www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

লেখক

মাসিক সাহিত্য পত্রিকা কালি ও কলমের জুলাই সংখ্যায় একটা কবিতা ছাপা হয়েছে। কবিতার নাম- যখন সাইকিরা এখানে থাকেনা...

কালি ও কলম পেজে সাধারণত লেখালেখিতে হাত পাকানো ব্যক্তিরা লিখে থাকেন। আনিসের মনে হচ্ছে এসব কিছুই স্বপ্ন। অবশ্যই স্বপ্ন। তার মতো আনাড়ি একজন কিশোরের লেখা কেন ছাপাবে কালি ও কলম। যদি ছাপা হয়েও থাকে তবে সেটা অবশ্যই ভুল করে। দেশে তো কবির এতো আকাল এখনো পড়েনি। পরন্তু কাকের চেয়ে নাকি কবির সংখ্যা বেশি এমন কথা সমাজে প্রচলিত আছে।

বাংলা স্যার হানিফ উদ্দিন আনিসকে অফিসে ডেকে কবিতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আবৃত্তি করে শোনাতে হল।
তিনি আনিসের মাথায় হাত রেখে বললেন- লেখক ভাগ্য নিয়ে এসেছিস বেটা। তুই লেখা কোন দিন ছাড়িস না। কালি ও কলমে কবিতা ছাপা হয়েছে, বিরাট ঘটনা। গর্বে আমাদের বুকটা ভরে গেছে।

ক্লাসের বন্ধু বান্ধবীরা বলল- দোস্ত, তুই তো প্রেম করিস না, এতো সুন্দর প্রেমের কবিতা কিভাবে লিখলি? তোর কবিতার অনুভূতি গুলো এতো জীবন্ত, প্রেম না করে এসব লিখছিস কি করে? নাকি লুকিয়ে লুকিয়ে ডুবে ডুবে জল খাস? বল? তুই অবশ্যই প্রেম করিস, মেয়েটা কে বল?

আনিস প্রেম করেনা। কিন্তু প্রেমের অনুভূতি গুলোকে সে ধরতে পারে। পড়তে পারে। কোন প্রেমিকা তার প্রেমিকের কাঁধে মাথা রেখে বসে আছে অথবা দুজনে হাত ধরে হাঁটছে, ওদের ভালো লাগার অনুভূতি সে পড়তে পারে। কোথা থেকে যেন চিন্তা গুলো হঠাৎ করে এসে তার কাছে ধরা দেয়।

বোধ হয় মাথায় একটা শক্তিশালী অ্যান্টেনা লাগানো আছে। গল্প কবিতার প্লট গুলো যেন বাতাসে ভেসে বেড়ায়। অ্যান্টেনার সংস্পর্শে আশা মাত্রই আনিসের মনের পর্দায় ছবি ভেসে ওঠে। সাদা কালো না রঙিন ছবি। সে লিখতে থাকে। এমনও হয়েছে সে টানা বিশ পৃষ্ঠা লিখে ফেলেছে। লেখার সময় তার মনে হয় নিজের প্রতি তার আর কোন কন্ট্রোল নেই। সবকিছু অটো হয়ে গেছে। এখন চাইলেও কলম থামবে না।


এখানে মজার ব্যাপার হল, আনিস ইচ্ছে করলেই যে কোন সময় কোন গল্পের প্লট বের করতে পারে না। একটা সিগন্যাল আসতে হয়। সিগন্যাল হঠাৎ করে আসে। সিগন্যাল আসার পর তাকে খুব বেশি ভাবতে হয়না।
সে বিরতিহীন ভাবে লিখতে থাকে। স্বপ্নের মধ্যে তাবিজ পাওয়া বলে একটা কথা আছে। কিন্তু আনিস স্বপ্নের মাধ্যমে গল্প কবিতার প্লট খুঁজে পায়। কারণ সিগন্যালের কোন সময় জ্ঞান নাই। হুট করে চলে আসে। আনপ্রেডিক্টেবল ব্যাপার স্যাপার।

লিখতে লিখতে লেখা ব্যাপারটা আনিসের নেশা হয়ে গেছে। একদিন না লিখলে মন ছটফট করে। কিন্তু ইচ্ছে করলে তো লেখা যায়না। সিগন্যালের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। প্লট মাথায় আসতে হয়। এমনও অনেক দিন গেছে দুই তিন দিন কেটে গেছে কোন সিগন্যাল আসেনি। সে ছটফট করেছে। খাওয়া হয়নি। গোসল হয়নি। সে অপেক্ষা করেছে। বিরক্তি তাকে স্পর্শ করেনি।

লেখার প্রতি এই তীব্র ভালোবাসা আনিস কে নিরাশ করেনি।
পঁচিশ বছর পরের কথা বলছি।
আজ সে দেশের সফল লেখক। তরুণেরা হুমড়ি খেয়ে তার লেখা পড়ছে। গত বইমেলা তে তার উপন্যাস বেস্ট সেলার হয়েছে।
তিনি এখন দেশের গণ্যমান্য ব্যক্তি। বিয়ে করেছেন নন্দিত টিভি অভিনেত্রী শাম্মি আখতার কে। একমাত্র ছেলে সায়েম। কানাডাতে পড়াশুনা করে।
শুধু আনিস নয় তিনি আজ কাজী আনিসুজ্জামান। প্রখ্যাত লেখক ও কবি।

তো কাজী আনিসুজ্জামান সাহেব কয়েকদিন ধরে খুব দুশ্চিন্তায় আছেন। চাঁদের হাট পত্রিকায় ঈদ সংখ্যার জন্য তিনি একটা উপন্যাস লেখার কথা।
গত সোমবার ভোর পাঁচটার দিকে লেখা কমপ্লিট হয়। সারারাত জেগে লিখেছেন। তাপর প্রচণ্ড ঘুমের জড়িয়ে পড়েন। ছোট টেবিলের উপর পড়ে থাকে নির্বাক পাণ্ডুলিপি।
দুপুরের দিকে ঘুম তার ঘুম ভাঙ্গে।
টেবিল ফাঁকা। পুরো পাণ্ডুলিপি লাপাত্তা।
লেখার ঘরে কারো প্রবেশাধিকার নেই। আর প্রবেশ করবেই বা কে। শাম্মি সারাদিন রাত শুটিং নিয়ে ব্যস্ত।

রহিমা মাঝে মাঝে ঢুকে পরিস্কার করে। উপায়ন্তর না দেখে আনিস সাহেব রহিমাকে জিজ্ঞেস করলেন।
রহিমা তো কেঁদে কেটে অস্থির কাণ্ড বাঁধিয়ে ফেলল।
কাঁদতে কাঁদতে সুর ধরে বয়ান ধরল, সে তাদের প্রাণের চেয়ে ভালোবাসে আর আজ তারা তাকে চুরির অপবাদ দিচ্ছে। সে আর এখানে কাজ করবে না।

শাম্মি বললেন—রহিমা চুপ করতো, তোমাকে চোর বলা হয় নি। আর তুমি খুঁজে দেখো। থাক তো ঘোরের মধ্যে কোথায় রাখতে কোথায় রেখেছ।

আনিস সাহেব আর কিছু বলেন নি। তিনি ঘরের আনাচে কানাচে, টেবিলের নিচে, বইয়ের তাকের পেছনে খুঁজতে শুরু করলেন। শাম্মি একেবারে বেহক কথাও বলেনি ঘুমের ঘোরে অন্য কোথাও রাখা অসম্ভব নয়।

আনিসুজ্জামান সাহেব তার উপন্যাসের পাতাগুলো খুঁজতে থাকুক।

জীবনের পাতা পেছনের দিকে উলটিয়ে আমরা চলে যাই পঁচিশ বছর আগে।

যখন আনিস ক্লাস টেনে পড়ে। তার একটা কবিতা কালি ও কলম পত্রিকায় ছাপা হয়। যখন তারা থাকত বিলশিম্লার দোতলার ফ্ল্যাটে। আমরা ফিরে যায় সেইসব দিন গুলোতে।

আনিসদের ফ্ল্যাটের পাশে একটা ধোপার দোকান ছিল। ধোপার একটা ছেলে ছিল। নুরু নাম। আনিসের সমবয়সী।

নুরু দিনে তার বাবাকে দোকানে সাহায্য করত। রাতে নাইট স্কুলে ক্লাস করতো। আর দিনে সুযোগ পেলেই রাজশাহী বিভাগীয় গ্রন্থাগারে চলে যেত। কতদিন গেছে নুরুর বাপ নুরুকে মারতে মারতে কান ধরে গ্রন্থাগার থেকে বের করে নিয়ে এসেছেন। তবু নুরু গেছে। সে বই পড়তে ভালোবাসে। লিখতে ভালোবাসে।

নুরুর বাবা চায় সে যেন পাকাপোক্তভাবে ধোপার ব্যবসায় লেগে যায়। কিন্তু নুরু পড়তে চায়। বাবার কাছ থেকে প্রায় জোর জবরদস্তি করে খাতা কলমের জন্য টাকা নিতে হয়। তার বড্ড খাতা ফুরোয়।

নুরুর খাতা কেউ কোনদিন খুলে দেখিনি। তাছাড়া নাইট স্কুল। বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখেনি কেউ কোন দিন। লজ্জায় কাউকে বলেওনি পড়তে। যদি কোন দিন দেখত কেউ তাহলে হয়তো আজ দিনটা অন্যরকম হতে পারত। কারণ সেই খাতার পাতার পর পাতা জুড়ে ছিল অপূর্ব সব কবিতা, অদ্ভুত অদ্ভুত সব গল্প।

নাইট স্কুলে পড়ার রোজিনা নামের এক মেয়ের প্রেমে পড়ে নুরু। প্রেম মানে যেমন তেমন প্রেম নয়। কঠিন প্রেম। লাইলু মজনু টাইপ প্রেম। রোজিনাকে নিয়ে শুরু হয় তার কবিতা রচনা। অদ্ভুত অনুভূতি, অদ্ভুত সুখ, অদ্ভুত ভালো লাগা। নুরুর কবিতার ভুবনে আসে উথাল পাথাল জোয়ার।

একদিন শোনে রোজিনার বিয়ে হয়ে গেছে। প্রচণ্ড কষ্ট পায় নুরু।
মমতাজের মতো বুক ফেটে যায়। যদিও কোনদিন রোজিনা কে বলা হয়নি তার পছন্দের কথা।
তবু নুরুর কান্না পায়। কিচ্ছু ভাল লাগে না। ক্ষুধা লাগে না। লাইব্রেরীতে মন বসে না, রাতে ঘুম আসে না।

আবার জোয়ার আসে তবে তা উলটো রথে চেপে। তার চোখের উষ্ণ জলকণা মুক্তোর দানা হয়ে জ্বলজ্বল করে কবিতার চরণে চরণে।

একদিন নুরুর ফুফা গার্মেন্টসে কাজ করতে ঢাকা যায়। নুরু একটা চিঠি ফুফার হাতে দেয়। ঠিকানা লিখে দেয়। কালি ও কলম পত্রিকার অফিসের ঠিকানা।
তার জীবনের লেখা শ্রেষ্ঠ একটা কবিতা একটা খামে ভরে দেয়। ফুফা সে খামের গুরুত্ব বোঝেনি, রাস্তায় হারিয়ে ফেলে চরম অবহেলায়।
কিন্তু নুরুকে জানায় যে সে ঠিক মতো জায়গা মতো পৌঁছে দিয়েছে। নুরু অপেক্ষা করে। শ্বাসরুদ্ধকর অপেক্ষা।

এক মাস পরে লাইব্রেরীতে গিয়ে কালি ও কলমের জুন সংখায় সে চোখ বুলিয়ে যায়। না ছাপা হয়নি। চরম অভিমান হয়।
তার ছোট জীবনের শ্রেষ্ঠ লেখা ছিল এটা।

একসময়য় মনে হয় সে নিজের লেখাকে অযথায় বড় করে দেখছে। আসলে তার লেখা হচ্ছে না। নিজের লেখা সে আর কাউকে দেখাবে না এমনটা ঠিক করে। যেহেতু মান সম্পন্ন লেখা হচ্ছে না সেহেতু মানুষকে দেখিয়ে হুদাই করুণা আর লজ্জা কুড়ানোর কি দরকার।

কিন্তু সে লিখবে, লিখবে নিজের জন্য। অবসর সময়ে নিজেই নিজের লেখা পড়বে, হাসবে নয়তো কাঁদবে। অভিমানে গলাটা ধরে আসে।
এই ঘটনার পর থেকে নুরু আর কোনদিন কালি ও কলম পত্রিকা পড়েনি।

পরের মাসে কালি ও কলম পত্রিকায় তাদের দোকানের পাশের বিল্ডিঙের একটা ছেলের কবিতা ছাপা হয়েছে এটা সে শুনেছিল। ওর বাবা অন্য এক লোকের সাথে এ নিয়ে কথা বলছিল। হিংসায় গা জ্বলে যাচ্ছিল তার।
কিন্তু সে পড়েনি। রাগ করেই পড়েনি।

নুরু এখন রাজশাহী বিভাগীয় গ্রন্থাগারে কাজ করে।
তার কাজ হল লাইব্রেরী গোছগাছ রাখা। সে কাজ খুব ভালো ভাবে করছে। লেখালেখিও চলছে। কেউ জানে না। সে কাউকে দেখায়নি। তার ধারণা এখনো লেখার মান উন্নত করতে পারেনি। এসব লেখা কোন প্রকাশক কে দেখাল তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দিয়ে বলবেন-আপনার লেখার হাত ভাল, লিখতে থাকুন।

গত পঁচিশ বছরে নুরু অনেক লিখেছেন। লেখা গুলো খাটের নিচে একটা বিশাল ট্রাঙ্কে তালা বদ্ধ করে রাখা আছে। নিম্নমানের লেখা হলেও তার কাছে এগুলো অমূল্য।

বাবা মারা যাওয়ার পর তিনি ধোপার ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন। শহর থেকে দূরে ছোট একটা বাড়িতে বউ ছেলে মেয়ে নিয়ে তার সংসার।

নুরুর বিয়ে করেছে রোজিনা কে। না এই রোজিনা সেই রোজিনা না। কাকতালীয় ভাবে এই মহিলার নামও রোজিনা। বিয়ের যখন কথাবার্তা হচ্ছিল তখন মেয়ের নাম শুনে নুরুর বুকের মধ্যে ধক করে উঠেছিল।

এই কি সেই রোজিনা? হয়তো আগের স্বামী মারা গেছে অথবা তালাক দিয়েছে। আবার বিয়ে হচ্ছে। তাদের কাছে গোপন করা হয়েছে আগের বিয়ের কথা। ঘটবে কি এমন মিরাকল?

মিরাকল ঘটেনি। কারণ সেই রোজিনা ভাল ছিল। তার তালাক হয়নি বা স্বামী মারা যায়নি।

নুরুর এখন চরম দুঃসময়। একমাত্র ছেলে রুবেলের দুইটা কিডনি নষ্ট। মেয়ে বড় হয়ে যাচ্ছে। মেয়ে বিয়ে দিতে হবে। মেয়েটা দেখতে হয়েছে বাপের মতো। গায়ের রঙ কালো। যৌতুক ছাড়া একে পার করা যাবে না। সে পড়ে গেছে বহুমাত্রিক সমস্যায়।

ছেলের চিকিৎসা করাতে করাতে জমানো টাকা বউয়ের গয়না যেটুকু ছিল সব শেষ হয়ে গেছে। একমাস আগে ডায়ালাইসিস করা হয়েছে। কয়েকদিন পর আবার করতে হবে। নুরুর মাথার ঘায়ে কুত্তা পাগল অবস্থা। এমনিতে অনেক ঋণ হয়ে গেছে। ঋণের বোঝা আর বাড়ানো ঠিক হবে না।

কদিন ধরে নুরু ভাবছেন।
পারিপার্শ্বিক সবকিছু নিয়ে ভাবছেন। সবদিক বিবেচনায় নিয়ে ভাবছেন।
এই পঁচিশ বছরে সে অনেক লিখেছে। এর মধ্যে একটাও কি বাজারে চলার মতো হয়নি? একটাও না?

কোন প্রকাশকের কাছে যদি লেখা গুলো দেখানো যায়। পছন্দ হবেই এমন কোন কথা নেই, যদি হয়ে যায়। তাহলে এখান থেকে টাকা উপার্জনের একটা পথ পাওয়া যাবে। হলাম অপমান। কানাগলিতে পড়েছি। অপমানিত বোধ করার মতো অবস্থা নাই।

নুরু ইদানিং কালের লেখকের লেখা পড়েন না। তার যুক্তি হল আগে পৃথিবী কাঁপানো লেখা গুলো আগে শেষ করে নেয়া যাক। তারপর দেখা যাবে।
বর্তমান কালের ছেলে মেয়েরা কোন টাইপ লেখা পছন্দ করেন সে বিষয়ে তিনি জানেন না। এখন মনে হচ্ছে ইদানিং কালের লেখকদের কিছু লেখাও পড়া উচিত ছিল। সম্প্রতি কাজী আনিসুজ্জামান নামে একজন বই লিখে বেশ নাম কামিয়েছে। লাইব্রেরীতে আছে আছে ওনার বই। এবার সময় করে পড়তে হবে।

অনেক ভেবে চিনতে নুরুল ইসলাম খুব সম্প্রতি লেখা একটা উপন্যাসের পাণ্ডুলিপি চাঁদের হাট পত্রিকার অফিসে দিয়ে এলেন।
সম্পাদক সাহেব তার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকালেন, ভাবটা এমন—এইটা আপনি লিখেছেন? আপনি? সত্যি করে বলেন?

চাঁদের হাটে কাজী আনিসুজ্জামান নামের একজন লেখকের উপন্যাস ছাপা হওয়ার কথা ছিল। তার উপন্যাস র পাণ্ডুলিপি চুরি হয়ে গেছে কদিন আগে। তারা বিজ্ঞাপন দিয়েছিল দ্রুত একটা উপন্যাসের পাণ্ডুলিপি জমা দিতে।

কাজী আনিসুজ্জামানের চুরি ব্যাপারটা যে নুরুর জীবনে ফুলঝুরি হয়ে ঝরবে তা ভেবে রেখেছিল। নুরুল ইসলাম বর্তমানে আকাশে উড়ছেন। কারণ তার পাণ্ডুলিপি সম্পাদকের পছন্দ হয়েছে। চাঁদের হাটের ঈদ সংখ্যায় থাকছে নুরুল ইসলামের উপন্যাস। অসুখ।

কাজী আনিসুজ্জামান ইজি চেয়ারে বসে আছেন। আজ তার মন ভালো। পাণ্ডুলিপি হারানোর শোক তিনি কাটিয়ে উঠেছেন। বাড়িতে খুঁজে না পেয়ে থানায় চুরির একটা ডাইরি করা হয়েছে। সেদিন রাতে নাকি পাশের ফ্ল্যাট থেকে চুরি হয়েছে। এজন্যই আরও ডায়রিটা করা।

নবসুরুয প্রকাশনীর জন্য একটা উপন্যাস লিখতে হবে। সময় হাতে বেশি নেই। একটা গোছানো প্লট দরকার। তিনি অপেক্ষা করছেন সিগন্যালের জন্য। সিগন্যাল আসার আগে আগে তার মনটা খুব ভালো থাকে।

কলিংবেল বাজছে।
রঙের মেলা ম্যাগজিন থেকে এক ছোকরা আসার কথা। ইন্টার্ভিউ পারপাজ।
রহিমা দরজা খুলে দিল।
আনিস সাহেব সোফায় এসে বসলেন। একসময়য় ছিল যখন ইন্টার্ভিউ দেয়ার সময় শক্ত হয়ে বসে থাকতেন। খুব ভেবে চিনতে উত্তর দিতেন। কোন বেফাঁস কথা বলা যাবে না।

এখন খুব আয়েশে বসেন। যা মুখে আসে তাই বলে দেন। মন্ত্রী এম্পিরাও আজকাল ভেবেচিনতে কথা বলেন না। যা মনে আসে তাই বলেন। বাজারে পারসোনালিটি বলতে এটাই ধরা হয়। ঠোঁটকাটা।

--স্যার কেমন আছেন?
--আদরের সন্তান চুরি হলে মানুষ ভালো থাকে বল?
--তা ঠিক। তা ঈদ এবার কোথায় করবেন?
--বাসায়।
--বাসায় তো অবশ্যই। দেশে নাকি বাইরে যাওয়ার প্ল্যান আছে?
--এখন পর্যন্ত নেই, হতেও পারে।
--স্যার আপনার ‘ঘর’ উপন্যাস তো গত বইমেলার বেস্ট সেলার ছিল। ‘ঘর’ এ আপনি লাইব্রেরীর একজন সাধারণ কর্মচারীর জীবন নিয়ে লিখেছেন। জীবন্ত একটা লেখা সেটা বলার অপেক্ষা রাখেনা। আপনার সাথে কি এরকম কারো দেখা হয়েছে বা গল্প শুনেছেন এমন কারো।

--না, আমি এমন কারো সাথে আমার পরিচয় ছিল না। পুরো পুরি কল্পনা থেকে লেখা।
--মানে, অন্যান্য গল্পের মতো সেই সিগন্যাল।
--হ্যাঁ সিগন্যাল। বাতাসের বার্তা।
--আপনাকে সব সময় নিম্নবিত্ত মানুষকে নিয়ে লিখতে দেখি। মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত কেন নয়?

--ব্যাখ্যা করার কিছু নেই। ঐ তো বাতাসের বার্তা। আমার কলম মুখ দিয়ে শুধু দারিদ্র্যের কথা বের হয়। আমার কিছু করার নেই।

--আপনার কি মনে হয় না এক শ্রেণীকে নিয়ে লিখতে লিখতে আপনি ক্লান্ত? মানে মনে হয়না একটা বৈচিত্র্য দুরকার।
--আমি জানি না। এতো কঠিন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলাম না। তবে আমার কাছে দরিদ্র মানুষের জীবন বেশি বৈচিত্র্য মনে হয়।

চাঁদের হাটের ঈদ সংখ্যা বের হয়েছে।
একটা সৌজন্য কপি দিয়ে গেছে। আনিস সাহেব এখনো খুলে দেখেন নি।
ম্যাগাজিন টা হাতে নিয়ে কয়েকপাতা উল্টানোর পর তাকে থামতে হল। একটা উপন্যাস ছাপা হয়েছে, বার পৃষ্ঠা থেকে। অসুখ। লেখক-নুরুল ইসলাম।

আনিস সাহবের মনে হচ্ছে তিনি স্বপ্ন দেখছেন। কালি ও কলম পত্রিকায় প্রথম ছাপা হওয়ার পর তার যেরকম অনুভূতি হয়েছিল সেরকম একটা ব্যাপার ঘটছে।
তিনি শাম্মিকে ডেকে বললেন- দেখত এখানে কি লেখা আছে।

শাম্মি কয়েকটা লাইন পড়লেন, বললেন-কি হয়েছে? এমন করছ কেন?
আনিস সাহেব বললেন- কিছু না, তুমি আমার ফোন নিয়ে এসো।

--হ্যালো জামিল, ‘অসুখ’ নামের লেখাটি কোথায় পেয়েছ?
--স্যার, নুরুল ইসলাম নামের একজন নতুন লেখকের লেখা। পাকা হাত। ভালোই লিখছে। আপনার স্টাইলে লেখা।

--আমার স্টাইলে লেখা, বাহ ভালোই বলছ। চোর ধরা গেছে। আগাগোড়া আমার পাণ্ডুলিপি।
--জি? কি বলছেন?

--ঠিকই বলছি। ঐ লোকের নাম ঠিকানা বল। আমি এখনি পুলিশ কে জানাচ্ছি। এই লোকের সাথে আমাদের পাশের ফ্ল্যাটের চুরিরও যোগ থাকতে পারে।

--স্যার আপনি ঠিক বলছেন তো, লোকটা কে দেখে অবশ্য চোর মনে হয়নি।

--চেহারা দেখে চোর চিনবে কিভাবে? আমি শতভাগ নিশ্চিত, আমার লেখা আমি চিনব না, আগাগোড়া আমার লেখা।
--ঠিক আছে, আমি ঠিকানা দিচ্ছি। লিখুন।

কয়েকদিনের মধ্যে আবার রুবেলের ডায়ালাইসিস করতে হবে। এভাবে যতদিন বাঁচিয়ে রাখা যায়। কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের মতো অর্থের যোগাড় করা নুরুর পক্ষে সম্ভব নয়। চাঁদের হাট পত্রিকা থেকে আজ কিছু টাকা পাওয়া যাবে।

নুরুর মনে হল তার দিন হয়তো ফিরবে, প্রকাশকের কাছে তার অন্যান্য সব লেখা দেখানো যেতে পারে। সব গুলো থেকে যদি বই বের করা যায় তাহলে ছেলের ভাল একটা চিকিৎসা করানো যাবে। সিঙ্গেল স্বপ্ন বলে কিছু নেই। একটা স্বপ্ন পূরণ হলে হাজার স্বপ্নসুত্র সৃষ্টি হয়। বুনতে ইচ্ছে করে স্বপ্নজাল।

নুরু বের হচ্ছিলেন। গন্তব্য চাঁদের হাটের অফিস। তিনি এখন আর রাস্তার সাধারণ লোক নন। তার লেখা উপন্যাস সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।

নুরুল ইসলাম পাশের বাড়ি থেকে একটা পাঞ্জাবি চেয়ে নিয়ে আসলেন। চোখে সুরমা দিলেন। মাথায় তেল দিয়ে চুল আঁচড়ালেন। পাঞ্জাবীতে আঁতর মাখলেন।

বাড়ি থেকে বের হয়ে রাস্তায় নামতেই তিনি গ্রেপ্তার হলেন। সাময়িক উত্তেজনায় তিনি বুঝতেই পারলেন না কি জন্য তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তিনি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে ঝিম মেরে পুলিশ ভ্যানে বসে থাকলেন।

নুরুল ইসলামের বাড়ি তল্লাশি করা হয়েছে। তার লেখালেখির ভাণ্ডার ট্রাঙ্ক এখন পুলিশের হেফাযতে।

কাজী আনিসুজ্জামান এসেছেন। অসি সাহেব তার বিশেষ যত্ন করার চেষ্টা করছেন। তিনি এখন চেয়ারে বসে লেবুর শরবত খাচ্ছেন।
--স্যার, আপনার সব বই আমার পড়া। আমার মেয়েও আপনার খুব ভক্ত।

আনিস সাহেব বিরক্ত মুখে বললেন—তাড়াতাড়ি ট্রাংক খোলার ব্যবস্থা করুন। আমার কাজ আছে।

অসি সাহেব বিনয়ে গলে গিয়ে বললেন-জি জি অবশ্যই।

ট্রাংক খোলা হল। বিশাল ট্রাংক। ত্রিশটার মতো পাণ্ডুলিপি পাওয়া গেল।
আনিস সাহেব অবাক হলেন, শুধু অবাক না বলতে গেলে আকাশ থেকে পড়লেন। এই করছে টা কি!!

সবই তার লেখা বই থেকে কপি করা হয়েছে। পাণ্ডুলিপি আসল প্রমাণের জন্য মাঝে মাঝে কাটাকাটিও করেছে। আজব ব্যাপার।
এমন কি তার ছাপা হওয়া প্রথম কবিতা ‘যখন সাইকিরা এখানে থাকেনা’, ওইটা আলাদা করে রাখা, খাতার নিচে লেখা, ভালবাসি ভালবাসি ভালবাসি তোমাকে...রোজিনা

অসি সাহেব বলে যাচ্ছেন- স্যার এটা আপনার ঐ উপন্যাস, এইটা তো আপনার ঐ কাব্যগ্রন্থে আছে... লোকটা পুরো বই হাতে লিখে জমিয়ে রেখেছে। দেখেন অবস্থা। খুব ঝানু জিনিস।

নুরুল ইসলাম কে বাইরে আনা হল। আনিস সাহেব দেখলেন কার্টুনের মতো ত্রিভুজ আকৃতির মুখমণ্ডলের একজন মানুষ। গা থেকে ফুরফুর করে আতরের গন্ধ আসছে।
--আপনি গায়ের আঁতর মেখেছেন?
নুরুল ইসলাম শান্ত গলায় বললেন- হু।

--গন্ধটা ভালো। ভাই আপনি আমার সব লেখা নিজের হাতে লিখেছেন কেন? এটা কি আপনার শখ। মানুষের বিভিন্ন ধরণের অদ্ভুত অদ্ভুত শখ থাকে।

নুরু জোর গলায় বলল-আমি আমার মতো লিখেছি, কারো লেখা থেকে নকল করিনি। আর আমার অদ্ভুত কোন শখ নেই। আপনার লেখার সাথে আমার লেখা মিলে গেলে কি করবো আমি?


অসি সাহেব চোখ গরম করে এগিয়ে এলেন--ভদ্রলোকের সাথে চোখ তুলে কথা বলিস। চোখ নামা, নামা বলছি। চোরের মার বড় গলা না? মাইর দিলে ঠিক স্বীকার করবে স্যার।

আনিস সাহেব বললেন- পাগল মানুষ মনে হচ্ছে। মাথা ঠিক নাই।
--না স্যার, দেখতে পাগল আসলে ধান্দাবাজ। পাণ্ডুলিপি চুরি করে নিজের নামে বই বের করে। এ কি করে পাগল হয়। ছোট্ট একটা মাইর দিলে সব বের হয়ে আসবে।
নুরু অবাক হয়ে গেল এদের কথা শুনে। সে নাকি আনিসুজ্জামানের লেখা পাণ্ডুলিপি চুরি করেছে। এসব কি হচ্ছে তার সাথে?
আনিস সাহেব চলে যাচ্ছিলেন, নুরু গলা উচিয়ে বলল- আমি পাগল না স্যার, ঐ লেখা গুলো আমি গতপঁচিশ বছর ধরে লিখেছি।
আনিস সাহেব আর দাঁড়ালেন না। শুধু শুধু পাগলের প্রলাপ শোনার মানে হয়না।

নুরুকে কোর্টে চালান করে দেওয়া হল।

কয়েকদিন যাবত একটা ব্যাপার নিয়ে খুব ভাবছেন আনিস সাহেব। বলতে গেলে ভাবনা সাগরে ডুবে আছেন।
লোকটা কেন শুধু শুধু তার লেখা কপি করে ট্রাংকে তালা মেরে রাখবে। দেখে তো পাগলও মনে হয় না। শুধু এক পাক্ষিক ভাবে ভাবলে চলবে না। তিনি চিন্তার দিক প্রসারিত করলেন, অযৌক্তিক কিছু ব্যাপারও প্রশ্রয় দিলেন।

ব্যাপারটা কি এমন নাতো যে তারা দুজন একই সময়ে একই লেখা লেখছেন।
অথবা নুরু নামের লোকটা চিন্তা করে বের করছেন বা লিখছেন সেটা তিনি কোন ভাবে জানতে পারছেন বা তার মনে হচ্ছে, যাকে তিনি সিগন্যাল নামে ডাকেন।
এভাবে চিন্তা করলে যা দাঁড়ায় তাহলো আনিস সাহেব নিজে নুরুল ইসলামের অনুভূতি-ভাবনা কপি করছেন। তার কপি করার ধরণটা আলাদা এই জন্য কেউ ধরতে পারছে না।

তিনি লিখে পত্রিকা অফিসে দিচ্ছেন আর নুরুল ইসলাম রেখে দিচ্ছেন ট্রাংকে। গত পঁচিশ বছর ধরে এই চলছে। কিন্তু এটা কি করে সম্ভব। অলীক কল্পনা।

কয়েকদিন ধরে তিনি কিছুই লিখতে পারছেন না। নবসুরুয প্রকাশনী থেকে অগ্রিম টাকা নেওয়া হয়েছে। তারা বইয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে। তিনি কিছুই লিখতে পারছেন না। কোন সিগন্যাল আসছে না। রাতে ঘুম আসে না। সারারাত জেগে প্লট খুঁজেন গল্পের। ক্ষুধা লাগেনা। খাওয়া দাওয়া অফ।
শাম্মি দুয়েকবার বলেছে খেতে। তার ওত সময় নেই।

আনিস সাহেব নিজেকে বোঝাতে পারছেন না।

কেন লিখতে পারবেন না তিনি? কেন? গত দশ বছর ধরে তিনি দেশের সফল লেখক। তিনি গল্পের প্লট খুঁজে পাচ্ছেন না, এটা বিশ্বাস যোগ্য নয়।

রহিমা কেঁদে কেটে বলেছে-খালুজান, আপনি ভাত খান, কয়দিন না খায়া থাকবেন। আপনার ঐ কাগজ আমি রান্না ঘরে রেখে দিচি। সেদিন আমার ছেলেকে নিয়ে আসছিলাম কাজ করতে, আপনার ঘর পরিস্কার করতে যায়া আমার ছেলে ঐ কাগজগুলো বালতির পানিতে চুবাইছিল। মেলা পাতাও ছিঁড়ে ফেলছিল। আমি খেয়াল করিনি। ছোট বাচ্চা কি করবো? আমি ভয়ে কাগজগুলা লুকায়ে রাখছি রান্না ঘরে। আমারে মাপ দিয়েন খালুজান। আপনে তবু ভাত খান। আর রাগ করে থাইকেন না খালুজান।

আনিস সাহেবের আর কোন কনফিউশন নেই। তিনি মোটামুটি একটা সিদ্ধান্তে চলে এসেছেন।

তিনি শান্ত গলায় বললেন-তুমি অযথায় ভেউ ভেউ করে কাঁদছ কেন? যাও ভাত নিয়ে এসো। ভর্তা করছ?

রহিমা চোখ মুছতে মুছতে বলল- জে করছি। নিয়ে আসি। আফনে বসেন।

আনিস সাহেব বসলেন না। ছোট একটা পরীক্ষা করা দরকার। তিনি একয়দিনে যে পরিমাণে ভেবেছেন তার গোটা জীবনেও লেখার জন্য এতকিছু ভাবেন নি। এই পরীক্ষাটা তাকে করতেই হবে। অগ্নিপরীক্ষা।

নুরুর জেল হয়েছে কয়েক মাসের। তার ছেলে মারা গেছে। টাকার অভাবে ডায়ালাইসিস করা হয়নি। ছেলের জন্য খুব একটা কষ্ট হচ্ছে না। একদিন না একদিন তো মরতই। কয়দিন আর তিনি এভাবে খরচ করতে পারতেন।

নুরুল ইসলাম কে খাতা কলম দেয়া হয়েছে। কর্ণফুলী কাগজ আর অতি দামি একটা কলম। কোন বড় স্যার নাকি এসব দিয়ে গেছেন।
তিনি লিখতে বসেছেন। মাথায় খুব সুন্দর একটা প্লট এসেছে। তিনি লিখছেন। ঝর ঝরে লেখা হচ্ছে। তার চোখ গাল থুতনি বেয়ে নামছে অশ্রু।

বাইরে প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছে। রিমঝিম বৃষ্টি না অঝোর ধারায় বৃষ্টি। আজ আনিস সাহেবের ছেলে কানাডা থেকে দেশে ফিরছে।
শাম্মি হাতে কোন কাজ রাখেননি। একটু পর এয়ারপোর্টে যাবেন ছেলেকে এগিয়ে নিতে।
আনিস সাহেব যাবেন না। তার সিগন্যাল এসেছে। খুব সুন্দর একটা গল্পের প্লট। মনে হচ্ছে একটানে দশ পনেরো পৃষ্ঠা লিখে ফেলা যাবে। তিনি ছাদে চলে গেলেন। কিছুক্ষণ বৃষ্টিতে ভিজে লেখা শুরু করবেন।
মরা বাড়ির গল্প দিয়ে শুরু হবে। সবকিছু তিনি সাজিয়ে নিয়েছেন।

আনিস সাহেব বৃষ্টিতে ভিজছেন। শাম্মি হন্তদন্ত হয়ে ছাদে উঠে এসেছেন। তিনি ভয়ংকর ভাবে হাফাচ্ছেন। এই সময় তার অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে থাকার কথা ছিল। কিন্তু টলতে টলতে ছাদে চলে এসেছেন।

ভয়ংকর সংবাদটা আনিস কে জানাতে হবে। তার মাথা ঘুরছে। তিনি কতক্ষণ আর নিজেকে সজাগ রাখতে পারবেন কে জানে।

পাগল লোকটা বৃষ্টিতে ভিজছে। যে করে হোক জ্ঞান হারানোর আগে কথাটা তাকে বলতেই হবে।

আনিস সাহেবের মনে হল কথা বলার সময় শাম্মির গলা কেঁপে উঠবে।
--সায়েমের প্লেন স্ক্রাশ করেছে, আনিস, সায়েমের প্লেন ক্রাশ করেছে। টেলিভিশনে কি বলছে সব। তুমি একটু শুনবে? আমি বোধ হয় ভুল শুনেছি। তুমি একটু শুনবে? প্লিজ। তুমি শুনছো আমি কি বলছি? আনিস?

আনিস সাহেব শান্ত গলায় বললেন হ্যাঁ শুনতে পেয়েছি। তোমার গলা কাঁপছে।
শাম্মি আমরা কতদিন বৃষ্টিতে ভিজি না বলতো। বৃষ্টির নিজস্ব একটা ভাষা আছে কান পেতে না থাকলে শোনা যায় না। বৃষ্টি কথা বলে, আশ্চর্য ব্যাপার তাইনা?

শাম্মি চিৎকার করে বলল-তুমি পাগল হয়ে গেছ? তোমার ছেলে মারা গেছে। তোমার ছেলে...সায়েম...

আনিস সাহেবের কোন ভাবান্তর হল না। তার একমাত্র ছেলে মারা গেছে। তিনি একটা মরা বাড়ির দৃশ্য কল্পনা করে লিখবেন একটু পরে।
ছেলে হারানোর অনুভূতি তার আসছে না কেন? পঁচিশ বছর তো হল, আর কত কপি করবেন তিনি। কেন দুঃখ তাকে স্পর্শ করছে না।
তার এখন কাঁদা উচিত। হাউমাউ করে গলা ফাটিয়ে কাঁদা উচিত। তার একমাত্র ছেলে আজ মারা গেছে। সায়েম...সায়েম আর নেই...গলা টা কেন ধরে আসছে না...চোখ ঝেঁপে কেন নামছে না অশ্রু।

তিনি একান্ত মনে কেন বৃষ্টির কথা শুনবেন।
আর এইদিনে বৃষ্টি কেনই বা কথা বলবে? কেন সে অপেক্ষা করবে লবণাক্ত জল মুছে ফেলার জন্য...

পরিশিষ্ট-
এই বছরও বইমেলাতে কাজী আনিসুজ্জামানের উপন্যাস বেস্ট সেলার সম্মানে সম্মানিত হয়েছে। উপন্যাসের নাম-কারাগার।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ১১৬৬ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২০/০২/২০১৫

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • ২৪/০২/২০১৫
    চমৎকার লেখা ।।
    শুভেচ্ছা রইল ।
  • আহমাদ সাজিদ ২২/০২/২০১৫
    আবার পড়তে হবে......
    তারপর....
  • সাইদুর রহমান ২২/০২/২০১৫
    অসাধারণ।
    মহান একুশের শুভেচ্ছা।
  • শুধু বলব অসাধারণ।
  • অগ্নিপক্ষ ২১/০২/২০১৫
    এই লেখাটা প্রথম পাতায় গোলাপিতে দেখাচ্ছে কেন?
  • মো ফয়সাল রহমান ২১/০২/২০১৫
    Valo
  • রেনেসাঁ সাহা ২১/০২/২০১৫
    চমৎকার।
  • হাসান ইমতি ২১/০২/২০১৫
    এটা কি গল্প না সত্যি কথন ?
  • সবুজ আহমেদ কক্স ২০/০২/২০১৫
    দারুন
 
Quantcast