তোমরা যে বলো ভালবাসা ভালবাসা
(গল্প লিখার সাহস নাই। তবু লিখে ফেললাম। ভুল ত্রুটি পাঠক ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।)
সে দাঁড়িয়ে থাকতো প্রতিদিন আমার আসা যাওয়ার পথে। কি ভীষন পাতলা ছিপছিপে। স্বপ্নের মত ওর চোখ।
আমার কথা নেই কথা ছিল না, আসলে সাহস ও নেই যে ওর সাথে কথা বলি ! তার কি ছিল ? সেও তো কখনো … বলল না। আমার বুকের ভেতর কি ভীষন আকুলতা ! একটু কথা বলুক, না না ঐ বোকাটা কোনদিন বলতে পারবে না !
অতএব প্রতিদিনের মতন স্বপ্নগুলো বুকের ভেতরই শেষ হয়ে যাওয়া। না পেরে চিরকুট পাঠালাম “এই যে বোকা ছেলে কি এত দেখো ! বল তো” ! একটা, দুটো, তিনটা ! অবশেষে একদিন সে সামনে এলো। আমি মরে যাচ্ছি ভয়ে, সংকোচে, লজ্জায় ! ভীষন রকম দাপাদাপি বুকের ভেতর ! একটা ঢেউ, একটা মাতাল ঢেউ ! আচ্ছা আমি কি মরে যাব এখুনি !! নাহ। গাধাটা কিছু বলল না আজো ! গভীর দৃষ্টি নিয়ে আমার চোখে চোখ রাখলো সে। আমার বুকের ভেতর সে চোখ গেঁথে আমাকে মাতাল করে দিল।
কিন্তু কিছু বলল না কেন আজো ? বিষণ্ন হয়ে পাশ দিয়ে হেঁটে চলে গেল সে।
ইউনিভার্সিটিতে কত বন্ধু আমার ! ভুলে গিয়েছি আনিসের কথা।তবু বাল্যপ্রেম বলে কথা। মাঝে মাঝে বিদ্যুত চমকের মত সে আমায় অবশ করে।আচ্ছা সে কি ভালবাসা ছিল ? অতঃপর কেউ নেই, কিছু না বলে আমি চলি স্বপ্নের সাথে মৃদু লয়ে হেঁটে হেঁটে। আবার দেখা আনিসের সাথে এখানে। কতদিন হল ! সেই সুন্দর চোখ আরো কাল গভীর হয়েছে। হাঁটা চলায় আত্মবিশ্বাসী। যেই আনিস কথাই বলতো না সে আজ দাপিয়ে বেড়ায় ইউনিভার্সিটি। সাথে নতুন বন্ধু বান্ধব। আমার সাথে দেখা হলে “এই নীরু কেমন আছিস ? ঐ বোকা সুইট মেয়েটা দেখি আরো সুইট হয়েছে” – বলে ঠা ঠা হাসি – পুনরায় আমার ভেতরটা তোলপোড় করে প্রস্থান। কতবার বলতে ইচ্ছে করলো ‘আনিস একবারো কি আমার বুকের ভেতরটাকে দেখবে না“ ? নাহ বলা হোল না।
সে কোনদিনো আর বলা হবে না !
আজকাল আমার নিজের ছোট্ট বাবুটা আর তার বাবাকে নিয়ে ভীষন ব্যস্ত আমি। উফ্ ! সারাদিন যে কত কাজ ! রান্না করা, কাপড় ধোয়া, ঘর গোছানো, বাবুকে খাওয়ানো, গোসল করানো, ঘুম পাড়ানো ! বাবুর বাবাটারও যে কত ঢং … ‘এই নীরু শুনো আজ তুমি কিন্তু নীল শাড়ী পড়বে আর নীল টিপ দেবে ! আমি এসে যেন স্বপ্নের পরীকে দেখি। গাধা লোকটা বুঝবে না শাড়ি পড়া কত্ত ঝামেলা। তবু প্রায় সময় তাকে চমকে দিতে ভীষন ভাল লাগে। আজ নীল শাড়ি, নীল টিপ, তো কাল সবুজ শাড়ী সবুজ টিপ, সাথে সুন্দর কোন সেট পড়লে আরো মায়াবী লাগবে -পিচ্চিটারও বায়না, আমাকে টিপ দাও, লিপস্টিক দাও, ওরে আমার বাবুটা !
আচ্ছা ! জীবন এত সুন্দর কেনো !
আজ ওদের অফিসের একটা পার্টি। সীমান্ত আগেই আমাকে বলে রেখেছে রেডি হয়ে থাকতে। ও অফিস থেকে এসেই আমাকে নিয়ে যাবে। বাবুকে আম্মার বাসায় রেখে এসেছি। সবচাইতে সুন্দর শাড়িটা পড়বো আজ। গয়না টিপ পরে সেজে গুজে আয়নার সামনে দাঁড়ালাম। নিজেকে দেখে নিজেই মুগ্ধ। সীমান্ত দেখে নিশ্চয় মুগ্ধ হবে ! কি যে ভাল লাগছে আমার !
কিন্তু সীমান্ত বাসায় এসেই হুটপুটি।এই চলো চলো, কেন দেরী করছো !
আরে এটা ট্রেন না সীমান্ত ! তোমাকে ট্রেন ধরতে হবে না, আমি ভীষন বিরক্ত।
আচ্ছা বাবা যাও ট্রেন না। কিন্তু চলো না। দেরী হচ্ছে তো ! আমাকে প্রায় ঝড়ের মত উড়িয়ে নিল।
সীমান্তটা যে কি না ! কপট রাগ আমার চোখে মুখে। অমনি ওনার ছেলেমানুষী হাসি। ওর চেহারা বেশী বেশী ইনোসেন্ট নাকি !
আমি বিভ্রান্ত হই।
একটা চাইনিজ রেস্তোরাঁয় ওদের অফিসের পার্টি। ঢুকেই ভাল লাগলো। ভীষন রকম গোছানো, ঝকঝকে তকতকে, মৃদুলয়ে মিউজিক সিস্টেম চলছে। এরকম জায়গায় আসলে মনটাই ভাল হয়ে যায়। সীমান্ত আমাকে ওর কলিগদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে লাগলো — নিরু “উনি হলেন সাবিত ভাই আর ভাবী, উনি নুরু ভাই আর ভাবী, ভাবী কেমন আছেন ইত্যাদি ফর্মাল কথা বলে শেষ করি। কিছুক্ষণ পরে ওদের বস আসবেন। ওরা সেটা নিয়ে বলাবলি করছিল। বস কি রকম, কিভাবে পেইন দেন, কি করেন না করেন ইত্যাকার কথা বলে ওদের হাসাহাসি …।
একটু পরেই ওদের বস এলেন। বস কে দেখেই আমি থ ! এ যে দেখি আনিস, পাশে কি ঝাঁ চকচকে সুন্দরী।ওর বউ হবে নিশ্চয়। সীমান্ত আমাকে পরিচয় করিয়ে দিতে লাগলো – নীরু উনি আমাদের বস আর উনি রুমা ভাবী।আমাদের প্রিয় ভাবী বলে হাসল সীমান্ত। রুমা ভাবী আর আনিস ও আমাকে কিছু একটা বলল ! কিন্তু আমি দেখেও কিছু দেখছি না শুনছিও না। বুকটা যে কেন এত জ্বলে যায়।
আশ্চর্য !!
26/07/13
সে দাঁড়িয়ে থাকতো প্রতিদিন আমার আসা যাওয়ার পথে। কি ভীষন পাতলা ছিপছিপে। স্বপ্নের মত ওর চোখ।
আমার কথা নেই কথা ছিল না, আসলে সাহস ও নেই যে ওর সাথে কথা বলি ! তার কি ছিল ? সেও তো কখনো … বলল না। আমার বুকের ভেতর কি ভীষন আকুলতা ! একটু কথা বলুক, না না ঐ বোকাটা কোনদিন বলতে পারবে না !
অতএব প্রতিদিনের মতন স্বপ্নগুলো বুকের ভেতরই শেষ হয়ে যাওয়া। না পেরে চিরকুট পাঠালাম “এই যে বোকা ছেলে কি এত দেখো ! বল তো” ! একটা, দুটো, তিনটা ! অবশেষে একদিন সে সামনে এলো। আমি মরে যাচ্ছি ভয়ে, সংকোচে, লজ্জায় ! ভীষন রকম দাপাদাপি বুকের ভেতর ! একটা ঢেউ, একটা মাতাল ঢেউ ! আচ্ছা আমি কি মরে যাব এখুনি !! নাহ। গাধাটা কিছু বলল না আজো ! গভীর দৃষ্টি নিয়ে আমার চোখে চোখ রাখলো সে। আমার বুকের ভেতর সে চোখ গেঁথে আমাকে মাতাল করে দিল।
কিন্তু কিছু বলল না কেন আজো ? বিষণ্ন হয়ে পাশ দিয়ে হেঁটে চলে গেল সে।
ইউনিভার্সিটিতে কত বন্ধু আমার ! ভুলে গিয়েছি আনিসের কথা।তবু বাল্যপ্রেম বলে কথা। মাঝে মাঝে বিদ্যুত চমকের মত সে আমায় অবশ করে।আচ্ছা সে কি ভালবাসা ছিল ? অতঃপর কেউ নেই, কিছু না বলে আমি চলি স্বপ্নের সাথে মৃদু লয়ে হেঁটে হেঁটে। আবার দেখা আনিসের সাথে এখানে। কতদিন হল ! সেই সুন্দর চোখ আরো কাল গভীর হয়েছে। হাঁটা চলায় আত্মবিশ্বাসী। যেই আনিস কথাই বলতো না সে আজ দাপিয়ে বেড়ায় ইউনিভার্সিটি। সাথে নতুন বন্ধু বান্ধব। আমার সাথে দেখা হলে “এই নীরু কেমন আছিস ? ঐ বোকা সুইট মেয়েটা দেখি আরো সুইট হয়েছে” – বলে ঠা ঠা হাসি – পুনরায় আমার ভেতরটা তোলপোড় করে প্রস্থান। কতবার বলতে ইচ্ছে করলো ‘আনিস একবারো কি আমার বুকের ভেতরটাকে দেখবে না“ ? নাহ বলা হোল না।
সে কোনদিনো আর বলা হবে না !
আজকাল আমার নিজের ছোট্ট বাবুটা আর তার বাবাকে নিয়ে ভীষন ব্যস্ত আমি। উফ্ ! সারাদিন যে কত কাজ ! রান্না করা, কাপড় ধোয়া, ঘর গোছানো, বাবুকে খাওয়ানো, গোসল করানো, ঘুম পাড়ানো ! বাবুর বাবাটারও যে কত ঢং … ‘এই নীরু শুনো আজ তুমি কিন্তু নীল শাড়ী পড়বে আর নীল টিপ দেবে ! আমি এসে যেন স্বপ্নের পরীকে দেখি। গাধা লোকটা বুঝবে না শাড়ি পড়া কত্ত ঝামেলা। তবু প্রায় সময় তাকে চমকে দিতে ভীষন ভাল লাগে। আজ নীল শাড়ি, নীল টিপ, তো কাল সবুজ শাড়ী সবুজ টিপ, সাথে সুন্দর কোন সেট পড়লে আরো মায়াবী লাগবে -পিচ্চিটারও বায়না, আমাকে টিপ দাও, লিপস্টিক দাও, ওরে আমার বাবুটা !
আচ্ছা ! জীবন এত সুন্দর কেনো !
আজ ওদের অফিসের একটা পার্টি। সীমান্ত আগেই আমাকে বলে রেখেছে রেডি হয়ে থাকতে। ও অফিস থেকে এসেই আমাকে নিয়ে যাবে। বাবুকে আম্মার বাসায় রেখে এসেছি। সবচাইতে সুন্দর শাড়িটা পড়বো আজ। গয়না টিপ পরে সেজে গুজে আয়নার সামনে দাঁড়ালাম। নিজেকে দেখে নিজেই মুগ্ধ। সীমান্ত দেখে নিশ্চয় মুগ্ধ হবে ! কি যে ভাল লাগছে আমার !
কিন্তু সীমান্ত বাসায় এসেই হুটপুটি।এই চলো চলো, কেন দেরী করছো !
আরে এটা ট্রেন না সীমান্ত ! তোমাকে ট্রেন ধরতে হবে না, আমি ভীষন বিরক্ত।
আচ্ছা বাবা যাও ট্রেন না। কিন্তু চলো না। দেরী হচ্ছে তো ! আমাকে প্রায় ঝড়ের মত উড়িয়ে নিল।
সীমান্তটা যে কি না ! কপট রাগ আমার চোখে মুখে। অমনি ওনার ছেলেমানুষী হাসি। ওর চেহারা বেশী বেশী ইনোসেন্ট নাকি !
আমি বিভ্রান্ত হই।
একটা চাইনিজ রেস্তোরাঁয় ওদের অফিসের পার্টি। ঢুকেই ভাল লাগলো। ভীষন রকম গোছানো, ঝকঝকে তকতকে, মৃদুলয়ে মিউজিক সিস্টেম চলছে। এরকম জায়গায় আসলে মনটাই ভাল হয়ে যায়। সীমান্ত আমাকে ওর কলিগদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে লাগলো — নিরু “উনি হলেন সাবিত ভাই আর ভাবী, উনি নুরু ভাই আর ভাবী, ভাবী কেমন আছেন ইত্যাদি ফর্মাল কথা বলে শেষ করি। কিছুক্ষণ পরে ওদের বস আসবেন। ওরা সেটা নিয়ে বলাবলি করছিল। বস কি রকম, কিভাবে পেইন দেন, কি করেন না করেন ইত্যাকার কথা বলে ওদের হাসাহাসি …।
একটু পরেই ওদের বস এলেন। বস কে দেখেই আমি থ ! এ যে দেখি আনিস, পাশে কি ঝাঁ চকচকে সুন্দরী।ওর বউ হবে নিশ্চয়। সীমান্ত আমাকে পরিচয় করিয়ে দিতে লাগলো – নীরু উনি আমাদের বস আর উনি রুমা ভাবী।আমাদের প্রিয় ভাবী বলে হাসল সীমান্ত। রুমা ভাবী আর আনিস ও আমাকে কিছু একটা বলল ! কিন্তু আমি দেখেও কিছু দেখছি না শুনছিও না। বুকটা যে কেন এত জ্বলে যায়।
আশ্চর্য !!
26/07/13
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
মোবারক হোসেন ০৬/০৭/২০১৫গল্প অনেক পড়েছি ,পড়ে কষ্টও পেয়েছি কিন্তু বুকের ভিতরটা এমন চিৎকার কর উঠেনি।
-
ফাহমিদা ফাম্মী ৩০/১০/২০১৩ভালো লিখছেন আপু
-
সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী. ০৫/১০/২০১৩চমৎকার উপস্থাপনে বাস্তব বর্ননা।ভালো লাগলো।
-
suman ০২/১০/২০১৩আমি আগেই জানতাম আপনি চমতকার গল্প লিখতে পারেন ...
-
সামসুল আলম দোয়েল ৩০/০৯/২০১৩বাহ! খুব সুন্দর। কে বলে প্রথম লেখা?
খুবই চমত্কার!
আচ্ছা, এটা বাস্তব থেকে নেয়া?
ধন্যবাদ -
Înšigniã Āvî ৩০/০৯/২০১৩দুর্দান্ত রকমের ভাল লাগলো
-
ইব্রাহীম রাসেল ৩০/০৯/২০১৩--অসাধারণ বর্ণনা, রূপকের আশ্রয়গুলো মুগ্ধকর