, পঞ্চগড়ে ছেলে ১.৬ ও মেয়ে ১.১ ভাগ, রাজশাহীতে ছেলে ১.৯ ও মেয়ে ০.৩ ভাগ, সিরাজগঞ্জে ছেলে ৫ ও মেয়ে ৪.৩ ভাগ, ঠাকুরগাঁওয়ে ছেলে ২ ও মেয়ে ০.৭ ভাগ শিশু শিশুশ্রমের স্বীকার।
বাংলাদেশে শিশুদের বয়স অনুযায়ী শিশু অধিকার:
 ৭ বছরের নিচে শিশুর যে কোন আইনের বাধ্যবাধকতা নেই।
 ৬-১২ বছরের নিচে শিশুর বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা।
 ১২ বছরের নিচে শিশু শ্রম নিষিদ্ধ।
 ১৮ বছরের নিচে ছেলে ও মেয়েদের ভোটাধিকার নেই।
 ১৬ বছরের নিচে শিশু অপরাধীকে কারাগারে রাখা বে-আইনী।

জর্জ ব্রো বলেছিলেন ‘আতœকেন্দ্রীক লোকদ্বার সমাজের কোন উপকার হয় না’ তাই বলতে হয় যে, যে মানুষের সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও সমাজের জন্য কিছু করেনা তার মনুষ্যত্ব বলতে কিছু থাকে না। সু-প্রিয় পাঠক বন্ধুরা আমাদের একথা মনে রাখা উচিত যে, আজ যে শিশুরা জীবিকা নির্বাহের তাগিদে দুঃখ-কষ্টে জীবন যাপন করছে তারা কিš‘ আমাদের সমাজের অংশ তাদের বাদ দিয়ে আমাদের সমাজকে চিন্তা করা যায় না, আমরা যে অধিকারগুলো ভোগ করে থাকি ঠিক তেমনি তাদেরও ঐ রকমই অধিকার রয়েছে। আমাদের দেশ আমাদেরকেই গড়তে হবে এই মনোভাব জাগ্রত না হলে আগামী দিনে সুন্দর একটি সমাজ, সমৃদ্ধ দেশ, শান্তিময় বিশ্ব, সমৃদ্ধশালী এবং বসবাস যোগ্য গড়ে তোলা সম্ভব হবে না। তাই আমাদের প্রত্যেককে আমাদের দেশ গড়ার কাজে নিয়োজিত রাখতে হবে। নিজ নিজ ¯’ান হতে নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী শিশুদের জন্য কাজ করতে হবে। আজ এ পর্যন্তই। আল্লাহ হাফিজ।
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ৭১৩ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১১/০১/২০১৪

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

 
Quantcast