ভ্যালেন্টাইন্স ডে
মন মেজাজটা গত ১সপ্তাহ হল অনেক খারাপ হয়ে আছে। তাই আজ মামা্র বাসায় এসেছি। কিছুদিন থাকবো বলে। মামার বাসা বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে। মামা নতুন বাড়ি কিনেছেন। বাড়িটা নদীর পাশেই। বাড়ির চারিদিকে গাছ-গাছালিতে ভরা। বাড়িটাও অনেক পুরাতন কিন্তু ভেঙ্গে পড়েনি একটুও। বোঝা যাচ্ছে, এ বাড়িটা আগে যার ছিল সে সবকিছুর যত্ন নিতে জানতো।
মামা-মামি আমাকে দেখে অনেক খুশি হয়েছেন। আদর-যত্নে আর কথায় আমাকে প্রায় অতিষ্ঠ করে তুলেছেন। কিন্তু আমি জানি, এই ভালোবাসার যন্ত্রনা করার প্রধান কারন হল, মামা-মামি আজও নিঃসন্তান। আমাকে যে রুমে থাকতে দেওয়া হয়েছে, সেই রুমে প্রায় আসবাবাপত্রই পুরানো। রুমের ভিতর বুক সেলফও আছে। বুক সেলফ এ অনেক বইও আছে। সেলফ থেকে একটা বই নিতে গিয়ে দেখি সেলফের উপরে একটা পুরানো ডায়েরী পড়ে আছে। ডায়েরীর উপরে ধূলার পুরো জমাট পরেছে। ধূলা ঝেরে মলাটের ভাঁজ খুললাম। প্রথম পৃষ্ঠায় শুধু নাম লেখা আছে, ‘অর্পিতা সেন মিশু।’ তারপর অনেকগুলো পেজ ফাঁকা। কিছুই লেখা হয় নি। আমি বিরক্ত হয়ে ডায়েরীটা রেখে দিয়ে সূনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর একটা বই নিয়ে পড়তে লাগলাম। এই সময় মামি, সরিষার তেল, কাঁচা মরিচ, লবন দিয়ে কাঁচা পেঁপে বানিয়ে নিয়ে ঘড়ে প্রবেশ করলেন। পেঁপে বানানো খেতে খেতে অতিরিক্ত ঝালে আমার চোখ দিয়ে জল বের হতে লাগলো। তাই দেখে মামি হেসে খুন হয়ে যাচ্ছে। আমি তাড়াতাড়ি পানি খেয়ে শিস পারতে পারতে বললাম, “এতবড় ভুতুরে বাড়িতে আপনারা থাকেন কিভাবে!! ভয় করে না”?
মামি বললো, “এটা তো আসলেই ভুতুরে বাড়ি। এখানে দুইটা ভুতও থাকে। তোমার মামাকে এ বাড়ি বদলাতে বললেই বলে, এত সুন্দর বাড়ি আর কি কোথাও পাওয়া যাবে? আর ভুতের চিন্তা মাথা থেকে বের করে দাও। পৃথিবীতে ভুত বলে কিছু নেই।”
মামির কথার ধরন শুনে আমি হেসে ফেললাম। বললাম, “সত্যিই ভুত-টুত কিছু থাকে নাকি?”
মামি দুঃখিত কন্ঠে বলল, “তুমি হাসছো!! হাসবেই তো। তুমি তো আর এ বাড়ির কোন গল্প জানো না।”
আমি অতি কষ্টে হাসি বন্ধ করে বললাম, “আপনি তো কোন গল্প বলেন নাই। তাহলে জানবো কিভাবে!!”
মামি ভয়ে ভয়ে কথা বলতে লাগলো, “এ বাড়িতে আগে একটা বৃদ্ধ থাকতো। একা একা। কখনো বিয়ে-সাধি করে নি। বৃদ্ধ, যৌবন বয়সে একটা মেয়েকে ভালোবাসতো এবং মেয়েটা বৃদ্ধের জন্যেই মারা যায়। মেয়েটা হিন্দু ছিল। ঐ মেয়ের ভুত এই বাড়িতেই বৃদ্ধের সাথে থাকতো। বৃদ্ধও এই বাড়িতেই মারা গেছে। মরে ভুত হয়ে দুইজন এই বাড়িতেই থাকে। আমি দুই রাত ওদের দেখেছি।”
বাইরে থেকে মামার ডাক শুনে মামি চলে গেল। আমি আবার বুক সেলফের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে সেই বৃদ্ধের ভালোবাসার মেয়েটার নামই ছিল, অর্পিতা সেন মিশু। আমি আস্তে আস্তে ডায়েরীর পাতাগুলো উল্টাতে থাকলাম। ডায়েরীর মাঝা-মাঝি অংশে একটা লেখা দেখে পড়তে শুরু করলাম, “আমি আমার ধর্মকে ভালোবাসি, পুবিলকেও ভালোবাসি। বাবা-মাকেও ভালোবাসি। পুবিলের জন্য ধর্ম এবং বাবা-মাকে ছাড়া আমার পক্ষে সম্ভব না। আবার, ধর্ম এবং বাবা-মার জন্য পুবিলকে ছাড়াও আমার পক্ষে সম্ভব না। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, নিজেই নিজেকে মুক্তি দিয়ে দেবো। মা, বাবা। আমাকে ক্ষমা করে দিও। হে ভগবান, আত্নহত্যা করা ছাড়া আমার কোন উপায় নাই। ড্রাগসের ইঞ্জেকশানটা হাত দিয়ে ধরে আছি। হাতটা খুব কাঁপছে। খুব কান্না পাচ্ছে আমার। পাশের রুমে বাবা-মা শুয়ে আছে। বাবা-মাকে দেখার খুব ইচ্ছে হচ্ছে। পুবিলের সাথে কথা বলতেও খুব ইচ্ছে হচ্ছে। ইঞ্জেকশান হাতে পুশ করলাম। এখন আর কিছু করার নাই। সকালে যখন মিতু আমার মৃত মুখটা দেখবে তখন তো ও অনেক কাঁদবে। আমি আমার ছোট্ট আপুটাকে কাঁদাবো!! আমি বাবা-মাকে কাঁদাবো!! পুবিলকে কষ্টের সাগরে ভাসিয়ে দিলাম!!
আমার মৃত্যুর জন্য ভালোবাসা দায়ী। এই ভালোবাসার জন্যই-তো আমি কাউকে ছাড়তে পারলাম না।
গলার ভিতর একটা কষ্ট আটকে আছে। এটা পুবিলকে না পাওয়ার কষ্ট, হারানোর কষ্ট। বারবার বাবা-মার ঘড়ের দিকে চোখ যাচ্ছে। মনে হচ্ছে ছুটে গিয়ে বাবা-মাকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কাঁদি। কেঁদে কেঁদে কষ্টগুলোকে বুক থেকে ঝেড়ে ফেলে দেই। আমি আর লিখতে পারছি না। চোখের পাতা নাড়াতে পারছি না।
পুবিল ভালো থেকো। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। আনেক ভালোবাসি। আমার ভিতর এখন দুটো ইচ্ছে কাজ করছে। পুবিল তোমার বুকেও মাথা রাখার ইচ্ছে হচ্ছে আবার, মা-কে জড়িয়ে ধরেও শেষ ঘুমটা দেওয়ার ইচ্ছে হচ্ছে। আর লিখতে পারছি না। ঘুমে চোখ জড়িয়ে আসছে।
বিদায়!! আমার ভালোবাসারা। আর পৃথিবী।
পুবিল, যদি কখনও ডায়েরীটা তুমি পাও তাহলে তুমি এটা……।”
বুঝতে পারলাম বৃদ্ধের নাম ছিল পুবিল। পরের কোন পৃষ্ঠাতে আর লেখা পেলাম না।
হঠাৎ করে আমার চোখের সামনে সাবা’র করুন চেহারাটা ভেসে উঠলো। আমি আর কিছু ভাবতে পারলাম না। কিছুক্ষন পরেই মামা-মামির সকল অনুরোধ উপেক্ষা করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। কারন, আমার জন্য যে সাবা অপেক্ষা করছে। অপেক্ষা করতে করতে যখন দেখবে যে আমি যাচ্ছি না তখন, যদি ও আত্নহত্যা করে। তাহলে, আমি কি ভাবে বাঁচবো। চিন্তায় আমার মাথাটা বনবন করে ঘুরছে। বাসের ড্রাইভাড়ের উপর চরম মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে। গাড়ি এত আস্তে চালাচ্ছে কেন? সাবা অনেক আবেগময়ী মেয়ে। যদি, মিশুর মত কিছু করে বসে। অনেকক্ষন হল কল দিচ্ছি কিন্তু ওর মোবাইলের সুইস অফ। আচ্ছা, এর মাঝে কোন দূর্ঘটনা ঘটে যায় নি তো আবার। হঠাৎ করেই বুঝতে পারলাম, নিঃশ্বাস নিতে অনেক কষ্ট হচ্ছে আমার।
যেদিন সাবা এসে আমাকে বললো, “বাসা থেকে আমাকে বিয়ের কথা বলা হচ্ছে। তুমি আমাকে বিয়ে করবে কবে বলো?”
আমি প্রথমে ওকে বুঝালাম এখন আমার পক্ষে ওকে বিয়ে করা সম্ভব না। এখনও আমি ভালো কোন চাকরি পাই নি। তাছাড়া বাবা-মা এখন আমাদের বিয়েটা মেনেও নেবে না। কিন্তু আমার কথা সাবা বুঝতেই চেষ্টা করলো না। এক কথা যখন বারবার বলতেই লাগলো তখন ওর সাথে প্রচন্ড রাগারাগি করলাম। ও কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল।
ভাবছি ঢাকাই গিয়েই সাবাকে বিয়ে করবো। তারপর যা হবার হবে। প্রিয় মানুষকে হারিয়ে কষ্টে থাকার চাইতে, বুকে জড়িয়ে রেখে কষ্টে থাকা অনেক ভালো।
পকেটের ভিতর মোবাইলে মেসেজের টোনটা বেঁজে উঠতেই আমি মোবাইল টা বের করে মেসেজটা পড়তে গিয়েই চমকে উঠলাম। আমার এক বন্ধু ভ্যালেন্টাইন্স ডে উপলক্ষে একটা মেসেজ দিয়েছে। মিশু তো এই ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তেই আত্নহত্যা করেছিল। আচ্ছা, সাবা কি এখন ড্রাগসের কোন সিরিঞ্জ নিয়ে আমার কথা ভাবছে নাতো। আর কিছু ভাবতে পারলাম না। মাথাটা ঝিম ঝিম করছে। বুকের ভিতরে হাতুরি পেটানোর মত শব্দ হচ্ছে। চরম উৎকন্ঠা নিয়ে বসে আছি কখন ঢাকায় পৌঁছাবো। বাসটা যেন আরও ধিরগতীতে চলছে। জ্যোৎস্না রাতের এই রহস্যময় পৃথিবীর বুকে পিচঢালা কালো রাস্তাটা সামনেই দেখাচ্ছে অনিশ্চয়তার ভবিষ্যত। যেখানে হয়তোবা হাসি, কান্না অথবা মৃত্যু অপেক্ষা করছে।
মামা-মামি আমাকে দেখে অনেক খুশি হয়েছেন। আদর-যত্নে আর কথায় আমাকে প্রায় অতিষ্ঠ করে তুলেছেন। কিন্তু আমি জানি, এই ভালোবাসার যন্ত্রনা করার প্রধান কারন হল, মামা-মামি আজও নিঃসন্তান। আমাকে যে রুমে থাকতে দেওয়া হয়েছে, সেই রুমে প্রায় আসবাবাপত্রই পুরানো। রুমের ভিতর বুক সেলফও আছে। বুক সেলফ এ অনেক বইও আছে। সেলফ থেকে একটা বই নিতে গিয়ে দেখি সেলফের উপরে একটা পুরানো ডায়েরী পড়ে আছে। ডায়েরীর উপরে ধূলার পুরো জমাট পরেছে। ধূলা ঝেরে মলাটের ভাঁজ খুললাম। প্রথম পৃষ্ঠায় শুধু নাম লেখা আছে, ‘অর্পিতা সেন মিশু।’ তারপর অনেকগুলো পেজ ফাঁকা। কিছুই লেখা হয় নি। আমি বিরক্ত হয়ে ডায়েরীটা রেখে দিয়ে সূনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর একটা বই নিয়ে পড়তে লাগলাম। এই সময় মামি, সরিষার তেল, কাঁচা মরিচ, লবন দিয়ে কাঁচা পেঁপে বানিয়ে নিয়ে ঘড়ে প্রবেশ করলেন। পেঁপে বানানো খেতে খেতে অতিরিক্ত ঝালে আমার চোখ দিয়ে জল বের হতে লাগলো। তাই দেখে মামি হেসে খুন হয়ে যাচ্ছে। আমি তাড়াতাড়ি পানি খেয়ে শিস পারতে পারতে বললাম, “এতবড় ভুতুরে বাড়িতে আপনারা থাকেন কিভাবে!! ভয় করে না”?
মামি বললো, “এটা তো আসলেই ভুতুরে বাড়ি। এখানে দুইটা ভুতও থাকে। তোমার মামাকে এ বাড়ি বদলাতে বললেই বলে, এত সুন্দর বাড়ি আর কি কোথাও পাওয়া যাবে? আর ভুতের চিন্তা মাথা থেকে বের করে দাও। পৃথিবীতে ভুত বলে কিছু নেই।”
মামির কথার ধরন শুনে আমি হেসে ফেললাম। বললাম, “সত্যিই ভুত-টুত কিছু থাকে নাকি?”
মামি দুঃখিত কন্ঠে বলল, “তুমি হাসছো!! হাসবেই তো। তুমি তো আর এ বাড়ির কোন গল্প জানো না।”
আমি অতি কষ্টে হাসি বন্ধ করে বললাম, “আপনি তো কোন গল্প বলেন নাই। তাহলে জানবো কিভাবে!!”
মামি ভয়ে ভয়ে কথা বলতে লাগলো, “এ বাড়িতে আগে একটা বৃদ্ধ থাকতো। একা একা। কখনো বিয়ে-সাধি করে নি। বৃদ্ধ, যৌবন বয়সে একটা মেয়েকে ভালোবাসতো এবং মেয়েটা বৃদ্ধের জন্যেই মারা যায়। মেয়েটা হিন্দু ছিল। ঐ মেয়ের ভুত এই বাড়িতেই বৃদ্ধের সাথে থাকতো। বৃদ্ধও এই বাড়িতেই মারা গেছে। মরে ভুত হয়ে দুইজন এই বাড়িতেই থাকে। আমি দুই রাত ওদের দেখেছি।”
বাইরে থেকে মামার ডাক শুনে মামি চলে গেল। আমি আবার বুক সেলফের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে সেই বৃদ্ধের ভালোবাসার মেয়েটার নামই ছিল, অর্পিতা সেন মিশু। আমি আস্তে আস্তে ডায়েরীর পাতাগুলো উল্টাতে থাকলাম। ডায়েরীর মাঝা-মাঝি অংশে একটা লেখা দেখে পড়তে শুরু করলাম, “আমি আমার ধর্মকে ভালোবাসি, পুবিলকেও ভালোবাসি। বাবা-মাকেও ভালোবাসি। পুবিলের জন্য ধর্ম এবং বাবা-মাকে ছাড়া আমার পক্ষে সম্ভব না। আবার, ধর্ম এবং বাবা-মার জন্য পুবিলকে ছাড়াও আমার পক্ষে সম্ভব না। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, নিজেই নিজেকে মুক্তি দিয়ে দেবো। মা, বাবা। আমাকে ক্ষমা করে দিও। হে ভগবান, আত্নহত্যা করা ছাড়া আমার কোন উপায় নাই। ড্রাগসের ইঞ্জেকশানটা হাত দিয়ে ধরে আছি। হাতটা খুব কাঁপছে। খুব কান্না পাচ্ছে আমার। পাশের রুমে বাবা-মা শুয়ে আছে। বাবা-মাকে দেখার খুব ইচ্ছে হচ্ছে। পুবিলের সাথে কথা বলতেও খুব ইচ্ছে হচ্ছে। ইঞ্জেকশান হাতে পুশ করলাম। এখন আর কিছু করার নাই। সকালে যখন মিতু আমার মৃত মুখটা দেখবে তখন তো ও অনেক কাঁদবে। আমি আমার ছোট্ট আপুটাকে কাঁদাবো!! আমি বাবা-মাকে কাঁদাবো!! পুবিলকে কষ্টের সাগরে ভাসিয়ে দিলাম!!
আমার মৃত্যুর জন্য ভালোবাসা দায়ী। এই ভালোবাসার জন্যই-তো আমি কাউকে ছাড়তে পারলাম না।
গলার ভিতর একটা কষ্ট আটকে আছে। এটা পুবিলকে না পাওয়ার কষ্ট, হারানোর কষ্ট। বারবার বাবা-মার ঘড়ের দিকে চোখ যাচ্ছে। মনে হচ্ছে ছুটে গিয়ে বাবা-মাকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কাঁদি। কেঁদে কেঁদে কষ্টগুলোকে বুক থেকে ঝেড়ে ফেলে দেই। আমি আর লিখতে পারছি না। চোখের পাতা নাড়াতে পারছি না।
পুবিল ভালো থেকো। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। আনেক ভালোবাসি। আমার ভিতর এখন দুটো ইচ্ছে কাজ করছে। পুবিল তোমার বুকেও মাথা রাখার ইচ্ছে হচ্ছে আবার, মা-কে জড়িয়ে ধরেও শেষ ঘুমটা দেওয়ার ইচ্ছে হচ্ছে। আর লিখতে পারছি না। ঘুমে চোখ জড়িয়ে আসছে।
বিদায়!! আমার ভালোবাসারা। আর পৃথিবী।
পুবিল, যদি কখনও ডায়েরীটা তুমি পাও তাহলে তুমি এটা……।”
বুঝতে পারলাম বৃদ্ধের নাম ছিল পুবিল। পরের কোন পৃষ্ঠাতে আর লেখা পেলাম না।
হঠাৎ করে আমার চোখের সামনে সাবা’র করুন চেহারাটা ভেসে উঠলো। আমি আর কিছু ভাবতে পারলাম না। কিছুক্ষন পরেই মামা-মামির সকল অনুরোধ উপেক্ষা করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। কারন, আমার জন্য যে সাবা অপেক্ষা করছে। অপেক্ষা করতে করতে যখন দেখবে যে আমি যাচ্ছি না তখন, যদি ও আত্নহত্যা করে। তাহলে, আমি কি ভাবে বাঁচবো। চিন্তায় আমার মাথাটা বনবন করে ঘুরছে। বাসের ড্রাইভাড়ের উপর চরম মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে। গাড়ি এত আস্তে চালাচ্ছে কেন? সাবা অনেক আবেগময়ী মেয়ে। যদি, মিশুর মত কিছু করে বসে। অনেকক্ষন হল কল দিচ্ছি কিন্তু ওর মোবাইলের সুইস অফ। আচ্ছা, এর মাঝে কোন দূর্ঘটনা ঘটে যায় নি তো আবার। হঠাৎ করেই বুঝতে পারলাম, নিঃশ্বাস নিতে অনেক কষ্ট হচ্ছে আমার।
যেদিন সাবা এসে আমাকে বললো, “বাসা থেকে আমাকে বিয়ের কথা বলা হচ্ছে। তুমি আমাকে বিয়ে করবে কবে বলো?”
আমি প্রথমে ওকে বুঝালাম এখন আমার পক্ষে ওকে বিয়ে করা সম্ভব না। এখনও আমি ভালো কোন চাকরি পাই নি। তাছাড়া বাবা-মা এখন আমাদের বিয়েটা মেনেও নেবে না। কিন্তু আমার কথা সাবা বুঝতেই চেষ্টা করলো না। এক কথা যখন বারবার বলতেই লাগলো তখন ওর সাথে প্রচন্ড রাগারাগি করলাম। ও কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল।
ভাবছি ঢাকাই গিয়েই সাবাকে বিয়ে করবো। তারপর যা হবার হবে। প্রিয় মানুষকে হারিয়ে কষ্টে থাকার চাইতে, বুকে জড়িয়ে রেখে কষ্টে থাকা অনেক ভালো।
পকেটের ভিতর মোবাইলে মেসেজের টোনটা বেঁজে উঠতেই আমি মোবাইল টা বের করে মেসেজটা পড়তে গিয়েই চমকে উঠলাম। আমার এক বন্ধু ভ্যালেন্টাইন্স ডে উপলক্ষে একটা মেসেজ দিয়েছে। মিশু তো এই ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তেই আত্নহত্যা করেছিল। আচ্ছা, সাবা কি এখন ড্রাগসের কোন সিরিঞ্জ নিয়ে আমার কথা ভাবছে নাতো। আর কিছু ভাবতে পারলাম না। মাথাটা ঝিম ঝিম করছে। বুকের ভিতরে হাতুরি পেটানোর মত শব্দ হচ্ছে। চরম উৎকন্ঠা নিয়ে বসে আছি কখন ঢাকায় পৌঁছাবো। বাসটা যেন আরও ধিরগতীতে চলছে। জ্যোৎস্না রাতের এই রহস্যময় পৃথিবীর বুকে পিচঢালা কালো রাস্তাটা সামনেই দেখাচ্ছে অনিশ্চয়তার ভবিষ্যত। যেখানে হয়তোবা হাসি, কান্না অথবা মৃত্যু অপেক্ষা করছে।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
কামরুজ্জামান সাদ ২৬/১২/২০১৭ভালো।
-
ইঞ্জিনিয়ার সজীব ইমাম ৩০/০৯/২০১৪রোমান্টিক প্রেমময় একটা লেখা।
-
অ ১১/০৯/২০১৪ভালো লাগল গল্পটা ।