বাবা কেমন হয়
যুথির ফোনের রিংটনটা বাজছে!
সামনে পরীক্ষা ! যদিও পড়াশোনা খুব একটা করে না, তবে পরীক্ষার দিন কয়েক আগে মনোযোগটা ধরে রাখার চেষ্টা করে বড় বড় সব সেকশন গুলোর উপর।
ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে যুথির বাবা (জামাল-কবির) ফোন দিয়েছে।
কয়েক সেকেন্ড ফোনটা হাতে নিয়ে , যুথি কয়েকটা জিনিস ভেবে নেয়, এত রাতে বাবা তাকে ফোন কেনো দিবে!
কোন দরকার! বিশেষ করে টাকা-পয়সা বা জমি-জমার ঝামেলার ব্যপার ছারা যুথির সাথে কবে তার বাবার ভালো-মন্দ কথা হয়েছে সে এই মুহূর্তে মনে করতে পারছে না।
হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম আব্বু! কেমন আছেন ? শরীর ভালো তো!
-হ্যা যুথি-মা ভালো চলছে সব। আগামী মাসে দেশে আসবো।
আর শুনো , আমাদের যে কেসটা চলতেছে কোর্টে এক বিঘা জমির কেসটা মনে আছে তোমার!
জি মনে আছে, বলেন!
-ক্যেসটা সামনে সাপ্তাহে কোর্টে উঠবে, বিকাশ করে ১,০০০৳ মহুরূর নাম্বারে পাঠিয়ে দিও। তোমার আম্মুর কাছে নাম্বারটা আছে।
আচ্ছা দিব। টুং টুং লাইনটা কেটে গেলো।
যুথি তাকিয়ে আছে ফোনটার দিকে। যুথির মন কি বলে , সে আর সে সব ভাবতে চায় না। রূপকথার গল্পের মত শুনে আসা , মেয়ে নাকি বাবার সব থেকে কাছের হয়। বাবা-মেয়ের সম্পর্ক গুলো নাকি অনেক মধুর হয়। মাঝে মাঝে প্রশ্ন করে যুথি! আচ্ছা বাবার কাছে যদি সে বলতে পারতো, তার কলেজ জীবনে প্রথম প্রেমের গল্পটা! বাবা কি হেসে উড়িয়ে দিত? নাহ দিত না , তার বাবা কখনো শুনতো না সে গল্প। বরং তাকে বকা খেয়ে চোখের পানি ঝড়াতে হতো। হয়ত হতো!
যাক কল্পনার সে কথা, মহুরির টাকাটা পাঠাতে হবে। যুথি ফোনটা টেবিলে রেখে, মা এর রুমে চলে গেলো। "মা" মহুরীর নাম্বারটা দাও টাকা পাঠাতে হবে। মা ঘুম ঘুম চোখে "কোন মহুরীর নাম্বার চাস!"
কোমল-কান্ত মহুরীর নাম্বার দাও।
দাঁড়া দিচ্ছি, ব্যাগ ঘেটে একটা নাম্বার পাওয়া গেলো, তবে নামটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না।
"মা" নাম্বারটা তো অস্পষ্ট! আব্বুকে ফোন দিয়ে জিঙ্গাসা করো তো এই নাম্বার কি না?
"মা" কয়েক সেকেন্ড ভেবে উত্তর দেয় , জিঙ্গাসা করবো! যদি বকা দেয়!
যুথি ঠান্ডা গলায় বলে , মা এটা কোন রকম কথা! একটা কাজ করার আগে শিওর হয়ে নিতে হয়!
ভুল জায়গায় ১০০০৳ পাঠিয়ে দিলে তো আর টাকা ফেরত পাবা না! বরং ফোন দিয়ে জিঙ্গাসা করে নাও , ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না।
যুথির মা ভয়ে ভয়ে কি প্যাডের নাম্বার চাপে।
রিং বাজতেছে আর মা ঢোক গিলতেছে।
ভাঙা কন্ঠে হ্যা-হ্যালো ! মহুরীর নাম্বারের লাস্ট তিনটা ডিজিট কি! ৪৩২!
যুথির বাবা ফোনের ও-পাশ থেকে চিৎকার শুরু করে দিচ্ছে, হ্যা কি মনে হয় তোমার নাম্বার দেয়ার জন্য আমি বসে আছি! ফোন দাও যুথিকে!
ঐ যুথি! তোদের গাঁয়ে বাতাস লাগে না! আমার সব খাইয়া ধ্বংস করতেছস! বাসায় থাইকা বাইর হ"! যাওয়ার সময় তর "মা"- জননীরে নিতে ভুলবি না।
যুথি চোখ দুটি বন্ধ করে দীর্ঘ-নিঃশ্বাস নিয়ে বলে, আব্বু এই সব কথা কি বলা ঠিক আমাকে!
যুথির উপর আরো ক্ষিপ্ত কন্ঠে! তুই আমারে ন্যায়-অন্যায় শিখাস! দুই কলম পড়া লেহা শিখা বাপের উপর দিয়া কথা কস "শু***রে বাচ্চা"!
যুথি ঠান্ডা ভাবে বলতে থাকে, আব্বু এত চিৎকার কইরেন না হার্টে সমস্যা হবে, এমন খারাপ কিছু আপনাকে বলা হয় নাই যে, এরকম করবেন আপনি! শুধু ফোন নাম্বারটা যাচাই করার জন্য জিঙ্গাসা করা হয়ছে। আর আমি আপনাকে সন্মান দিয়েই কথা বলছি, আপনি কেনো গালি দিচ্ছেন আমাকে?
নাহ জামাল-কবির আরো চিৎকার করে তুই আমারে আইন শিখাস সয়তানের বাচ্চা!
যুথি এবার ঠোঁটে দাঁত চেপে প্রতিটা প্রশ্নের উত্তর দিতে থাকে! কি বললেন আপনি ! আমরা আপনার সব কিছু শেষ করতেছি! হ্যা করতেছি, আর এটাও শুনুন যতদিন বাঁচবো আপনার সব কিছু শেষ করেই বাঁচবো। আর গালি দিচ্ছেন আমাকে সে গালির সূত্র আপনি নিজেই ।
জামাল-কবিরের বোধ হয় এইবার কথা গুলো লাগলো। ফোন কেটে দিলো।
যুথি হাত থেকে ফোনটা রেখে, দু চোখ বন্ধ করে ভাবে
"আসলে বাবা কেমন হয়"?
রূপকথার গল্পের মত বাবা গুলো কি সত্যিই বন্ধু হয়!
সময়ঃ১২:৪২ মিঃ
তারিখঃ ২৪/১০/২০১৬
স্হানঃ বদ্ধ ঘর।
সামনে পরীক্ষা ! যদিও পড়াশোনা খুব একটা করে না, তবে পরীক্ষার দিন কয়েক আগে মনোযোগটা ধরে রাখার চেষ্টা করে বড় বড় সব সেকশন গুলোর উপর।
ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে যুথির বাবা (জামাল-কবির) ফোন দিয়েছে।
কয়েক সেকেন্ড ফোনটা হাতে নিয়ে , যুথি কয়েকটা জিনিস ভেবে নেয়, এত রাতে বাবা তাকে ফোন কেনো দিবে!
কোন দরকার! বিশেষ করে টাকা-পয়সা বা জমি-জমার ঝামেলার ব্যপার ছারা যুথির সাথে কবে তার বাবার ভালো-মন্দ কথা হয়েছে সে এই মুহূর্তে মনে করতে পারছে না।
হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম আব্বু! কেমন আছেন ? শরীর ভালো তো!
-হ্যা যুথি-মা ভালো চলছে সব। আগামী মাসে দেশে আসবো।
আর শুনো , আমাদের যে কেসটা চলতেছে কোর্টে এক বিঘা জমির কেসটা মনে আছে তোমার!
জি মনে আছে, বলেন!
-ক্যেসটা সামনে সাপ্তাহে কোর্টে উঠবে, বিকাশ করে ১,০০০৳ মহুরূর নাম্বারে পাঠিয়ে দিও। তোমার আম্মুর কাছে নাম্বারটা আছে।
আচ্ছা দিব। টুং টুং লাইনটা কেটে গেলো।
যুথি তাকিয়ে আছে ফোনটার দিকে। যুথির মন কি বলে , সে আর সে সব ভাবতে চায় না। রূপকথার গল্পের মত শুনে আসা , মেয়ে নাকি বাবার সব থেকে কাছের হয়। বাবা-মেয়ের সম্পর্ক গুলো নাকি অনেক মধুর হয়। মাঝে মাঝে প্রশ্ন করে যুথি! আচ্ছা বাবার কাছে যদি সে বলতে পারতো, তার কলেজ জীবনে প্রথম প্রেমের গল্পটা! বাবা কি হেসে উড়িয়ে দিত? নাহ দিত না , তার বাবা কখনো শুনতো না সে গল্প। বরং তাকে বকা খেয়ে চোখের পানি ঝড়াতে হতো। হয়ত হতো!
যাক কল্পনার সে কথা, মহুরির টাকাটা পাঠাতে হবে। যুথি ফোনটা টেবিলে রেখে, মা এর রুমে চলে গেলো। "মা" মহুরীর নাম্বারটা দাও টাকা পাঠাতে হবে। মা ঘুম ঘুম চোখে "কোন মহুরীর নাম্বার চাস!"
কোমল-কান্ত মহুরীর নাম্বার দাও।
দাঁড়া দিচ্ছি, ব্যাগ ঘেটে একটা নাম্বার পাওয়া গেলো, তবে নামটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না।
"মা" নাম্বারটা তো অস্পষ্ট! আব্বুকে ফোন দিয়ে জিঙ্গাসা করো তো এই নাম্বার কি না?
"মা" কয়েক সেকেন্ড ভেবে উত্তর দেয় , জিঙ্গাসা করবো! যদি বকা দেয়!
যুথি ঠান্ডা গলায় বলে , মা এটা কোন রকম কথা! একটা কাজ করার আগে শিওর হয়ে নিতে হয়!
ভুল জায়গায় ১০০০৳ পাঠিয়ে দিলে তো আর টাকা ফেরত পাবা না! বরং ফোন দিয়ে জিঙ্গাসা করে নাও , ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না।
যুথির মা ভয়ে ভয়ে কি প্যাডের নাম্বার চাপে।
রিং বাজতেছে আর মা ঢোক গিলতেছে।
ভাঙা কন্ঠে হ্যা-হ্যালো ! মহুরীর নাম্বারের লাস্ট তিনটা ডিজিট কি! ৪৩২!
যুথির বাবা ফোনের ও-পাশ থেকে চিৎকার শুরু করে দিচ্ছে, হ্যা কি মনে হয় তোমার নাম্বার দেয়ার জন্য আমি বসে আছি! ফোন দাও যুথিকে!
ঐ যুথি! তোদের গাঁয়ে বাতাস লাগে না! আমার সব খাইয়া ধ্বংস করতেছস! বাসায় থাইকা বাইর হ"! যাওয়ার সময় তর "মা"- জননীরে নিতে ভুলবি না।
যুথি চোখ দুটি বন্ধ করে দীর্ঘ-নিঃশ্বাস নিয়ে বলে, আব্বু এই সব কথা কি বলা ঠিক আমাকে!
যুথির উপর আরো ক্ষিপ্ত কন্ঠে! তুই আমারে ন্যায়-অন্যায় শিখাস! দুই কলম পড়া লেহা শিখা বাপের উপর দিয়া কথা কস "শু***রে বাচ্চা"!
যুথি ঠান্ডা ভাবে বলতে থাকে, আব্বু এত চিৎকার কইরেন না হার্টে সমস্যা হবে, এমন খারাপ কিছু আপনাকে বলা হয় নাই যে, এরকম করবেন আপনি! শুধু ফোন নাম্বারটা যাচাই করার জন্য জিঙ্গাসা করা হয়ছে। আর আমি আপনাকে সন্মান দিয়েই কথা বলছি, আপনি কেনো গালি দিচ্ছেন আমাকে?
নাহ জামাল-কবির আরো চিৎকার করে তুই আমারে আইন শিখাস সয়তানের বাচ্চা!
যুথি এবার ঠোঁটে দাঁত চেপে প্রতিটা প্রশ্নের উত্তর দিতে থাকে! কি বললেন আপনি ! আমরা আপনার সব কিছু শেষ করতেছি! হ্যা করতেছি, আর এটাও শুনুন যতদিন বাঁচবো আপনার সব কিছু শেষ করেই বাঁচবো। আর গালি দিচ্ছেন আমাকে সে গালির সূত্র আপনি নিজেই ।
জামাল-কবিরের বোধ হয় এইবার কথা গুলো লাগলো। ফোন কেটে দিলো।
যুথি হাত থেকে ফোনটা রেখে, দু চোখ বন্ধ করে ভাবে
"আসলে বাবা কেমন হয়"?
রূপকথার গল্পের মত বাবা গুলো কি সত্যিই বন্ধু হয়!
সময়ঃ১২:৪২ মিঃ
তারিখঃ ২৪/১০/২০১৬
স্হানঃ বদ্ধ ঘর।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
জহির রহমান ২৫/১১/২০১৬
-
ফয়জুল মহী ০৬/১১/২০১৬সুবিবেচক লেখকই শান্তিপূর্ণ লেখার ধারক হয়
-
মোনালিসা ০৫/১১/২০১৬অসাধারন
গল্পটি সুন্দর হয়েছে। গল্পের বাবার মত বাবা বাস্তবে খুব কমই হয়।