ভার্জিনিটি
আজ সকাল থেকেই একটা ব্যস্ততার মহড়া চলছে ঝিলিকদের বাড়িতে। প্রত্যেকেই ভীষন ব্যস্ত। বাড়ির একমাত্র মেয়ের একুশতম বসন্তের আধফোটা কুড়ি, ভোরের বাতাসের স্নিগ্ধতা মেখে নিচ্ছে পূর্ণ বিকশিত হওয়ার আহ্বানে। আর হয়তো কিছুক্ষণ পরেই পাত্রপক্ষ এসে পড়বে! সুসজ্জিত শিল্পকলার শেষ ছোঁয়াটুকুর মতোই ঝিলিক আর একবারের জন্য ঠিক করে নিল কুঁচিটা।
'পাত্রপক্ষ এসে গেছে!'--- গোধূলি বিকেলটা যেন শেষ বসন্তের বারান্দা থেকে একমুঠো সোনালী স্বপ্ন এনে সাজিয়ে দিল ঝিলিকের চোখে। আপ্যায়ন পর্বের শেষ ধাপে মায়ের সাথে ছোট্ট ছোট্ট পা'য়ে এক পৃথিবী লজ্জা নিয়ে, পরিচয় পর্বের প্রথম ধাপে পা রাখলো ঝিলিক।
পাত্র রাজ ঝিলিকের সাথে আলাদাভাবে কথা বলতে চাইলে মা, ঝিলিক ও রাজাকে পাশের ঘরে বসিয়ে দিয়ে যাওয়ার পর রাজ বলল ----' তোমার নাম তো ঝিলিক, তাই না? '
----' হ্যাঁ'
----' এই ইয়ার গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করলে তো? '
---- 'হ্যাঁ'
----বেশকিছু কথা হওয়ার পর রাজ বলল--- 'ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড একটা কথা জানতে পারি?'
অন্য ফ্রেন্ডদের দেখতে আসা পাত্ররা যেমন জিজ্ঞেস করেছিল, ঝিলিক ভাবলো তার পাত্ররও হয়তো একই প্রশ্ন। তার বয়ফ্রেন্ড কস্মিনকালেও ছিল না। ভালোভাবে নিজের কাজটা করাই ছিল তার উদ্দেশ্য; করেওছে তাই। নির্দ্ধিধায় উত্তর দিতে পারবে ভেবে ঝিলিক তাই বলল----' বলুন'।
---- 'আর ইউ ভার্জিন'?
সম্পূর্ণ অপরিচিত তথাকথিত শিক্ষিত ছেলের মুখে হঠাৎ এমন প্রশ্ন শুনে লাল হয়ে উঠল ঝিলিক! ক্ষোভের অপমানের লকলকে আগুনের আঁচ যেন একটু একটু করে দগ্ধ করতে থাকলো তাকে। চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করল---- 'ধরনী দ্বিধা হও'! বহু কষ্টে নিজেকে সংযত করে ঝিলিক বলে উঠল---- 'আপনি ভার্জিন'?
পরেরদিন সকালে ঝিলিকের বাবার ফোনের ওপারে রাজের মায়ের কন্ঠস্বর ---- 'আপনারা অন্য কোথাও সম্বন্ধ দেখতে পারেন। ওরকম মুখরা মেয়ে আমরা চাই না'।
ঝুল বারান্দার পশ্চিম কোণাতে দাঁড়িয়ে বিষন্ন বিকেলের আর্ত আকাশটার দিকে একদৃষ্টি তাকিয়ে থাকে ঝিলিক। চরম অভিজ্ঞতার করুণ আলোটাকে বড়ো যত্নে তুলে রাখে জীবনের শ্রেষ্ঠ শিকেয়। 'সতীত্ব' নামের শ্মশান থেকে উঠে আসা মৃতদেহের উপর অসভ্য সভ্যতার তপ্ত চাবুকের আঘাত সে অনুভব করে। সভ্য সমাজের আধপোড়া দগ্ধ ঘায়ের নির্মোহ ঘ্রাণের সঙ্গে ঝিলিক জড়িয়ে নেয় স্বস্তির একমুঠো নিঃশব্দ নিঃশ্বাস। আজ যেন আকাশ রঙের কোনো মেয়ের শরীরের ভাঁজে ভাঁজে ভার্জিনিটির কষা হিসেব, তাকে উপহার দিতে চাইছে তপ্ত সাহারার বালিয়াড়ি সুখটুকু!
পাঁচ বছর পর.....
সেকন্ড ক্লাস শেষের পর ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে স্টাফরুমে যাওয়ার সময় ঝিলিকের ফোনের রিংটোন বেজে উঠল---- 'হ্যালো'!
---- 'ঝিলিক, আজ একটু তাড়াতাড়ি স্কুল থেকে বাড়ি ফিরিস মা। তোকে যে আজ দেখতে আসছে'!
পাঁচ বছর আগের সেই সাহসী বিকেলটার কথা মনে এল ঝিলিকের, ---- যেদিন সে একবারের জন্য থমকে দাঁড়িয়েছিল, যেদিন থেকে সভ্য সালোয়ার ছেড়ে পরতে শিখেছিল জিন্স-কুর্তি, যেদিন সে তার লক্ষ স্থির করে নিয়েছিল, যেদিন প্রথম দধিচিমুনির চৌষট্টি শক্তি সম্বলিত মেরুদন্ডের ঘা-এ তার ব্যক্তিত্ব গঠিত হয়েছিল ---- ঠিক সেই দিনটার কথা!
কিছু না বলে ফোনটা কেটে দিল ঝিলিক।
স্কুল ছুটির পর আজ আর বাসের জন্য অপেক্ষা না করেই হাঁটা দিল ঝিলিক। কাজলকালো রাস্তার বুক ছুঁয়ে ছুঁয়ে ধীর পায়ে সে যেন মেপে নিতে চাইছে সুশিক্ষার অঙ্গন থেকে সভ্য সমাজের দূরত্বটুকু!
বাড়ি ফিরতে ফিরতে বেলা প্রায় পড়ে এল। গ্রামের বকুল তলাটায় দাঁড়িয়ে একবার পশ্চিম আকাশটার দিকে তাকাল ঝিলিক। গর্ভবতী লাল আকাশের বুকটাতে আজ কেমন যেন একটা মা মা গন্ধ! এখানে কোনো আয়োজন নেই, সংসার নেই; তবুও মেঘেরা বেঁচে থাকে নিশ্চিন্তে!!!
আকাশ, তুমি সভ্যতার বুকে সাহসী স্বাধীনতায় ঝরে পড়ো অঝরে---- ঝরন্তিকা হয়ে! ঝিলিকের মতো হাজার হাজার ঝিলিক বাঁচার মতো করে বাঁচতে চায়---- একটু সাহস... অবাধ্য স্বাধীনতায়...
'পাত্রপক্ষ এসে গেছে!'--- গোধূলি বিকেলটা যেন শেষ বসন্তের বারান্দা থেকে একমুঠো সোনালী স্বপ্ন এনে সাজিয়ে দিল ঝিলিকের চোখে। আপ্যায়ন পর্বের শেষ ধাপে মায়ের সাথে ছোট্ট ছোট্ট পা'য়ে এক পৃথিবী লজ্জা নিয়ে, পরিচয় পর্বের প্রথম ধাপে পা রাখলো ঝিলিক।
পাত্র রাজ ঝিলিকের সাথে আলাদাভাবে কথা বলতে চাইলে মা, ঝিলিক ও রাজাকে পাশের ঘরে বসিয়ে দিয়ে যাওয়ার পর রাজ বলল ----' তোমার নাম তো ঝিলিক, তাই না? '
----' হ্যাঁ'
----' এই ইয়ার গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করলে তো? '
---- 'হ্যাঁ'
----বেশকিছু কথা হওয়ার পর রাজ বলল--- 'ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড একটা কথা জানতে পারি?'
অন্য ফ্রেন্ডদের দেখতে আসা পাত্ররা যেমন জিজ্ঞেস করেছিল, ঝিলিক ভাবলো তার পাত্ররও হয়তো একই প্রশ্ন। তার বয়ফ্রেন্ড কস্মিনকালেও ছিল না। ভালোভাবে নিজের কাজটা করাই ছিল তার উদ্দেশ্য; করেওছে তাই। নির্দ্ধিধায় উত্তর দিতে পারবে ভেবে ঝিলিক তাই বলল----' বলুন'।
---- 'আর ইউ ভার্জিন'?
সম্পূর্ণ অপরিচিত তথাকথিত শিক্ষিত ছেলের মুখে হঠাৎ এমন প্রশ্ন শুনে লাল হয়ে উঠল ঝিলিক! ক্ষোভের অপমানের লকলকে আগুনের আঁচ যেন একটু একটু করে দগ্ধ করতে থাকলো তাকে। চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করল---- 'ধরনী দ্বিধা হও'! বহু কষ্টে নিজেকে সংযত করে ঝিলিক বলে উঠল---- 'আপনি ভার্জিন'?
পরেরদিন সকালে ঝিলিকের বাবার ফোনের ওপারে রাজের মায়ের কন্ঠস্বর ---- 'আপনারা অন্য কোথাও সম্বন্ধ দেখতে পারেন। ওরকম মুখরা মেয়ে আমরা চাই না'।
ঝুল বারান্দার পশ্চিম কোণাতে দাঁড়িয়ে বিষন্ন বিকেলের আর্ত আকাশটার দিকে একদৃষ্টি তাকিয়ে থাকে ঝিলিক। চরম অভিজ্ঞতার করুণ আলোটাকে বড়ো যত্নে তুলে রাখে জীবনের শ্রেষ্ঠ শিকেয়। 'সতীত্ব' নামের শ্মশান থেকে উঠে আসা মৃতদেহের উপর অসভ্য সভ্যতার তপ্ত চাবুকের আঘাত সে অনুভব করে। সভ্য সমাজের আধপোড়া দগ্ধ ঘায়ের নির্মোহ ঘ্রাণের সঙ্গে ঝিলিক জড়িয়ে নেয় স্বস্তির একমুঠো নিঃশব্দ নিঃশ্বাস। আজ যেন আকাশ রঙের কোনো মেয়ের শরীরের ভাঁজে ভাঁজে ভার্জিনিটির কষা হিসেব, তাকে উপহার দিতে চাইছে তপ্ত সাহারার বালিয়াড়ি সুখটুকু!
পাঁচ বছর পর.....
সেকন্ড ক্লাস শেষের পর ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে স্টাফরুমে যাওয়ার সময় ঝিলিকের ফোনের রিংটোন বেজে উঠল---- 'হ্যালো'!
---- 'ঝিলিক, আজ একটু তাড়াতাড়ি স্কুল থেকে বাড়ি ফিরিস মা। তোকে যে আজ দেখতে আসছে'!
পাঁচ বছর আগের সেই সাহসী বিকেলটার কথা মনে এল ঝিলিকের, ---- যেদিন সে একবারের জন্য থমকে দাঁড়িয়েছিল, যেদিন থেকে সভ্য সালোয়ার ছেড়ে পরতে শিখেছিল জিন্স-কুর্তি, যেদিন সে তার লক্ষ স্থির করে নিয়েছিল, যেদিন প্রথম দধিচিমুনির চৌষট্টি শক্তি সম্বলিত মেরুদন্ডের ঘা-এ তার ব্যক্তিত্ব গঠিত হয়েছিল ---- ঠিক সেই দিনটার কথা!
কিছু না বলে ফোনটা কেটে দিল ঝিলিক।
স্কুল ছুটির পর আজ আর বাসের জন্য অপেক্ষা না করেই হাঁটা দিল ঝিলিক। কাজলকালো রাস্তার বুক ছুঁয়ে ছুঁয়ে ধীর পায়ে সে যেন মেপে নিতে চাইছে সুশিক্ষার অঙ্গন থেকে সভ্য সমাজের দূরত্বটুকু!
বাড়ি ফিরতে ফিরতে বেলা প্রায় পড়ে এল। গ্রামের বকুল তলাটায় দাঁড়িয়ে একবার পশ্চিম আকাশটার দিকে তাকাল ঝিলিক। গর্ভবতী লাল আকাশের বুকটাতে আজ কেমন যেন একটা মা মা গন্ধ! এখানে কোনো আয়োজন নেই, সংসার নেই; তবুও মেঘেরা বেঁচে থাকে নিশ্চিন্তে!!!
আকাশ, তুমি সভ্যতার বুকে সাহসী স্বাধীনতায় ঝরে পড়ো অঝরে---- ঝরন্তিকা হয়ে! ঝিলিকের মতো হাজার হাজার ঝিলিক বাঁচার মতো করে বাঁচতে চায়---- একটু সাহস... অবাধ্য স্বাধীনতায়...
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
অনিরুদ্ধ বুলবুল ১১/০১/২০১৯
-
হুসাইন দিলাওয়ার ০৬/০১/২০১৯বাহ
-
সিন্ধু সেঁচে মুক্তা-আব্দুল কাদির মিয়া ০২/০১/২০১৯shundor
-
শামিম ইশতিয়াক ২৯/১১/২০১৮Osadaron
-
অরন্য রানা ২৯/১১/২০১৮বাহ অসাধারন হয়েছে
-
মোঃ নূর ইমাম শেখ বাবু ২৮/১১/২০১৮বেশ লিখলেন।
অভিনন্দন রইল -
আলোর মিছিলে'র সফল অগ্রযাত্রায় এর ৪র্থ সংখ্যাটি প্রকাশিত হতে যাচ্ছে।
মাতৃভাষা দিবস সংখ্যার জন্য লেখা আহ্বান করা হয়েছে।
https://www.bangla-kobita.com/oniruddho/matryvasa-dibos/
গল্প প্রবন্ধ কবিতা - যে কেউ পাঠাতে পারেন। ধন্যবাদ।