সিগনেচার
সবে মাত্র সন্ধ্যা হল । বৈশাখ মাস । প্রচণ্ড গরম । রমা জানালার সামনে বসে , বাইরে ছুটছে রকমারি আলো ; গাড়ির হেড লাইট । রমার মনটাও আজ ছুটছে । এত্ত বড়ো বাড়িতে সে একা । অতনু অফিসে চলে যাওয়ার কিছু সময়ের মধ্যেই কাজের মাসিকে ছুটি দিতে হয় , ওর মেয়েটা অসুস্থ ।
রমার সারাদিনের সঙ্গি বোকাবাস্কটা । ওই টার মধ্যে মুখ গুজে ইজি চেয়ারে হেলান কখনও বা সোফাতে , মাঝে মাঝে বিছানাতেও গড়িয়ে নেয় । কখনও বা বন্ধ ঘরের মধ্যেই পায়চারি করে – একলা দুপুর গড়িয়ে যায় ।
কিন্তু কিছু দিন হল অতনু তাকে বেবিডল এনে দিয়েছে । সেটা খুব সুন্দর । যেন একটা রাজপুত্তুর । রমা ওর নাম দিয়েছে ময়ূখ । রমা ওর সাথে ফিসফিসিয়ে কথা বলে , তুই আমার বুকের ধন , মানিক রতন ।
হঠাৎ ডোর বেলটা বেজে ওঠে । রমা ছুটে গিয়ে দরজা খোলে । না অতনু নয় , ওর ভাই – বৌদিকে দেখতে এসেছে । সাথে দু’বছরের বুল্টি । রমা বুল্টিকে কোলে নেয় । প্রতনু কেমন আছো ? বাড়ির সবাই ভালো তো ? বিদিশা এলো না ?
বাবা একটু অসুস্থ ; ডাইরিয়া হয়েছে । মা ভালো তবে অমাবস্যা আর পূর্ণিমাতে হাঁটুর ব্যাথায় ভোগেন তুমিতো জানই । বিদিশা মা বাবার কাছেই আছে , ও এলে বাড়িতে দুই বুড়ো – বুড়ি একা হয়ে যাবে ; তাই আমি আর বুল্টি এলাম ।
প্রতনু তুমি একবার দাদাকে ফোন করতো ; আটটা বাজতে চলল , এখনো এলো না । রমা কিচেন রুমে চলে গেল । দু’মিনিট পর ফ্লাক্সে ভরে কফি আর ট্রে ভরে বাদাম , বিস্কুট , চানাচুর নিয়ে এলো ।
বৌদি দাদার একটু দেরি হবে , ওর এক ক্লাইন্টের বাড়ি গেছে প্রেজেন্টেশনের ফাইল আনতে ।
তা বলো তোমার কাজ কতদূর এগোলো । প্রমোটার কি বলছে ?
এখনও মাস খানেক লাগবে । তবে কোর্ট নোটিস দিয়েছে । ওদের আর বাড়াবাড়ি করবার জো নেই । শুধু একটা সিগনেচার এর দরকার ।
সিগনেচার ? কার সিগনেচার ?
দাদা এলেই জানতে পারবে ।
কথায় কথায় টিফিন করা কমপ্লিট হল । ডোরবেল এর শব্দ । ঐ তোমার দাদা এলো বুঝি !
রমা দরজা খুলল । কী ব্যাপার ? এত ঘামছ কেন ? আর এত হাঁপিয়ে উঠেছ কেন ? কী হয়েছে ? প্রতনুও হতভম্ব হয়ে গেছে ।
অতনু ঘরে ঢুকেই সোফাটাই ধপ করে বসে পড়লো । রমা একগ্লাস জল আর ওর প্রেসারের ওষুধটা চট করে এনে দিলো ।
সবাই চুপচাপ । পুরো ফ্ল্যাটে যেন কেউই নেই ।
মিনিট কুড়ি পর অতনু মুখ খুলল । ক্লাইন্টের বাড়ি থেকে যেই বেরিয়েছি একটা কালো অ্যাম্বাসাডার ফলো করছিলো , বোধহয় সনাতন পাঁজার লোক । প্রতনু ওই দ্যাখ আমাদের ফ্ল্যাটের নীচে এখনো রয়েছে ।
প্রতনু বিস্ময়ভাবে বলল , কি চায় ওরা ?
সিগনেচার ।
তাহলে এবার কি হবে , দাদা তুই একবার থানায় ইনফ্রম করবি ?
না না এতে আরো বিপদ বাড়বে । দেখছিস না কীভাবে জোঁকের মতো পিছনে পড়ে আছে ।
রমা হাঁ করে শুনছিল । কি ঘটছে এসব , আর কেনই বা ঘটছে ? কার সিগনেচার ? কিসের সিগনেচার ?
অতনু রমার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো রমা ভীষণ টেনশানে । তাই সে রমার দিকে এগিয়ে গেল ।
আমার আফিসের বস নিখিলেশ পদ্দারের সিগনেচার । প্রতনুর কেসটাকে আরও মজবুত করবে ।
হঠাৎ হুড়মুড়িয়ে ধাক্কা । প্রতনু দরজা খুলল । আর খোলা মাত্রই গোছান ঘরটার দফারফা করে দিল । বুল্টি ঘুমিয়ে পড়েছিল , সেও উঠে পড়েছে । সণ্ডামার্কা লোকটি ছুরি বের করে শাসানি দিল , সিগনেচার কই ? অতনু ভয়ে ভয়ে জবাব দিল সে তো আমার কাছে নেই , বসের কাছে আছে ।
সণ্ডামার্কা লোকটি এবার একটি ফোন করলো ; বস এর কাছে নেই । তারপর ফোন নামিয়ে সব হুড়মুড়িয়ে বেরিয়ে গেল ।
অতনু বুক ভরে শ্বাস নিল । বেবিডলটা কই ? রমা অবাক হল সে কতবার বলেছে ওর নাম ময়ূখ । ওকে ময়ূখ বলে ডাকবে । রমার মুখ ভারি হল । আচ্ছা বাবা তোমার ময়ূখ কোথায় ?
রমা ময়ূখের কামরায় গেল । ফিরেও এলো ময়ূখকে নিয়ে । অতনু এবার ময়ূখকে ছিনিয়ে নিয়ে ওর মাথাটা উল্টে দিল । আর উল্টো করে নাড়া দিতে ভিতর থেকে একটা রোল করা কাগজ বেরিয়ে এলো । এইনে তোর সিগনেচার !
রমার সারাদিনের সঙ্গি বোকাবাস্কটা । ওই টার মধ্যে মুখ গুজে ইজি চেয়ারে হেলান কখনও বা সোফাতে , মাঝে মাঝে বিছানাতেও গড়িয়ে নেয় । কখনও বা বন্ধ ঘরের মধ্যেই পায়চারি করে – একলা দুপুর গড়িয়ে যায় ।
কিন্তু কিছু দিন হল অতনু তাকে বেবিডল এনে দিয়েছে । সেটা খুব সুন্দর । যেন একটা রাজপুত্তুর । রমা ওর নাম দিয়েছে ময়ূখ । রমা ওর সাথে ফিসফিসিয়ে কথা বলে , তুই আমার বুকের ধন , মানিক রতন ।
হঠাৎ ডোর বেলটা বেজে ওঠে । রমা ছুটে গিয়ে দরজা খোলে । না অতনু নয় , ওর ভাই – বৌদিকে দেখতে এসেছে । সাথে দু’বছরের বুল্টি । রমা বুল্টিকে কোলে নেয় । প্রতনু কেমন আছো ? বাড়ির সবাই ভালো তো ? বিদিশা এলো না ?
বাবা একটু অসুস্থ ; ডাইরিয়া হয়েছে । মা ভালো তবে অমাবস্যা আর পূর্ণিমাতে হাঁটুর ব্যাথায় ভোগেন তুমিতো জানই । বিদিশা মা বাবার কাছেই আছে , ও এলে বাড়িতে দুই বুড়ো – বুড়ি একা হয়ে যাবে ; তাই আমি আর বুল্টি এলাম ।
প্রতনু তুমি একবার দাদাকে ফোন করতো ; আটটা বাজতে চলল , এখনো এলো না । রমা কিচেন রুমে চলে গেল । দু’মিনিট পর ফ্লাক্সে ভরে কফি আর ট্রে ভরে বাদাম , বিস্কুট , চানাচুর নিয়ে এলো ।
বৌদি দাদার একটু দেরি হবে , ওর এক ক্লাইন্টের বাড়ি গেছে প্রেজেন্টেশনের ফাইল আনতে ।
তা বলো তোমার কাজ কতদূর এগোলো । প্রমোটার কি বলছে ?
এখনও মাস খানেক লাগবে । তবে কোর্ট নোটিস দিয়েছে । ওদের আর বাড়াবাড়ি করবার জো নেই । শুধু একটা সিগনেচার এর দরকার ।
সিগনেচার ? কার সিগনেচার ?
দাদা এলেই জানতে পারবে ।
কথায় কথায় টিফিন করা কমপ্লিট হল । ডোরবেল এর শব্দ । ঐ তোমার দাদা এলো বুঝি !
রমা দরজা খুলল । কী ব্যাপার ? এত ঘামছ কেন ? আর এত হাঁপিয়ে উঠেছ কেন ? কী হয়েছে ? প্রতনুও হতভম্ব হয়ে গেছে ।
অতনু ঘরে ঢুকেই সোফাটাই ধপ করে বসে পড়লো । রমা একগ্লাস জল আর ওর প্রেসারের ওষুধটা চট করে এনে দিলো ।
সবাই চুপচাপ । পুরো ফ্ল্যাটে যেন কেউই নেই ।
মিনিট কুড়ি পর অতনু মুখ খুলল । ক্লাইন্টের বাড়ি থেকে যেই বেরিয়েছি একটা কালো অ্যাম্বাসাডার ফলো করছিলো , বোধহয় সনাতন পাঁজার লোক । প্রতনু ওই দ্যাখ আমাদের ফ্ল্যাটের নীচে এখনো রয়েছে ।
প্রতনু বিস্ময়ভাবে বলল , কি চায় ওরা ?
সিগনেচার ।
তাহলে এবার কি হবে , দাদা তুই একবার থানায় ইনফ্রম করবি ?
না না এতে আরো বিপদ বাড়বে । দেখছিস না কীভাবে জোঁকের মতো পিছনে পড়ে আছে ।
রমা হাঁ করে শুনছিল । কি ঘটছে এসব , আর কেনই বা ঘটছে ? কার সিগনেচার ? কিসের সিগনেচার ?
অতনু রমার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো রমা ভীষণ টেনশানে । তাই সে রমার দিকে এগিয়ে গেল ।
আমার আফিসের বস নিখিলেশ পদ্দারের সিগনেচার । প্রতনুর কেসটাকে আরও মজবুত করবে ।
হঠাৎ হুড়মুড়িয়ে ধাক্কা । প্রতনু দরজা খুলল । আর খোলা মাত্রই গোছান ঘরটার দফারফা করে দিল । বুল্টি ঘুমিয়ে পড়েছিল , সেও উঠে পড়েছে । সণ্ডামার্কা লোকটি ছুরি বের করে শাসানি দিল , সিগনেচার কই ? অতনু ভয়ে ভয়ে জবাব দিল সে তো আমার কাছে নেই , বসের কাছে আছে ।
সণ্ডামার্কা লোকটি এবার একটি ফোন করলো ; বস এর কাছে নেই । তারপর ফোন নামিয়ে সব হুড়মুড়িয়ে বেরিয়ে গেল ।
অতনু বুক ভরে শ্বাস নিল । বেবিডলটা কই ? রমা অবাক হল সে কতবার বলেছে ওর নাম ময়ূখ । ওকে ময়ূখ বলে ডাকবে । রমার মুখ ভারি হল । আচ্ছা বাবা তোমার ময়ূখ কোথায় ?
রমা ময়ূখের কামরায় গেল । ফিরেও এলো ময়ূখকে নিয়ে । অতনু এবার ময়ূখকে ছিনিয়ে নিয়ে ওর মাথাটা উল্টে দিল । আর উল্টো করে নাড়া দিতে ভিতর থেকে একটা রোল করা কাগজ বেরিয়ে এলো । এইনে তোর সিগনেচার !
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
শূন্য ০৭/০৭/২০১৪
-
কবি মোঃ ইকবাল ০৭/০৭/২০১৪বেশ ভালো লাগলো।
-
শিমুল শুভ্র ০৭/০৭/২০১৪খুব ভালো লাগলো , উপমা গুলো অসাধারণ ।
-
মঞ্জুর হোসেন মৃদুল ০৬/০৭/২০১৪আরে বাহ দারুন লিখেছেন। সুন্দর ভাবনা। চমৎকার লিখেন।
-
ভ্রান্ত পথিক ০৬/০৭/২০১৪সুন্দর গোছানো গল্প ! ভালো লাগলো লেখক বন্ধু
শুভেচ্ছা রইলো।