মাছি
ভোর বেলা ঘুম ভেঙে গেলে স্ত্রীর গালে চুমু , একটু আলিঙ্গন । দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে কড়া নাড়ছে ব্যস্ত সকাল । দু’চারটি রোমান্টিক বাক্যালাপের মধ্যেই হাজির সাদা সকাল ।
চটিটা পায়ে গলিয়ে বাগানে পায়চারি করতে করতে ব্রাশ-চা-বিস্কুট । আটটা-তে স্নান , স্নান সেরে ব্রেকফাস্ট টেবিলে আমার খোকা- খুকু । খোকার বায়না , চাই নতুন গল্পের বই , খুকুর রবীন্দ্রসঙ্গীতের সিডি ।
অফিসে যাওয়ার আগে দেয়ালে টাঙানো মা-বাবাকে প্রনাম । বেরিয়ে পড়ি রাস্তাতে । সময়ে যাওয়া চাই অফিসে , তাই দমবন্ধ ঠাসাঠাসি ভিড় বাস হলেও ওঠা চাই-ই চাই । ঠেলা , অসম্ভব জোরে ঠেলা – বুকের পাঁজর ভেঙে যাওয়ার মতো অবস্থা । কানফাটা বিকট হর্নের শাসানি বড্ড অসহ্য , মাথার শিরা-উপশিরা গুলো ছিঁড়ে দিচ্ছে – আঃ যন্ত্রণা মাগো...বলে কেঁদে উঠি । পায়ের উপর পা পড়ছে , একি ষাঁড়ের লড়াই , মাগো...
অফিসে এ.সি রুমে একটু স্বস্তি । টেবিলে ঊর্মি , রাহুল , প্রিয়ার ছবি – ওরা হাসছে । নতুন উদ্যমে ফাইলে ডুব , কাজ কাজ আর কাজ । দুপুর দেড়’ টায় টিফিন – ঊর্মির রান্না , শাক , আলুর প্রস্ত , চিংড়ির মালাইকারী । নির্ভেজাল লাঞ্চ । ঘুম পায় , তন্দ্রাও নেমে আসে দু’চোখে । বিভৎস স্বপটা তেড়ে আসে – সেই স্বপ্নটা , আজ কয়েক মাস তাড়া করছে । একটা মাছি সোজা নাক দিয়ে ঢুকে মুখ , মুখ থেকে চোখ , চোখ থেকে মাথা – ভোঁ ভোঁ ভোঁ ভোঁ......কখন নিজের অজান্তেই টেবিলে রাখা জল ভর্তি কাচের গ্লাসটা তুলি , আজ মারতেই হবে মাছিটিকে । কিন্তু জলের ফোঁটা গায়ে পড়ে ঘুমতা ভেঙে গেল !
বাকি দু’ঘণ্টা কাজ সেরে , অফিস থেকে বেরিয়ে সোজা বাসস্ট্যান্ড । সেই ভিড় , সেই গাড়িতে ওঠবার প্রতিযোগিতা – ঠেলাঠেলি – দমবন্ধ অবস্থা । না , আজ সিট পেলাম । জানালার ধারে । ফুরফুরে হাওয়া , ঝিরঝিরে বৃষ্টি পড়ছে । ঘুমটা আবার আসে , আসে মাছিটিও...ভোঁ ভোঁ ভোঁ ভোঁ...হাতের কাছে ছাতা-টাকে বাগিয়ে মাথায় মারতে যাবো আর কি , এক ভদ্র মহিলা চট করে সেটি ধরে নেন । লজ্জায় কিছু বলতে পারলাম না । সরি বলে জানালার বাইরে তাকিয়ে রইলাম ।
কলেজ-স্ট্রিট এসে গেছে । নামলাম । এ-গলি , ও-গলি ঘুরে ঘুরে “ সুনীলের কাকাবাবু ” আর ব্রততীর রবীন্দ্রসঙ্গীতের সিডি নিলাম । হঠাৎ মনে পড়ে গেল ঊর্মি ক’দিন থেকেই নতুন চশমাটা আনতে বলছে , সেটা নিয়েই যাওয়া যাক । এই তো সামনেই , বিশুদার দোকান , রাজাবাজার ।
সন্ধ্যা নামলো । সামনের রেস্তোরাঁয় চা-বিস্কুট-আর একটা সিগারেট । ব্যাস অনেক । এবার বাড়ি...রাস্তায় নামতেই বৃষ্টি...জোরে পা চালালাম...হঠাৎ সেই মাছিটি , হ্যাঁ সেই মাছিটি কানের পাশ দিয়ে দু’বার ভোঁ ভোঁ ভোঁ করে উড়ে গেল । হাত দিয়ে তাড়ালাম...হেই হেই । কিন্তু সব বাঁধা অতিক্রম করে সোজা নাক মুখ , মুখ দিয়ে চোখ আর চোখ দিয়ে সোজা মাথাতে...ভোঁ ভোঁ ভোঁ...মাথা জোরে জোরে নাড়ালাম । ফল হলো না । এক ঝটকায় হাতের ব্যাগ দুটো ফেলে দিয়ে কনে জোরে জোরে চাপড় দিলাম...রাস্তাতে আছড়ে পড়লাম...
যখন জ্ঞান ফিরল , রাস্তার দুটি কুকুর ঘেউ ঘেউ করতে করতে চলে গেল । মোবাইলটা এক নাগাড়ে বেজে চলেছে । ১২ টা মিসড কল । ঊর্মির ফোন । ব্যস্ত হয়েই উঠে দাঁড়ালাম । রাত দশটা ! হাতের কাছেই ব্যাগ দুটোকে দেখতে পেয়ে তুলে নিলাম । চশমাটা ? শুধু ফ্রেমটুকু আছে , কাঁচ দুটো কুচো হয়ে গেছে । মাথায় হাত কি হবে ! আর হাত দিয়েই বুঝলাম মাথা কেটে গেছে , না কাটেনি ফেটে গেছে লাল রক্ত ঝরছে...কি মনে হল ব্যাগ টাতে হাত দিলাম , “সুনীলের কাকাবাবু” রক্তে চুপসে গেছে , ব্রততীর রবীন্দ্রসঙ্গীত মাঝখান থেকে দু’টুকরো...
কোনো রকমে ঠলতে ঠলতে বাড়ি পৌছালাম । হাতে তেমন জোর নেই নিস্তেজ আঙ্গুল টাকে বাড়িয়ে দিয়ে কলিং বেল টা প্রেস করলাম । কিড়িং কিড়িং কিড়িং...
চটিটা পায়ে গলিয়ে বাগানে পায়চারি করতে করতে ব্রাশ-চা-বিস্কুট । আটটা-তে স্নান , স্নান সেরে ব্রেকফাস্ট টেবিলে আমার খোকা- খুকু । খোকার বায়না , চাই নতুন গল্পের বই , খুকুর রবীন্দ্রসঙ্গীতের সিডি ।
অফিসে যাওয়ার আগে দেয়ালে টাঙানো মা-বাবাকে প্রনাম । বেরিয়ে পড়ি রাস্তাতে । সময়ে যাওয়া চাই অফিসে , তাই দমবন্ধ ঠাসাঠাসি ভিড় বাস হলেও ওঠা চাই-ই চাই । ঠেলা , অসম্ভব জোরে ঠেলা – বুকের পাঁজর ভেঙে যাওয়ার মতো অবস্থা । কানফাটা বিকট হর্নের শাসানি বড্ড অসহ্য , মাথার শিরা-উপশিরা গুলো ছিঁড়ে দিচ্ছে – আঃ যন্ত্রণা মাগো...বলে কেঁদে উঠি । পায়ের উপর পা পড়ছে , একি ষাঁড়ের লড়াই , মাগো...
অফিসে এ.সি রুমে একটু স্বস্তি । টেবিলে ঊর্মি , রাহুল , প্রিয়ার ছবি – ওরা হাসছে । নতুন উদ্যমে ফাইলে ডুব , কাজ কাজ আর কাজ । দুপুর দেড়’ টায় টিফিন – ঊর্মির রান্না , শাক , আলুর প্রস্ত , চিংড়ির মালাইকারী । নির্ভেজাল লাঞ্চ । ঘুম পায় , তন্দ্রাও নেমে আসে দু’চোখে । বিভৎস স্বপটা তেড়ে আসে – সেই স্বপ্নটা , আজ কয়েক মাস তাড়া করছে । একটা মাছি সোজা নাক দিয়ে ঢুকে মুখ , মুখ থেকে চোখ , চোখ থেকে মাথা – ভোঁ ভোঁ ভোঁ ভোঁ......কখন নিজের অজান্তেই টেবিলে রাখা জল ভর্তি কাচের গ্লাসটা তুলি , আজ মারতেই হবে মাছিটিকে । কিন্তু জলের ফোঁটা গায়ে পড়ে ঘুমতা ভেঙে গেল !
বাকি দু’ঘণ্টা কাজ সেরে , অফিস থেকে বেরিয়ে সোজা বাসস্ট্যান্ড । সেই ভিড় , সেই গাড়িতে ওঠবার প্রতিযোগিতা – ঠেলাঠেলি – দমবন্ধ অবস্থা । না , আজ সিট পেলাম । জানালার ধারে । ফুরফুরে হাওয়া , ঝিরঝিরে বৃষ্টি পড়ছে । ঘুমটা আবার আসে , আসে মাছিটিও...ভোঁ ভোঁ ভোঁ ভোঁ...হাতের কাছে ছাতা-টাকে বাগিয়ে মাথায় মারতে যাবো আর কি , এক ভদ্র মহিলা চট করে সেটি ধরে নেন । লজ্জায় কিছু বলতে পারলাম না । সরি বলে জানালার বাইরে তাকিয়ে রইলাম ।
কলেজ-স্ট্রিট এসে গেছে । নামলাম । এ-গলি , ও-গলি ঘুরে ঘুরে “ সুনীলের কাকাবাবু ” আর ব্রততীর রবীন্দ্রসঙ্গীতের সিডি নিলাম । হঠাৎ মনে পড়ে গেল ঊর্মি ক’দিন থেকেই নতুন চশমাটা আনতে বলছে , সেটা নিয়েই যাওয়া যাক । এই তো সামনেই , বিশুদার দোকান , রাজাবাজার ।
সন্ধ্যা নামলো । সামনের রেস্তোরাঁয় চা-বিস্কুট-আর একটা সিগারেট । ব্যাস অনেক । এবার বাড়ি...রাস্তায় নামতেই বৃষ্টি...জোরে পা চালালাম...হঠাৎ সেই মাছিটি , হ্যাঁ সেই মাছিটি কানের পাশ দিয়ে দু’বার ভোঁ ভোঁ ভোঁ করে উড়ে গেল । হাত দিয়ে তাড়ালাম...হেই হেই । কিন্তু সব বাঁধা অতিক্রম করে সোজা নাক মুখ , মুখ দিয়ে চোখ আর চোখ দিয়ে সোজা মাথাতে...ভোঁ ভোঁ ভোঁ...মাথা জোরে জোরে নাড়ালাম । ফল হলো না । এক ঝটকায় হাতের ব্যাগ দুটো ফেলে দিয়ে কনে জোরে জোরে চাপড় দিলাম...রাস্তাতে আছড়ে পড়লাম...
যখন জ্ঞান ফিরল , রাস্তার দুটি কুকুর ঘেউ ঘেউ করতে করতে চলে গেল । মোবাইলটা এক নাগাড়ে বেজে চলেছে । ১২ টা মিসড কল । ঊর্মির ফোন । ব্যস্ত হয়েই উঠে দাঁড়ালাম । রাত দশটা ! হাতের কাছেই ব্যাগ দুটোকে দেখতে পেয়ে তুলে নিলাম । চশমাটা ? শুধু ফ্রেমটুকু আছে , কাঁচ দুটো কুচো হয়ে গেছে । মাথায় হাত কি হবে ! আর হাত দিয়েই বুঝলাম মাথা কেটে গেছে , না কাটেনি ফেটে গেছে লাল রক্ত ঝরছে...কি মনে হল ব্যাগ টাতে হাত দিলাম , “সুনীলের কাকাবাবু” রক্তে চুপসে গেছে , ব্রততীর রবীন্দ্রসঙ্গীত মাঝখান থেকে দু’টুকরো...
কোনো রকমে ঠলতে ঠলতে বাড়ি পৌছালাম । হাতে তেমন জোর নেই নিস্তেজ আঙ্গুল টাকে বাড়িয়ে দিয়ে কলিং বেল টা প্রেস করলাম । কিড়িং কিড়িং কিড়িং...
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
বর্ণিল হিমু ০৪/০৭/২০১৪গল্পটি ভালোই লাগলো
-
মঞ্জুর হোসেন মৃদুল ০২/০৭/২০১৪সুন্দর লিখেছেন। ভাল লাগল।
-
শিমুল শুভ্র ০২/০৭/২০১৪বেশ দারুন তো চলতে থাকবে কি সামনে ?
-
কবি মোঃ ইকবাল ০২/০৭/২০১৪বাহ্! চমৎকার লাগলো। ভালো থাকবেন। শুভরাত্রি।