সেই ভয়ানক জামবনী মাঠ
গভীর রাত্রি । চারিদিকে জোছনার আলো । প্রচন্ড গরম । হঠাৎই আমাদের বনের ধার দিকে বেড়াতে যাবার শখ হল । প্রস্তাবটা আমিই দিলাম - "আজ প্রচন্ড গরম জোছনাও আছে চল বনের ধার দিয়ে ঘুরে আসি ।" সবাই সঙ্গে সঙ্গে রাজি । বেরিয়ে গেলাম তিন জন বন্ধু আমি রাজ শুভ, আমি ভালো করে গ্যাসলাইটা এবং দুপ্যাকেট সিগারেট নিলাম । বনটাকে পৌঁছুতে হলে একটা মাঠ পেরোতে হয় । সেই মাঠটার নাম জামবনীর মাঠ । সেই মাঠটাকে ঘিরেই শুনেছি প্রচুর রহস্যমূলক গা কাঁটা দেওয়া গল্প । আমি বিশ্বাস করতাম না । সেদিন নিজের চোখে দেখে বিশ্বাস করতে বাধ্য হলাম - কী ভয়ংকর এই মাঠ ! আমরা চলেছি সেই মাঠ ধরে । চারিদিক নিঝঝুম । শুধু ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক । হঠাৎ রাজ থমকে দাঁড়াল । আমার হাতটা ধরে কাঁপা গলায় বলল কিছু শুনতে পেলি ? আমি বললাম - "কী শুনব তুই কী পাগল হলি না কী...."
বলা শেষ না হতে হতেই আমিও শুনতে পাই এক কান্নার শব্দ । যেন কোনো বাচ্চা ছেলে কাঁদছে কঁয়া কঁয়া করে । সাহস করে তিনজন শব্দটার দিকে যত এগোচ্ছি তত শব্দটা দূরে সরে যাচ্ছে । শব্দটার পিছু পিছু যেতে যেতে এক এক জলের নালার কাছে এসে দাঁড়ালাম ।
তিনজনই ভয়ে কাঁপছি । মনে পড়ছে এই মাঠকে নিয়ে সেই সব কাঁটা দেওয়া রহস্য মূলক গল্প । আমি খুব ভয় পেয়ে গেছি । রাজ শুভ তো ঘেমে জল । আমি ভয় পেয়েছি বলে তাদের বুঝতে দিইনি । কান্নার শব্দটাও থেমে গেছে । আমি চারিদিকের নীরবতা ভেঙে প্রথম মুখ খুললাম - "চল এখান থেকে । কী যে হয় ! ফালতু !"
যেই যাবার জন্য মুখ ফিরিয়েছি মনে হচ্ছে কেউ যেন পিছন থেকে টানছে । পিছন ফিরে দেখি কেউ নেই । যেতে আর পারছি না কেউ যেন পা গুলোকে বেঁধে দিয়েছে । হঠাৎই এক আলোর আভা এসে আমাদের গায়ে পড়তেই চমকে উঠি । পিছন ফিরে দেখি এক ভয়ানক দৃশ্য ! শুভ তো দেখেই চোখগুলো বুজে ফেলল, রাজ আমাকে আঁকড়ে ধরেছে । আমি হাঁ হয়ে নীরব হয়ে গেছি, হৃদস্পন্দনের হারটার বেড়ে গেছে অনেক । দেখি চারটা উলঙ্গ মেয়ে মাথায় আগুনের ধুনুচি নিয়ে নাচ করছে । মাঝখানে চুপচাপ অনড় হয়ে এক সুন্দর ফুটফুটে শিশু শুয়ে আছে । সে এক বিভৎস ভয়ংকর নৃত্য । পরক্ষণেই রাজ শুভ জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল । ভয়ে অস্থির হয়ে পরক্ষণে আমিও জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম ।
সকালে উঠে দেখি আমরা আমাদের গ্রামের হরিমন্দিরে শুয়ে আছি । পরে শুনলাম ভোরবেলা আমাদের নিয়ে আসা হয়েছে । রহিম কাকা আমাদের অজ্ঞান অবস্হায় পড়ে থাকতে দেখে উদ্ধার করেছে । সকালে সবাইকে ঘটনাটা খুলে বলতেই তারা অবাক হয়ে আমাদের দিকে চেয়েছিল । আর বলাবলি করছিল - "এদের ভাগ্য অনেক ভালো যে মরণের হাত থেকে ফিরে আসতে পেরেছে ।"
পরে শুনলাম ওই পাড়ার বাবলুর আট মাসের ছোট্ট ছেলেটা পাঁচদিনের জ্বরে মারা গেছে । কাল সন্ধ্যায় ছেলেটাকে ফেলে আসা হয়েছে জামবনীর মাঠে ।
সব শুনে অবশেষে রহিম কাকা বলল - "তোরা হয়তো জানিস না ওই উলঙ্গ ধুনুচি জ্বালা মেয়েগুলো ডাইনি ছিল । তাই তারা ছেলেটাকে বাঁচাবার চেষ্টা করছিল ডাইনি সাধনার কাজে লাগাবার জন্য । তোরা যে কান্নার শব্দ শুনেছিস সেটাই তার নমুনা ।"
ঘরে ফিরে এসে বাবার কাছে জোরদার বকুনি খেলাম । প্যান্টের পকেটে সিগারেটের ভর্তি প্যাকেট পেয়ে মায়ের বকুনি শুরু হল । আমি তো এক ছুট্টে রাজের বাড়ি চলে এলাম ।
অনেকদিন হয়ে গেল, কয়েকটা বছর কেটে গেল তবু সেই ভয়ংকর জামবনী মাঠের ভয়ানক স্মৃতি আজও ভুলতে পারিনি ।
রচনা : ১২/০৯/২০১৩ (মধ্যরাত্রি)
বলা শেষ না হতে হতেই আমিও শুনতে পাই এক কান্নার শব্দ । যেন কোনো বাচ্চা ছেলে কাঁদছে কঁয়া কঁয়া করে । সাহস করে তিনজন শব্দটার দিকে যত এগোচ্ছি তত শব্দটা দূরে সরে যাচ্ছে । শব্দটার পিছু পিছু যেতে যেতে এক এক জলের নালার কাছে এসে দাঁড়ালাম ।
তিনজনই ভয়ে কাঁপছি । মনে পড়ছে এই মাঠকে নিয়ে সেই সব কাঁটা দেওয়া রহস্য মূলক গল্প । আমি খুব ভয় পেয়ে গেছি । রাজ শুভ তো ঘেমে জল । আমি ভয় পেয়েছি বলে তাদের বুঝতে দিইনি । কান্নার শব্দটাও থেমে গেছে । আমি চারিদিকের নীরবতা ভেঙে প্রথম মুখ খুললাম - "চল এখান থেকে । কী যে হয় ! ফালতু !"
যেই যাবার জন্য মুখ ফিরিয়েছি মনে হচ্ছে কেউ যেন পিছন থেকে টানছে । পিছন ফিরে দেখি কেউ নেই । যেতে আর পারছি না কেউ যেন পা গুলোকে বেঁধে দিয়েছে । হঠাৎই এক আলোর আভা এসে আমাদের গায়ে পড়তেই চমকে উঠি । পিছন ফিরে দেখি এক ভয়ানক দৃশ্য ! শুভ তো দেখেই চোখগুলো বুজে ফেলল, রাজ আমাকে আঁকড়ে ধরেছে । আমি হাঁ হয়ে নীরব হয়ে গেছি, হৃদস্পন্দনের হারটার বেড়ে গেছে অনেক । দেখি চারটা উলঙ্গ মেয়ে মাথায় আগুনের ধুনুচি নিয়ে নাচ করছে । মাঝখানে চুপচাপ অনড় হয়ে এক সুন্দর ফুটফুটে শিশু শুয়ে আছে । সে এক বিভৎস ভয়ংকর নৃত্য । পরক্ষণেই রাজ শুভ জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল । ভয়ে অস্থির হয়ে পরক্ষণে আমিও জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম ।
সকালে উঠে দেখি আমরা আমাদের গ্রামের হরিমন্দিরে শুয়ে আছি । পরে শুনলাম ভোরবেলা আমাদের নিয়ে আসা হয়েছে । রহিম কাকা আমাদের অজ্ঞান অবস্হায় পড়ে থাকতে দেখে উদ্ধার করেছে । সকালে সবাইকে ঘটনাটা খুলে বলতেই তারা অবাক হয়ে আমাদের দিকে চেয়েছিল । আর বলাবলি করছিল - "এদের ভাগ্য অনেক ভালো যে মরণের হাত থেকে ফিরে আসতে পেরেছে ।"
পরে শুনলাম ওই পাড়ার বাবলুর আট মাসের ছোট্ট ছেলেটা পাঁচদিনের জ্বরে মারা গেছে । কাল সন্ধ্যায় ছেলেটাকে ফেলে আসা হয়েছে জামবনীর মাঠে ।
সব শুনে অবশেষে রহিম কাকা বলল - "তোরা হয়তো জানিস না ওই উলঙ্গ ধুনুচি জ্বালা মেয়েগুলো ডাইনি ছিল । তাই তারা ছেলেটাকে বাঁচাবার চেষ্টা করছিল ডাইনি সাধনার কাজে লাগাবার জন্য । তোরা যে কান্নার শব্দ শুনেছিস সেটাই তার নমুনা ।"
ঘরে ফিরে এসে বাবার কাছে জোরদার বকুনি খেলাম । প্যান্টের পকেটে সিগারেটের ভর্তি প্যাকেট পেয়ে মায়ের বকুনি শুরু হল । আমি তো এক ছুট্টে রাজের বাড়ি চলে এলাম ।
অনেকদিন হয়ে গেল, কয়েকটা বছর কেটে গেল তবু সেই ভয়ংকর জামবনী মাঠের ভয়ানক স্মৃতি আজও ভুলতে পারিনি ।
রচনা : ১২/০৯/২০১৩ (মধ্যরাত্রি)
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
সুবীর কাস্মীর পেরেরা ২০/০৯/২০১৩কাল এসে পড়ব নীল
-
দাদা মুহাইমিন চৌধূরী ১৪/০৯/২০১৩সুন্দর লিখেছেন