মানবী
ভালোবাসার যন্ত্রনা, বড় কঠিন যন্ত্রনা।
আমি মানুষ হতে চাই না। মানুষ হয়ে বেঁচে থাকার মাঝে অনেক সমস্যা আছে। মায়া, মোহ, বাঁধন, আবেগ, বিশ্বাস, সুখ-দুঃখ, ভালোবাসা সব এক সাথে মানুষকে আষ্টে-পৃষ্ঠে বেঁধে রাখে।
এই জগা-খিঁচুরি থেকে আলাদা হয়ে থাকার কোন ক্ষমতা মানুষের নেই। ভালোবাসা, বিশ্বাস এবং দুঃখ মানুষের জীবনকে কুড়ে কুড়ে খায়। এক সময় নিস্তেজ হয়ে যায় এবং মৃত মানুষের মত জীবন যাপন করতে হয়।
নিজেকে জানোয়ার বানানোর চেষ্টায় আছি। পুরোপুরি জানোয়ার এখনো হতে পারিনি তাই এখনো মানবীকে নিজের মাঝে সৃষ্টি করতে পারি, ওর সাথে কথা বলতে পারি, ওকে রাগাতে পারি কিন্তু সীমার বাইরে কিছু করতে পারি না।
ভালোবাসা, সুখ-দুঃখের গান এগুলো কোন কিছুর মধ্যে দিয়েই মানবীকে আমি নিয়ে যেতে পারি না। কারন, আমার মন যে অর্ধ মানবের মন।
ঘন্টা খানেক হলো ফুটপাথের উপর বসে আছি।
মানবীর আসার কথা।
মানবীর ভালো নাম শিশির। কিন্তু আমি ওকে মানবী’ই বলে ডাকি। কখনো কখনো মেয়ে বলেও ডাকি। তবে, শিশির নামটা নাকি ওর’ই দেওয়া।
ঘন্টাখানেক হয়ে গেল এখনো আসছে না। আমি বসেই আছি।
সামনে তিন জন রাস্তার সন্তান বসে আছে। ওদের দৈনিক দিনাতিপাতের গল্প শুনছি। হঠাৎ বুঝতে পারলাম পিছনে কেউ এসে দাঁড়িয়েছে। ঘাড় ঘুড়িয়ে পিছনে তাকালাম। মানবী আমার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। ১০০ টাকার একটা কড়কড়ে নোট দিয়ে রাস্তার সন্তানদের বিদায় করলাম। অন্য কোন দিন হলে ওদের সাথে ফুচকা খেতাম। কারন, আমি তো নিম্ন শ্রেণির প্রাণীই হতে চাই। ওরাও তো সভ্য মানুষের কাছে নিম্ন শ্রেনীর প্রাণী।
মানবী আমার পাশে বসলো। আবার আমি মানবীর দিকে তাকালাম। এবার তাকিয়েই থাকলাম। এর আগেও একবার দেখেছি তারপরেও মনে হলো, আজই প্রথম দেখলাম।
আমি নির্ভেজাল বিস্ময় নিয়ে তাকিয়েই আছি। পরিচিত কারও দিকে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকলে তার মধ্যে অস্বস্তির একটা ভাব চলে আসে। কিন্তু মানবীর ভিতর কোন প্রকার অস্বস্তি দেখলাম না আমি। সূম্পর্ন স্বাভাবিক মুখটাকে রাগে লাল হতে দেখছি।
কিছু কিছু মানুষের মুখের জন্মই হয় মায়া ধরে রাখার জন্য। এই মুখগুলো যদি হঠাৎ করে রেগে যায় তাহলে আশেপাশের মানুষের মাঝে ভয়ের ভাব সৃষ্টি হয়।
কিন্তু আমি ভয় পেলাম না। এই নতুন পরিবর্তনের দিকে আরো অবাক হয়ে তাকিয়েই থাকলাম।
মানবী অনেক রাগী স্বরে কথা বলে উঠলো, ‘আপনি আর আমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করবেন না।’
আমি বললাম, ‘ঠিক আছে। করবো না।’
__ আপনি আমার সাথে ফেসবুকেও চ্যাট করবেন না।
আমি আবারো বললাম, ‘ঠিক আছে। করবো না।’
মানবী চুপ হয়ে গেল এবং হঠাৎ করেই বুঝতে পারলো সে আর কোন কথা খুঁজে পাচ্ছে না। রাগ দেখানোর মত কোন কথা খুঁজে না পাওয়ার কারনে মানবী যখন চুপ মেরে গেল তখন আমি উঠে দাঁড়ালাম।
মানবী আমার দিকে তাকালো।
আমি অতি নরম সুরে বললাম, ‘মেয়ে, আমি এখন যাই।’
মানবীর কোন কথা না শুনেই আমি হাঁটতে শুরু করলাম। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে, মানবী আমার দিকে অনেক করুন চোখে তাকিয়ে ছিল। সেই চখে আরো কিছুক্ষন বসে থাকার আর্তি ছিল।
কিন্তু, আমি যে কোন মায়ায় জড়তে চাই না। আমি যে এক জানোয়ার মানব হতে চাই।
মানবী হলো শিশির কন্যা। ঘাসকে বিশ্বাস করে অনেক ভালোবেসে আঁকড়ে ধরে ছিল। কিন্তু সেই ঘাস এক শিশির নিয়ে তুষ্ট নয়। তাই আজ শিশিরকে কষ্ট নিয়ে বাতাসে ভেসে বেড়াতে হচ্ছে।
ভালোবাসা, বিশ্বাস এবং কষ্টে জর্জরিত এই মানবীকে সঙ্গ দেওয়ার মত কোন যোগ্যতাই নেই আমার।
আমি পিছনে তাকালাম। মানবী মাথা নিচের দিকে দিয়ে বসে আছে। কিন্তু আমি জানি, ও মানবী না।
মানবী হতে পারে না। কারন, মানবী মারা গেছে। কেন আমি মানবীকে বার বার সৃষ্টি করি তা আমি নিজেও জানি না।
মানবীকে সৃষ্টি করতে পারলেও আমি মানুষের কল্পনার মত কিছুই করতে পারি না। সীমার বাইরে আমি যেতে পারি না। স্বাভাবিক অবস্থায় একজন মানুষ, কল্পনায় পরিচিত অপরিচিত যে কাউকে সৃষ্টি করে ভালোবাসতে পারে, ভালোবাসাতে পারে, স্বপ্ন দেখতে পারে, স্বপ্ন দেখাতে পারে, সুখের বাতাসে ভাসতে পারে। কিন্তু, আমি এর কোনটাই পারি না।
কারন, আমার শুধুমাত্র অর্ধ মানবের মন আছে। এর কারনে আমি ওকে শুধু সৃষ্টি করতে পারি, সীমার মধ্যে কিছু কথা বলতে পারি। আর কিছুই করতে পারি না।
যেদিন আমার মন পুরো মানব মুক্ত হয়ে যাবে সেদিন হয়তো আমি মানবীকে ভুলে যাবো। ওকে সৃষ্টি করা আর আমার পক্ষে সম্ভব হবে না। হয়তো এটাও ভুলে যাবো, ওর মুখে শোনা সবচাইতে সুন্দর সম্বোধন, ‘মানব, আমার সাথে একটু কথা বলবেন?’
আমি মানব হয়ে যাবো এক জানোয়ার মানব। যে মানব, মানবীকে আর একটু কল্পনাও করতে পারবে না।
কি অদ্ভুত!!
আমি মানুষ হতে চাই না। মানুষ হয়ে বেঁচে থাকার মাঝে অনেক সমস্যা আছে। মায়া, মোহ, বাঁধন, আবেগ, বিশ্বাস, সুখ-দুঃখ, ভালোবাসা সব এক সাথে মানুষকে আষ্টে-পৃষ্ঠে বেঁধে রাখে।
এই জগা-খিঁচুরি থেকে আলাদা হয়ে থাকার কোন ক্ষমতা মানুষের নেই। ভালোবাসা, বিশ্বাস এবং দুঃখ মানুষের জীবনকে কুড়ে কুড়ে খায়। এক সময় নিস্তেজ হয়ে যায় এবং মৃত মানুষের মত জীবন যাপন করতে হয়।
নিজেকে জানোয়ার বানানোর চেষ্টায় আছি। পুরোপুরি জানোয়ার এখনো হতে পারিনি তাই এখনো মানবীকে নিজের মাঝে সৃষ্টি করতে পারি, ওর সাথে কথা বলতে পারি, ওকে রাগাতে পারি কিন্তু সীমার বাইরে কিছু করতে পারি না।
ভালোবাসা, সুখ-দুঃখের গান এগুলো কোন কিছুর মধ্যে দিয়েই মানবীকে আমি নিয়ে যেতে পারি না। কারন, আমার মন যে অর্ধ মানবের মন।
ঘন্টা খানেক হলো ফুটপাথের উপর বসে আছি।
মানবীর আসার কথা।
মানবীর ভালো নাম শিশির। কিন্তু আমি ওকে মানবী’ই বলে ডাকি। কখনো কখনো মেয়ে বলেও ডাকি। তবে, শিশির নামটা নাকি ওর’ই দেওয়া।
ঘন্টাখানেক হয়ে গেল এখনো আসছে না। আমি বসেই আছি।
সামনে তিন জন রাস্তার সন্তান বসে আছে। ওদের দৈনিক দিনাতিপাতের গল্প শুনছি। হঠাৎ বুঝতে পারলাম পিছনে কেউ এসে দাঁড়িয়েছে। ঘাড় ঘুড়িয়ে পিছনে তাকালাম। মানবী আমার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। ১০০ টাকার একটা কড়কড়ে নোট দিয়ে রাস্তার সন্তানদের বিদায় করলাম। অন্য কোন দিন হলে ওদের সাথে ফুচকা খেতাম। কারন, আমি তো নিম্ন শ্রেণির প্রাণীই হতে চাই। ওরাও তো সভ্য মানুষের কাছে নিম্ন শ্রেনীর প্রাণী।
মানবী আমার পাশে বসলো। আবার আমি মানবীর দিকে তাকালাম। এবার তাকিয়েই থাকলাম। এর আগেও একবার দেখেছি তারপরেও মনে হলো, আজই প্রথম দেখলাম।
আমি নির্ভেজাল বিস্ময় নিয়ে তাকিয়েই আছি। পরিচিত কারও দিকে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকলে তার মধ্যে অস্বস্তির একটা ভাব চলে আসে। কিন্তু মানবীর ভিতর কোন প্রকার অস্বস্তি দেখলাম না আমি। সূম্পর্ন স্বাভাবিক মুখটাকে রাগে লাল হতে দেখছি।
কিছু কিছু মানুষের মুখের জন্মই হয় মায়া ধরে রাখার জন্য। এই মুখগুলো যদি হঠাৎ করে রেগে যায় তাহলে আশেপাশের মানুষের মাঝে ভয়ের ভাব সৃষ্টি হয়।
কিন্তু আমি ভয় পেলাম না। এই নতুন পরিবর্তনের দিকে আরো অবাক হয়ে তাকিয়েই থাকলাম।
মানবী অনেক রাগী স্বরে কথা বলে উঠলো, ‘আপনি আর আমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করবেন না।’
আমি বললাম, ‘ঠিক আছে। করবো না।’
__ আপনি আমার সাথে ফেসবুকেও চ্যাট করবেন না।
আমি আবারো বললাম, ‘ঠিক আছে। করবো না।’
মানবী চুপ হয়ে গেল এবং হঠাৎ করেই বুঝতে পারলো সে আর কোন কথা খুঁজে পাচ্ছে না। রাগ দেখানোর মত কোন কথা খুঁজে না পাওয়ার কারনে মানবী যখন চুপ মেরে গেল তখন আমি উঠে দাঁড়ালাম।
মানবী আমার দিকে তাকালো।
আমি অতি নরম সুরে বললাম, ‘মেয়ে, আমি এখন যাই।’
মানবীর কোন কথা না শুনেই আমি হাঁটতে শুরু করলাম। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে, মানবী আমার দিকে অনেক করুন চোখে তাকিয়ে ছিল। সেই চখে আরো কিছুক্ষন বসে থাকার আর্তি ছিল।
কিন্তু, আমি যে কোন মায়ায় জড়তে চাই না। আমি যে এক জানোয়ার মানব হতে চাই।
মানবী হলো শিশির কন্যা। ঘাসকে বিশ্বাস করে অনেক ভালোবেসে আঁকড়ে ধরে ছিল। কিন্তু সেই ঘাস এক শিশির নিয়ে তুষ্ট নয়। তাই আজ শিশিরকে কষ্ট নিয়ে বাতাসে ভেসে বেড়াতে হচ্ছে।
ভালোবাসা, বিশ্বাস এবং কষ্টে জর্জরিত এই মানবীকে সঙ্গ দেওয়ার মত কোন যোগ্যতাই নেই আমার।
আমি পিছনে তাকালাম। মানবী মাথা নিচের দিকে দিয়ে বসে আছে। কিন্তু আমি জানি, ও মানবী না।
মানবী হতে পারে না। কারন, মানবী মারা গেছে। কেন আমি মানবীকে বার বার সৃষ্টি করি তা আমি নিজেও জানি না।
মানবীকে সৃষ্টি করতে পারলেও আমি মানুষের কল্পনার মত কিছুই করতে পারি না। সীমার বাইরে আমি যেতে পারি না। স্বাভাবিক অবস্থায় একজন মানুষ, কল্পনায় পরিচিত অপরিচিত যে কাউকে সৃষ্টি করে ভালোবাসতে পারে, ভালোবাসাতে পারে, স্বপ্ন দেখতে পারে, স্বপ্ন দেখাতে পারে, সুখের বাতাসে ভাসতে পারে। কিন্তু, আমি এর কোনটাই পারি না।
কারন, আমার শুধুমাত্র অর্ধ মানবের মন আছে। এর কারনে আমি ওকে শুধু সৃষ্টি করতে পারি, সীমার মধ্যে কিছু কথা বলতে পারি। আর কিছুই করতে পারি না।
যেদিন আমার মন পুরো মানব মুক্ত হয়ে যাবে সেদিন হয়তো আমি মানবীকে ভুলে যাবো। ওকে সৃষ্টি করা আর আমার পক্ষে সম্ভব হবে না। হয়তো এটাও ভুলে যাবো, ওর মুখে শোনা সবচাইতে সুন্দর সম্বোধন, ‘মানব, আমার সাথে একটু কথা বলবেন?’
আমি মানব হয়ে যাবো এক জানোয়ার মানব। যে মানব, মানবীকে আর একটু কল্পনাও করতে পারবে না।
কি অদ্ভুত!!
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী. ০৪/০৬/২০১৪খুব ভালো লাগলো
-
কবি মোঃ ইকবাল ০৪/০৬/২০১৪গল্পটি পড়লাম। ভালো লেগেছে।