www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

বিভ্রান্তি (তৃতীয় অংশ)

৮...

: খালামনি কেমন আছেন? আপনারে সিরাম লাগতেছে। প্রিয়ংকা চোপড়ার মত যদিওবা প্রিয়ংকা চোপড়াকে নাম ধইরা চিনি না। এবার মডেল শো তে আপনি ফাটাইয়া হালাইবেন।

আমি বত্রিশখান দাঁত বের করে হাসতেছি। রিমু রাগে দাঁত কিরমির করছে। আর রিমুর খালা লতা বিন্তে পুরাই আহাম্মক হয়ে গেছে। মাঝারি গরনের সাস্থ্যবান একজন মহিলা। প্রথমে দেখে মনে হয়েছিল অনেক রসিক হবে তাই বিভ্রান্ত করার জন্য এই কথাগুলো বললাম যাতে করে বিভ্রান্তির পর রসিকতা করে কিন্তু উনি বিভ্রান্তের জগত থেকে বেরই হতে পারছেন না। একবার রিমুর মুখের দিকে তাকাচ্ছে আবার আমার মুখের দিকে তাকাচ্ছে। মাঝখান থেকে রিমু কথা বলে উঠলো, 'নিকশ, ইনি কে?'
: ইনি কেউ না। মজা।
: মানে!
: শূন্য এখন সাইকো।
'এই ফাজিল ছেলেদের তুই চিনিস; খালা রাগের সাথে ঝামটা মেরে কথাটা বললো।
: চিনি তবে ওরা আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড। ওরা সবাই অনেক ভাল। তোমার কথা ওদের আমি বলেছি। ওরা তোমাকে অনেক পছন্দ করে। আর এই শূন্যকে আগে কখনো দেখি নি। আজই প্রথম দেখলাম।
: ওরা আমাকে পছন্দ করে মানে! আমাকে কেন পছন্দ করবে?
: না, মানে... আপনি ফ্যাশান শো'তে অংশ নিতে যাইতেছেন তো তাই আমরা সবাই আপনারে পছন্দ করি তাই না মুরি থুক্কু রিমু?; আমি নির্বিকার ভঙ্গিতে কথাগুলো বললাম।
: চুপ ফাজিল ছেলে।
: খালা, ও আসলেই একটা ফাজিল ছেলে। ফেবুতে আমার লাইফ হেল করে ফেলছে। আমার নাম কেউ উল্টা করে বললে আমি সহ্য করতে পারি না এই কথা জানার পর থেকে আমার নাম সবসময় উল্টা করে বলে। তুমি ওকে একটু সাইজ করে দাও।
কথাটা বলেই আমার দিকে তাকিয়ে জিভ দিয়ে ভেংচি কাটছে আর হাতের মুঠো পাকিয়ে বক্সিং করার ভঙ্গি করে দেখালো। মনে মনে ভয় পেয়ে গেলাম। খালা এবার আমারে খাইছে। খালা বাঘিনির চাহনি নিয়া আমার দিকে তাকানোর সাথে সাথেই আমি খালাকে কোন কথা বলার চান্স না দিয়েই কথা বলা শুরু করে দিলাম। আমার কথা শুনে খালা আর রিমু উত্তোরত্তর বোকা বনে যাচ্ছে।
: নাম উল্টা করে কইলে যদি মুরি হয় তাইলে আমি কি করাম! তাছাড়া আমি তো জানতামই না তার নাম উল্টাইলে মুরি অয়। সে নিজেই একটা কমেন্টে কইছে, আমার নাম উল্টা কইরা কইলে আমার মিজাজ খারাপ অয়। তহন থাইকা আমি জানি। আর আপনাগোরে সবার নাম এমুন ক্যান। উল্টা কইরা কইলেই খাওয়ার জিনিস অয়। রিমুরে উল্টাইলে মুরি অয়। লতারে উল্টাইলে তাল অয়। ছোট তালের আঁশ খেতে সিরাম মজা। আচ্ছা খালা, আপনার মাইয়ার নাম কি কলমি লতা?
কলমিরে উল্টাইলে অয় মিল্ক অর্থাত মিল্ক তাল মানে হইলো দুধ তাল। যে তালের রস দেখতে দুধের মত তাকে দুধ তাল বলে।
আচ্ছা খালা, এমন তাল কি সত্যিই আছে?
: চুপ। থাপড়াইয়া তোর গাল লাল করে দেব ফাজিল কোথাকার্। শয়তানের শয়তান।
: অবশ্যই লাল করবেন। এক গাল লাল কইরা সাধ না মিটলে আট গাল লাল করবেন। বন্ধু কাব্য, ঠিক কইছি না?
: দু:খিত বন্ধু, কুকুর শ্রেনীর থাপ্পড় খাওয়ার কোন রেকর্ড নাই তাই থাপ্পড়ের ফিলিংস আমার দরকার নাই।
কাব্যর দাঁত বের করে কেলানো দেখে মেজাজ আমার সপ্তমে চড়ে গেল। হালায় কয় কি! থাপ্পড় খাবে না অথচ এক সাথে মজা করার জন্য বের হইছে।
: বন্ধু বৃত্ত, তুমি কিতা কও?
: আমার কিছুই কওনের নাই। তোমরা আগে কি ডিল করছো আমি জানি না তাই আমি কোন কথা দিতে পারতেছি না।
: নিকশ, তুইও কি বন্ধুরে সমূদ্রে ফালাইয়া দিবি?
: না বন্ধু, তোরে আমি সমূদ্রে ফালাই নাই। খালার সামনে ফুটপাতে ফালাইছি। তহন থাইকা দৌড়ানির মধ্যে রাখছোস। এহন থাপ্পড়-টাপ্পড় খাওয়ার মোড নাই। ভাই প্যাচাল কম পাইরা দুই তিনটা থাপ্পড় খা। সিরাম মজা পাবি। মুরুব্বি জনের হাতে থাপ্পড় খাইলে দোজখে ঐ জায়গায় আগুন ধরবো না, বুচ্ছোস? এবার চুপচাপ থাপ্পড় খা। খালা, ওরে থাপ্পড় দেন।
'আমার আর কাব্যর পক্ষ থাইকা পাঁচটা বেশিই দিয়েন; দাঁত বের করে কেলাইতে কেলাইতে বৃত্ত বললো। কাব্য পাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।
আমি ভয়ে ভয়ে খালার দিকে তাকালাম। খালা থাপ্পড় দেওয়ার জন্য উদ্যত হওয়ার আগেই আমি খালার দিকে এক হাত বাড়িয়ে দিয়া বললাম, 'থাপ্পড় দিবেন তাতে আমার কোন সমস্যা নাই। মন চাইলে যত ইচ্ছা ততটা থাপ্পড় দিবেন তবে থাপ্পড় দেওয়ার পর ৪০০ খান টেকা দিতে অইবো। থাপ্পড় দেওনের পরেও যদি না দেন তাইলে দরকার অইলে গান শোনামু।
ও খালাম্মা ৪০০ টেকা দিয়া যান
টেকা দিয়া দুই গালে থাপ্পড় মাইরা যান।
এই টাইপের গান। সুরটা চরম হইছে না?
আমার কথা শুনে খালা আর রিমু মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে। এমন সময় কাব্য পাশে এসে দাঁড়িয়ে খালাকে উদ্দেশ্য করে বললো, 'এই কথাটা সত্য খালা। সেই সকালে বের হইছি। পকেটে ১০০ টাকা ছিল তা ফকিররে দিয়া ফকির হইয়া গেছি। এখন ক্ষুদায় পেট চো চো করতেছে।'
কাব্যর কথা শুনে তো রিমুর চোখ দুইটা রসগোল্লার মত হয়ে গেছে।
কিছু বলার জন্য একবার হা করলেও কোন কথা বের হলো না। দ্বিতীয়বার হা করার আগেই রাস্তার অপর পাশে কিছু লোক হৈ হৈ করে উঠলো। ঐ দিকে তাকিয়েই দেখি একটা ৮-১০ বছরের ছেলেকে ২-৩ জন ধরে মারছে আর একজন কলার ধরে ঝাকাচ্ছে। বোঝা গেল শিশু অপরাধের জালে ফেঁসে গেছে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। ক্ষুদার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময় এই কথাটার মানে এই ছেলে হাড়ে হাড়ে বোঝে কিন্তু যারা ওকে সামান্য অপরাধের জন্য এত মার মারছে অথবা আমরা, আমরা কি বুঝি ঐ কথার মর্ম?
সারাদিন মজা করে রাতে ভূরিভোজ করে ফেসবুকে বসবো, হয়তোবা অন্য কোন বিনোদনে মেতে উঠবো কিন্তু ঐ সময় ওরা কি পায়?
গলার ভিতরে কেমন যেন একটু ব্যাথা ব্যাথা লাগছে। বার বার ঢোক গিলেও ভিতরে পাঠাতে পারছি না। নিজের ভিতরেই কেমন যেন অশ্বস্তি লাগছে। ঠিক তখনই পিছন থেকে নিকশ কথা বলে উঠলো, 'শালার কুঁচে মুরগির সাহস নিয়ে রাস্তায় বাইর হইছি। শূয়োরের বাচ্চাগুলো একটা কচিমুখকে থেঁতলে দিচ্ছে আর আমি কুঁচে মুরগির মত তামাশা দেখছি। কিছুই কওনের নাই।'
'অবশ্যই কিছু কওনের আছে; পাশ থেকে কাব্য বললো। 'আমরা চারজন ওখানে গিয়ে বলতে পারি এই ব্যাটাই আমাদের মানিব্যাগ মেরে দিয়েছে। তারপর আমরা ওকে দুই চার ঘাঁ মারতে মারতে ওখান থেকে সরিয়ে নিয়ে আসবো।'
: খুব একটা সহজ হবে না এতে করে। সরিয়ে নিয়ে আসলেও কিছু লোক পিছে পিছে আসবেই। এই সব লোক ঘর থেকে খেয়ে দেয়ে বেরই হয় এমন তামাশা দেখার জন্য। খোঁজ নিয়ে হয়তো দেখা যাবে এরা বউ পিটিয়ে বউয়ের কামাই খায়। এদের খসাতে গেলে এরা ঝামেলা করে বসবে।
'তাহলে এভাবে চেষ্টা করা যেতে পারে; সামনে থেকে বৃত্ত বললো।
: কিভাবে?
: এই প্ল্যানটা প্রায় কাব্যর মতই। চারজন ওখানে গিয়ে ওকে কয়েকটা চড় থাপ্পড় মেরে সবাইকে বলবো, ওর তো একটা ব্যবস্থা করতে হবে। ওর উপযুক্ত জায়গায় ওকে দিয়ে আসি। ওকে থানায় দিয়ে আসি। এই বলে চট করে একটা রিক্সায় উঠে পগার পার্।
: বাহ! অসাধারন আইডিয়া। তবে একসাথে যাওয়া যাইবো না। আলাদা আলাদা ভাবে যাইতে হবে। প্রথমে আমি গিয়া কথাটা তুলবো। তারপরে আমারে সাপোর্ট দেবে নিকশ। এরপর বৃত্ত এবং শেষে জোড়গলায় সাপোর্ট দেবে কাব্য। তারপর এমনিতেই অনেকে সাপোর্ট দেওয়া শুরু করবে কারন, বাঙ্গালী হৈ এর পাগল। যেদিকে হৈ উঠবে বাঙ্গালি সেই দিকেই ঝুঁকবে। তাহলে চলো যাই, মিশন রেসকিউ এ।
'আমার একটা কথা ছিল; পিছন থেকে রিমু বলে উঠলো।
: কি?
: কেউ কেউ তো বলতেই পারে, ওকে থানায় দিয়ে কোন লাভ নেই। আজ থানায় দিলে কালই ছেড়ে দিবে। তারচাইতে ওর শাস্তি এখানেই দেওয়া হবে। তখন কি করার থাকবে?
মনে মনে ভাবলাম, কিছুই করার থাকবে না। এমন হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। বাঙ্গালি যেমন হৈ এর পাগল তেমনি ফ্রি পেলে আলকাতরাও খায়। আর সেখানে তো মাইর ফ্রি দিতে পারতেছে। ছেড়ে দেবে কোন দু:খে।
সবাইকে চুপ করে থাকতে দেখে রিমু আবার কথা বলে উঠলো, 'আমার কাছে একটা বুদ্ধি আছে। সম্ভবত কাজে আসবে।'
'কি বুদ্ধি; নিকশ বললো।
: আমি আর খালা ওখানে যাবো। তারপর খালা চড়া গলায় গিয়ে বলবে 'আরেহ, রতন না এটা। ও এখানে আসলো কিভাবে!! দেখি দেখি, ওকে আসতে দেন তো। সকালেই বাসা থেকে পালিয়ে এসেছে। এসেই কি করেছে এখানে?' তারপর অবস্থা বুঝে সব কিছু খালাই হ্যান্ডল করতে পারবে। আর আমি তো আছিই।
রিমুর কথা শুনে তো চরম বিস্ময়ে কথা বলাই ভুলে গেলাম। কিছুক্ষন পর বললাম, 'পারফেক্ট বইলা কিছু নাই তবে এহন মনে হইতেছে এটাই পারফেক্ট আইডিয়া। কাজটা যদি ভালই ভালই করতে পারো তাইলে কোন দিন আর তোমারে মুরি বইলা খেপামু না।'
আমার কথা শুনে রিমু আবার চোখ মুখ পাকিয়ে আমার উদ্দেশ্যে শূন্যে ঘুষি ছুঁড়লো।
প্রতুত্তরে আমি মিষ্টি করে হেসে দিলাম।
আমাকে অবাক করে দিয়ে রিমু মুক্তোর মত ঝক ঝকে দাঁত দেখিয়ে চাঁদের মত এক টুকরো হাসি উপহার দিল।
ঐদিকে নিকশ খালাকে বুঝিয়ে চলেছে, 'খালা এই কাজটুকু আপনাকে করতেই হবে। এই ভাল কাজটা করার জন্য দরকার হলে আপনি শূন্যকে আরো পঞ্চাশটা চড় বেশি মারবেন। ওর মত ফাজিলকে চড় মারাও এক ধরনের ভাল কাজ।'
ব্যাটার কথা শুনে তো আমি পুরাই থ। এমন পরিস্থিতিতেও আমাকে পঁচাচ্ছে। মনে হলো ওর পিছনে দুটো লাথি মেরে বলি, দোস্ত, অনেক দিন পর একটা ভাল কাজ করলাম।
কিন্তু আমাকে কিছু বলতে হলো না। যা বলার খালাই বললো, 'না বাবা, তোমাদেরকে চেনা আমার হয়ে গেছে। একটু ফাজলামো তোমরা করলেও আমার চোখে তোমরা এখন থেকে একেকটা হীরের টুকরা। রিমু, আয় মা দেরি হয়ে যাচ্ছে। রতনকে ঐ জানোয়ারদের হাত থেকে আগে উদ্ধার করে নিয়ে আসি।'
আমরা অবাক হয়ে রিমুদের যাওয়া দেখছি। অবাক হবার কারন খালার চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। এই পানি কি রতনের জন্য নাকি আমাদের জন্য বুঝতে পারলাম না। একটা বিষয় ভেবে আমার চোখ থেকেও পানি বের হতে চাচ্ছে। অনেক কষ্টে আটকিয়ে রাখলাম। জীবনে চলার পথে এত ভাল কিছু বন্ধু পাবো এটা যে সত্যিই সৌভাগ্যের ব্যাপার্। আমিও কি ওদের কাছে সৌভাগ্যের মত?
ভাবতে ভাবতেই ফুটপাথের উপর বসে পড়লাম। বসেই নিকশকে বললাম, 'দুর্জয় অভিকে একটা মেসেজ দাও যে, এখানে যেন এক ঘন্টার মধ্যে চলে আসে। রিমুর খালা রিমুর পক্ষ থেকে আজ আমাদের খাওয়াবে। সাথে করে 'সরলের' সাথে সম্পৃক্ত যারা আছে তাদের যে কয়টাকে হাতের কাছে পাবে সেই কয়টাকেই যেন নিয়ে আসে।'
মনে মনে বললাম, এরাও যে এক একটা হীরের টুকরা।
পাশ থেকে কাব্য বলে উঠলো, 'তোমার আন্দাজে ছোঁড়া ঢিলটা দেখছি জায়গামতই লাগছে। শেষ পর্যন্ত রিমুই খাওয়াইতেছে। একটু দেরি হইলো এই আর কি।'

চলবে……
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ১৪৫৮ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৪/১০/২০১৫

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast