www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

শিশিরে ভেঁজা শিশির

রুম পুরোপুরি অন্ধকার না। খোলা জানালা দিয়ে চাঁদের আলো রুমের ভিতর এসে রুমটাকে আলো-ছায়াময় করে রেখেছে। বাতাসে জানালার পর্দাটা উড়ছে।
আপু পাশের বেডে’ই শুয়ে আছে। কি নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে! ঘুম থেকে উঠেই অফিস, অফিস থেকে বাসা। রান্না-বান্না করা। একটু মন চাইলে ঘুড়তে বের হওয়া, মার্কেট করা, আড্ডা মারা। সুন্দর ছন্দবদ্ধ একটা জীবন।
মাঝে মাঝে আপুকে অনেক হিংসে লাগে আমার। আমার জীবনটা কেন এমন হলো না ভেবে।
মেয়ে হলেও, নির্দিষ্ট একটা সময় পর্যন্ত বাবা-মা’র কাছ থেকে টাকা নিতে খারাপ লাগে না। কিন্তু BBA শেষ করার পরেও বাসা থেকে টাকা আনতে ভালো লাগে না।

প্রচন্ড পানি পিপাসা লেগেছে কিন্তু রান্না ঘর পর্যন্ত যেতে ইচ্ছে করছে না।
উুঁ! মাগো!!
বুকের ভিতর চিনিক করে উঠলো। ব্যাথায় নিঃশ্বাস নিতেও পারছি না। চোখে পুরোপুরি অন্ধকার দেখছি। বালিশে বুক চেপে ধরে শুয়ে থাকলে ব্যাথাটা কমে যেতে পারে ভেবে বুকটা চেপে ধরে শুয়ে পড়লাম। কিন্তু ব্যাথা কমছে না। আপুকে একবার ডাকতে চেয়েও ডাকলাম না। বুক চেপে ধরে শুয়েই আছি। ভালোবাসার যন্ত্রনা সহ্য করা অনেক কঠিন। কাছের মানুষের আঘাতের যন্ত্রনার চাইতে ভালোবাসার যন্ত্রনা অনেক কঠিন। এই যন্ত্রনায় চোখ দুটো নদীর বাঁধের মত হয়ে যায়। বড় কোন কষ্টের ঢেউ উঠলে চোখের জল, পাতা বেয়ে গাল, গাল থেকে মাটিতে ঝরে পড়ে। এই জন্যেই আপুকে ডাকলাম না।

কিছুক্ষন পর। ব্যাথাটা একটু কমতেই, ধিরে ধিরে দরজাটা খুলে ছাদে উঠে আসলাম। রূপালী জ্যোৎস্নার চাদরের নিচে বুকের ব্যাথাটা ভোগ করার জন্য। অস্ফুটে যদি একটু যন্ত্রনার স্বর গলা দিয়ে বেরও হয়ে যায় তাহলে এখানে, এই ঘুমন্ত শহরের কারও সমস্যা হওয়ার কথা না।

দোলনাটা একা একা ঝুলে আছে।
কি অদ্ভুত! চাঁদটাও একা একা ঝুলে আছে, আমিও জীবন মৃত্যুর মাঝা-মাঝি ঝুলে আছি!! কেন জানি খুব হাসি পাচ্ছে। নিজেকেই প্রশ্ন করলাম, আমার এখন’কার হাসিটা কি খুব বিষন্ন দেখাবে!
একাকিত্বের বিষন্নতা আর ভালো লাগে না। পৃথিবীতে সবাই একা হলেও, কেউ’ই নিজের ভিতরে একাকিত্বের ভাবটা অনুভব করতে চায় না। খুব তাড়াতাড়ি, কাউকে না কাউকে, নিজের সাথে জড়িয়ে নেয়।
আমারও খুব ইচ্ছে হচ্ছে এখন, কাউকে পেতে। কিন্তু, বিশ্বাস’টাকে আর আগের মত দাঁড় করাতে পারি না। মনে হয় হতাশার মাঝে হারিয়ে যাওয়ার কাছাকাছি কোথাও দাঁড়িয়ে আছি। যে কোন সময় পড়েই, টুপ করে তলিয়ে যাবো।
কিন্তু এখন যে, কারো সাথে কথা বলার বড় ইচ্ছা হচ্ছে। দোলনায় পাশাপাশি বসে দোল খাওয়ার সাধ জাগছে মনে। কোন এক মানব’কে পাওয়ার তীব্র ইচ্ছে সেই কবে যেন একবার হয়েছিল এখন তা মনেও করতে পারছি না।
একজন মানবের কাঁধে মাথা রেখে, এই ঘুমন্ত শহড়ের জ্যোৎস্নার আলোতে দোলনায় দোল খাওয়ার ইচ্ছা করাটা কি খুব বেশি চাওয়া হয়ে গেল? খুব বেশি বিলাসিতার মত হয়ে গেল কি?
কিন্তু এই বিলাসিতায় অপরাধের কোন শাস্তি থাকার পরেও যদি কোন মানবের স্পর্শ নিতে পারতাম তাতেও, একটু একাকিত্বের ঘোড় যন্ত্রনা কাটতো। অপরাধী হয়েও একটু শান্তির নিঃশ্বাস ফেলতে চাই, আমাকে অপরাধী বানানো কোন মানবের বুকে।

বাবা-মা’র রাখা নামটা এখন আমার কাছে আর ভালো লাগে না। এই জন্য নিজেই, নিজের একটা নাম দিয়েছি। শিশির।
নিজেকে শিশির নামে ডাকতে ভালোই লাগে। এখন সব সময়’ই মনে হয়, আমি তো শিশির’ই। জন্মের ক্ষন কাল পরে’ই মৃত্যু। পৃথিবীর সমস্ত অনুভূতির উর্দ্ধে একটা অনুভূতি নিয়ে বাতাসে ভেসে বেড়ানো।
এই মৃত্যুর নাম হলো, ব্যার্থতা, বিশ্বাস আর আমার প্রতি দেখানো করুনা গুলো। ভেসে বেড়ানো বাতাস মানেই তো রাতের অন্ধকার আর দুঃস্বপ্নময় ঘুমের রাজ্যে ছটফট করা।

চাঁদের আলো নিশ্প্রভ হয়ে যাচ্ছে। চাঁদকে কুয়াশার চাদর ধিরে ধিরে মুড়িয়ে ফেলছে।
কিছুক্ষন পর, আবার মনটা ভালো হয়ে গেল।
শিশির পড়ছে!
জীবনের অনেকগুলো ভোর, শিশির বিন্দুর উপর চোখ রেখে কাটিয়ে দিয়েছি। আজ, আমি শিশির, শিশিরের স্পর্শ নিচ্ছি!!
ঠোঁটে যে বিষন্নতা কাটিয়ে উজ্জ্বলতা স্থান পাবে এটা কি আজ আমার জানা ছিল!! দোলনার উপর চাঁদের দিকে মুখ করে শুয়ে পড়লাম। একটি শিশির বিন্দু ঠোঁটে এসে পড়লো। যেন, ভালোবাসার চুমু আঁকা হলো আমার ঠোঁটে।
একটু একটু কাঁপছি। কোথায় থেকে যেন ঠান্ডা বাতাস এসে গায়ে লাগছে। কম্পিত শরীরে আমি একের পর এক শিশির’দের ভালোবাসাকে আলিঙ্গন করছি।
কি যে এক অনুভূতি!!
আহ! আমি কি সত্যিই বেঁচে আছি!!
শিশির’দের ভালোবাসার পতন মিছিলে আমার সুখ-স্পর্শ শুষ্ক শরীর, আলিঙ্গনের সময় কেঁপে কেঁপে উঠছে। এ এক অসহ্যনীয় অনুভূতি!!
এখন কেন জানি মনে হচ্ছে, প্রকৃতির কাছ থেকে পূর্ণ কোন সুখও নেওয়া যায় না আবার দুঃখও বিলানো যায় না। প্রকৃতি যখন দিতে শুরু করে তখন গ্রহন করার ক্ষমতার বাইরেও দিতে থাকে আর, যখন কিছু দেয় না তখন এতটুকুও দেয় না।
কিন্তু স্ব-জাতি যা’ই দিক না কেন, সহ্যতার বাইরে কিছু দেয় না। যা’ই দিক স্মৃতিগুলো অমলিন হয়ে থাকে।
ব্যাথাটা কখন যে সেরে গিয়েছিল বুঝতেই পারি নি। এখন, ব্যাথাটা আবার শুরু হচ্ছে। একটা মানবের স্পর্শের অভাব আবার আমাকে রাতের অন্ধকারের দিকে টেনে নিয়ে যেতে চাইছে।
খুব কান্না পাচ্ছে আমার। এমন কোন মানব কি পৃথিবীতে নাই, যে অন্তত একটু ভালোবেসে বুকের পাঁজরে জড়িয়ে রাখতে পারে।
নিজের অজান্তেই চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো। ব্যার্থতা, হতাশা, একাকিত্বের চেতনা আবার আমার মনের দরজায় কড়া নাড়ছে।
জীবনান্দ দাসের একটা কবিতা মনে পড়ে গেল। কান্না আর ব্যাথা কে উপেক্ষা করে আমি কবিতা খানি আবৃত্তি করছি__

আলো — অন্ধকারে যাই — মাথার ভিতরে
স্বপ্ন নয়, কোন এক বোধ কাজ করে!
স্বপ্ন নয় — শান্তি নয় — ভালোবাসা নয়,
হৃদয়ের মাঝে এক বোধ জন্ম লয়!
আমি তারে পারি না এড়াতে
সে আমার হাত রাখে হাতে;

সব কাছ তুচ্ছ হয়, পন্ড মনে হয়,
সব চিন্তা — প্রার্থনার সকল সময়
শূন্য মনে হয়,
শূন্য মনে হয়!
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৭৯৪ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ৩০/০৫/২০১৪

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • রুমা চৌধুরী ৩১/০৫/২০১৪
    এটা যদি গল্প হয় তবে খুব খুব ভাল। কোন এক সিনেমায় শুনেছিলাম.
    ... ট্রাজেডি লিখে লেখক দের হয় প্রতিষ্ঠা আর যার জীবনে ট্রাজেডি ঘটে তার হয় মৃত্যু।...
    তোমার লেখাটা খুব ভাল। শুভেচ্ছা রইল।
    • শূন্য ৩১/০৫/২০১৪
      চরম পরিনতির কোন বাস্তব দৃশ্য না এটা।
      এটা শুধুই একটা গল্প।
      প্রতিশুভেচ্ছা রইলো।
  • তাইবুল ইসলাম ৩১/০৫/২০১৪
    আপনার তো বি বি এ শেষ
    আর আমার চলতেছে
    আল্লাই জানে কি হয়!!!!!!!!!১১
    • শূন্য ৩১/০৫/২০১৪
      না ভাই।
      এটা তো শিশিরের BBA শেষ।
      আমি শুধু চরিত্রের জীবন চিত্রটা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
      এর আস্থে আমার কোনই মিল নেই।

      আর তো মাত্র ১সেমিষ্টার আছে। দেখতে দেখতেই চলে যাবে।
  • কবি মোঃ ইকবাল ৩০/০৫/২০১৪
    খুব ভালো লাগলো।
    • শূন্য ৩০/০৫/২০১৪
      ভালো লাগার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
  • এস,বি, (পিটুল) ৩০/০৫/২০১৪
    সুন্দর
  • টি আই রাজন ৩০/০৫/২০১৪
    ভাল হয়েছে। তবে গল্পটা কমন মনে হলো।
    • শূন্য ৩০/০৫/২০১৪
      এর পরের গুলো আনকমন লেখার চেষ্টা করবো।
      ধন্যবাদ ভাই।
  • স্বপ্নচারী ৩০/০৫/২০১৪
    বাহ...।
 
Quantcast