অন্ধ দোলনচাঁপা
সারাক্ষণ বাস আর প্রাইভেট গাড়িগুলোর আশেপাশেই ঘুরঘুর করে ওরা। রাস্তার একপাশে সংসদ ভবনের মায়াবী কাঠামোর ছায়া নিয়ে একসারিতে কতশত গাছ রাতের বাতাসে হেলেদুলে কেমন শান্ত চুপচাপ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। ফুটপাতে ময়লা কাপড় পরা কয়েকজন মা তাদের ছোট বাচ্চাগুলোকে নিয়ে হিমসিম খেতে খেতে বকুল বা শিউলি ফুলের মালা গাঁথে। মালাগুলো ভারী মায়াবী। দেখলেই ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করে, হাতে জড়িয়ে রাখতে ইচ্ছে করে। বাতাসের সাথে সংসদ ভবনের মাঠের ঘাসগুলোর গন্ধ ভেসে আসে। শহরের ভিতর কেমন মাতাল করা বন্য গন্ধ, এই গন্ধ রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা ক্লান্ত বাসগুলোর যাত্রীদের কতটুকু মোহিত করে কে জানে। এইসবের মাঝেই বাচ্চাগুলো একঝাঁক দোলনচাঁপা নিয়ে বাস আর গাড়িগুলোর পাশাপাশি ঘুরে বেড়ায়। কেউ যদি এক তোড়া দোলনচাঁপা কিনে নেয়। দোলনচাঁপার তোড়াগুলো অসম্ভব সুন্দর। একরাশ সবুজ পাতার ভিতর সাদা সাদা অত্যন্ত সাধারণ অথচ ভয়াবহ মায়াবী ফুলগুলো বাচ্চাগুলোর মত অসহায় হয়ে উঁকি মেরে চেয়ে থাকে। দেখলেই চোখ কোমল হয়ে আসে। আর ফুলবিক্রেতা বাচ্চাগুলো তোড়া নিয়ে বাসের জানালার পাশে দিয়ে হেঁটে যাবার সময়ই নাকে ফুলগুলোর মিষ্টি সৌরভ ভেসে আসে।
কেউ কেউ আবার শিউলি বা বকুল ফুলের কতগুলো মালা নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। ভাইবোন বা অন্য ফুলবিক্রেতা বন্ধুদের নিয়ে ওরা ফুল বা মালা বিক্রির চেষ্টায় সারাদিন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে।
- এই ভাই নেন না একটা তোড়া, সারাদিন খাইনাই কিছু। এইটা নিলে খাইতে পারমু।
- আপা এইটা নেন, আপনার শাড়ির লগে মানাইবো।
- এই যে ভাই নিবেন একটা মালা? মাত্র ১০ টেকা।
- ও আপা নেন না একটা মালা।
ওদের চোখমুখ বাসের যাত্রীদের মত ক্লান্ত এবং বিধ্বস্ত। যাত্রীদের কেউ কেউ ফুলের তোড়া কিনে নেয়, কেউ আবার মালাও কিনে নেয়। তখন ওদের চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠে খুশিতে। দেখতে বেশ ভালো লাগে।
ভার্সিটি থেকে বাসায় ফেরার পথে রোকেয়া সরণির সিগনালে দেখতাম ছেলেটাকে প্রতিদিন বাসের জানালা দিয়ে। ৬-৭ বছর বয়স। একটা রঙচটা হাফপ্যান্ট পরে থাকে সবসময় । প্যান্টের একপাশে একটু ছেঁড়া। ছেলেটার গায়ে অন্য কোন কাপড় নেই। কয়েকটা দোলনচাঁপার তোড়া নিয়ে বাসের জানালায় জানালায় ঘুরে বেড়ায়, কখনো নিতে বলেনা। অন্য কোন কথাও বলেনা। চোখের তারা কেমন শ্যাওলা রঙ এর, গভীর দিঘী যেন । তার পাশে পাশে আরেকটা ছেলে থাকতো। সবসময় হাত ধরে রাখতো। বয়সে আরেকটু ছোট। ছোটভাই হয়তো। একদিন দেখলাম ছোট ছেলেটা কোথায় যেন দৌঁড়ে চলে গেল ছেলেটাকে রাস্তার মাঝে রেখে। তখনই সিগনাল ছেড়ে দিল। ছেলেটা রাস্তা ছেড়ে যেতে পারছেনা , একটা বাস প্রায় ধাক্কা দেয়ার গতিতে ছেলেটার পাশ কাটিয়ে চলে গেল। হঠাৎ বাসের গতির বাতাসের তোড়ে ভয় পাওয়ায় ওর হাতের দোলনচাঁপার তোড়াগুলো রাস্তায় পরে গেল। আমি যে বাসে সেই বাসটা ফুলগুলো পিষে সামনে এগিয়ে গেল। তখন হঠাৎ করেই বুঝতে পারলাম ছেলেটা অন্ধ।
(বহুদিন পর আবার তারুণ্যতে ফিরলাম। 'ছোটগল্প' হিসেবে এই লেখাটা পড়ে কেমন লেগেছে জানাবেন এবং ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)
কেউ কেউ আবার শিউলি বা বকুল ফুলের কতগুলো মালা নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। ভাইবোন বা অন্য ফুলবিক্রেতা বন্ধুদের নিয়ে ওরা ফুল বা মালা বিক্রির চেষ্টায় সারাদিন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে।
- এই ভাই নেন না একটা তোড়া, সারাদিন খাইনাই কিছু। এইটা নিলে খাইতে পারমু।
- আপা এইটা নেন, আপনার শাড়ির লগে মানাইবো।
- এই যে ভাই নিবেন একটা মালা? মাত্র ১০ টেকা।
- ও আপা নেন না একটা মালা।
ওদের চোখমুখ বাসের যাত্রীদের মত ক্লান্ত এবং বিধ্বস্ত। যাত্রীদের কেউ কেউ ফুলের তোড়া কিনে নেয়, কেউ আবার মালাও কিনে নেয়। তখন ওদের চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠে খুশিতে। দেখতে বেশ ভালো লাগে।
ভার্সিটি থেকে বাসায় ফেরার পথে রোকেয়া সরণির সিগনালে দেখতাম ছেলেটাকে প্রতিদিন বাসের জানালা দিয়ে। ৬-৭ বছর বয়স। একটা রঙচটা হাফপ্যান্ট পরে থাকে সবসময় । প্যান্টের একপাশে একটু ছেঁড়া। ছেলেটার গায়ে অন্য কোন কাপড় নেই। কয়েকটা দোলনচাঁপার তোড়া নিয়ে বাসের জানালায় জানালায় ঘুরে বেড়ায়, কখনো নিতে বলেনা। অন্য কোন কথাও বলেনা। চোখের তারা কেমন শ্যাওলা রঙ এর, গভীর দিঘী যেন । তার পাশে পাশে আরেকটা ছেলে থাকতো। সবসময় হাত ধরে রাখতো। বয়সে আরেকটু ছোট। ছোটভাই হয়তো। একদিন দেখলাম ছোট ছেলেটা কোথায় যেন দৌঁড়ে চলে গেল ছেলেটাকে রাস্তার মাঝে রেখে। তখনই সিগনাল ছেড়ে দিল। ছেলেটা রাস্তা ছেড়ে যেতে পারছেনা , একটা বাস প্রায় ধাক্কা দেয়ার গতিতে ছেলেটার পাশ কাটিয়ে চলে গেল। হঠাৎ বাসের গতির বাতাসের তোড়ে ভয় পাওয়ায় ওর হাতের দোলনচাঁপার তোড়াগুলো রাস্তায় পরে গেল। আমি যে বাসে সেই বাসটা ফুলগুলো পিষে সামনে এগিয়ে গেল। তখন হঠাৎ করেই বুঝতে পারলাম ছেলেটা অন্ধ।
(বহুদিন পর আবার তারুণ্যতে ফিরলাম। 'ছোটগল্প' হিসেবে এই লেখাটা পড়ে কেমন লেগেছে জানাবেন এবং ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
জামাল উদ্দিন জীবন ২৩/০৮/২০২১বেশ লাগলো
-
ন্যান্সি দেওয়ান ১৭/০৮/২০২১সুন্দর
-
ফয়জুল মহী ১৬/০৮/২০২১অসাধারণ উপস্থাপন