সখী বাজাও কার বীণা
কদিন ধরে হানি আপার কথা খুব মনে পড়ছে ।
কতদিন দেখা হয় না ওনার সাথে ?অনেকদিন । ক্লাস টেনে পড়ি তখন হানি আপা আমাদের বাসায় খুব আসতেন । ।খুব সুইট করে লম্বা একহাড়া গড়নের উনি । দেখলেই ভাল লাগতো ওনাকে ।
দুটো মেয়ে ছিল ওনার । মেয়ে দুটোও খুব মিষ্টি দেখতে ।
আর ওনার স্বামী মনে হয় ছোটখাট একটা চাকুরী করতেন ।
আপাতদৃষ্টে খুব সুখী পরিবার। কিন্তু হানি আপা সুখী ছিলেন না ।
ওনার স্বামীর গায়ে হাত তোলার মত বিচ্ছিরি অভ্যেস ছিল ।
আমার আম্মার সাথে যখন এই বিষয় গুলো উনি মন খারাপ করে শেয়ার করতেন তখন আপাকে বলতাম “আপা আপনি এই খারাপ লোকটার সাথে কেন থাকেন ? চলে আসেন না কেন ?? আপা বলতেন “সবকিছু এত সহজ নারে বোন” ।
তখন অল্প বয়সের হালকা চিন্তা ভাবনার কারনে ওনার সমস্যাকে মনে
হয় অতটা বুঝতে পারতাম না ।কিন্তু পরে বুঝতে পেরেছি আসলেই ওনার জন্যে কঠিনই ছিল কোন কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়া ।
ওনার বাবা ছিলেন কম্পাউন্ডার । অনেকগুলো ভাইবোন । এর মধ্যে উনি কোথায় আসবেন ?
আবার ওনার পড়াশোনাও খুব বেশী ছিল না যে নিজে কিছু করবেন ।
একদিন হানি আপা ওনার স্বামীর সাথে রাগ করে আমাদের বাসায় দু তিন দিনের জন্যে চলে আসলেন ।দুদিন পরই ওনার স্বামী ভদ্রলোক ওনার পছু পিছু চলে আসলেন ।দুজনই প্রচণ্ড ঝগড়া করছিলেন । ওনার স্বামী বলছিলেন “মেরে তো তোর হাড্ডি সব ভেঙ্গে ফেলেছি ।
তবু শিক্ষা হয় না তোর ?আপা বলছিলেন এখন এই বাকী হাড্ডিগুলোকে আমার বাঁচাতে হবে ।ঝগড়ার এক পর্যায়ে হঠাৎ দেখলাম ওনার স্বামী তেড়ে আসলেন ওনার দিকে ।
আমি তো ভাবলাম মারতেই আসলো বুঝি । আমি এমনিতেই প্রচণ্ড ভীতু ।
তার উপর ভদ্রলোকের এমন তেড়ে আসা দেখে এমন ভয় পেলাম !
পরে হানি আপাকে বললাম “আপা আমি তো মনে করেছি উনি বুঝি আপনেকে মারতে আসছিলেন ।
আপা বললেন ‘আমিও তো তাই ভাবছিলাম”।
আজব দুনিয়া আর কি । !
যাই হোক এহেন হানি আপার পদস্খলন হল ।
উনি প্রেমে পড়লেন এলাকারই একটা ছেলের ।
ঐ ছেলেও দিওয়ানা । দুজনে সারাদিন গল্প করে ,ঘুরে বেড়ায় , বাংলা সিনেমা দেখতে যায় ।
ঐ সময় অঞ্জু ঘোষের হিট ছবি “বেদের মেয়ে জোছনা “ চলছিল।
দুজনে মজা করে সেই সিনেমাও দেখতে যান ।
আর রাতে বাসায় আসলে ওনার স্বামীর সাথে তুমুল ঝগড়া । আর একদিন ওনার স্বামী ওনাকে এমন লাথি কোষলেন ওনার পিঠে উনি এক রুম থেকে আর এক রুমে যেয়ে পড়লেন । প্রায় ২০ গজ দূরে যেয়ে পড়লেন । কপাল টপাল ফেটে রক্তাক্ত অবস্থা ।
হানি আপাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম “আপা আপনি কি ঐ আসলাম ভাই কে পছন্দ করেন “?
আপা উত্তর করলেন “ আরে না । আমার মন খারাপ থাকে তো তাই একটু সময় কাটাই আর কি’ ।
ওনার এই ব্যপারটা ওনার বড় মেয়ে পছন্দ করতো না। খুব রাগ করতো ।
মেয়েটা তো তখন মাত্রই বড় হচ্ছে । মনে হয় তখন ১০ বা ১১ বছর বয়স হবে ।ওই আরো ওর বাবাকে বলে দিত ওর মা যে ঐ আসলামের সাথে গল্প করে ,সময় কাটায় , সিনেমা দেখতে যায় ।
একদিন শুনলাম হানি আপা ঘর ছেড়েছে ঐ আসলামের সাথে ।
হানি আপার স্বামী আমাদের বাসায় আসলেন ।
আমাকে আর আমার আম্মাকে বললেন ‘হানি আপা কত ভাল ছিল । অনেক পবিত্র মেয়ে ।আরো কত কথা ।এত অবাক হলাম আমি ! আমি বললাম “তাহলে ওনাকে মারেন কেন ?
উনি একটু বিব্রত হলেন । এরপর বললেন “আমি মারলেও তো আবার পুষিয়ে দেই ,“এরকম টাইপের কি একটা কথা যেন বলছিলেন ।
ঐ সময় আম্মা একটু লজ্জা পাচ্ছিলেন । এরপর উনি আবার বললেন “ হানি আপার তো কোন দোষ নাই ।
আসলামই ওর মন নষ্ট করেছে । ইত্যাদি , ইত্যাদি , ইত্যাদি ।
কিছুদিন পর একদিন হানি আপা খুব ভোর সকালে আসলামকে নিয়ে আমাদের বাসায় উপস্থিত। সাথে ব্যাগ অ্যান্ড ব্যাগেজ ।
আম্মা রেগে গেলেন । হানি আপাকে বকলেন।তুমি কেন স্বামীর ঘর ছাড়ছ , আর আসলামের সাথেই বা তুমি কেন ?ইত্যাদি ।
হানি আপাও খুব রাগ করল আম্মার সাথে । আম্মাকে তাৎক্ষনিক ভাবে কথা শুনিয়ে দিলেন । এরপর চলে গেলেন । আর কোন দিন আমাদের বাসায় আসেন নি উনি ।
আসলামের আবার স্ত্রী ছিল । তার ও কেন মন মজলো হানি আপার মধ্যে । হানি আপা অবশ্য খুব সুন্দরী । ওনাকে যে কারোরই ভাল লাগার কথা ।
এরপর অনেকদিন খবর জানি না হানি আপার ।
প্রায় চার বছর পর একদিন দেখা আসলাম ভাই এর সাথে । হানি আপার কথা জিজ্ঞেস করেতই উনি মুখ কালো করে সরে গেলেন ।
পরে হানি আপার ভাই এর কাছে শুনেছি উনি ওনার স্বামীর কাছে ফিরে গেছেন । back to the pavilion আর কি ।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই গানের কথা মনে পড়ল
ভালবেসে যদি সুখ নাহি তবে কেন এ ভালবাসা । “
জানি না হানি আপার এটা ভুল ছিল কিনা ।
মাত্র ১৩ /১৪ বছর বয়সে বিয়ে । ১৮ বয়সের মধ্যে দু সন্তানের মা ।
একটা বাজে স্বামী ।
আবার প্রেমে পড়া ।
আবার আগের স্বামীর কাছে ফিরে আসা ।
জীবনটাই আমাদের যেন কি রকম ।
ঠিক ব্যাখ্যেয় নয় ।
জানি না হানি আপা এখন কোথায় আছেন ।
যেখানেই থাকুন ভাল থাকুন । স্বামী বাচ্চাদের নিয়ে ভাল থাকুক উনি ।
কতদিন দেখা হয় না ওনার সাথে ?অনেকদিন । ক্লাস টেনে পড়ি তখন হানি আপা আমাদের বাসায় খুব আসতেন । ।খুব সুইট করে লম্বা একহাড়া গড়নের উনি । দেখলেই ভাল লাগতো ওনাকে ।
দুটো মেয়ে ছিল ওনার । মেয়ে দুটোও খুব মিষ্টি দেখতে ।
আর ওনার স্বামী মনে হয় ছোটখাট একটা চাকুরী করতেন ।
আপাতদৃষ্টে খুব সুখী পরিবার। কিন্তু হানি আপা সুখী ছিলেন না ।
ওনার স্বামীর গায়ে হাত তোলার মত বিচ্ছিরি অভ্যেস ছিল ।
আমার আম্মার সাথে যখন এই বিষয় গুলো উনি মন খারাপ করে শেয়ার করতেন তখন আপাকে বলতাম “আপা আপনি এই খারাপ লোকটার সাথে কেন থাকেন ? চলে আসেন না কেন ?? আপা বলতেন “সবকিছু এত সহজ নারে বোন” ।
তখন অল্প বয়সের হালকা চিন্তা ভাবনার কারনে ওনার সমস্যাকে মনে
হয় অতটা বুঝতে পারতাম না ।কিন্তু পরে বুঝতে পেরেছি আসলেই ওনার জন্যে কঠিনই ছিল কোন কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়া ।
ওনার বাবা ছিলেন কম্পাউন্ডার । অনেকগুলো ভাইবোন । এর মধ্যে উনি কোথায় আসবেন ?
আবার ওনার পড়াশোনাও খুব বেশী ছিল না যে নিজে কিছু করবেন ।
একদিন হানি আপা ওনার স্বামীর সাথে রাগ করে আমাদের বাসায় দু তিন দিনের জন্যে চলে আসলেন ।দুদিন পরই ওনার স্বামী ভদ্রলোক ওনার পছু পিছু চলে আসলেন ।দুজনই প্রচণ্ড ঝগড়া করছিলেন । ওনার স্বামী বলছিলেন “মেরে তো তোর হাড্ডি সব ভেঙ্গে ফেলেছি ।
তবু শিক্ষা হয় না তোর ?আপা বলছিলেন এখন এই বাকী হাড্ডিগুলোকে আমার বাঁচাতে হবে ।ঝগড়ার এক পর্যায়ে হঠাৎ দেখলাম ওনার স্বামী তেড়ে আসলেন ওনার দিকে ।
আমি তো ভাবলাম মারতেই আসলো বুঝি । আমি এমনিতেই প্রচণ্ড ভীতু ।
তার উপর ভদ্রলোকের এমন তেড়ে আসা দেখে এমন ভয় পেলাম !
পরে হানি আপাকে বললাম “আপা আমি তো মনে করেছি উনি বুঝি আপনেকে মারতে আসছিলেন ।
আপা বললেন ‘আমিও তো তাই ভাবছিলাম”।
আজব দুনিয়া আর কি । !
যাই হোক এহেন হানি আপার পদস্খলন হল ।
উনি প্রেমে পড়লেন এলাকারই একটা ছেলের ।
ঐ ছেলেও দিওয়ানা । দুজনে সারাদিন গল্প করে ,ঘুরে বেড়ায় , বাংলা সিনেমা দেখতে যায় ।
ঐ সময় অঞ্জু ঘোষের হিট ছবি “বেদের মেয়ে জোছনা “ চলছিল।
দুজনে মজা করে সেই সিনেমাও দেখতে যান ।
আর রাতে বাসায় আসলে ওনার স্বামীর সাথে তুমুল ঝগড়া । আর একদিন ওনার স্বামী ওনাকে এমন লাথি কোষলেন ওনার পিঠে উনি এক রুম থেকে আর এক রুমে যেয়ে পড়লেন । প্রায় ২০ গজ দূরে যেয়ে পড়লেন । কপাল টপাল ফেটে রক্তাক্ত অবস্থা ।
হানি আপাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম “আপা আপনি কি ঐ আসলাম ভাই কে পছন্দ করেন “?
আপা উত্তর করলেন “ আরে না । আমার মন খারাপ থাকে তো তাই একটু সময় কাটাই আর কি’ ।
ওনার এই ব্যপারটা ওনার বড় মেয়ে পছন্দ করতো না। খুব রাগ করতো ।
মেয়েটা তো তখন মাত্রই বড় হচ্ছে । মনে হয় তখন ১০ বা ১১ বছর বয়স হবে ।ওই আরো ওর বাবাকে বলে দিত ওর মা যে ঐ আসলামের সাথে গল্প করে ,সময় কাটায় , সিনেমা দেখতে যায় ।
একদিন শুনলাম হানি আপা ঘর ছেড়েছে ঐ আসলামের সাথে ।
হানি আপার স্বামী আমাদের বাসায় আসলেন ।
আমাকে আর আমার আম্মাকে বললেন ‘হানি আপা কত ভাল ছিল । অনেক পবিত্র মেয়ে ।আরো কত কথা ।এত অবাক হলাম আমি ! আমি বললাম “তাহলে ওনাকে মারেন কেন ?
উনি একটু বিব্রত হলেন । এরপর বললেন “আমি মারলেও তো আবার পুষিয়ে দেই ,“এরকম টাইপের কি একটা কথা যেন বলছিলেন ।
ঐ সময় আম্মা একটু লজ্জা পাচ্ছিলেন । এরপর উনি আবার বললেন “ হানি আপার তো কোন দোষ নাই ।
আসলামই ওর মন নষ্ট করেছে । ইত্যাদি , ইত্যাদি , ইত্যাদি ।
কিছুদিন পর একদিন হানি আপা খুব ভোর সকালে আসলামকে নিয়ে আমাদের বাসায় উপস্থিত। সাথে ব্যাগ অ্যান্ড ব্যাগেজ ।
আম্মা রেগে গেলেন । হানি আপাকে বকলেন।তুমি কেন স্বামীর ঘর ছাড়ছ , আর আসলামের সাথেই বা তুমি কেন ?ইত্যাদি ।
হানি আপাও খুব রাগ করল আম্মার সাথে । আম্মাকে তাৎক্ষনিক ভাবে কথা শুনিয়ে দিলেন । এরপর চলে গেলেন । আর কোন দিন আমাদের বাসায় আসেন নি উনি ।
আসলামের আবার স্ত্রী ছিল । তার ও কেন মন মজলো হানি আপার মধ্যে । হানি আপা অবশ্য খুব সুন্দরী । ওনাকে যে কারোরই ভাল লাগার কথা ।
এরপর অনেকদিন খবর জানি না হানি আপার ।
প্রায় চার বছর পর একদিন দেখা আসলাম ভাই এর সাথে । হানি আপার কথা জিজ্ঞেস করেতই উনি মুখ কালো করে সরে গেলেন ।
পরে হানি আপার ভাই এর কাছে শুনেছি উনি ওনার স্বামীর কাছে ফিরে গেছেন । back to the pavilion আর কি ।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই গানের কথা মনে পড়ল
ভালবেসে যদি সুখ নাহি তবে কেন এ ভালবাসা । “
জানি না হানি আপার এটা ভুল ছিল কিনা ।
মাত্র ১৩ /১৪ বছর বয়সে বিয়ে । ১৮ বয়সের মধ্যে দু সন্তানের মা ।
একটা বাজে স্বামী ।
আবার প্রেমে পড়া ।
আবার আগের স্বামীর কাছে ফিরে আসা ।
জীবনটাই আমাদের যেন কি রকম ।
ঠিক ব্যাখ্যেয় নয় ।
জানি না হানি আপা এখন কোথায় আছেন ।
যেখানেই থাকুন ভাল থাকুন । স্বামী বাচ্চাদের নিয়ে ভাল থাকুক উনি ।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
Înšigniã Āvî ৩১/১০/২০১৩
-
sarwar ১৮/১০/২০১৩কোন এক মনিষী বলেছিল cron ক্ষেত থেকে একটা ভাল cron নিয়ে আস সর্ত একটা পিছনে পেলে আসা cron নয়।শিষ্য আসল খালি হাতে । কারন শর্ত নষ্ট হবে বলে।
-
suman ১৬/১০/২০১৩দারুণ একটা ছোট গল্প...প্রশ্নগুলোর যথাযথ উত্তর সবসময় পাওয়া যায় না...
-
সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী. ১৬/১০/২০১৩আমার কাছে খুবই চমৎকার একটি প্লটের গল্প হয়েছে।গল্পেেরমধ্যে চরম বাস্তবতা প্রকাশ পেয়েছে।খুব দ্রুতই গল্প এগিয়ে গেছে।এটা অনেকেই পছন্দ না করতে পারে।তবে সহজ সরল ভাষার গল্প টি পাঠক আকৃষ্ট করতে যথেষ্ট।ধন্যবাদ।
-
রাসেল আল মাসুদ ১৬/১০/২০১৩গল্পটা আরেকটু গুছিয়ে লিখতে পারলে ভাল হত।
এখনো ভালোবাসা কেন নিঃস্বার্থ হয়না !!