ক্যান্সার
১
পার্কের বেঞ্চে বসে সবুজের মাঝে হারিয়ে যাওয়াতে বেশ উপকার রয়েছে।এতে চোখ ভাল থাকে কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা হল মনের মধ্যে এক ধরনের শীতল অনুভূতি লাভ করা যায়।হয়ত ঠিক এই কারনেই নিহা নিয়ম করে প্রতিদিনই ঠিক এই সময়ে পার্কের আসে।দৈনন্দিন কাজের ফাঁকে এতটুকু সময়ে কোন না কোনভাবে নিহা বের করে নেয়।আজ দিনটা একটু অন্যরকম।আকাশ আজ ছেয়ে আছে ছেড়া মেঘেদের ভিড়ে।ঠিক সামনের দিকে তাকিয়ে আছে নিহা।সবুজ গাছ আর গুমোট পরিবেশে অন্য রকম ভাবের উপদ্রব ঘটে নিহার হৃদয় কুঠিরে।পার্কের তেমন লোকজনের আনাগোনা নেই আজ।তবে সেই ছেলেটা আজও তার জায়গাজুড়ে দাড়িয়ে আছে।হালকা ছিপছিপে গড়নের লোকটার দিকে তাকিয়ে নিহার কেমন যেন একধরনের শূন্যতার আভাস পায়।কৌতুহল আটকাতে না পেরে কাছে গিয়ে আলাপ জমানোর চেষ্টা করে।এক পর্যায়ে জানতে পারে ক্যান্সারে আক্রান্ত মায়ের চিকিত্সা করানোর জন্য পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় ছেলেটি চিকিত্সা করাতে পারছে না।নিহা বুকের ভেতরে এক ধরনের করুন মায়া অনুভব করে।মধ্যবিত্তদের এ ধরনের সমস্যা যেন স্বয়ং উপর হতে নির্ধারন করে দেয়া হয়।এদের কেউ দেখে সফতার মুখ আবার কারো মুখ থুবড়ে পড়ে যেতে হয়।চিরন্ত এ সত্য বিধির বিধান করে দেয়া।নিহা ভাবে আর চোখের কোণে জমে একবিন্দু অশ্রু।লুকোতে চাইলেও অবাধ্য জলকণা ভূপতিত হয়।নিহা বাসার দিকে হাটছে আর আনমনে ভাবছে কথাগুলো।
২
আজ মাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে।গত সপ্তাহেই ডাক্তার বলেছিল রোগটি প্রথম পর্যায়ে থাকাকালে সারানোর সম্ভাবনা ৫৬ ভাগ।সারাদিনের অফিসের শেষে যখন রাত ঘনিয়ে আসে তখন ঘামে ভেজা ক্লান্ত শরীরে ঘরে ফিরেই মিহান শুনতে পায় "বাবা,আইছছ নি?কুন সময় থাকি তর লাগি বাড়ছাইরাম।তুই হাতমুখ ধইয়্যা আয় আমি ভাত লইরাম তর লাগি।" কথাগুলো মনে পড়তেই চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসে।সাত হাজার টাকার ছোট্ট চাকুরিতে সব টাকাই সংসারের পেছনে খরচ হয়ে যায়,জমানো ত দূরের কথা।বাবা মারা যাওয়ার পর মা অনেক কষ্টে মানুষ করেছেন তাকে। যে করেই হোক মা কে বাঁচাতেই হবে।
পৃথিবীতে অসাধ্যের কিছু নেই,দৃড় সংকল্প বাঁধে মিহান।
৩
নিহা ভাবতে থাকে।ভাবনায় থাকে ছেলেটার শ্যামলা গড়নের সেই মায়াবী মুখ আরো থাকে তিক্ষ্ন চোখের সেই উদাসীন চাহুনি।নাহ,আর ভাবতে পারছে না।বইটা বন্ধ করে চলে আসে পার্কে।দূর থেকে তাকিয়ে থাকে সেই কাঙ্ক্ষিত মানুষের মুখের দিকে।নিজেকে আর ধরে রাখতে না পেরে কাছে যায়।
৪
অতঃপর শুরু হয় অজানা সম্পর্কের নতুন এক অধ্যায়ের।যা বন্ধুত্ব এবং ভালবাসা দুটোর মাঝখানে ঝুলে থাকে।
৫
এক সময় মিহানের মায়ের অবস্থা ধীরে ধীরে খারাপ হতে থাকে।ভর্তি করা হয় ওসমানি মেডিকেল কলেজে।জমানো পনেরো হাজার টাকা যেন হাওয়ায় খরচ হয়ে যায়।পাহাড় সমান রাজ্যের চাপ মাথায় নিয়ে মিহান মুষড়ে পড়ে।মনে হতে থাকে মায়ের মলিন মুখখানি।"বাবা আইছছ নি?" শব্দগুলো মাথার মাঝে বারবার ঘুরপাক খায়।
তখন মধ্যরাত।
ডাক্তার বলেছে কাল সকালেই অপারেশন লাগবে।মাথা প্রচন্ড রকমের ঘুরছে মিহানের।মহিলা ওয়ার্ডের বাইরে চেয়ারে বসে একরাশ ভাবনা নিয়ে তাকিয়ে আছে বারান্দার অপর প্রান্তে।আবছা আলোয় দেখতে পেলো খুব পরিচিত কারো হেটে আসা।কোন কথা না বলে মিহানের হাতে একটি ব্যাগ গুজে দিয়ে যেভাবে এসেছিল ঠিক সেভাবেই চলে গেলো।সে দেখতে পেলো বারান্দার ঐপ্রান্তে চলে যাওয়া মানুষটি খুবই সন্তপর্নে চোখের জলকণাগুলো মুছার আপ্রাণ চেষ্টায় ব্যাস্ত।
৬
মিহান বসে আছে চেয়ারে।না,আজ কোন ভাবনায় ব্যাস্ত নয় সে।সে এসেছে মাকে বাড়ি নিয়ে যেতে।ডাক্তার বলেছেন কোন ভারি কাজ না করাতে তাই সে ভাবছে বাড়িতে নতুন কোন অতিথী নিয়ে যাবে।বাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার পথে মাকে সব খুলে বলল মিহান।"মৌনতাই সম্মতির লক্ষণ"- মায়ের নিরবতা যেন ঠিক সেটাই প্রকাশ পায়।
৭
সকালেই মাকে সালাম করে বেরিয়ে পড়ে সে।উদ্দ্যেশ্য নিহাদের বাসা। পথের পাশে গোলাপ নিয়ে দাড়িয়ে থাকা লোকটির কাছ থেকে পঞ্চাশ টাকায় পাঁচটি দিয়ে গোলাপ কিনে নিয়ে রওয়ানা দেয় ।নিহাদের বাসার সামনে এসে ভাড়া মিটিয়ে তাকায় নিহাদের বাড়ির দিকে।
অবাক হয় সে,কেমন যেন মনে হয় বাড়িটা তাকে চলে যেতে বলছে।যাইহোক,গেট খুলে ভেতরে ঢুকে সে।থমকে দাড়ায় মিহান!
৮
কলিংবেলে চাপদিতেই খুলে গেলো দরজা।
কফিন কাঁধে কাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।দমকা হাওয়ায় আগরবাতির গন্ধ নাকে এসে ধাক্কা দিচ্ছে।ঘরভর্তি লোকেদের সামনে সে থমকে দাড়ায়।একপর্যায়
নিহার মা হাতে খাম ধরিয়ে দিয়ে যান। মিহান খাম খুলে চিঠিটা পড়তে থাকে।
শ্রাবণের বৃষ্টির মত দুচোখ বেয়ে নামে জলের ধারা।কলিজাটা কে যেন খামচে ধরে ছিড়ে ফেলতে চাইছে।তার পৃথিবীতে নেমে আসে নিগুড় অন্ধকার।
চিঠির দ্বিতীয় অংশটুকু ছিল এই রকমঃ
"ক্যান্সার নিয়ে বেঁচে ছিলাম।জমানো টাকাগুলো চিকিত্সার জন্য রাখা ছিল।শুনেছিলাম ত্যাগের মধ্য নাকি হাজার সুখ বিদ্যমান।তাই এ জীবন ত্যাগ করে অন্তর্নিহিত সুখ খুজতে চলেছি।যখন তুমি আসবে তখন খানিকটা তুমাকে দিয়ে দিব,ভালো থেকো।
-নিহা"
পার্কের বেঞ্চে বসে সবুজের মাঝে হারিয়ে যাওয়াতে বেশ উপকার রয়েছে।এতে চোখ ভাল থাকে কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা হল মনের মধ্যে এক ধরনের শীতল অনুভূতি লাভ করা যায়।হয়ত ঠিক এই কারনেই নিহা নিয়ম করে প্রতিদিনই ঠিক এই সময়ে পার্কের আসে।দৈনন্দিন কাজের ফাঁকে এতটুকু সময়ে কোন না কোনভাবে নিহা বের করে নেয়।আজ দিনটা একটু অন্যরকম।আকাশ আজ ছেয়ে আছে ছেড়া মেঘেদের ভিড়ে।ঠিক সামনের দিকে তাকিয়ে আছে নিহা।সবুজ গাছ আর গুমোট পরিবেশে অন্য রকম ভাবের উপদ্রব ঘটে নিহার হৃদয় কুঠিরে।পার্কের তেমন লোকজনের আনাগোনা নেই আজ।তবে সেই ছেলেটা আজও তার জায়গাজুড়ে দাড়িয়ে আছে।হালকা ছিপছিপে গড়নের লোকটার দিকে তাকিয়ে নিহার কেমন যেন একধরনের শূন্যতার আভাস পায়।কৌতুহল আটকাতে না পেরে কাছে গিয়ে আলাপ জমানোর চেষ্টা করে।এক পর্যায়ে জানতে পারে ক্যান্সারে আক্রান্ত মায়ের চিকিত্সা করানোর জন্য পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় ছেলেটি চিকিত্সা করাতে পারছে না।নিহা বুকের ভেতরে এক ধরনের করুন মায়া অনুভব করে।মধ্যবিত্তদের এ ধরনের সমস্যা যেন স্বয়ং উপর হতে নির্ধারন করে দেয়া হয়।এদের কেউ দেখে সফতার মুখ আবার কারো মুখ থুবড়ে পড়ে যেতে হয়।চিরন্ত এ সত্য বিধির বিধান করে দেয়া।নিহা ভাবে আর চোখের কোণে জমে একবিন্দু অশ্রু।লুকোতে চাইলেও অবাধ্য জলকণা ভূপতিত হয়।নিহা বাসার দিকে হাটছে আর আনমনে ভাবছে কথাগুলো।
২
আজ মাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে।গত সপ্তাহেই ডাক্তার বলেছিল রোগটি প্রথম পর্যায়ে থাকাকালে সারানোর সম্ভাবনা ৫৬ ভাগ।সারাদিনের অফিসের শেষে যখন রাত ঘনিয়ে আসে তখন ঘামে ভেজা ক্লান্ত শরীরে ঘরে ফিরেই মিহান শুনতে পায় "বাবা,আইছছ নি?কুন সময় থাকি তর লাগি বাড়ছাইরাম।তুই হাতমুখ ধইয়্যা আয় আমি ভাত লইরাম তর লাগি।" কথাগুলো মনে পড়তেই চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসে।সাত হাজার টাকার ছোট্ট চাকুরিতে সব টাকাই সংসারের পেছনে খরচ হয়ে যায়,জমানো ত দূরের কথা।বাবা মারা যাওয়ার পর মা অনেক কষ্টে মানুষ করেছেন তাকে। যে করেই হোক মা কে বাঁচাতেই হবে।
পৃথিবীতে অসাধ্যের কিছু নেই,দৃড় সংকল্প বাঁধে মিহান।
৩
নিহা ভাবতে থাকে।ভাবনায় থাকে ছেলেটার শ্যামলা গড়নের সেই মায়াবী মুখ আরো থাকে তিক্ষ্ন চোখের সেই উদাসীন চাহুনি।নাহ,আর ভাবতে পারছে না।বইটা বন্ধ করে চলে আসে পার্কে।দূর থেকে তাকিয়ে থাকে সেই কাঙ্ক্ষিত মানুষের মুখের দিকে।নিজেকে আর ধরে রাখতে না পেরে কাছে যায়।
৪
অতঃপর শুরু হয় অজানা সম্পর্কের নতুন এক অধ্যায়ের।যা বন্ধুত্ব এবং ভালবাসা দুটোর মাঝখানে ঝুলে থাকে।
৫
এক সময় মিহানের মায়ের অবস্থা ধীরে ধীরে খারাপ হতে থাকে।ভর্তি করা হয় ওসমানি মেডিকেল কলেজে।জমানো পনেরো হাজার টাকা যেন হাওয়ায় খরচ হয়ে যায়।পাহাড় সমান রাজ্যের চাপ মাথায় নিয়ে মিহান মুষড়ে পড়ে।মনে হতে থাকে মায়ের মলিন মুখখানি।"বাবা আইছছ নি?" শব্দগুলো মাথার মাঝে বারবার ঘুরপাক খায়।
তখন মধ্যরাত।
ডাক্তার বলেছে কাল সকালেই অপারেশন লাগবে।মাথা প্রচন্ড রকমের ঘুরছে মিহানের।মহিলা ওয়ার্ডের বাইরে চেয়ারে বসে একরাশ ভাবনা নিয়ে তাকিয়ে আছে বারান্দার অপর প্রান্তে।আবছা আলোয় দেখতে পেলো খুব পরিচিত কারো হেটে আসা।কোন কথা না বলে মিহানের হাতে একটি ব্যাগ গুজে দিয়ে যেভাবে এসেছিল ঠিক সেভাবেই চলে গেলো।সে দেখতে পেলো বারান্দার ঐপ্রান্তে চলে যাওয়া মানুষটি খুবই সন্তপর্নে চোখের জলকণাগুলো মুছার আপ্রাণ চেষ্টায় ব্যাস্ত।
৬
মিহান বসে আছে চেয়ারে।না,আজ কোন ভাবনায় ব্যাস্ত নয় সে।সে এসেছে মাকে বাড়ি নিয়ে যেতে।ডাক্তার বলেছেন কোন ভারি কাজ না করাতে তাই সে ভাবছে বাড়িতে নতুন কোন অতিথী নিয়ে যাবে।বাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার পথে মাকে সব খুলে বলল মিহান।"মৌনতাই সম্মতির লক্ষণ"- মায়ের নিরবতা যেন ঠিক সেটাই প্রকাশ পায়।
৭
সকালেই মাকে সালাম করে বেরিয়ে পড়ে সে।উদ্দ্যেশ্য নিহাদের বাসা। পথের পাশে গোলাপ নিয়ে দাড়িয়ে থাকা লোকটির কাছ থেকে পঞ্চাশ টাকায় পাঁচটি দিয়ে গোলাপ কিনে নিয়ে রওয়ানা দেয় ।নিহাদের বাসার সামনে এসে ভাড়া মিটিয়ে তাকায় নিহাদের বাড়ির দিকে।
অবাক হয় সে,কেমন যেন মনে হয় বাড়িটা তাকে চলে যেতে বলছে।যাইহোক,গেট খুলে ভেতরে ঢুকে সে।থমকে দাড়ায় মিহান!
৮
কলিংবেলে চাপদিতেই খুলে গেলো দরজা।
কফিন কাঁধে কাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।দমকা হাওয়ায় আগরবাতির গন্ধ নাকে এসে ধাক্কা দিচ্ছে।ঘরভর্তি লোকেদের সামনে সে থমকে দাড়ায়।একপর্যায়
নিহার মা হাতে খাম ধরিয়ে দিয়ে যান। মিহান খাম খুলে চিঠিটা পড়তে থাকে।
শ্রাবণের বৃষ্টির মত দুচোখ বেয়ে নামে জলের ধারা।কলিজাটা কে যেন খামচে ধরে ছিড়ে ফেলতে চাইছে।তার পৃথিবীতে নেমে আসে নিগুড় অন্ধকার।
চিঠির দ্বিতীয় অংশটুকু ছিল এই রকমঃ
"ক্যান্সার নিয়ে বেঁচে ছিলাম।জমানো টাকাগুলো চিকিত্সার জন্য রাখা ছিল।শুনেছিলাম ত্যাগের মধ্য নাকি হাজার সুখ বিদ্যমান।তাই এ জীবন ত্যাগ করে অন্তর্নিহিত সুখ খুজতে চলেছি।যখন তুমি আসবে তখন খানিকটা তুমাকে দিয়ে দিব,ভালো থেকো।
-নিহা"
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
আশিস চৌধুরী ৩১/০৮/২০১৪খুব ভাল লিখেছেন,ধন্যবাদ জানাই।
-
মঞ্জুর হোসেন মৃদুল ৩১/০৮/২০১৪বেশ সুন্দর উপস্থাপনা।