www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ঝুমঝুমি

২০’শে জুন ১৯৭১
সন্ধ্যা

: চাচা জান ও চাচা জান। চাচা জান বাড়িত আছেন?
: কে? কে?
: আমি। করিম কচ্ছি। শহর থাইকা কুটুম আইছে। দুয়ার খোলেন।
: দাঁড়া। খুলছি।
আরেহ! নীলেন্দ্র!! কোথা থেকে? এই সন্ধ্যা বেলা।
ওখানে কে? ভাবি না ওটা!!
: ওখানে আমার দূর্ভাগ্য আমার অসহায়ত্বের প্রতিক!!
: নীলেন্দ্র! আগাম খবরটা তো দিতে পারতে? ভিতরে আসো ওদের নিয়ে।
করিম?
: জ্বী চাচা জান।
: ওদের জিনিসপত্রগুলো ভিতরে নিয়ে আয়।
: কোন জিনিস পত্র নাই তো !!
: নীলেন্দ্র, একেবারে খালি হাতে?
: খালি হাত কই? বেঁচে আছি সেটা দেখতে পাচ্ছ না? জীবনটাই তো আমাদের জন্য এখন সবচাইতে বড় বোঝা। যা টানতে গিয়েই তো হাঁপিয়ে উঠেছি।
: ওও!! ভিতরে আসো আগে।
করিম?
: জ্বী চাচা জান।
: কেউ যদি জিজ্ঞেস করে আমার বাড়িতে কে আসছে? বলবি আমার বন্ধু সাজ্জাদ শেখ আসছে। ঢাকা থেকে। শহরে ঝামেলা যাচ্ছে বলে আমি খবর দিয়ে আনিয়েছি। ঠিক আছে?
: আচ্ছা চাচা জান।
: আমার কি দূর্ভাগ্য!! নিজের নামটাও বদলাতে হচ্ছে!! দেখছো, জীবনটা এখন কত বড় বোঝা। এটার জন্য তোমাকেও মিথ্যা বলতে হচ্ছে। গণহত্যায় শুধু গণনা করা হয় সু বিচারে রায় হয় না। নিষ্ঠুরতায় শুধু বাইরেরটা দেখা হয় ভিতরের আর্তি কেউ দেখে না। এর জন্য হয়তো ভগবানের নামটাও বদলাতে হবে।
: ভিতরে আসো। ভাবি, ভিতরে আসেন। এটা মেয়ে নাকি? ছেলেটাকে দেখছি নাতো?
: যাদের গলায় দড়ি পরানো থাকে তাদের পিঠ যদি দেয়ালেও ঠেকে তবুও তারা বিদ্রোহ করতে পারে না আর, যাদের পায়ে দড়ি পরানো থাকে তারাই কেবল মাথা তুলতে পারে। শতবার পড়ে গেলেও আবার উঠে দাঁড়ায়। টান পড়তে পড়তে এক সময় দড়ি ছিঁড়ে স্বাধীনতা পেয়ে যায়। অনীশের গলায় নয় পায়ে দড়ি বাঁধা আছে তাই সীমার বাইরে যেতে চাচ্ছে আর আমার গলায় দড়ি থাকার কারনে তোমার দ্বারে এসেছি।
: ছিঃ নীলেন্দ্র! কি বলছো এগুলো। বিপদে বন্ধুই তো বন্ধুর কাছে আসবে।
মা এখানে আসো। নাম কি তোমার?
: ঝুমু। ঝুমু ধার।
: বাহ! সুন্দর নাম তো।
ভাবি, আপনারা অনেক ক্লান্ত। আমি ভিতরে খবর পাঠাচ্ছি। আপনারা ভিতরে গিয়ে বিশ্রাম নেন। রাতে বিস্তর কথা হবে। আপাতত এখানে বসেন। বাবু, চেয়ার নিয়ে আসো। তোমার চাচা চাচীদের বসতে দাও। বাবু, আমার ছোট ছেলে। বড়টাকে তো চেনোই। সজিব। আমরা দুই জন যেমন বন্ধু ছিলাম আজ ওরাও তেমন হয়েছে। অনীশ আর সজিব। তাহলে ওরা দুই জন মনে হয় একই সেক্টরে আছে। আমার ছেলে কি করছে এটা গোপনে জানতে পেরেছি। তোমার ভাবি জানে না এটা। জানতে পারলে বাড়িটা সদ্য মরা বাড়ির মত হয়ে উঠবে। মায়ের মন তো। অন্য কিছু বুঝতে চায় না।
বসো।

: আরে! এই সাঁজ সন্ধ্যাবেলা কাদের দেখছি! ভাবি কেমন আছেন? ঝুমু মা। কেমন আছ মা?
: ভাল আছি কাকি মা। আপনি কেমন আছেন?
: ভাবি, আপনাদের চেহারা তো একদম বিষন্ন লাগছে।
: আর বিষন্ন!! বেঁচে থাকার চেয়ে ঢের ভাল। আপনি কেমন আছেন ভাবি?
: কেমন আর থাকি! ছেলেটার চিন্তায় সব সময় অস্থির থাকি। এই ঝামেলার মধ্যে শহরে থাকছে কেন ও। অনেক চিন্তায় আছি। গত ১৫ দিনে কোন চিঠিও নাই ছেলেটার। আপনার ছেলে অনীশ কই?
: অনীশ!! আমার ভাইপো যতীন্দ্র এর থেকে জানতে পেরেছি এখনো বেঁচে আছে। এটা গত সপ্তাহের খবর।
: কাঁদবেন না ভাবি। সৃষ্টিকর্তা দেখে রাখবেন। চলেন ভিতরে চলেন।
ভাই সাহেব ভিতরে আসেন। বিশ্রাম করেন আগে।
: হ্যা, চলেন।

২২’শে জুন ১৯৭১
রাত
বাবু ঝুমুর দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে। ভিতরে ঢুকবে কিনা বুঝতে পারছে না। বাবুর বয়স ১৫ বছর। অনেক শান্ত প্রকৃতির একটা ছেলে। শান্ত ছেলেদের সাহস একটু কম থাকে। বাবুরও সাহস কম। অবশ্য ঘরের ভিতরে যাওয়ার জন্য সাহসের প্রয়োজন নেই। এই ঘরটা বাবুরই। ঝুমুদের এখানেই থাকতে দেওয়া হয়েছে। মা বললো যে ঝুমুকে ডেকে নিয়ে আয় তাই বাবু ঝুমুকে ডাকতে এসেছে। সবাই খাওয়ার ঘরে বসে রেডিওতে খবর শুনছে। বাবু ঘরের ভিতরে ঢোকার সাহস পাচ্ছে না কারন বাবু ঝুমুকে ভয় পায়। যদিওবা ঝুমু বাবুর চাইতে এক বছরের ছোট। ভয় পাওয়ার যথেষ্ট কারনও আছে। খুব বড় কারন না। ছোট মত কারন। বছর খানেক আগে ভাইয়ের সাথে বাবু আর তার মা ঝুমুদের বাসায় গিয়েছিল। অনেক সুন্দর একটা বাসা। দোতলা কিন্তু পুরানো বাসা। বাসার সামনে উঠোন আছে। সেই উঠোনের কোণায় একটা তুলসি গাছও আছে। ঝুমু ঐ তুলসি গাছের সাথে কথা বলতো অনেক যত্নাদি করতো। অবশ্য এই জন্য বাবু ঝুমুকে ভয় পেত না। ঝুমুর একটা পুতুল আছে। নাম ঝুমঝুমি। ঝুমু ঝুমঝুমিকে নিয়ে খেলছিল ঐ সময় বাবু পুতুলটাকে হাত দিয়ে ধরতেই ঝুমু আগাম কোন সংকেত না দিয়েই বাবুর হাতে কামড় বসিয়ে দিয়েছিল। মাংস কেঁটে ভিতরে দাঁত বসে গিয়েছিল। বাবু ঐ দিন খুব জোরে চিৎকার দিয়েছিল। ঘরের ভিতর থেকে কাকিমা এসে অনেক টানাটানি করে ঝুমুকে ছাড়ায়। ঝুমুর সারা মুখে রক্ত লেগে ছিল। ঐ দিন থেকে বাবু ঝুমুকে ভয় পায়। শুধু ঝুমুকে না রক্তকেও ভয় পায়।
এখন ঢুকতে সাহস পাচ্ছে না কারন ঝুমু কাঁথা মুড়ি দিয়ে কথা বলছে। ঝুমঝুমির সাথে কথা বলছে। ডাক দেওয়ার ফলে বিরক্ত হয়ে যদি আবার কামড় দেয়!!
বাবুকে ডাক দিতে হলো না। হঠাৎ করে ঝুমুই উঠে বসলো। উঠেই দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা বাবুর দিকে চোখ পড়লো। একটুক্ষন তাকিয়ে থেকে চাপা কিন্তু মেজাজের সাথে বললো, ‘এই, তুই ওখানে কি করছিস?’
ঝুমু বাবুর ছোট হলেও তুই তোকারি করে ডাকে। অবাক করা বিষয় হলো বাবু এক বছরের বড় হয়েও তুমি বলে সম্বোধন করে।
বাবু আমতা আমতা করে বললো, ‘না, মানে, মা তোমাকে ডাকতে পাঠিয়েছে তাই...’
: ডাকতে পাঠিয়েছে তাহলে না ডেকে হাবার মত দাঁড়িয়ে আছিস কেন?
: হ্যা, না মানে......
বাবুর কথা শেষ হবার আগেই ওর মা পাশের ঘর থেকে বাবু বলে ডাক দিল। দুই তিনটা ডাক দেওয়ার পরেও যখন বাবু নড়ছে না তখন ঝুমু বললো, ‘দাঁড়িয়ে আছিস কেন। কাকিমা ডাকছে না? যা।’
তাড়াতাড়ি বাবু মায়ের কাছে চলে গেল। ঐ দিকে ঝুমু পাক্কা গিন্নিদের মত মাথা এদিক ওদিক করে দীর্ঘশ্বাঃস ফেললো।

২৫’শে জুন ১৯৭১

: মাস্টার, বাড়িত আছো নাকি?
: কে? বেপারি। আসো, ভিতরে আসো।
: বিয়ান বেলা এহান দিয়াই একবার গেছি। তহন একবার ভাবছিলাম দেহা কইরা যাই কিন্তু সময় আর অইলো না তাই এহন আইলাম। কেবা আছ তোমরা?
: ভাল। তোমার শরীর কেমন?
: শরীর ভালোই আছে কিন্তু মনডা ভালো নাই। তুমি মাষ্টার, সম্মানী মানুষ। পুরা গাঁওয়ের মানুষ তোমারে সম্মান করে আর তুমি এইডা কি করলা?
: বেপারি, কিসের কথা বলছো বলো তো?
: শহর থাইকা বলে তোমার এক বন্ধু আইছে। অনেকেই কইতেছে তোমার এই বন্ধুটা নাকি বেশ ক’বছর আগে এই গাঁয়ে একবার আইছিলো। হিন্দু বলে?
: আরে নাহ। এ তো সাজ্জাদ শেখ। আমার পুরানো বন্ধু। শহরে ঝামেলা হচ্ছে বলে এখানে নিয়ে আসলাম।
: হ ঝামেলা তো এট্টু হইতেছেই তবে মুসলমানদের কোন সমস্যা নাই। সব ঝামেলা লেংটিদের।
মাস্টার, উঠি তাইলে। মসজিদে কথা হইবানি। আজ তো জুম্মাবার। বন্ধুরে লইয়া আইয়ো। গায়ের সবাইয়ো তো আজ মসজীদে আইবো। মুন্সী মিম্বরে দাঁড়াইয়া তোমার বন্ধুর পরিচয় কইরা দিবো। কি কও মাস্টার?
সবার ধারনা মসজীদেই কব্বর দিয়া দিমু আইজ। তুমি আমার বন্ধু মানুষ। নেংটাকাল থাইকা এক লগে বড় অইছি। তোমার বন্ধুরে কানাঘুঁষা কইরা লেংটি বানাইবো তার একটা উচিৎ শিক্ষা দিতে অইবো না?
কতা কও না ক্যা মাস্টার?
: শহর থেকে আসার পর থেকেই সাজ্জাদের শরীরটা ভাল যাচ্ছে না তাই তেমন একটা বাইরেও বের হচ্ছে না। মসজীদে যেতে......।
: মাস্টার এডা কি কইলা। শরীর 'যে' খারাপ করছে 'তার' ইবাদত করার জন্যেই তো যাইবো। তিনিই শরীর ভালা কইরা দিবো। আর তোমার বন্ধু যদি মসজীদে না যায় আজ তাইলে কানাঘুঁষা বাড়তেই থাকবো।
আর তুমি তো জানো, মিলিটারিরা সেঁজুলগাছি গাঁইয়ে ক্যাম্প করছে। আমি দিল থাইকা ওদের খুব পেয়ার করি। হে হে হে হে।
তারাও করে। কয়েকদিনের মধ্যেই আমার বাড়িত একবার আইবো। অনেক বলে কইয়ে রাজি করাইছি। আমার এলাকাডা দেহামু না? ভাইবা দেহো, এহন গাঁইয়ে যা চলতাছে তা যদি মিলিটারির কানে যায় তাইলে কি অইতে পারে জনো? হে হে হে হে।
আযানের সাথে সাথেই চইলা আইয়ো। কি আইবা?
: হুম। যাও।
: আর একটা কথা। এই কথার তেমন কোন দাম নাই আবার যদি দাম দেও তাইলে দাম আছেও। তোমার বাড়ির বাইরে ঐ কল তলার কাছেই এক খান তুলসি গাছ দেখলাম। বিয়ার নাক্কার এক মাইয়া গাছটার বেশ যত্ন নিতাছিল। বুঝলাম না কিছু।
নিম গাছের যত্ন না নিয়া তুলসি গাছের যত্ন!!
যাকগে। আমি যাই এহন।
কল তলা থাইকা এই সব ঝোপ ঝাড় কাইটা ফেলো। সাপ থাকতে পারে। সাপ হলো দোযখের প্রানী। দোযখের আবাসস্থল আগুনে পোড়াই উচিৎ। যাই এহন। আল্লাহ হাপেজ।
: আল্লাহ হাপেজ।

: নীলেন্দ্র, এখন কি করা যায় বলো তো?
: মেয়েটা আমার অন্যরকম হয়েছে। প্রচূর সহ্য ক্ষমতা। ধার্মিকও বটে কিন্তু আমি কি তা?
নাহ, মাস্টার। তেমন ধার্মিক আমি না তবে মেয়েটাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য আমাকে তো কিছু একটা করতেই হবে।
বেপারির কথা শুনে ঝুমুর মা এখন কি করবে জানো?
ঝুমুর চুলের মুঠি ধরে কয়েকটা কিল ঘুষি মারবে। মেয়েটা অসহায়ের মত তাকিয়ে থাকবে। ওর মা চলে গেলে ওখানে বসেই কাঁদবে কিন্তু কাউকে কিছু বলবে না। সকালে উঠে আবার তুলসি গাছটার যত্ন নিবে। আবার মার খাবে আবার কাঁদবে। এমন সহ্য ক্ষমতা কিন্তু আমার নাই।
আচ্ছা, ভগবান কি আসলেই আছে?
: আমি জানি না।
: এখন আমিও জানি না।
: আচ্ছা মাস্টার, সব সময় কাঁদা যায় না কেন? কাঁদার জন্য বিশেষ মুহূর্তের প্রয়োজন পড়ে কেন? এখন তো আমার কান্না পাচ্ছে। এখন আমি কি করি বলো তো?
কাঁদলে খুব বেশি কি খারাপ দেখাবে? কি অদ্ভুত মাস্টার। লোকে কি ভাববে সেই জন্যে আমাদের ভিতরটাকে আটকে রাখি। মাস্টার আমরা মরে গেছি। আমরা একেক জন একেকটা লাশ। আমরা একেকটা লাশ।
: নীলেন্দ্র, শান্ত হও। শান্ত হও নীলেন্দ্র। সব ঠিক হয়ে যাবে। সব ঠিক হয়ে যবে।

৭’ই জুলাই ১৯৭১
বিকাল

: বাবু, এই বাবু?
: মা, কি কও?
: বিকাল হইয়া গেল এহনো ঝুমু আসতেছে না। যা, ঝুমুকে ডেকে নিয়ে আয়, লাবু ডেকে নিয়ে গেছে।
: যাইতে অইবো ক্যান। লাবু ভাবি’ই রাইখা যাইবা নি।
: যা কইতাছি তাই কর। মেয়েটা খাইবো না? ডেকে নিয়ে আয়। তাড়াতাড়ি আসিস। আবার কোথাও যেন কারো সাথে খেলায় মজিস না।

বাবু লাবুদের বাড়ির দিকে রওনা দিল। গ্রামের কাঁচা রাস্তা ধরে না গিয়ে জমির আইল ধরে যাচ্ছে। রাস্তা ধরে গেলে বেপারি চাচার বাড়ির সামনে দিয়ে যেতে হবে। ঐ বাড়ির আশেপাশেও বাবু ঘেঁষে না। ঐ বাড়ি বাবু ভয় পায়। ঐ বাড়ির মানুষগুলোকেও বাবু ভয় পায়। বেপারি চাচার কাছে একটা বন্দুক আছে। বাবু বন্দুক ভয় পায়। পাখি মারার বন্দুক না। মানুষ মারার বন্দুক। ঐ বন্দুক দিয়ে মানুষও মারা হয়েছে। নন্দিনী দিদিকে মেরে ফেলেছে। নন্দিনী হিন্দু ছিল। কাজের মেয়ে হিসাবে বেপারি চাচার বাড়িতে কাজ করতো। বেপারি চাচার একটা পোলা আছে। নাম কালু। এখন লোকে কালু ডাকাইত বলে। সামনা সামনি না। আড়ালে আবডালে। কয়েক মাস হলো কালু হাতে বন্দুক নিয়া পাশের গাঁয়ের অনেক হিন্দু বাড়িতে হানা দিয়ে ডাকাতি করছে। মিলিটারিদের সাথে অনেক দহরম মহরম বলে কেউ কিছু বলে না। অনেকেই বলাবলি করছে ঘোষদের নাকি এই কালু’ই মেরে ফেলছে
ঐ নন্দিনী দিদিকে কালু বলে কি করছিল। তাই নন্দিনীকে গুলি করে মেরে ফেলা হয়। বেপারি চাচা রাগের মাথায় নন্দিনী দিদিকে গুলি করে মেরে ফেলে। বাবু নিজের চোখে দেখেছিল। সেই দিন থেকে বাবু এই বাড়ি এড়িয়ে চলে।

ঝুমুকে নিয়ে বাবু বাড়ির পথ ধরেছে। এইবার বাবু জমির আইল ধরে গেল না। রাস্তা ধরেই হাঁটছে। ঝুমু আছে বলে রাস্তা ধরেই হাঁটছে। অনেক ভয়ে ভয়ে বেপারি চাচার বাড়িটা পার হয়ে আসলো। কিন্তু কথায় আছে না যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই রাত হয়। বাড়িটা পার হওয়ার পরেই বেপারি চাচার পুকুর পাড়ের নিচে আসলো। অনেক বড় পুকুর। এই পুকুরে কেউ গোসল করে না। শুধু গরু মহিষ সাঁতরায়। এই পুকুরে ষোল মাছ ছেরে দেওয়া হয়েছে। ঘোষদের এক জনকে এই পুক্রেই পাওয়া যায়। অর্ধেক শরীর নাই। মাছ খেয়ে ফেলেছে। তারপর থেকে এখানে গরু মহিষও সাঁতরায় না। এই পুকুর পাড়েই একটা ঘর আছে। এখানে বসে কালুর দলেরা আড্ডা দেয়। গাজা খায়। হুক্কা টানে। এই ঘরে কেউ উঁকি দেওয়ার কথা কেও ভাবেও না।
ঘরের পিছন দিক দিয়ে রাস্তা। বাবু আর ঝুমু ঘরের পিছন দিকে আসতেই কালু ঘর থেকে বেরিয়ে আসলো। হাতে বন্দুক। কালুকে দেখে নয় বন্দুক দেখে বাবু দাঁড়িয়ে পড়লো। বাবুর সাথে সাথে ঝুমুও দাঁড়িয়ে পড়লো। বাবু হাঁ করে বন্দুকের দিকে তাকিয়ে আছে। পা তোলার কথা ভুলে গেছে।
মরার উপর খরা ঝাকানোর মত করে কালু বাবুকে ডাক দিয়ে বললো, ‘এই ছেরি কেডা?’
: আ-আমার আব্বার ব-বন্ধুর মেয়ে।
: ছেরির নাম কি?
: ঝুমু।
: দাঁইড়া আছিস ক্যান। যা।
বাবু ঘুরেই হাঁটা ধরলো। ঝুমু বাবুর পিছু পিছু হাঁটছে। ঝুমু হাঁটছে এটা বলা যায় না। অনেকটা দৌড়ে দৌড়ে যাচ্ছে।

৭’ই জুলাই ১৯৭১
মধ্য রাত

বাবু বোকার মত চৈকির কোনায় বসে আছে আর ফ্যাল ফ্যাল করে চাচি অর্থাৎ ঝুমুর মা’য়ের দিকে তাকিয়ে আছে। চাচি কাঁদছে। হাউমাউ করে না তবে ফুপিয়ে ফুপিয়ে। দুই চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি পড়ছে। ঝুমু পাশেই শুয়ে আছে। কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে। চাচি চাপা স্বরে বিলাপ করছে। মা শান্তনা দিচ্ছে। চাচাজান বাইরে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। বাবা চাচার সামনেই বসে আছে। মুখ ছাই বর্ণ হয়ে গেছে। কোন কথা বলছে না।
সন্ধ্যা পরে ঝুমু কল তলায় গিয়েছিল। বেশ কিছুক্ষন হওয়ার পরেও যখন ফিরছিল না তখন ডাকাডাকি খোঁজা খুঁজি করা হয় কিন্তু পাওয়া যাচ্ছিল না। সবার বাড়িই যাওয়া হয়েছিল। করিম, ছালাম, রশিদ ভাই সবাই হারিকেন নিয়ে বাড়ির পিছনের জঙ্গলটাও দেখে এসেছিল কিন্তু কোথাও ঝুমুকে পাওয়া যাচ্ছিল না।
অনেক ক্ষন পরে বাড়ির পিছন দিক থেকে ধপাস, ধুপ ধুপ পায়ের শব্দ শুনতে পেয়েই বাবা করিমকে নিয়ে বাড়ির পিছনে যায় এবং কিছুক্ষন পর করিম ভাই আর বাবা ধরাধরি করে ঝুমুকে নিয়ে আসে। ঝুমুকে এক পলক দেখে ইমরান চমকে ওঠে। ঝুমুর মুখ দিয়ে ফেনা বের হচ্ছিল, মুখে আঁচড়ের ক্ষত, জামা ছেঁড়া, পায়ের দিকে সাদা পায়জামায় রক্তের দাগ। ঝুমু অজ্ঞান ছিল।
ঝুমুর এমন অবস্থা দেখে সবাই বোবা বনে গিয়েছিল। তারপরেই চাচি হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে। করিম ভাই তাড়াতাড়ি করে কল তলা থেকে বালতি করে পানি নিয়ে এসে দেয়। ঝুমুর মাথায় পানি ঢালা হয়। চোখে মুখে পানির ছিঁটা দেওয়া হয়। সবাইকে রুম থেকে বের করে দেয় মা। শুধু ঘরের ভিতরে চাচি, লাবু ভাবি আর মা থাকে। বেশ কিছুক্ষন পর আবার সবাই ঘরের মধ্যে আসে। তখন ঝুমু কাঁথা মুড়ি দিয়ে কাঁদছে।
কাঁদতে কাঁদতেই ঝুমু ঘুমিয়ে পড়েছে।

৫’ই আগষ্ট ১৯৭১
মধ্য রাত

: বাবুর বাবা, এই বাবুর বাবা। শুনছো?
: অ্যা, কি হয়েছে, কি হয়েছে?
: দরজায় কে জানি ধাক্কা দিতাছে। উঠে দেখো না কে?
: দাঁড়াও খুলছি।
: আমিও আসতেছি। একটা লাঠি নেও।
: তোমাকে আসতে হবে না। তুমি বাবুকে নিয়ে ঝুমুর কাছে যাও। নীলেন্দ্রকেও ডেকে দিও।

দরজা খুলতেই একটা ছেলে ঘরে প্রবেশ করলো। কালো একটা চাদর গায়ে দিয়ে আছে। চাদর দিয়ে মাথাটা এমন ভাবে পেঁচিয়ে রেখেছে শুধু চোখ দুটো দেখা যাচ্ছে। ঘরের ভিতর ঢুকেই দরজা লাগিয়ে দিল। বাবুর বাবা তো হতভম্ব হয়ে গেছে। কি করবে কি বলবে বুঝতে পারছে না তবে এটা ঠিক বুঝেছে এটা কে।
একজন মুক্তিযোদ্ধা তবে সজিব নয়। সজিব এত লম্বা নয়। ছেলেটা কি সজিবের মৃত্যু সংবাদ নিয়ে এসেছে নাকি অন্য কিছু। দরজা লাগিয়েই ঘরের ভিতরে একটা চেয়ারে বসে পড়লো। এরই মধ্যে নীলেন্দ্র এই ঘরে এসে পড়েছে। ছেলেটা চাদর খুলে ফেললো। অপরিচিত একটা মুখ। সারা মুখে বিষাদ আর শংকা। ছেলেটা হঠাৎ করেই বলে উঠলো, ‘সজিবের বাবা ইমদাদুল চাচা কে?’
বাবুর বাবা বলে উঠলো, ‘আমি।’
: আমি পার্থ। সজিব আর অনীশের বন্ধু। একটা খবর নিয়ে সাত দিন আগে অনীশদের বাড়িতে গিয়েছিলাম। বাড়ি ফাঁকা। অতি গোপনে একজনের থেকে জানলাম অনীশের বাবা মা এখানেই এসেছে।
আমাদের দলটা দুই ভাগ হয়ে যায়। একটা দল এই দিকেই রওনা দেয় তাই সজিব আমাকে পাঠালো এখানে আসার জন্য। গত রাতে আমরা পৌঁছেছি। কাজ ছিল বলে আসতে পারি নি। পাশের এলাকায় মিলিটারি ক্যাম্প আছে। তাই রাতে আসলাম।
আমাকে কি এক গ্লাস পানি দেবেন?
এরই মধ্যে সবাই উঠে এসেছে। বাবুর মা তাড়াতাড়ি করে এক গ্লাস পানি এনে দিল। শেষের দিকের কথাগুলো তিনি শুনেছেন। সজিব বেঁচে আছে বলে তিনি খুব খুশি। পানি পান করেই পার্থ বললো, ‘আমি এখনই চলে যাবো। সজিব একটা চিঠি দিয়েছিল। যেন অনীশের বাবা নীলেন্দ্র কাকাকে দেই।’
ইমদাদুল মাস্টার পার্থের হাত থেকে চিঠিটা নিতেই পার্থ রওনা দিল। কেউ কিছু বললো না। ঘটনা যে কি তা সবাই বুঝতে পেরেছে। পার্থ চলে যাওয়ার আগে বললো, ‘সময় পেলে আমি আর একবার আসবো।’
তারপর পার্থ নিঃশব্দে চলে গেল।
ইমদাদুল মাস্টার চিঠিটা নীলেন্দ্র এর দিকে বাড়িয়ে দিল। নীলেন্দের হাত থর থর করে কাঁপছে।

চাচাজান,
আমার আদাব জানবেন। কিভাবে বলবো বুঝতে পারছি না। মানুষ সারাজীবন বাঁচে না তবে বাঁচার জন্যে বেঁচে থাকার মধ্যে কোন গর্বও নেই। অনীশ বীরের মত মরেছে। ও আমাদের গর্ব। আমাদের বাংলার গর্ব। ইনশা-আল্লাহ এই দেশ থেকে একদিন পাকিস্তানি কুত্তাদের ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেবই সেই দিন অনীশ আমাদের মাথার মুকুট হবে। চাচা, অনীশ প্রায়ই বলতো আমার বাংলাকে স্বাধীন করে বাংলার পতাকা দিয়ে আমি আমার মাকে জড়িয়ে নেব। আপনি দোয়া করবেন অনীশের স্বপ্ন আমরা যেন পূরণ করতে পারি।

ইতি,
আপনার সন্তান তূল্য
সজিব।

৭’ই আগষ্ট ১৯৭১
সন্ধ্যাবেলা

: মাস্টার, তুমি আমার বন্ধু মানুষ তাই তোমাকে এই সাহায্য করতাছি। তাছাড়া অন্য একটা কারনও আছে। বুঝতে পারতাছো তো?
: বলো বেপারি।
: আমি জাইনা গেছি তোমার বন্ধু হিন্দু। তার পোলা ছিলো মুক্তিযোদ্ধা। শয়তান। দোযখে গেছে। তোমার পোলাটাও শয়তানদের সাথে হাত মিলাইছে।
এই মাসের শেষেই মিলিটারি এই গাঁইয়ে ক্যাম্প করতে আইতেছে।
ঘরে শয়তান রাইখো না। তোমার ঘর কিন্তু দোযখ হইয়া যাইবো। কি করবা সিদ্ধান্ত নাও গিয়ে।
আমি এখন মাগরিবের নামায পড়বো।

১৩’ই আগষ্ট ১৯৭১
সন্ধ্যারাত

ঝুমুদের নৌকায় তুলে দিয়ে আসলো ইমদাদুল মাস্টার। সাথে বাবুও ছিল। ওরা কলকাতায় চলে গেল। কলকাতায় নীলেন্দ্রের জ্যাঠাতো ভাই আছে।
আসার পথে বাবু বাবার পিছু পিছু আসছিল। বাবার হাতে হারিকেন। বেপারি চাচার পুকুড় পাড়ে কালুদের ঐ ঘরের পিছনে জঙ্গল মত একটা জায়গায় হারিকেনের আলোয় বাবু কি যেন দেখেই থেমে গেল। একটু এগিয়েই জিনিসটা হাতে তুলে নিল। চোখের সামনে ধরতেই জিনিসটা চিনতে পারলো। পুতুল। ঝুমুর পুতুল। যেটা ধরার কারনে বেশ ক’বছর আগে বাবু কামড় খেয়েছিল। আজও সেই কামড়ের দাগ হাতে আছেই।
বাবু বুঝতে পারছে না এই পুতুলটা এখানে আসলো কিভাবে। ঝুমুদের এগিয়ে দেওয়ার সময় তো এখান দিয়ে যাওয়াই হয় নি। তাহলে পুতুল এখানে আসলো কিভাবে?
বাবা অনেক খানি গেছে তাই বাবু দৌড় দিল বাবাকে ধরার জন্য।

১৮’ই ডিসেম্বর ১৯৭১

১৬’ই ডিসেম্বরে বাংলার মুক্তিযোদ্ধারা চূড়ান্ত বিজয় এনেছেন। সবাই পতাকা নিয়ে দৌড়াচ্ছিল। কালুর খোঁজ ছিল না। বেপারি চাচা ঘরে খিল লেগে বসেছিল। রেডিও নিয়ে বসে সবাই খবর শুনছিল।
কিন্তু বাবু কিছুই করছিল না। হাতে ঝুমঝুমির পুতুল নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল শুধু।
আজ সজিব বাড়ি ফিরেছে। হাতে পতাকা। একটা বাঁশের মাথার সাথে বেঁধে বাঁশটাকে দাঁড় করিয়ে দিল। বাতাসে পতাকাটা পত পত করে উড়ছে।
ভাইয়াকে দেখে মা হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। বাবাকে কখনো বাবু কাঁদতে দেখে নি। অবাক হয়ে দেখলো বাবাও কাঁদছে। ভাইয়াও কাঁদছে। বাবু কাঁদছে না শুধু পুতুলটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
কিছুক্ষন পর সজিব ভাইকে জড়িয়ে ধরে আবার কেঁদে উঠলো। এই বার ভাইয়ের সাথে সাথে বাবুও কাঁদছে। অন্যরকম একটা অনুভূতি। যা কাউকে বোঝানো যাবে না।

১২ বছর পর
১৩’ই আগষ্ট ১৯৮৩
সকাল

সাভার।
স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গনে বাবু দাঁড়িয়ে আছে। কাঁধে একটা ব্যাগ। বাবুর পাশেই ঝুমু দাঁড়িয়ে আছে।
গত সপ্তাহে ঝুমু কলকাতা থেকে ঢাকায় এসেছে। এসেই বাবুকে খবর দিয়েছে। কাল বাবু ঢাকায় এসেছে।
বাবুকে সাথে নিয়ে ঝুমু স্মৃতিসৌধে ফুল দিতে এসেছে। যুদ্ধে যে অনীশ শহীদ হয়েছে। এই ফুল শুধু অনীশের জন্য না সকল শহীদদের জন্যেই। বাবু এবং ঝুমু খালি পায়ে সৌধের সিঁড়ির ধাপগুলো ভেঙ্গে বেদির উপর ফুলগুলো রাখলো। তারপর কিছুক্ষন নীরবে দাঁড়িয়ে থাকলো। এরই মধ্যে বাবু ঝুমুর দিকে তাকিয়ে দেখে ঝুমু নীরবে কাঁদছে। অঝোর ধারায় কাঁদছে।
কিছুক্ষন পর ওরা বেদির উপর থেকে নেমে আসলো। পাশাপাশি বেশ কিছুক্ষন হাঁটলো। হঠাৎ করে বাবু দাঁড়িয়ে পড়লো। দেখাদেখি ঝুমুও দাঁড়িয়ে পড়লো।
: ঝুমু, তোমার একটা জিনিস আছে আমার কাছে।
: কি?
বাবু ব্যাগের ভিতর হাত গলিয়ে দিয়ে ঝুমঝুমিকে বের করে নিয়ে এসে ঝুমুর দিকে বাড়িয়ে ধরলো।
ঝুমু নিষ্পলক ভাবে তাকিয়ে আছে। হাত বাড়িয়ে দেওয়ার কথাও ভুলে গেল। বাবু ডান হাত দিয়ে ধরেছে ঝুমঝুমিকে। শার্টের হাতা গোটানো। কব্জির কাটা দাগটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। বাবু খেয়াল করে দেখলো ঝুমু ঝুমঝুমিকে নয়, ওর ঐ কাঁটা স্থানটাই দেখছে। আস্তে আস্তে ঝুমু হাত বাড়িয়ে ওর প্রিয় পুতুলটা নিল।
বাবু স্পষ্ট দেখলো ঝুমুর চোখের ভিতর পানি চিক চিক করছে। এই পানি কিসের জন্য বাবু জানে না তবে বাবুরও কাঁদতে ইচ্ছা করছে। কেন কাঁদতে ইচ্ছে করছে তাও জানে না।
তবে অন্যরকম অনুভূতি কাজ করছে। সেই অনুভূতি কাউকে বোঝানো যাবে না।
অনেকটা ১৮’ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে সজিব বাবুকে ধরে যখন কাঁদছিল তখন বাবুর যে অনুভূতিটা হয়েছিল সেই রকম অনুভূতি।

আবার বাবু আর ঝুমু পাশাপাশি হাঁটছে। বাবুর কাঁধে ব্যাগ ঝোলানো। মনে অন্যরকম এক অনুভূতি।
ঝুমুর বাম হাতে ওর প্রিয় পুতুল ঝুমঝুমি। মাথা নিচের দিক দিয়ে হাঁটছে। চোখের ভিতর পানি।
পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে এক সময় দুই জন দুজনার হাত ধরলো। এবার ওরা হাত ধরাধরি করে হাঁটছে।
দেখতে কি অপূর্ব লাগছে!!
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ১১৪৬ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০১/০১/২০১৫

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • অসমাপ্ত গল্পটি ০৪/০১/২০১৫
    অসাম
  • ০২/০১/২০১৫
    ভালো হয়েছে ।
  • মন্তব্য করার মত ভাষা আমার জানা নেই তবে এটুকু বললাম প্রিয়তে রেখে দিয়েছি। শুভ কামনা আপনার জন্য। চোখটা না ইদানিং বেশি জালাতন করে। মাঝে মাঝেই কি যেনো ঢুকে চোখে আর চিক চিক করে জল বেরিয়ে আসে।
    • শূন্য ১৪/০২/২০১৫
      ভাল লাগার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।
      জল পড়াটা খারাপ কিছু নয়। বেশ ভালো কারন, জল পড়ার পরেই তো ঠোঁটে মিষ্টি একটা হাসির আভাস ফোঁটে।
 
Quantcast