www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

দ্য আলটিমেট রেজাল্ট অব ব্রেকিং নেচারাল রুলস

ইন্টারমিডেয়েট লাইফের কথা; আমি খুব রাত জাগতাম। এমনো হতো কোন কোন রাতে আমি এক ঘন্টা ঘুমায়ছি কিংবা একেবারেই ঘুমায়নি। ফলাফল স্বরূপ আমার স্বাথ্য ভেঙে যায়, যা পরবর্তী ছয় বছরেও আর উল্যেখযোগ্য হারে রিকভার হয়নি। রাত ঘুমানোর জন্য; স্রষ্টা রাতকে ঘুমানোর জন্যই সৃষ্টি করেছেন। প্রতিটি সৃষ্টিরই একটা নেচারাল নিয়ম আছে এবং প্রতিটি প্রাকৃতিক সৃষ্টিই চলে ঐ নেচারাল নিয়মে। এই নেচারাল নিয়মের মাঝেই ঐ সৃষ্টিটির সকল সৌন্দর্য লুকায়তি থাকে। বাঘ, সিংহ, হরিণ কিংবা রঙ-বেরঙের পাখিগুলোকে আপনি ধরে এনে খাচায় বন্দি রাখতে পারেন, বিনোদিত হতে পারেন কিংবা আপনার আভিজাত্য প্রকাশ করতে পারেন; কিন্তু ঐ প্রানীগুলোর নেচারাল সোন্দর্য তাতে করে কিছুই থাকে না। কারন ওগুলো মুক্ত অবস্থাতেই সত্যিকারের সুন্দর। সামান্য কিছুটা পার্থক্য করতে চাইলে সাফারি পার্ক এবং চিড়িয়াখানা; মাত্র এই দুইটা জায়গাতে ঘুরুন। ফুল আপনি যতো যত্ন করেই ঘরে সাজান না কেন, তা ততোটা শোভা বিলাবে না; যতোটা গাছে থেকে বিলায়। আপনি প্রাকৃতিক উপদানগুলোকে আপনার মতো করে সৌন্দর্যমন্ডিত করতে চাইলে তা উল্টো শ্রিহীন হয়ে যাবে; ক্ষেত্র বিশেষ তা রুষ্ঠ এবং প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে উঠবে। ইসলাম ধর্মে নদীর স্রোতকে বাধাগ্রস্ত করতে নিষেধ করা হয়ছে এবং এটিকে একটি উল্যেখযোগ্য অন্যায় বলা হয়েছে। এখন আধুনিক বিজ্ঞান আমাদের বলে, কোন গতিশীল স্রোতকে বাধাগ্রস্ত করা হলে তা ঐ অঞ্চলের আবহাওয়া, জলবায়ু, জীববৈচিত্র, জীবন-জীবিকা এবং সামগ্রিক পরিবেশের উপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি করে। অর্থাৎ সমগ্র ইকো সিস্টেমের মারাত্মক ক্ষতি সাধিত হয় এবং ঐ অঞ্চলের জিওগ্রাফিকাল/ভৌগলিক অবস্থায় দীর্ঘ মেয়াদে বিধ্বংশী প্রভাব ফেলে। উদহারণ হিসাবে, বাংলাদেশ এবং ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে ফারাক্কার প্রভাব পর্যালোচনা করতে পারেন। আবার হিউম্যান সাইকোলজির ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত বিষয় হলো, প্রতিটা মানুষই প্রিয় জনের কাছ থেকে সময় এবং বন্ধুসুলভ ভালোবাসা প্রত্যাশা করে। এটা মানুষের প্রাকৃতিক/ নেচারাল বৈশিষ্ট্য/রুল। এখন আপনি আপনার প্রিয়জনের সেই নেচারাল স্রোতকে উপেক্ষা করছেন ক্যারিয়ার, বিত্ত-বৈভব কিংবা সমাজিক স্ট্যাটাসের পিছনে ছুটে। ফলাফল হিসাবে পারিবারিক জীবনে এসে আপনার সন্তান বখে যাচ্ছে কিংবা আপনার প্রিয় মানুষটি জড়িয়ে পড়ছে পরকিয়ায়। অথছ আপনি জানতেই পারছেন না তার কিছু। আর যখন জানতে পারছেন; তখন হয়তো অনেক দেরী হয়ে গেছে। আপনি তখন দোষ দেন প্রযুক্তি, মোবাইল, ইন্টারনেট, টিভি সিরিয়াল কিংবা ভাগ্যের। কিন্তু আপনি একটু সচেতন হলেই হয়তো অনাকাঙ্খিত এমন পরিস্থিতি বহুল অংশে এড়ানো সম্ভব। আপনি তো এটা নিশ্চয় জানেন, পরিবার পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এখান থেকেই মানুষের প্রকৃত শিক্ষা অর্জিত হয়। কিন্তু আমারা একটা শিশুর শৈশব কিংবা শিক্ষার ভার তুলে দিচ্ছি কাজের বুয়ার হাতে, ভিডিও গেমস কিংবা কার্টুন চ্যানেলের হাতে, হাউজ টিউটর কিংবা কিন্ডার গার্ডেনের হাতে এবং মনকে মন বই শৈশবেই তাদের ঘাড়ে তুলে দিয়ে তাদেরকে অনুভূতিহীন গাধা তৈরি করছি। পরিস্থিতি এমন দাড়াচ্ছে যে, এখন শহুরে বাচ্চারা কাজের বুয়াকে মা আর বাড়ির কেয়ারটেকারকে আব্বু ডেকছে; বড়ো হচ্ছে এক ধরনের নির্জীবতা কিন্তু হিংস্রতা ভিতরে নিয়ে। ফলাফল হিসাবে সমাজে এক ভয়ংকর ট্রেন্ড গ্রো করছে। স্কুল পড়ুয়া ছেলে মেয়েগুলাই জড়িয়ে পড়ছে ভয়ংকর সব অপরাধে, এমনকি খুনাখুনিতে। অথচ ঐ শিশুটির শৈশব বাবা-মায়ের বন্ধুত্বপূর্ণ সহচার্য, খেলাধুলা এবং দুরান্তপনায় আনন্দময় ও প্রানবন্ত হওয়ার কথা ছিলো; যেমনটা হয়েছিল আমাদের বাবা-মায়ের জেনারেশনের ক্ষেত্র, যেমনটা হয়েছিল আমাদের জেনারেশনের অনেকের এবং যেমনটা এখনো হয় গ্রামের শিশুদের। কিন্তু আমারা শহুরে পরিবেশে মানুষ বানানোর নামে আমাদের সন্তানদেরকে দুই থেকে তিন রুমের ফ্লাটের বন্দী জেলখানয় এমন ভাবে বড়ো করছি; যেখান থেকে উৎপন্ন হচ্ছে পল্টি মুরগীর মতো এক জেনারেশন, যাদের বেশির ভাগেরই ভালো মন্দের পার্থক্য করার ক্ষমতাটুকুই হারিয়ে যাচ্ছে বাস্তব জগতের মুখমুখি হয়ে। অথচ পারিবারিক এবং সমাজিক সফলতার জন্য আমাদের দরাকার এক প্রানবন্ত তরুণ প্রজম্ম। আমার চোখে সেই পুরুষ মানুষটা সফল না, যে সফল প্রেসিডেন্ট কিংবা প্রধানমন্ত্রী হতে পেরেছেন এবং মানুষের কাছে নন্দিত হয়েছেন। আমার কাছে সফল পুরুষ সে, যে তার পরিবারের একজন সফল পরিচালক হতে পেরেছে; যে একজন সফল সন্তান, আদর্শ ভাই, সফল পিতা এবং আদর্শ স্বামী। আপনি কি জানেন, সমাজে পরকিয়া বিস্তারের সবচেয়ে বড়ো কারন আপনার প্রিয় মানুষটাকে যথেষ্ঠ সময় না দেওয়া এবং আপনার যান্ত্রিক ব্যাস্ত জীবনযাপন। শুধু সোনা-জহরতে মুড়িয়ে টাকার বিছনায় স্ত্রীকে রাখলেই হয় না; একটা মেয়ের জন্য প্রিয় পরুষের কাছ থেকে পাওয়া সবচেয়ে দামী উপহারটা হচ্ছে সময়। সবচেয়ে লোভী মেয়েটাও দিন শেষে প্রিয় পুরুষ কিংবা প্রিয় মানুষদের সহচার্য পেতে কাতর হয়ে উঠে। আর আপনি বিশ্বাস নিয়ে আছেন, টাকার রশিতে গেথেই কিনা একটা মেয়েকে ধরে রাখবেন! বিপরতীত দৃষ্টিকোন থেকে একই ভাবে আমার চোখে ঐ নারীটি সফল না, যে কোন কর্পোরেট কিংবা মিডিয়া আইকন হয়েছে। আমার চোখে ঐ মেয়েটিই সফল; যে একজন আদর্শ মেয়ে, আদর্শ বোন, আদর্শ স্ত্রী এবং প্রকৃত অর্থে একজন সফল মা হতে পেরেছে। একটি নারীর সবচেয়ে বড়ো সফলতা মাতৃত্বে; সফল মাতৃত্বে। একজন প্রকৃত সফল মা এবং স্ত্রী হয়ে হয়ে উঠতে পারাতেই একজন নারীর প্রকৃত সফলতা। আমার কাছে পারিবারিক বন্ধন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারন এক একটি সফল ইউনাইটেড পরিবার একটি সমৃদ্ধ ও সফল সমাজ এবং রাষ্ট্রের চাবি। আর এই পারিবারিক বন্ধন অটুট রাখার ভিত্তিই হচ্ছে একজন নারী। একটি সুউচ্চ ভবন যেমন তার ভিত্তির উপর ভর করেই মাথা তুলে দাড়িয়ে থাকে; তেমনি একটি সফল পরিবারের গল্পগাথা মূলত রচনা হতে পারে একজন নারীর অবদানেই। আমার কাছে একই ভাবে গুরুত্বপূর্ণ আরো একটি বিষয় হচ্ছে ধর্মীয় অনুশাসন এবং হাজার বছরের সমাজিক রীতিনীতি ও ঐতিহ্য যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলার পাশাপাশি ধরে রাখা। কারন এগুলো আমাদের শেকড়, সুশৃঙ্খল ব্যাক্তি এবং সমাজ জীবনের চাবিকাঠি; যা নেচারেল রুল বা নিয়ম। কিন্তু আমরা প্রতি নিয়ত এই নিয়মগুলোকে ভাঙছি এবং আমাদের মতো করে সবকিছু পেতে কিংবা সফলতার পথে হাটতে চাইছি। ফলাফল হিসাবে প্রকৃতি আমাদেরকে তার মতো করে সাস্তি দিচ্ছে এবং আমাদের জীবনকে জটিল ও কঠিন করে তুলছে।
.
পরিশেষ বলবো, প্রকৃতি সুশৃঙ্খল, নিয়মতান্ত্রিক এবং সুন্দর। কিন্তু একইভাবে আবার প্রতিশোধ গ্রহনে কঠোর, নির্মম এবং ক্ষমাহীন। আমরা মানুষরাই ইলিউশনে ভুগি; উচিৎ-অনুচিৎ পার্থক্য করতে ভুলে যাই। নারী-পুরুষের মূল দায়িত্ব-কর্তব্য, গন্ডি, সৌন্দর্যের ক্ষেত্রকে আধুনিকতার দোহায় দিয়ে গুলিয়ে ফেলতে চাই এবং প্রাকৃতিক জীবনাচরন পদ্ধতিকে দৃষ্টিকটু ভাবে বদলে দিতে চাই। ভুলে যেতে চাই সব নীতি-নৈতিকতা, সমাজিক রীতি-নীতি এবং পারিবারিক বন্ধনকে। কিন্তু সত্যি হলো, প্রাকৃতিক নিয়মের ধারাবাহিক ব্যাত্যয় ঘটিয়ে আমাদের কর্ম ও অনাচারই ফলাফল হিসাবে আমাদের জন্য অযাচিত দুর্ভোগ এবং দুঃভাগ্য ডেকে আনছে; এবং বর্তমান অধিকাংশ সমাজিক বিপর্যয়ে অন্যতম অনুঘটকও এটিই।
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ১৩৩৪ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ৩১/০১/২০১৮

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • সন্দর
  • আমি-তারেক ৩১/০১/২০১৮
    Mother nature ke niye bostunisto lekha ... onek valo...
 
Quantcast