টোনাটুনির সংসার ০৫
:হ্যালো...তৃতীয় পুরুষ বলছেন?
:জ্বী,বলছি।আপনি _____ __ বলছেন?
বলে রাখি আমার ফেসবুক নাম ছিল তৃতীয় পুরুষ।যা এখন উদাসীর বাঁশি নামে চলছে।কুশল বিনিময়ের পর আংকেলের অবস্থা জানতে চাইলে মেয়েটি অনেকগুলো রোগের নাম বলল।আমি শুধু বুঝতে পারলাম যে,ওর বাবার ক্যান্সার ধরা পড়েছে।সাথে দুটো কিডনিই ড্যামেজ!সমবেদনা জানিয়ে ফোনটা রেখে দিলাম।বুঝে গেলাম,আমি মায়ায় পড়ে যাচ্ছি।কি আর করার?ভাবতে ভাবতে বাসায় চলে আসলাম।
সন্ধ্যা নেমেছে।সাথে আকাশে উঁকি দিচ্ছে ইয়া বড় একটা চাঁদ।শুয়েই আছি।হুটকরে ফোনে একটা ম্যাসেজ আসলো।
"একটু অনলাইনে আসেন তো"
ফেসবুক ওপেন করলাম।ম্যাসেঞ্জারে অনেক আলাপ হচ্ছে।পারিবারিক,ব্যক্তিগত,হৃদয় ঘটিত।আলাপন পর্ব সেরে আমি খাবারের প্রস্তুতি নিচ্ছি।খানা শেষ করে ঔষধ খেয়ে আমার রুমে এসে শুয়ে পড়লাম।মেয়েটি আবার ফোন দিয়েছে।কথা বলার এক পর্যায়ে সে বলল,তাকে তুমি বলে ডাকতে!আমি যেন ক্যামন বিব্রত বোধ করলাম।ছয় ঘন্টার পরিচয়ে আপনি থেকে তুমি!প্রায় ঘন্টা খানেক কথা বলল মেয়েটি।
আমি মনেহয় মায়া সাগরে ডুবে যাচ্ছি।হৃদয়ে প্রেম প্রেম ভাব জাগছে।
এর আগেও আমি একবার প্রেমে পড়েছিলাম।ম্যাট্রিক পাশ করে সবে কলেজে ভর্তি হয়েছি।যখন ফেসবুক,হোয়াট এপ্স বা ভাইবার ছিলোনা।তখনকার প্রেম ছিল আশির দশকের মত।রাত জেগে চুপি চুপি চিঠি লেখা,লেখা চিঠি লুকিয়ে রাখা,ছোট কারও সাহায্যে সে চিঠি পৌঁছে দেয়া,চিঠি সহ পিয়ন ধরা খাওয়া আরও কতকি!
ফলাফল,প্রেমিকার পরিবার কর্তৃক পিয়ন লাঞ্চিত,পোষ্ট অফিস বন্ধ।কি আবেগ ছিল সে প্রেমে।একটি চিঠির রিপ্লাই আসতে এক সপ্তাহ বা তারও বেশি সময় লেগে যেতো।প্রেমিকার লেখা গোটা গোটা অক্ষরে নকশা করা চিঠি সারাদিন পড়েও মন ভরতো না।প্রত্যেক চিঠিতে একটা কথা লেখা থাকতো, "এই পত্রখানা কুচিকুচি করে ছিঁড়ে ফেলো"।কিন্তু আমি ছিঁড়ে ফেলতাম না।পত্র পাঠের পর নতুন সমস্যা,এ চিঠি কোথায় রাখি???
মন্দার বাজারে এল মোবাইল ফোন।২০০৫ সাল।মাত্র ইন্টারে পড়ি।মোবাইল কিনতে হবে।মোবাইলেই পারে প্রেমটা বাঁচাতে।কিন্তু টাকা কই??? প্রথম ধাপে সিম ক্রয় করলাম।মূল্য ১১৫০টাকা মাত্র। এবার মোবাইল কেনার পালা।যাইহোক,প্রেমের পথে কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি,টাকাও নয়।ম্যানেজ হল টাকা। হাইয়েষ্ট প্রাইজ দিয়ে বাজারের লোয়েস্ট একটা মোবাইল কিনে আনলাম।Philips T160,মূল্য ৩৭৫০ টাকা।এবার নম্বর সফলতার সাথে পৌঁছে দিলাম। গ্রামীনফোনের পল্লীফোনের গ্রাহকগণ সেই সময়টায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফোন কলের ফেরি করতো।আমি একজন কে ম্যানেজ করে ফেললাম।আমার সাথে কথা বলিয়ে দেবে,ইনকামিং আউটগোয়িং যাই হোক ও মিনিট প্রতি পাঁচ টাকা পাবে।চলছে তো চলছেই......প্রেম জমে ক্ষীর।প্রেমিকার বাবার কি সাধ্য আছে নেট বন্ধ করে দেয়?বকেয়া বিলের হালখাতা খেয়ে আমি দেউলিয়া হলাম আর প্রেম মরে গেলো।তার বিয়ে হয়েছে,সংসার হয়েছে।সুখেই আছে হয়তো।সুখে থাকুক।
(চলবে…..)
:জ্বী,বলছি।আপনি _____ __ বলছেন?
বলে রাখি আমার ফেসবুক নাম ছিল তৃতীয় পুরুষ।যা এখন উদাসীর বাঁশি নামে চলছে।কুশল বিনিময়ের পর আংকেলের অবস্থা জানতে চাইলে মেয়েটি অনেকগুলো রোগের নাম বলল।আমি শুধু বুঝতে পারলাম যে,ওর বাবার ক্যান্সার ধরা পড়েছে।সাথে দুটো কিডনিই ড্যামেজ!সমবেদনা জানিয়ে ফোনটা রেখে দিলাম।বুঝে গেলাম,আমি মায়ায় পড়ে যাচ্ছি।কি আর করার?ভাবতে ভাবতে বাসায় চলে আসলাম।
সন্ধ্যা নেমেছে।সাথে আকাশে উঁকি দিচ্ছে ইয়া বড় একটা চাঁদ।শুয়েই আছি।হুটকরে ফোনে একটা ম্যাসেজ আসলো।
"একটু অনলাইনে আসেন তো"
ফেসবুক ওপেন করলাম।ম্যাসেঞ্জারে অনেক আলাপ হচ্ছে।পারিবারিক,ব্যক্তিগত,হৃদয় ঘটিত।আলাপন পর্ব সেরে আমি খাবারের প্রস্তুতি নিচ্ছি।খানা শেষ করে ঔষধ খেয়ে আমার রুমে এসে শুয়ে পড়লাম।মেয়েটি আবার ফোন দিয়েছে।কথা বলার এক পর্যায়ে সে বলল,তাকে তুমি বলে ডাকতে!আমি যেন ক্যামন বিব্রত বোধ করলাম।ছয় ঘন্টার পরিচয়ে আপনি থেকে তুমি!প্রায় ঘন্টা খানেক কথা বলল মেয়েটি।
আমি মনেহয় মায়া সাগরে ডুবে যাচ্ছি।হৃদয়ে প্রেম প্রেম ভাব জাগছে।
এর আগেও আমি একবার প্রেমে পড়েছিলাম।ম্যাট্রিক পাশ করে সবে কলেজে ভর্তি হয়েছি।যখন ফেসবুক,হোয়াট এপ্স বা ভাইবার ছিলোনা।তখনকার প্রেম ছিল আশির দশকের মত।রাত জেগে চুপি চুপি চিঠি লেখা,লেখা চিঠি লুকিয়ে রাখা,ছোট কারও সাহায্যে সে চিঠি পৌঁছে দেয়া,চিঠি সহ পিয়ন ধরা খাওয়া আরও কতকি!
ফলাফল,প্রেমিকার পরিবার কর্তৃক পিয়ন লাঞ্চিত,পোষ্ট অফিস বন্ধ।কি আবেগ ছিল সে প্রেমে।একটি চিঠির রিপ্লাই আসতে এক সপ্তাহ বা তারও বেশি সময় লেগে যেতো।প্রেমিকার লেখা গোটা গোটা অক্ষরে নকশা করা চিঠি সারাদিন পড়েও মন ভরতো না।প্রত্যেক চিঠিতে একটা কথা লেখা থাকতো, "এই পত্রখানা কুচিকুচি করে ছিঁড়ে ফেলো"।কিন্তু আমি ছিঁড়ে ফেলতাম না।পত্র পাঠের পর নতুন সমস্যা,এ চিঠি কোথায় রাখি???
মন্দার বাজারে এল মোবাইল ফোন।২০০৫ সাল।মাত্র ইন্টারে পড়ি।মোবাইল কিনতে হবে।মোবাইলেই পারে প্রেমটা বাঁচাতে।কিন্তু টাকা কই??? প্রথম ধাপে সিম ক্রয় করলাম।মূল্য ১১৫০টাকা মাত্র। এবার মোবাইল কেনার পালা।যাইহোক,প্রেমের পথে কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি,টাকাও নয়।ম্যানেজ হল টাকা। হাইয়েষ্ট প্রাইজ দিয়ে বাজারের লোয়েস্ট একটা মোবাইল কিনে আনলাম।Philips T160,মূল্য ৩৭৫০ টাকা।এবার নম্বর সফলতার সাথে পৌঁছে দিলাম। গ্রামীনফোনের পল্লীফোনের গ্রাহকগণ সেই সময়টায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফোন কলের ফেরি করতো।আমি একজন কে ম্যানেজ করে ফেললাম।আমার সাথে কথা বলিয়ে দেবে,ইনকামিং আউটগোয়িং যাই হোক ও মিনিট প্রতি পাঁচ টাকা পাবে।চলছে তো চলছেই......প্রেম জমে ক্ষীর।প্রেমিকার বাবার কি সাধ্য আছে নেট বন্ধ করে দেয়?বকেয়া বিলের হালখাতা খেয়ে আমি দেউলিয়া হলাম আর প্রেম মরে গেলো।তার বিয়ে হয়েছে,সংসার হয়েছে।সুখেই আছে হয়তো।সুখে থাকুক।
(চলবে…..)
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
এরশাদ সরকার ২৩/১২/২০১৬অনেক সুন্দর হয়েছে লেখাটি শুভ কামনা রইল
-
সোলাইমান ১৯/১২/২০১৬মুগ্ধ অনুভূতির লিখন ।। শুভ কামনা নিরন্তর...
-
কুয়াশা ১৯/১২/২০১৬ভালো লাগল। শুভেচ্ছা জানবেন