ঝুমু
উৎসর্গ : একজন ঝুমু’র নামে।
_ অনিশ, অনিশ, এই অনিশ।
শীতের সময়কার রোদ অনেক চড়া হয়। তারপরেও রোদের মধ্যে থেকে দেহটাকে সরাতে ইচ্ছা করে না। কিন্তু এমন চড়া রোদের চাইতেও অনিশের কাছে মায়ের স্বরটা বেশি গরম মনে হচ্ছে। তাই অনিচ্ছা সত্বেও অনিশ’কে উঠে দাঁড়াতে হলো এবং খুব অলস ভঙ্গিতে সাড়া দিল, ‘আসছি।’
_ এই গাধা, এই টুকু আসতে এত সময় লাগে।
অনিশ মায়ের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। কি বলবে বুঝতে পারছে না। অনিশের এমন ভাব দেখে তার মা আরও খেপে গেলেন। পাশ থেকে একটা শুকনো কঞ্চি নিয়ে অনিশকে ধাওয়া করলেন। অনিশ চোখের পলকে মায়ের সামনে থেকে সরে গেল।
একটু দূরে গিয়ে রাগের সাথে চিৎকার করে বলতে থাকলো, ‘আমি কি করেছি। আমাকে মারবে কেন? কিছু না করলেও আমাকে মারো। আপুকে তো কিছু বলো না। আপু তো কখনো ঘরেই থাকে না । সব সময় বান্ধবীদের সাথে আড্ডা মারে তারপরেও আমাকেই শুধু মারো।’
_ ঐ শয়তানটাকেই তো খুঁজতেছি। আজকে যদি মাইর খেতে না চাস তাহলে ওকে ডেকে নিয়ে আয়। আজকে ওর কপালে দুঃখ আছে। ঐ, বলদের মত দাঁড়িয়ে আছিস কেন? ডেকে আনতে বললাম না?’
অনিশ আপন মনে বকতে বকতে আপুর খোঁজে বের হলো। আপুর নাম হলো ঝুমু। কিছুক্ষন পরেই ঝুমুকে সাথে নিয়ে অনিশ বাড়ির ভিতরে হাজিড় হলো। ওরা দুই ভাই বোন নিচু স্বরে কথা বলছে_
অনিশ : এত হাইসো না, আজকে তোমার খবর আছে, হুহ।
ঝুমু : ঐ ছোড়া, আমার কিসের খবর আছে রে? আমি কি করছি?
অনিশ : আম্মা তোমাকে বোঝাইয়া দিবে...... যাও।
ঝুমু : দেখুম নি। আমিও......।
ঝুমুর কথা শেষ হওয়ার আগেই ওদের মা ঘর থেকে বের হয়ে এসে একেবারে মুখোমুখি দাঁড়ালেন। ঝুমুকে দেখে পুরো তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন। কোন কথা না বলে, আগাম কোন সংকেত না দিয়েই ঝুমুর চুলের মুঠি ধরে ধুপ-ধাপ করে দুই-তিনটা কিল-ঘুষি বসিয়ে দিলেন পিঠের মধ্যে। ঝুমু ব্যাথায় পিঠ বাঁকা করে ফেললো কিন্তু কাঁদলো না। ঝুমু’কে মারতে দেখেই অনিশ এক ছুটে নিরাপদ দূরত্বে চলে গেল। দূর থেকে ছল ছল চোখে আপুর দিকে তাকিয়ে আছে। যতই ওরা সারাদিন ঝগড়া-ঝাটি, মারামারি করুক না কেন এই একটা সময়ে এসে ওরা একে অপরের জন্য দরদী হয়ে ওঠে কিন্তু কারোই কিছু করার থাকে না।
দুই চারটা কিল-ঘুষি মেরেই ক্ষ্যান্ত হলেন না ওদের মা। ঝুমুকে ইচ্ছে মত গালি-গালাজ করতে থাকলেন। যেন এর শেষ নেই। ঝুমু বারান্দার একটা খুটি ধরে দাঁড়িয়ে থাকলো। দুপুরে বাবা আসলো। ততক্ষনে মায়ের বকুনির ধার অনেকটাই কমে গেছে। বাবা ঝুমুকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হয়ে গেলেন। বাবা’রা মেয়েদের একটু বেশিই ভালবাসেন তাই অতি কোমল সুরে ঝুমুকে কাছে ডেকে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন, ‘কি হয়েছে রে মা? এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?’
ঝুমু নিশ্চুপ। এবার বাবা অনিশকে ডেকে জানতে চাইলো কিন্তু অনিশও কোন জবাব দিল না। উপায়ন্তর না দেখে অনিশকে বললো, ‘অনিশ, তোর মাকে গিয়ে বল আমি ডেকেছি।’
ওর মা এসে ঝাঁঝালো গলায় জিজ্ঞেস করলো, ‘কি বলবে বলো আমার কাজ আছে।’
_ কি ব্যাপার, ওদের কি হয়েছে। এত চুপচাপ কেন। ওদের মন খারাপ কেন?
_ এত আদর দেখাতে হবে না। তুমি মিছেই শুধু বাবা হয়েছিলে, না রাখো ঘরের খবর না রাখো বাইরের খবর। ইচ্ছে হচ্ছে বাড়ি থেকে তিনজনকেই বের করে দেই। অকর্মার ঢেঁকি সব। শুধু বসে বসে খেতে পারো তোমরা।
_ এত রেগে যাচ্ছ কেন? কি হয়েছে বলো?
_ আমাকে জিজ্ঞেস করছো কেন? তোমার শাহাজাদিকে জিজ্ঞেস করতে পারো না? আদর দিয়ে দিয়ে মাথায় তুলেছ আর পরিক্ষায় পায় আন্ডা।
_ কিরে মা, কি বলছে তোর মা। পরিক্ষায় বলে ঘোড়ার ডিম পেয়েছিস?
বাবা’র বলার ধরন দেখে ঝুমু ফিক করে হেসে ফেললো। এখন আর ঝুমুর মধ্যে কোন প্রকার ক্ষোভ, ভয় কিছুই নেই। দু চোখে চঞ্চলতা আর দুষ্টমি খেলা করছে। মা’কে এখন সূম্পর্ণ উপেক্ষা করে ঝুমু খিল খিল করে হেসেই চলছে। অদূরে দাঁড়িয়ে অনিশ ভয়ার্ত চোখে একবার মায়ের দিকে একবার ঝুমুর দিকে তাকাচ্ছে। মায়ের দু চোখ থেকে আগুন ঝরছে।
আগুন ঝরা চোখ নিয়েই ওদের মা ঝুমুর দিকে দু-পা এগুতেই ওদের বাবা বাঁধা দিলেন। তারপর শান্ত স্বরে ঝুমুকে বললেন, ‘কিরে মা, এত হাসছিস কেন?’
অনেক কষ্টে ঝুমু হাসি থামিয়ে বললো, ‘বাবা, ঘোড়া কি কখনো ডিম দেয়? যদি কখনো দেয় তাহলে তো সারা বিশ্বে হৈ হৈ রৈ রৈ পড়ে যেত। ঘোড়া ডিম দিয়ছে, ঘোড়া ডিম দিয়েছে। সেই ডিমের কি যে দাম হতো; এবার ঝুমু কিছুটা কৃত্তিম গম্ভির্যতার সাথে বললো, ‘সেই ঘোড়ার ডিম যদি আমি পাই তাহলে সেটা তো অনেক ভাল। কাউকে বলো না আর। তাহলে কিন্তু আমার থেকে কেড়ে নিয়ে যাবে; কথাগুলো বলেই আবার ঝুমু খিল খিল করে হাসতে শুরু করলো।
এবার আর ওদের মা’কে থামানো গেল না। খুব দ্রুত কাছে এসেই ধুপ করে দুইটা কিল বসিয়ে দিল পিঠের মধ্যে। ঝুমু যেন পাগল হয়ে গেছে। কিল খাওয়ার পরেও ঝুমুর হাসির কোন ব্যাঘাত ঘটলো না। ঝুমু হাসতেই থাকলো। একনাগারে ওদের মা ঝুমুকে গালাগালি করতে থাকলো। গালাগালির এক পর্যায়ে এসে বললো, ‘আর পড়াশোনা করতে হবে না। তোকে এবার বিয়ে দিয়ে দেব। রাজা-বাদশার সাথে না, মুচির ছেলের সাথে বিয়ে দেব।’
মা-বাবা’কে অবাক করে দিয়ে ঝুমু বলে উঠলো, ‘মুচির ছেলেতো মুচিই হবে। আমি রাজি। তোমরা বিয়ে ঠিক করো।’
মা বোকা বোকা চেহারা নিয়ে মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। ঝুমু খুব মজা পাচ্ছে। অনিশের চেহারাটা আরো ভিতু ভিতু হয়ে গেল। বাবাও অনেক অবাক হয়ে গেছেন।
সবার অবাক হওয়া মুখের উপরে ঝুমু জ্ঞানীজনের মত করে বলতে লাগলো, ‘নিউটন, আব্রাহাম লিঙ্কনও তো ছোটবেলায় মুচিগিরি করেছে। বড় হয়ে অত বড় বিখ্যাত হয়েছিল। আমার সাথে যাকে বিয়ে দেবে সেও একদিন নিউটন, আব্রাহাম লিঙ্কন এর মত কিছু হতে পারে। সে যখন নিউটন, আব্রাহাম হবে তখন আমার বিখ্যাত ঘোড়ার ডিমটা তাকে উপহার দেব। মা, তুমি আমার বিয়ের ব্যাবস্থা করো।’
ওদের মা কিছুক্ষন হা করে তাকিয়ে থেকে আচমকা পাশ থেকে একটা কঞ্চি নিয়ে ঝুমুর দিকে এগিয়ে গেলেন। এবার ঝুমু কোন সুযোগ দিল না। বলগা হরিনের মত মায়ের সামনে দিয়ে ছুটতে শুরু করলো আর বাতাসে ভাসতে থাকলো ঝুমুর খিল খিল হাসির শব্দ। অনিশও এখন ঝুমুর পাশাপাশি দৌড়াচ্ছে তবে অনিশ হাসছে না। অবাক হয়ে বোনের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। যার কারনেই ধপাস করে অনিশ পড়ে গেল। ঝুমু একটু দাঁড়িয়ে অনিশকে টেনে তুলে আবার দৌড়াতে শুরু করলো। এবার আর অনিশ বোনের মুখের দিকে তাকিয়ে দৌড়াচ্ছে না। মুহূর্তের মধ্যেই দুই ভাই-বোন বাবা-মায়ের চোখের আড়ালে হারিয়ে গেল।
পিছনে রেখে গেল মায়ের অগ্নিমূর্তি আর বাবার প্রাণখোলা হাসির রোল।
আকাশে বাতাসে ভাসছে শুধু একই রকম শব্দ। বাবার হাসির শব্দ।
হা হা হা হা হা হা হা হা হা।
_ অনিশ, অনিশ, এই অনিশ।
শীতের সময়কার রোদ অনেক চড়া হয়। তারপরেও রোদের মধ্যে থেকে দেহটাকে সরাতে ইচ্ছা করে না। কিন্তু এমন চড়া রোদের চাইতেও অনিশের কাছে মায়ের স্বরটা বেশি গরম মনে হচ্ছে। তাই অনিচ্ছা সত্বেও অনিশ’কে উঠে দাঁড়াতে হলো এবং খুব অলস ভঙ্গিতে সাড়া দিল, ‘আসছি।’
_ এই গাধা, এই টুকু আসতে এত সময় লাগে।
অনিশ মায়ের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। কি বলবে বুঝতে পারছে না। অনিশের এমন ভাব দেখে তার মা আরও খেপে গেলেন। পাশ থেকে একটা শুকনো কঞ্চি নিয়ে অনিশকে ধাওয়া করলেন। অনিশ চোখের পলকে মায়ের সামনে থেকে সরে গেল।
একটু দূরে গিয়ে রাগের সাথে চিৎকার করে বলতে থাকলো, ‘আমি কি করেছি। আমাকে মারবে কেন? কিছু না করলেও আমাকে মারো। আপুকে তো কিছু বলো না। আপু তো কখনো ঘরেই থাকে না । সব সময় বান্ধবীদের সাথে আড্ডা মারে তারপরেও আমাকেই শুধু মারো।’
_ ঐ শয়তানটাকেই তো খুঁজতেছি। আজকে যদি মাইর খেতে না চাস তাহলে ওকে ডেকে নিয়ে আয়। আজকে ওর কপালে দুঃখ আছে। ঐ, বলদের মত দাঁড়িয়ে আছিস কেন? ডেকে আনতে বললাম না?’
অনিশ আপন মনে বকতে বকতে আপুর খোঁজে বের হলো। আপুর নাম হলো ঝুমু। কিছুক্ষন পরেই ঝুমুকে সাথে নিয়ে অনিশ বাড়ির ভিতরে হাজিড় হলো। ওরা দুই ভাই বোন নিচু স্বরে কথা বলছে_
অনিশ : এত হাইসো না, আজকে তোমার খবর আছে, হুহ।
ঝুমু : ঐ ছোড়া, আমার কিসের খবর আছে রে? আমি কি করছি?
অনিশ : আম্মা তোমাকে বোঝাইয়া দিবে...... যাও।
ঝুমু : দেখুম নি। আমিও......।
ঝুমুর কথা শেষ হওয়ার আগেই ওদের মা ঘর থেকে বের হয়ে এসে একেবারে মুখোমুখি দাঁড়ালেন। ঝুমুকে দেখে পুরো তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন। কোন কথা না বলে, আগাম কোন সংকেত না দিয়েই ঝুমুর চুলের মুঠি ধরে ধুপ-ধাপ করে দুই-তিনটা কিল-ঘুষি বসিয়ে দিলেন পিঠের মধ্যে। ঝুমু ব্যাথায় পিঠ বাঁকা করে ফেললো কিন্তু কাঁদলো না। ঝুমু’কে মারতে দেখেই অনিশ এক ছুটে নিরাপদ দূরত্বে চলে গেল। দূর থেকে ছল ছল চোখে আপুর দিকে তাকিয়ে আছে। যতই ওরা সারাদিন ঝগড়া-ঝাটি, মারামারি করুক না কেন এই একটা সময়ে এসে ওরা একে অপরের জন্য দরদী হয়ে ওঠে কিন্তু কারোই কিছু করার থাকে না।
দুই চারটা কিল-ঘুষি মেরেই ক্ষ্যান্ত হলেন না ওদের মা। ঝুমুকে ইচ্ছে মত গালি-গালাজ করতে থাকলেন। যেন এর শেষ নেই। ঝুমু বারান্দার একটা খুটি ধরে দাঁড়িয়ে থাকলো। দুপুরে বাবা আসলো। ততক্ষনে মায়ের বকুনির ধার অনেকটাই কমে গেছে। বাবা ঝুমুকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হয়ে গেলেন। বাবা’রা মেয়েদের একটু বেশিই ভালবাসেন তাই অতি কোমল সুরে ঝুমুকে কাছে ডেকে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন, ‘কি হয়েছে রে মা? এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?’
ঝুমু নিশ্চুপ। এবার বাবা অনিশকে ডেকে জানতে চাইলো কিন্তু অনিশও কোন জবাব দিল না। উপায়ন্তর না দেখে অনিশকে বললো, ‘অনিশ, তোর মাকে গিয়ে বল আমি ডেকেছি।’
ওর মা এসে ঝাঁঝালো গলায় জিজ্ঞেস করলো, ‘কি বলবে বলো আমার কাজ আছে।’
_ কি ব্যাপার, ওদের কি হয়েছে। এত চুপচাপ কেন। ওদের মন খারাপ কেন?
_ এত আদর দেখাতে হবে না। তুমি মিছেই শুধু বাবা হয়েছিলে, না রাখো ঘরের খবর না রাখো বাইরের খবর। ইচ্ছে হচ্ছে বাড়ি থেকে তিনজনকেই বের করে দেই। অকর্মার ঢেঁকি সব। শুধু বসে বসে খেতে পারো তোমরা।
_ এত রেগে যাচ্ছ কেন? কি হয়েছে বলো?
_ আমাকে জিজ্ঞেস করছো কেন? তোমার শাহাজাদিকে জিজ্ঞেস করতে পারো না? আদর দিয়ে দিয়ে মাথায় তুলেছ আর পরিক্ষায় পায় আন্ডা।
_ কিরে মা, কি বলছে তোর মা। পরিক্ষায় বলে ঘোড়ার ডিম পেয়েছিস?
বাবা’র বলার ধরন দেখে ঝুমু ফিক করে হেসে ফেললো। এখন আর ঝুমুর মধ্যে কোন প্রকার ক্ষোভ, ভয় কিছুই নেই। দু চোখে চঞ্চলতা আর দুষ্টমি খেলা করছে। মা’কে এখন সূম্পর্ণ উপেক্ষা করে ঝুমু খিল খিল করে হেসেই চলছে। অদূরে দাঁড়িয়ে অনিশ ভয়ার্ত চোখে একবার মায়ের দিকে একবার ঝুমুর দিকে তাকাচ্ছে। মায়ের দু চোখ থেকে আগুন ঝরছে।
আগুন ঝরা চোখ নিয়েই ওদের মা ঝুমুর দিকে দু-পা এগুতেই ওদের বাবা বাঁধা দিলেন। তারপর শান্ত স্বরে ঝুমুকে বললেন, ‘কিরে মা, এত হাসছিস কেন?’
অনেক কষ্টে ঝুমু হাসি থামিয়ে বললো, ‘বাবা, ঘোড়া কি কখনো ডিম দেয়? যদি কখনো দেয় তাহলে তো সারা বিশ্বে হৈ হৈ রৈ রৈ পড়ে যেত। ঘোড়া ডিম দিয়ছে, ঘোড়া ডিম দিয়েছে। সেই ডিমের কি যে দাম হতো; এবার ঝুমু কিছুটা কৃত্তিম গম্ভির্যতার সাথে বললো, ‘সেই ঘোড়ার ডিম যদি আমি পাই তাহলে সেটা তো অনেক ভাল। কাউকে বলো না আর। তাহলে কিন্তু আমার থেকে কেড়ে নিয়ে যাবে; কথাগুলো বলেই আবার ঝুমু খিল খিল করে হাসতে শুরু করলো।
এবার আর ওদের মা’কে থামানো গেল না। খুব দ্রুত কাছে এসেই ধুপ করে দুইটা কিল বসিয়ে দিল পিঠের মধ্যে। ঝুমু যেন পাগল হয়ে গেছে। কিল খাওয়ার পরেও ঝুমুর হাসির কোন ব্যাঘাত ঘটলো না। ঝুমু হাসতেই থাকলো। একনাগারে ওদের মা ঝুমুকে গালাগালি করতে থাকলো। গালাগালির এক পর্যায়ে এসে বললো, ‘আর পড়াশোনা করতে হবে না। তোকে এবার বিয়ে দিয়ে দেব। রাজা-বাদশার সাথে না, মুচির ছেলের সাথে বিয়ে দেব।’
মা-বাবা’কে অবাক করে দিয়ে ঝুমু বলে উঠলো, ‘মুচির ছেলেতো মুচিই হবে। আমি রাজি। তোমরা বিয়ে ঠিক করো।’
মা বোকা বোকা চেহারা নিয়ে মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। ঝুমু খুব মজা পাচ্ছে। অনিশের চেহারাটা আরো ভিতু ভিতু হয়ে গেল। বাবাও অনেক অবাক হয়ে গেছেন।
সবার অবাক হওয়া মুখের উপরে ঝুমু জ্ঞানীজনের মত করে বলতে লাগলো, ‘নিউটন, আব্রাহাম লিঙ্কনও তো ছোটবেলায় মুচিগিরি করেছে। বড় হয়ে অত বড় বিখ্যাত হয়েছিল। আমার সাথে যাকে বিয়ে দেবে সেও একদিন নিউটন, আব্রাহাম লিঙ্কন এর মত কিছু হতে পারে। সে যখন নিউটন, আব্রাহাম হবে তখন আমার বিখ্যাত ঘোড়ার ডিমটা তাকে উপহার দেব। মা, তুমি আমার বিয়ের ব্যাবস্থা করো।’
ওদের মা কিছুক্ষন হা করে তাকিয়ে থেকে আচমকা পাশ থেকে একটা কঞ্চি নিয়ে ঝুমুর দিকে এগিয়ে গেলেন। এবার ঝুমু কোন সুযোগ দিল না। বলগা হরিনের মত মায়ের সামনে দিয়ে ছুটতে শুরু করলো আর বাতাসে ভাসতে থাকলো ঝুমুর খিল খিল হাসির শব্দ। অনিশও এখন ঝুমুর পাশাপাশি দৌড়াচ্ছে তবে অনিশ হাসছে না। অবাক হয়ে বোনের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। যার কারনেই ধপাস করে অনিশ পড়ে গেল। ঝুমু একটু দাঁড়িয়ে অনিশকে টেনে তুলে আবার দৌড়াতে শুরু করলো। এবার আর অনিশ বোনের মুখের দিকে তাকিয়ে দৌড়াচ্ছে না। মুহূর্তের মধ্যেই দুই ভাই-বোন বাবা-মায়ের চোখের আড়ালে হারিয়ে গেল।
পিছনে রেখে গেল মায়ের অগ্নিমূর্তি আর বাবার প্রাণখোলা হাসির রোল।
আকাশে বাতাসে ভাসছে শুধু একই রকম শব্দ। বাবার হাসির শব্দ।
হা হা হা হা হা হা হা হা হা।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
রূপক বিধৌত সাধু ২১/০৯/২০১৪শীতের হবে । ভাল লাগল ।
-
তাইবুল ইসলাম ১৬/০৯/২০১৪খুব মিষ্টি
:-)
শুভকামনা রইল -
মঞ্জুর হোসেন মৃদুল ১৬/০৯/২০১৪বেশ বেশ বেশ ভাল লাগল।
-
অ ১৬/০৯/২০১৪আসলে এইসব বকাঝকা, মার দেওয়া সবকিছুর ভিতরেই আছে এক ধরনের ভালবাসা । এই বিষয়টা ভালো লাগল ।
তবে সমাপ্তিটা আরো ভালো হতে পারত । -
ইঞ্জিনিয়ার সজীব ইমাম ১৬/০৯/২০১৪মূলকথা কি?
-
একনিষ্ঠ অনুগত ১৬/০৯/২০১৪ভালোই লাগলো।।