অন্য রকম পরীক্ষা
(১)
না আজ আর পড়া হবে না । তাই রাস্তার দিকে বেরিয়ে এলাম । মনটা কেমন খচখচ করছে , পরীক্ষায় পাশ করবো তো ! আর মাত্র একটা এক্সাম বাকি ; তারপর আর কি , পাশ করলেই বাবার কথা দেওয়া মোটর বাইকটা পেয়ে যাবো ।
আমি দেবু , দেবাদিত্য সেন । এই নিয়ে একই ক্লাসে দু’ বার । তাই বাবা এবার রাগ – টাগ না দেখিয়ে চিড়ে ভেজান গলায় বললেন , “ বাবা দেবু এবার পাশ করলেই তোমাকে ঠিক মোটর বাইক কিনে দেব । ”
পরীক্ষা বেশ ভালই হল , এখন ঊর্মি আর আমি । এইরে ঊর্মি তো আমার জন্য শিমূল তলায় কখন থেকে অপেক্ষা করছে ।
ও ঊর্মি রাগ করেছ , রাগ করেনা । আমি কি আর এমনি দেরি করেছি , পরীক্ষা ছিল যে , আজ শেষ হল । ওমা এই দেখ , এখনও মুখভার করে থাকে ।
এই সময় হল , বলেছিলে সন্ধ্যার সময় আসবে , তা এখন সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত গাঢ় হল যে । (ঊর্মি বলে)
আরে তাতে কি , এতে তো তোমাকে কাছে পেতে সুবিধাই হবে , তাই না ।
আঃ মরণ । একদম কাছে আসবে না , আগে বলো পরীক্ষা কেমন হল ?
আর পরীক্ষা , ওসব ছাড়োতো । কেমন সুন্দর দখিনি হাওয়া , ঝি ঝি পোকার ডাক ; ও কি রোমান্টিক !
রোমান্টিক না ছাই ।
ও ঊর্মি , একটা গান গাও না । আমার তো গাইতে খুব ইচ্ছা করছে , “এই সুন্দর স্বর্ণালি সন্ধ্যায় কী বন্ধনে জড়ালে গো বন্ধু ।”
(২)
কিভাবে যে তিনমাস কেটে গেল বুঝতেই পারলাম না । আজ রেজাল্ট বেরিয়েছে । না আনন্দের কোনো খবর নেই , আবার ফেল ! নিজেকে খুব বোকা বোকা লাগছে । আমার যে কি হবে কে জানে । ভগবান আমি কি এতটাই হাঁদা ! এদিক থেকে আবার বাইকটাও ফসকালো ।
বাড়িতে যখন ফিরলাম , “ বাবা ড্যাব – ডেবিয়ে আমার দিকে চেয়ে মুখটা ভেংচে বললেন , কি আবার ফেল করেছো তো বাবা দেবু ? ” আমার খুব কান্না পাচ্ছিল , কোনো কথা না বলে সোজা নিজের ঘরে চলে এলাম ।
ওরে বাবা ! এতো ঊর্মির চিঠি ; এখানে কোত্থেকে এলো । কেউ দেখে ফেলেনি তো । চিঠি গুলোকে আমি চটপট জোড়ো করতে লাগলাম । আর তক্ষনি ডাইনি পিসিটা এসে জুটল আমার ঘরে ।
কি লুকোচ্ছিস রে ?
ক – ই – কি – চ্ছু – না !
কিছু না বললে হয় ! আমি তোর ঘর গোছানোর সময় আয়নার পিছনে ঝুল ঝাড়তে গিয়ে ঐ কাগজ গুলোকে পেয়েছি । এরপর……
(আমি তাড়াতাড়ি পিসির মুখ চেপে ধরলাম । ) ও পিসি চুপকর পাশের ঘরে বাবা আছে যে ; সব শুনে ফেলবে ।
কই রে নীলা , কোথায় গেলি ? এদিকে একবার আয়তো । ( এই রে বাবা আবার পিসিকে ডাকছে কেন ? )
এর মধ্যেই কখন একটা চিঠি দমকা হাওয়াতে বাবার ঘরের সামনে গিয়ে পড়েছে । আমি কোনো রকমে পিসিকে ছেড়ে দিয়ে চিঠির দিকে ছুটলাম । আর পিসিকে ঝাজের সাথে বলতে শুনলাম – “ কি বিচ্চু ছেলেরে বাবা , প্রায় দম বন্ধ করে দিয়েছিল । ওরে ও ধীরেন তোর ছেলেকে সামলা ও তো পেরেম করছে রে পেরেম । ”
ততক্ষণে বাবা চিঠিটা হাতে ধরে পড়তে আরম্ভ করেছে । ওরে বাবা আমি আর নেই । আমি বাড়ি থেকে পালাতে যাবো আর কি , দেবু দেবু বলে ডাক পাড়ল বাবা । আমার প্রান উড়ে যাওয়ার জোগাড় । ভয়ে ভয়ে বাবার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম । অথচ বাবা বেশ শান্ত ভাবেই বলল , “ তোমার তো চাকরি হয়ে গেছে । ” আমি শুনে হাঁ ।
বাবা দেবু আমাদের তো একটু বেরোতে হবে ।
এই সন্ধ্যাবেলা ? রাত আটটা বাজল যে ।
তাতে কি , তোমার পিসিকে তৈরি হতে বলো । আর হ্যাঁ তুমিও তৈরি হয়ে নাও । বেশি সময় হাতে নেই ।
পাশের বাড়ির রামু কাকা ভ্যান চালায় । বাড়িতেও ফিরে এসেছিল । তার ভ্যানে চড়েই যাএা । আমরা যে কোথায় যাচ্ছি ! আচ্ছা বাবা আমাকে চাকরির কথা বললো কেন ? যে ছেলে মাধ্যমিকেই তিন তিন বার ডাব্বা খায় ; তার আবার চাকরি ! তবে কি বাবা…..
এই দেবু ভ্যান থেকে নামবি নাকি ? এত ভাবছিস কি , নাম নাম দেরি হয়ে যাচ্ছে যে । আমি হঠাৎ সংজ্ঞা ফিরে পেয়ে বললাম , হ্যাঁ বাবা এইতো নামছি । আরে এতো কলোনী পাড়া । আমার বুকের ভিতরটা ছ্যাদ করে উটলো । এখানেই তো ঊর্মিদের বাড়ি ।
(৩)
আর বলতে হবে না নিশ্চয়ই । সেই রাতেই ঊর্মির আর আমার বিয়ের ঠিক হল ; ১৯ শে বৈশাখ । বাবা মারা গেছে সাত মাস হল । ডাইনি পিসিটা একই রকম ; খিটখিটে । ঊর্মি অন্তঃসত্বা ।
আমাদের একটা ফুটফুটে ছেলে হয়েছে ; ওর নাম রেখেছি রনি । আমি এখন বাবার চাল দোকানের মালিক । ব্যবসা ভালই চলছে । দারুণ খবর কাল বাইক কিনলাম ; হিরোহুণ্ডা । ভাবছি এবার বাড়িটাও করবো ।
না আজ আর পড়া হবে না । তাই রাস্তার দিকে বেরিয়ে এলাম । মনটা কেমন খচখচ করছে , পরীক্ষায় পাশ করবো তো ! আর মাত্র একটা এক্সাম বাকি ; তারপর আর কি , পাশ করলেই বাবার কথা দেওয়া মোটর বাইকটা পেয়ে যাবো ।
আমি দেবু , দেবাদিত্য সেন । এই নিয়ে একই ক্লাসে দু’ বার । তাই বাবা এবার রাগ – টাগ না দেখিয়ে চিড়ে ভেজান গলায় বললেন , “ বাবা দেবু এবার পাশ করলেই তোমাকে ঠিক মোটর বাইক কিনে দেব । ”
পরীক্ষা বেশ ভালই হল , এখন ঊর্মি আর আমি । এইরে ঊর্মি তো আমার জন্য শিমূল তলায় কখন থেকে অপেক্ষা করছে ।
ও ঊর্মি রাগ করেছ , রাগ করেনা । আমি কি আর এমনি দেরি করেছি , পরীক্ষা ছিল যে , আজ শেষ হল । ওমা এই দেখ , এখনও মুখভার করে থাকে ।
এই সময় হল , বলেছিলে সন্ধ্যার সময় আসবে , তা এখন সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত গাঢ় হল যে । (ঊর্মি বলে)
আরে তাতে কি , এতে তো তোমাকে কাছে পেতে সুবিধাই হবে , তাই না ।
আঃ মরণ । একদম কাছে আসবে না , আগে বলো পরীক্ষা কেমন হল ?
আর পরীক্ষা , ওসব ছাড়োতো । কেমন সুন্দর দখিনি হাওয়া , ঝি ঝি পোকার ডাক ; ও কি রোমান্টিক !
রোমান্টিক না ছাই ।
ও ঊর্মি , একটা গান গাও না । আমার তো গাইতে খুব ইচ্ছা করছে , “এই সুন্দর স্বর্ণালি সন্ধ্যায় কী বন্ধনে জড়ালে গো বন্ধু ।”
(২)
কিভাবে যে তিনমাস কেটে গেল বুঝতেই পারলাম না । আজ রেজাল্ট বেরিয়েছে । না আনন্দের কোনো খবর নেই , আবার ফেল ! নিজেকে খুব বোকা বোকা লাগছে । আমার যে কি হবে কে জানে । ভগবান আমি কি এতটাই হাঁদা ! এদিক থেকে আবার বাইকটাও ফসকালো ।
বাড়িতে যখন ফিরলাম , “ বাবা ড্যাব – ডেবিয়ে আমার দিকে চেয়ে মুখটা ভেংচে বললেন , কি আবার ফেল করেছো তো বাবা দেবু ? ” আমার খুব কান্না পাচ্ছিল , কোনো কথা না বলে সোজা নিজের ঘরে চলে এলাম ।
ওরে বাবা ! এতো ঊর্মির চিঠি ; এখানে কোত্থেকে এলো । কেউ দেখে ফেলেনি তো । চিঠি গুলোকে আমি চটপট জোড়ো করতে লাগলাম । আর তক্ষনি ডাইনি পিসিটা এসে জুটল আমার ঘরে ।
কি লুকোচ্ছিস রে ?
ক – ই – কি – চ্ছু – না !
কিছু না বললে হয় ! আমি তোর ঘর গোছানোর সময় আয়নার পিছনে ঝুল ঝাড়তে গিয়ে ঐ কাগজ গুলোকে পেয়েছি । এরপর……
(আমি তাড়াতাড়ি পিসির মুখ চেপে ধরলাম । ) ও পিসি চুপকর পাশের ঘরে বাবা আছে যে ; সব শুনে ফেলবে ।
কই রে নীলা , কোথায় গেলি ? এদিকে একবার আয়তো । ( এই রে বাবা আবার পিসিকে ডাকছে কেন ? )
এর মধ্যেই কখন একটা চিঠি দমকা হাওয়াতে বাবার ঘরের সামনে গিয়ে পড়েছে । আমি কোনো রকমে পিসিকে ছেড়ে দিয়ে চিঠির দিকে ছুটলাম । আর পিসিকে ঝাজের সাথে বলতে শুনলাম – “ কি বিচ্চু ছেলেরে বাবা , প্রায় দম বন্ধ করে দিয়েছিল । ওরে ও ধীরেন তোর ছেলেকে সামলা ও তো পেরেম করছে রে পেরেম । ”
ততক্ষণে বাবা চিঠিটা হাতে ধরে পড়তে আরম্ভ করেছে । ওরে বাবা আমি আর নেই । আমি বাড়ি থেকে পালাতে যাবো আর কি , দেবু দেবু বলে ডাক পাড়ল বাবা । আমার প্রান উড়ে যাওয়ার জোগাড় । ভয়ে ভয়ে বাবার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম । অথচ বাবা বেশ শান্ত ভাবেই বলল , “ তোমার তো চাকরি হয়ে গেছে । ” আমি শুনে হাঁ ।
বাবা দেবু আমাদের তো একটু বেরোতে হবে ।
এই সন্ধ্যাবেলা ? রাত আটটা বাজল যে ।
তাতে কি , তোমার পিসিকে তৈরি হতে বলো । আর হ্যাঁ তুমিও তৈরি হয়ে নাও । বেশি সময় হাতে নেই ।
পাশের বাড়ির রামু কাকা ভ্যান চালায় । বাড়িতেও ফিরে এসেছিল । তার ভ্যানে চড়েই যাএা । আমরা যে কোথায় যাচ্ছি ! আচ্ছা বাবা আমাকে চাকরির কথা বললো কেন ? যে ছেলে মাধ্যমিকেই তিন তিন বার ডাব্বা খায় ; তার আবার চাকরি ! তবে কি বাবা…..
এই দেবু ভ্যান থেকে নামবি নাকি ? এত ভাবছিস কি , নাম নাম দেরি হয়ে যাচ্ছে যে । আমি হঠাৎ সংজ্ঞা ফিরে পেয়ে বললাম , হ্যাঁ বাবা এইতো নামছি । আরে এতো কলোনী পাড়া । আমার বুকের ভিতরটা ছ্যাদ করে উটলো । এখানেই তো ঊর্মিদের বাড়ি ।
(৩)
আর বলতে হবে না নিশ্চয়ই । সেই রাতেই ঊর্মির আর আমার বিয়ের ঠিক হল ; ১৯ শে বৈশাখ । বাবা মারা গেছে সাত মাস হল । ডাইনি পিসিটা একই রকম ; খিটখিটে । ঊর্মি অন্তঃসত্বা ।
আমাদের একটা ফুটফুটে ছেলে হয়েছে ; ওর নাম রেখেছি রনি । আমি এখন বাবার চাল দোকানের মালিক । ব্যবসা ভালই চলছে । দারুণ খবর কাল বাইক কিনলাম ; হিরোহুণ্ডা । ভাবছি এবার বাড়িটাও করবো ।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
Mahfuza Sultana ০৪/০৭/২০১৪আটকে ছিলাম শেষ পর্যন্ত !!আপনার আর লিখা পড়তে চাই। ভাল লাগা রেখে গেলাম ।
-
রাধাশ্যাম জানা ০১/০৭/২০১৪দারুন একটা গল্প শুনলাম,পড়ে ভালো লাগল…!ভালো থেকো বন্ধু!
-
রামবল্লভ দাস ০১/০৭/২০১৪এতে কি কোন রস পেলেন প্রিয় দাদা , কবি , লেখক...
ভালোবাসা নেবেন...পাশে থাকবেন...ধন্যবাদ ।। -
কবি মোঃ ইকবাল ৩০/০৬/২০১৪চমৎকার গল্প। খুব ভালো লেগেছে।