কল্পনার সাত রঙ
- বলো।
- হ্যালো, হ্যালোওও।
- বলো, শুনছি।
- কি করো?
- একটা মেয়ের সাথে কথা বলছি।
- তাই। তা, মেয়েটা কে।
- বলা যাবে না।
- ওওও... মেয়েটার সাথে কি কথা বলছো?
- বলা যাবে না।
- না বললে। আমি জানি।
- কিভাবে?
- ওমা ! মেয়েটা বুঝি আমি না?
- ও হ্যাঁ, তুমিই মনে হয়। তোমার মত পঁচা মেয়ের সাথে কথা বলছি কেন আমি!
- কি বললে তুমি? আরেক বার বলো তো?
- বললে কি হবে?
- মারবো ধরে।
- কিভাবে?
- চোখ বন্ধ করে তোমাকে আমার সামনে নিয়ে আসবো তারপর খাঁমচি দেব, চুল টানবো, ভেংচি কাটবো আর......।
- আর কি?
- আর বলা যাবে না।
- কেউ শুনবে না বলো।
- বলেছি।
- শুনলাম নাতো!
- তুমিই তো বললা, কেউ শুনবে না সেভাবে বলো তাই মনে মনে বলছি। হি হি হি।
- ও আচ্ছা!
- চুপ কেন? কথা বলো?
- কি বলবো?
- যা ইচ্ছা।
- তাহলে চলো।
- কোথায়?
- চলো দুজনে মিলে আজ রাস্তায় হাঁটি।
- এই মধ্য রাতে!
- হুম। সমস্যা কি?
- না, সমস্যা নাই। চলো।
- চোখ বন্ধ করো।
- করছি।
- এবার হাঁটা শুরু করো।
- না, হাঁটবো না।
- কেন!
- চলো উড়ি।
- উড়বে?
- হুম। তুমি আর আমি হাত ধরে উড়বো। বাতাসে ভেসে বেড়াবো। পাখনা মেলে শূন্যে নাচবো আর তুমি গান গাইবে। চলো না-আ।
- ঠিক আছে চলো।
- আমার পাখনা গজিয়েছে। তোমার গজিয়েছে?
- তুমি দেখো।
- হুম....গজিয়েছে। এবার চলো।
- চলো।
- এই, আমার হাত ধরো না-আ।
- আচ্ছা, ধরছি। এবার হলো।
- হুম... হলো। এই, দেখো তো ওটা কি?
- ওটা তীব্র উজ্জ্বল একটা তারা।
- চলো, আমরা উড়ে উড়ে ঐ তারার কাছে যাই।
- না। যেটা বাইরে থেকে অনেক সুন্দর মনে হয় সেটার খুব কাছে যেতে নেই। অনেক কুৎসিত কিছু বেরিয়ে আসে। ঐ সৌন্দর্য্য অন্যের কাছ থেকে চুরি করাও হতে পারে। তারচেয়ে বরং কাঁচের মত টলমলে জল ধারন করেছে এমন নদীতে নামি। আঁজলা ভরে নদীর জল গায়ে মাখাতে পারবে। যাবে?
- হুম... যাবো। চলো।
- এই নদীর জল অনেক টলমলে না? নামবে তুমি?
- চলো দুই জনই নামি।
- চলো।
- আমি চাঁদ ধরবো, গায়ে জ্যোৎস্না মাখবো। তোমার হাত ধরে নাচবো। এই দেখো আমার হাতের মধ্যে চাঁদ। আমার হাতে ধরা জলের মধ্যে চাঁদ কেমন হাসছে। তোমার গায়ে এই চাঁদের হাসি ছড়িয়ে দেই?
- দাও... কিন্তু ভিঁজে যাবো যে!
- একটু ভিঁজলে কিছু হবে না। এই শোন, আমাকে এই ভাবে ভিঁজিয়ে দেবে কিন্তু।
আজ জলে ভিঁজবো, শীতল বাতাসে কেঁপে উঠবো
তোমার বুকে মুখ লুকাবো, ভালবাসার উষ্ণতা নেব।
আজ বাতাসে ভেসে বেড়াবো, মনে মনে স্বপ্ন আঁকবো
তোমার ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়াবো, চোখে লজ্জ্বা মাখবো।
- অনেক তো হলো। এখন চলো।
- কোথায় যাবো এখন?
- চলো, কোন এক গ্রামে যাই।
- আচ্ছা চলো। দেখ গ্রামটা কত সুন্দর!
- সব গ্রামই সুন্দর। সৃষ্টিকর্তা এখনো সকল গ্রামের মাঝেই অতি মাত্রার সৌন্দর্য্য অটুট রেখেছেন। রাতে বেড়ে তা দ্বিগুন হয়ে যায়। রাতের গ্রাম তো কেউ দেখে না। কেউ যদি দেখতে পেত তাহলে কেউই শহর মুখো হতো না। জীবনের ব্যাস্ততা শেষ করে গ্রামের সৌন্দর্য্যের মাঝে নিজেকে তুলে দিত।
- আমার এখন কি মনে হচ্ছে জানো?
- কি?
- আমার একটা ছোট্ট বাড়ি থাকবে। তার সামনে একটা বাগান থাকবে। বাগানের মাঝে চা পান করার জন্য ছোট্ট একটা জায়গা থাকবে। দুই জন মুখোমুখি বসে চা পান করা যায় এমনটা। বাড়ির পাশেই নদী থাকবে। গভীর রাতে নদীর জলের কুল কুল শব্দ শুনবো। মাঝে মাঝে গভীর রাতে যখন চাঁদ মাথার উপরে উঠে আসবে তখন নদীর পাড়ে এসে বসবো আর তোমার কথা ভাববো। তুমিও কি তখন আমার কথা ভাববে?
এমন করে আমাকে ভালবাসবে? বলো না-আ?
- তখন আমি থাকবো না। যে তারা’টার কাছে যেতে চেয়েছিলে সেই তারা’র মাঝে নিজেকে লুকাবো।
- এভাবে বলো না। বুকে ব্যাথা হয়।
- আচ্ছা, আর বলবো না। চলো, ঐ কুঁড়ে ঘরটার ভিতরে যাই। ঘুমালে নাকি মানুষের মুখে পবিত্রতা আসে। চলো পবিত্রতা দেখে আসি। গরীবের ঘুমন্ত মুখ দেখে আসি। যাবে?
- চলো।
- দেখছো, কি শান্তিতে ঘুমাচ্ছে। চাঁদের হাসির মতই এক ফালি হাসি এই বাচ্চাটার মুখে ঝুলে আছে। কি অপূর্ব লাগছে। এদের জন্যেই বুঝি এখনো আকাশে চাঁদ ওঠে। ওদের দেখার জন্যেই বুঝি গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে, ভাঙ্গা বেড়ার ফাঁক গলে জ্যোৎস্না ঘর ভাসায়। রূপালী জ্যোৎস্নার ঢেউ, ভাঙ্গা ঘরে খেলে বেড়াচ্ছে। যেন ভাঙ্গা ঘরে স্বর্গ নেমে এসেছে।
- চলো, ওর কপালে হাত ঠেকিয়ে বর দেই যেন কাল থেকে ওর জীবনে আর কোন দুঃখ না থাকে। ও অনেক বড় হতে পারে।
- এটা আমরা পারি না। সেই ক্ষমতা আমাদের নেই। তাছাড়া ও এমনিতেই অনেক বড়। ওর মাঝে কোন কৃত্তিমতা নেই। যেখানে প্রকৃতি ওর কাছে এসেছে সেখানে ওর চেয়ে ভাল আর কে থাকতে পারে বলো?
- চলো, শহরের কোন এক বাসায় যাই। উচ্চাবীলাসিতার মাঝে তারা দেখি কেমন আছে?
- চলো।
- দেখছো, বিল্ডিংটা কত উঁচু! প্রাচীরটাও উঁচু। প্রাচীরের উপর আবার কাঁটাতার! সব গুলো জানালাই বন্ধ। দেয়াল এত পুরো কেন! কোন মানুষ তো এত উপরে লাফ দিয়ে উঠতে পারবে না। তাহলে কি প্রকৃতিকে আটকানোর জন্যেই এই ব্যাবস্থা?
- জানি না। হতে পারে।
- চলো একটা রুমের ভিতরে যাই।
- চলো।
- বাহ! ঘরে দেখি এ.সি চলছে। আচ্ছা বুঝলাম, এই জন্যেই জানালা বন্ধ। ঘরের ভিতরে ডিম লাইট জ্বালিয়ে রেখেছে। আসলেই সবার কপালে সব কিছু জোটে না। চাঁদের আলোর মর্ম এরা বোঝে শুধু গল্প-কবিতার মাঝে অথচ, বাইরে জ্যোৎস্নার বন্যা বয়ে যাচ্ছে কিন্তু এদের ঘরে ঢুকতে পারছে না। মনে হয় এরা স্বামী-স্ত্রী, তাই না?
- হুম। স্বামী-স্ত্রী তবে সম্পর্কে সুখ নাই।
- কেন? কিভাবে বুঝলে!
- দেখছো না, দুই জন দুই দিকে মুখ করে শুয়ে আছে।
- হুম। দেখো লোকটা ঘুমের মধ্যে কেমন করে ছটফট করছে। উনি কি অসুস্থ?
- না। দুঃস্বপ্ন দেখছে। বেশি মাত্রার ধন-সম্পত্তি হলে যা হয়। ঘুমের মধ্যেও অধিকার তাড়া করে বেড়ায়। কার অধিকার একে তাড়া করছে কে জানে।
- দেখছো, দেখছো। কি হাস্যকর! হি হি হি হি।
- কি হলো আবার! এত হাসছো কেন?
- দেখো, মহিলাটা সাঁজু-গুজু করে ঘুমিয়েছে। ঘুমানোর সময় কেউ সাঁজু-গুজু করে নাকি?
- সেটা আমি কিভাবে বলবো? তোমরা মেয়েরাই ভাল জানো।
- আমরা কখনই এভাবে সাঁজু-গুজু করে ঘুমাই না। আচ্ছা লোকটার মাথায় একটা টোকা দেই?
- না, জেগে যাবে।
- তাহলে এক কাজ করি, ওদের ঘুড়িয়ে মুখোমুখি শুইয়ে দেই?
- দাও। মুখোমুখি শুইয়ে দেওয়ার পরে টোকা দিতে পারো।
- কেন?
- তাহলে জেগে গিয়ে অবাক হয়ে যাবে। এত কাছাকাছি, মুখোমুখি শুয়ে আছে দেখে। দুই জনকেই একসাথে টোকা দেবে ঠিক আছে?
- আচ্ছা। তাহলে দুই জনের হাতই দুই জনের উপরে তুলে দেই। এতে করে আরো বেশি অবাক হবে। হি হি হি হি।
- আচ্ছা দাও। শোন, এক, দুই, তিন বলার সাথে সাথে টোকা দেবে। টোকা দেওয়ার সাথে সাথে কিন্তু আমাদের পালাতে হবে। নির্ভেজাল বিস্ময়ের কাছে থাকতে নেই। এটা তারাই উপভোগ করুক। কেউ থাকলে বিস্ময় বিব্রত হয়।
- আচ্ছা। তুমি এক, দুই, তিন বলো।
- এক, দুই, তিন। চলো পালাই। এবার ওনাদের পালা।
- শোন, গেটের দারোয়ানের মাথাতেও একটা টোকা দিয়ে আসি?
- না। সে অবাক হবে না। এদের অবাক হওয়ার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে গেছে। বিত্তশালীদের বিকৃত ব্যাপার দেখে দেখে এদের মস্তিষ্ক আর অল্পতেই অবাক হয় না। অনেক বড় ধরনের ব্যাপারে এরা অবাক হয়।
- ওওও! এখন কি করবো?
- এখন ঘরে ফেরার পালা। ঘুড়ি যত উপরেই উঠুক তাকে একসময় নিচে নামতেই হয়। আমাদেরও এবার ফিরতে হবে। চলো ফিরে যাই।
- চলো।
ওদের কেউই জানলো না, ঘরের ভিতরের দম্পতি জনেরা এতটুকুও অবাক হয় নি। আসলে তাদেরও অবাক হওয়ার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে গেছে। খুব স্বাভাবিক ভাবেই নিজেদের আলাদা করে নিয়ে আবার আগের ভঙ্গিতেই শুয়ে পড়েছে। যেমন করে ঠিক আগের মত করে এখনো শুয়ে আছে কুঁড়ে ঘরের সেই বাচ্চাটি।
পার্থক্য এটাই যে, তার ঘুমের মাঝে শান্তির পরশ আছে। প্রকৃতি তাকে ঘিরে আনন্দ নৃত্য করছে আর এরা প্রকৃতিকে আসার রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে স্বপ্নের জগতে তাড়া খেয়ে বেড়াচ্ছে।
- হ্যালো, হ্যালোওও।
- বলো, শুনছি।
- কি করো?
- একটা মেয়ের সাথে কথা বলছি।
- তাই। তা, মেয়েটা কে।
- বলা যাবে না।
- ওওও... মেয়েটার সাথে কি কথা বলছো?
- বলা যাবে না।
- না বললে। আমি জানি।
- কিভাবে?
- ওমা ! মেয়েটা বুঝি আমি না?
- ও হ্যাঁ, তুমিই মনে হয়। তোমার মত পঁচা মেয়ের সাথে কথা বলছি কেন আমি!
- কি বললে তুমি? আরেক বার বলো তো?
- বললে কি হবে?
- মারবো ধরে।
- কিভাবে?
- চোখ বন্ধ করে তোমাকে আমার সামনে নিয়ে আসবো তারপর খাঁমচি দেব, চুল টানবো, ভেংচি কাটবো আর......।
- আর কি?
- আর বলা যাবে না।
- কেউ শুনবে না বলো।
- বলেছি।
- শুনলাম নাতো!
- তুমিই তো বললা, কেউ শুনবে না সেভাবে বলো তাই মনে মনে বলছি। হি হি হি।
- ও আচ্ছা!
- চুপ কেন? কথা বলো?
- কি বলবো?
- যা ইচ্ছা।
- তাহলে চলো।
- কোথায়?
- চলো দুজনে মিলে আজ রাস্তায় হাঁটি।
- এই মধ্য রাতে!
- হুম। সমস্যা কি?
- না, সমস্যা নাই। চলো।
- চোখ বন্ধ করো।
- করছি।
- এবার হাঁটা শুরু করো।
- না, হাঁটবো না।
- কেন!
- চলো উড়ি।
- উড়বে?
- হুম। তুমি আর আমি হাত ধরে উড়বো। বাতাসে ভেসে বেড়াবো। পাখনা মেলে শূন্যে নাচবো আর তুমি গান গাইবে। চলো না-আ।
- ঠিক আছে চলো।
- আমার পাখনা গজিয়েছে। তোমার গজিয়েছে?
- তুমি দেখো।
- হুম....গজিয়েছে। এবার চলো।
- চলো।
- এই, আমার হাত ধরো না-আ।
- আচ্ছা, ধরছি। এবার হলো।
- হুম... হলো। এই, দেখো তো ওটা কি?
- ওটা তীব্র উজ্জ্বল একটা তারা।
- চলো, আমরা উড়ে উড়ে ঐ তারার কাছে যাই।
- না। যেটা বাইরে থেকে অনেক সুন্দর মনে হয় সেটার খুব কাছে যেতে নেই। অনেক কুৎসিত কিছু বেরিয়ে আসে। ঐ সৌন্দর্য্য অন্যের কাছ থেকে চুরি করাও হতে পারে। তারচেয়ে বরং কাঁচের মত টলমলে জল ধারন করেছে এমন নদীতে নামি। আঁজলা ভরে নদীর জল গায়ে মাখাতে পারবে। যাবে?
- হুম... যাবো। চলো।
- এই নদীর জল অনেক টলমলে না? নামবে তুমি?
- চলো দুই জনই নামি।
- চলো।
- আমি চাঁদ ধরবো, গায়ে জ্যোৎস্না মাখবো। তোমার হাত ধরে নাচবো। এই দেখো আমার হাতের মধ্যে চাঁদ। আমার হাতে ধরা জলের মধ্যে চাঁদ কেমন হাসছে। তোমার গায়ে এই চাঁদের হাসি ছড়িয়ে দেই?
- দাও... কিন্তু ভিঁজে যাবো যে!
- একটু ভিঁজলে কিছু হবে না। এই শোন, আমাকে এই ভাবে ভিঁজিয়ে দেবে কিন্তু।
আজ জলে ভিঁজবো, শীতল বাতাসে কেঁপে উঠবো
তোমার বুকে মুখ লুকাবো, ভালবাসার উষ্ণতা নেব।
আজ বাতাসে ভেসে বেড়াবো, মনে মনে স্বপ্ন আঁকবো
তোমার ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়াবো, চোখে লজ্জ্বা মাখবো।
- অনেক তো হলো। এখন চলো।
- কোথায় যাবো এখন?
- চলো, কোন এক গ্রামে যাই।
- আচ্ছা চলো। দেখ গ্রামটা কত সুন্দর!
- সব গ্রামই সুন্দর। সৃষ্টিকর্তা এখনো সকল গ্রামের মাঝেই অতি মাত্রার সৌন্দর্য্য অটুট রেখেছেন। রাতে বেড়ে তা দ্বিগুন হয়ে যায়। রাতের গ্রাম তো কেউ দেখে না। কেউ যদি দেখতে পেত তাহলে কেউই শহর মুখো হতো না। জীবনের ব্যাস্ততা শেষ করে গ্রামের সৌন্দর্য্যের মাঝে নিজেকে তুলে দিত।
- আমার এখন কি মনে হচ্ছে জানো?
- কি?
- আমার একটা ছোট্ট বাড়ি থাকবে। তার সামনে একটা বাগান থাকবে। বাগানের মাঝে চা পান করার জন্য ছোট্ট একটা জায়গা থাকবে। দুই জন মুখোমুখি বসে চা পান করা যায় এমনটা। বাড়ির পাশেই নদী থাকবে। গভীর রাতে নদীর জলের কুল কুল শব্দ শুনবো। মাঝে মাঝে গভীর রাতে যখন চাঁদ মাথার উপরে উঠে আসবে তখন নদীর পাড়ে এসে বসবো আর তোমার কথা ভাববো। তুমিও কি তখন আমার কথা ভাববে?
এমন করে আমাকে ভালবাসবে? বলো না-আ?
- তখন আমি থাকবো না। যে তারা’টার কাছে যেতে চেয়েছিলে সেই তারা’র মাঝে নিজেকে লুকাবো।
- এভাবে বলো না। বুকে ব্যাথা হয়।
- আচ্ছা, আর বলবো না। চলো, ঐ কুঁড়ে ঘরটার ভিতরে যাই। ঘুমালে নাকি মানুষের মুখে পবিত্রতা আসে। চলো পবিত্রতা দেখে আসি। গরীবের ঘুমন্ত মুখ দেখে আসি। যাবে?
- চলো।
- দেখছো, কি শান্তিতে ঘুমাচ্ছে। চাঁদের হাসির মতই এক ফালি হাসি এই বাচ্চাটার মুখে ঝুলে আছে। কি অপূর্ব লাগছে। এদের জন্যেই বুঝি এখনো আকাশে চাঁদ ওঠে। ওদের দেখার জন্যেই বুঝি গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে, ভাঙ্গা বেড়ার ফাঁক গলে জ্যোৎস্না ঘর ভাসায়। রূপালী জ্যোৎস্নার ঢেউ, ভাঙ্গা ঘরে খেলে বেড়াচ্ছে। যেন ভাঙ্গা ঘরে স্বর্গ নেমে এসেছে।
- চলো, ওর কপালে হাত ঠেকিয়ে বর দেই যেন কাল থেকে ওর জীবনে আর কোন দুঃখ না থাকে। ও অনেক বড় হতে পারে।
- এটা আমরা পারি না। সেই ক্ষমতা আমাদের নেই। তাছাড়া ও এমনিতেই অনেক বড়। ওর মাঝে কোন কৃত্তিমতা নেই। যেখানে প্রকৃতি ওর কাছে এসেছে সেখানে ওর চেয়ে ভাল আর কে থাকতে পারে বলো?
- চলো, শহরের কোন এক বাসায় যাই। উচ্চাবীলাসিতার মাঝে তারা দেখি কেমন আছে?
- চলো।
- দেখছো, বিল্ডিংটা কত উঁচু! প্রাচীরটাও উঁচু। প্রাচীরের উপর আবার কাঁটাতার! সব গুলো জানালাই বন্ধ। দেয়াল এত পুরো কেন! কোন মানুষ তো এত উপরে লাফ দিয়ে উঠতে পারবে না। তাহলে কি প্রকৃতিকে আটকানোর জন্যেই এই ব্যাবস্থা?
- জানি না। হতে পারে।
- চলো একটা রুমের ভিতরে যাই।
- চলো।
- বাহ! ঘরে দেখি এ.সি চলছে। আচ্ছা বুঝলাম, এই জন্যেই জানালা বন্ধ। ঘরের ভিতরে ডিম লাইট জ্বালিয়ে রেখেছে। আসলেই সবার কপালে সব কিছু জোটে না। চাঁদের আলোর মর্ম এরা বোঝে শুধু গল্প-কবিতার মাঝে অথচ, বাইরে জ্যোৎস্নার বন্যা বয়ে যাচ্ছে কিন্তু এদের ঘরে ঢুকতে পারছে না। মনে হয় এরা স্বামী-স্ত্রী, তাই না?
- হুম। স্বামী-স্ত্রী তবে সম্পর্কে সুখ নাই।
- কেন? কিভাবে বুঝলে!
- দেখছো না, দুই জন দুই দিকে মুখ করে শুয়ে আছে।
- হুম। দেখো লোকটা ঘুমের মধ্যে কেমন করে ছটফট করছে। উনি কি অসুস্থ?
- না। দুঃস্বপ্ন দেখছে। বেশি মাত্রার ধন-সম্পত্তি হলে যা হয়। ঘুমের মধ্যেও অধিকার তাড়া করে বেড়ায়। কার অধিকার একে তাড়া করছে কে জানে।
- দেখছো, দেখছো। কি হাস্যকর! হি হি হি হি।
- কি হলো আবার! এত হাসছো কেন?
- দেখো, মহিলাটা সাঁজু-গুজু করে ঘুমিয়েছে। ঘুমানোর সময় কেউ সাঁজু-গুজু করে নাকি?
- সেটা আমি কিভাবে বলবো? তোমরা মেয়েরাই ভাল জানো।
- আমরা কখনই এভাবে সাঁজু-গুজু করে ঘুমাই না। আচ্ছা লোকটার মাথায় একটা টোকা দেই?
- না, জেগে যাবে।
- তাহলে এক কাজ করি, ওদের ঘুড়িয়ে মুখোমুখি শুইয়ে দেই?
- দাও। মুখোমুখি শুইয়ে দেওয়ার পরে টোকা দিতে পারো।
- কেন?
- তাহলে জেগে গিয়ে অবাক হয়ে যাবে। এত কাছাকাছি, মুখোমুখি শুয়ে আছে দেখে। দুই জনকেই একসাথে টোকা দেবে ঠিক আছে?
- আচ্ছা। তাহলে দুই জনের হাতই দুই জনের উপরে তুলে দেই। এতে করে আরো বেশি অবাক হবে। হি হি হি হি।
- আচ্ছা দাও। শোন, এক, দুই, তিন বলার সাথে সাথে টোকা দেবে। টোকা দেওয়ার সাথে সাথে কিন্তু আমাদের পালাতে হবে। নির্ভেজাল বিস্ময়ের কাছে থাকতে নেই। এটা তারাই উপভোগ করুক। কেউ থাকলে বিস্ময় বিব্রত হয়।
- আচ্ছা। তুমি এক, দুই, তিন বলো।
- এক, দুই, তিন। চলো পালাই। এবার ওনাদের পালা।
- শোন, গেটের দারোয়ানের মাথাতেও একটা টোকা দিয়ে আসি?
- না। সে অবাক হবে না। এদের অবাক হওয়ার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে গেছে। বিত্তশালীদের বিকৃত ব্যাপার দেখে দেখে এদের মস্তিষ্ক আর অল্পতেই অবাক হয় না। অনেক বড় ধরনের ব্যাপারে এরা অবাক হয়।
- ওওও! এখন কি করবো?
- এখন ঘরে ফেরার পালা। ঘুড়ি যত উপরেই উঠুক তাকে একসময় নিচে নামতেই হয়। আমাদেরও এবার ফিরতে হবে। চলো ফিরে যাই।
- চলো।
ওদের কেউই জানলো না, ঘরের ভিতরের দম্পতি জনেরা এতটুকুও অবাক হয় নি। আসলে তাদেরও অবাক হওয়ার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে গেছে। খুব স্বাভাবিক ভাবেই নিজেদের আলাদা করে নিয়ে আবার আগের ভঙ্গিতেই শুয়ে পড়েছে। যেমন করে ঠিক আগের মত করে এখনো শুয়ে আছে কুঁড়ে ঘরের সেই বাচ্চাটি।
পার্থক্য এটাই যে, তার ঘুমের মাঝে শান্তির পরশ আছে। প্রকৃতি তাকে ঘিরে আনন্দ নৃত্য করছে আর এরা প্রকৃতিকে আসার রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে স্বপ্নের জগতে তাড়া খেয়ে বেড়াচ্ছে।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
ইঞ্জিনিয়ার সজীব ইমাম ২৯/০৯/২০১৪এতো ভালো লেগেছে যে , যে কোনো মন্তব্যই এর জন্য কম হয়ে যাবে। লেখাটা প্রিয়তে রেখে দিলাম।
-
মঞ্জুর হোসেন মৃদুল ২৮/০৯/২০১৪চমৎকার