টোনা টুনির সংসার
টোনা টুনির সংসার-০১
একটি দুর্ঘটনা জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।দুর্ঘটনায় আমার জীবনেরও মোড় ঘুরে গিয়েছে।আমি সুতো কাটা ঘুড়ির মত আকাশে উড়ছিলাম,কোন স্বপ্ন বা ভবিষ্যৎ ছিলোনা জীবনের কোন লক্ষ্য নেই,উদ্দেশ্য নেই,একদম সাদামাটা জীবন।সময়গুলো সময়ের নিয়মে কেটে যাচ্ছিলো। হুট করে আমি থেমে যাই।
মার্চ মাসের কোন এক সন্ধ্যায় বাইকে করে ফিরছিলাম কুড়িগ্রাম হতে।কয়টা বাজবে তখন?এই আনুমানিক সাতটা কি সাড়ে সাতটা।আমি তৃতীয় বারের মত বাইক একসিডেন্ট করলাম।কি করে কি হল,আমি জানিনা।হয়তো আমি একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম।রক্তে ভিজে যাচ্ছে সারা শরীর,মাথাটায় প্রচন্ড যন্ত্রনা হচ্ছে। আমার নিথর দেহ পরে আছে মাটিতে।চারপাশে কতগুলো অচেনা কণ্ঠের কোলাহল অস্ফুট ভাবে ভেসে আসছে।এর পর আর কি কি ঘটেছিল আমি জানিনা।
পরদিন দুপুরে নিজেকে হাসপাতালের বেড়ে খুঁজে পাই।মাথায়, গালে, হাতে অসম্ভব যন্ত্রনা।অনেক কষ্টে চোখ খুলে দেখি,স্বজনরা সব পাশেই আছে।আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে দিলেন,তাই হয়তো এ যাত্রায় বেঁচে গেলাম।জগতে হাসপাতাল এক আজব জায়গা। আজরাইল সাহেবের নিত্য যাতায়ত।প্রতিদিনই কেউ না কেউ মরছে আর ওয়ার্ড জুড়ে ভেসে আসছে স্বজন হারানোর আহাজারি। মৃত্যু বড়ই মর্মান্তিক।এভাবেই কাটছিলো হাসপাতালের দিনগুলি।সারাদিন শুয়ে বসে থাকা ছাড়া কোন কাজ নেই। মাইল্ড হেড ইনজুরি। মাথায় হালকা আঘাত পেয়েছি। আট দশদিনের কম ছুটি পাবোনা।কি আর করা???থাকতে থাকদেখতে দেখতে আট দিন কেটে গেলো।আমার দেহের ক্ষত ক্রমে ক্রমে শুকিয়ে আসছে। ইতিমধ্যে আমার একজন নতুন রোগী ভর্তি হলেন। ও হ্যা বলতে ভুলে গিয়েছিলাম,আমি একটি সরকারি হাসপাতালে নিউরো সার্জারি বিভাগের পেয়িং বেডে ছিলাম।তিন রুম বিশিষ্ট বেশ বড়সড় একটা রুম।যা বলছিলাম,নতুন রোগী।অনার্স লাইফের আমার এক ইয়ারমেট এর বাবা মৃতপ্রায় অবস্থায় ভর্তি হলেন।অনেকদিন পর বন্ধুটির সাথে দেখা হল।বন্ধুটিকে কাছে পেয়ে ভাবলাম,যাক গল্প স্বল্প করা যাবে। কিন্তু আজরাইল সাহেব নারাজ। ভর্তি হওয়ার কিছুক্ষনের মধ্যেই উনি পরলোক গমন করলেন।চোখে জল ধরে রাখতে পারলামনা।বন্ধুটিকে আমি জড়িয়ে ধরে কাঁদছি আর স্বজনদের বুকফাটা আর্তনাদ দেখছি।সত্যই,মৃত্যুর কাছে মানুষ খুব অসহায়।এখন শোকের মাতম চরমে পৌঁছেছে।মনে হচ্ছে,তারা যেন আজরাইল সাহেবের সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করবে।আস্তে আস্তে শোকের মাতম কমে আসে।রাত আনুমানিক নয়টার দিকে বডি রিলিজ করে নিয়ে ওরা চলে গেলো।সারারাত আমি খুব ভয়ে ছিলাম।কি জানি,আবার যদি উনি এসে উঁকি মেরে যায়!প্রচন্ড ভয় আর উৎকণ্ঠার মাঝে একটি নির্ঘুম রাত কেটে গেলো।
শুক্রবার।আত্মীয় স্বজন অনেকেই এসেছে।আমাকে কেউ খাইয়ে দাইয়ে, কেউ চোখের দেখা দেখে চলে গেলো।আমি শুয়ে আছি দরজা বন্ধ করে।যদিও নিয়ম নেই,হাসপাতালের রুমের দরজা বন্ধ করার।তবুও করেছি,দরজা বন্ধ করলে ওয়ার্ড থেকে চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ একটু কম আসে।হুট করেই যেন,দরজায় কেউ কড়া নাড়ছে।কে আসলো আবার?এখনতো রাউন্ড টাইম নয়।বিরক্তি ভাব নিয়ে দরজা খুলতেই একটি মেয়ে বিজলীর মত রুমে ঢুকে আবার বের হয়ে গেল।কিছুই বুঝতে পারলাম না।কিছুই জানতে চাইলো না!আমি এবার দরজা বন্ধ না করেই শুয়ে পড়লাম।কখন যে ঘুমিয়ে গেছি,বলতেই পারিনা।ঘুম ভেঙে দেখি একজন নতুন রোগী রুমে এডমিট হয়েছেন।মাঝ বয়সী একজন লোক।অনেক আত্মীয় স্বজনের মধ্যে দেখি সেই মেয়েটাও আছে।যাই হোক,এতক্ষনে বুঝলাম যে মিস বিজলি তখন রুম ওয়াচ করতে এসেছিলেন।
(চলবে....)
একটি দুর্ঘটনা জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।দুর্ঘটনায় আমার জীবনেরও মোড় ঘুরে গিয়েছে।আমি সুতো কাটা ঘুড়ির মত আকাশে উড়ছিলাম,কোন স্বপ্ন বা ভবিষ্যৎ ছিলোনা জীবনের কোন লক্ষ্য নেই,উদ্দেশ্য নেই,একদম সাদামাটা জীবন।সময়গুলো সময়ের নিয়মে কেটে যাচ্ছিলো। হুট করে আমি থেমে যাই।
মার্চ মাসের কোন এক সন্ধ্যায় বাইকে করে ফিরছিলাম কুড়িগ্রাম হতে।কয়টা বাজবে তখন?এই আনুমানিক সাতটা কি সাড়ে সাতটা।আমি তৃতীয় বারের মত বাইক একসিডেন্ট করলাম।কি করে কি হল,আমি জানিনা।হয়তো আমি একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম।রক্তে ভিজে যাচ্ছে সারা শরীর,মাথাটায় প্রচন্ড যন্ত্রনা হচ্ছে। আমার নিথর দেহ পরে আছে মাটিতে।চারপাশে কতগুলো অচেনা কণ্ঠের কোলাহল অস্ফুট ভাবে ভেসে আসছে।এর পর আর কি কি ঘটেছিল আমি জানিনা।
পরদিন দুপুরে নিজেকে হাসপাতালের বেড়ে খুঁজে পাই।মাথায়, গালে, হাতে অসম্ভব যন্ত্রনা।অনেক কষ্টে চোখ খুলে দেখি,স্বজনরা সব পাশেই আছে।আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে দিলেন,তাই হয়তো এ যাত্রায় বেঁচে গেলাম।জগতে হাসপাতাল এক আজব জায়গা। আজরাইল সাহেবের নিত্য যাতায়ত।প্রতিদিনই কেউ না কেউ মরছে আর ওয়ার্ড জুড়ে ভেসে আসছে স্বজন হারানোর আহাজারি। মৃত্যু বড়ই মর্মান্তিক।এভাবেই কাটছিলো হাসপাতালের দিনগুলি।সারাদিন শুয়ে বসে থাকা ছাড়া কোন কাজ নেই। মাইল্ড হেড ইনজুরি। মাথায় হালকা আঘাত পেয়েছি। আট দশদিনের কম ছুটি পাবোনা।কি আর করা???থাকতে থাকদেখতে দেখতে আট দিন কেটে গেলো।আমার দেহের ক্ষত ক্রমে ক্রমে শুকিয়ে আসছে। ইতিমধ্যে আমার একজন নতুন রোগী ভর্তি হলেন। ও হ্যা বলতে ভুলে গিয়েছিলাম,আমি একটি সরকারি হাসপাতালে নিউরো সার্জারি বিভাগের পেয়িং বেডে ছিলাম।তিন রুম বিশিষ্ট বেশ বড়সড় একটা রুম।যা বলছিলাম,নতুন রোগী।অনার্স লাইফের আমার এক ইয়ারমেট এর বাবা মৃতপ্রায় অবস্থায় ভর্তি হলেন।অনেকদিন পর বন্ধুটির সাথে দেখা হল।বন্ধুটিকে কাছে পেয়ে ভাবলাম,যাক গল্প স্বল্প করা যাবে। কিন্তু আজরাইল সাহেব নারাজ। ভর্তি হওয়ার কিছুক্ষনের মধ্যেই উনি পরলোক গমন করলেন।চোখে জল ধরে রাখতে পারলামনা।বন্ধুটিকে আমি জড়িয়ে ধরে কাঁদছি আর স্বজনদের বুকফাটা আর্তনাদ দেখছি।সত্যই,মৃত্যুর কাছে মানুষ খুব অসহায়।এখন শোকের মাতম চরমে পৌঁছেছে।মনে হচ্ছে,তারা যেন আজরাইল সাহেবের সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করবে।আস্তে আস্তে শোকের মাতম কমে আসে।রাত আনুমানিক নয়টার দিকে বডি রিলিজ করে নিয়ে ওরা চলে গেলো।সারারাত আমি খুব ভয়ে ছিলাম।কি জানি,আবার যদি উনি এসে উঁকি মেরে যায়!প্রচন্ড ভয় আর উৎকণ্ঠার মাঝে একটি নির্ঘুম রাত কেটে গেলো।
শুক্রবার।আত্মীয় স্বজন অনেকেই এসেছে।আমাকে কেউ খাইয়ে দাইয়ে, কেউ চোখের দেখা দেখে চলে গেলো।আমি শুয়ে আছি দরজা বন্ধ করে।যদিও নিয়ম নেই,হাসপাতালের রুমের দরজা বন্ধ করার।তবুও করেছি,দরজা বন্ধ করলে ওয়ার্ড থেকে চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ একটু কম আসে।হুট করেই যেন,দরজায় কেউ কড়া নাড়ছে।কে আসলো আবার?এখনতো রাউন্ড টাইম নয়।বিরক্তি ভাব নিয়ে দরজা খুলতেই একটি মেয়ে বিজলীর মত রুমে ঢুকে আবার বের হয়ে গেল।কিছুই বুঝতে পারলাম না।কিছুই জানতে চাইলো না!আমি এবার দরজা বন্ধ না করেই শুয়ে পড়লাম।কখন যে ঘুমিয়ে গেছি,বলতেই পারিনা।ঘুম ভেঙে দেখি একজন নতুন রোগী রুমে এডমিট হয়েছেন।মাঝ বয়সী একজন লোক।অনেক আত্মীয় স্বজনের মধ্যে দেখি সেই মেয়েটাও আছে।যাই হোক,এতক্ষনে বুঝলাম যে মিস বিজলি তখন রুম ওয়াচ করতে এসেছিলেন।
(চলবে....)
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
জহির রহমান ২৬/১১/২০১৬
-
শাহ আজিজ ১৬/১০/২০১৬হাসপাতালের জীবনটা বেশ অদ্ভুত । অনেক কিছু দেখা ও জানা যায় । আগ্রহ রইল পরবর্তী রোগীর কি হয় আর বিজলীর কথা নাইবা বললাম------- । ভাল লাগলো।
-
ফয়জুল মহী ০৮/১০/২০১৬অনুপম প্রকাশ
-
রবিউল ইসলাম রাব্বি ০৭/১০/২০১৬শুভ কামনা আপনার জন্য
-
কালপুরুষ ০৭/১০/২০১৬পরের অংশের অপেক্ষায় রইলাম তারাতারি পোস্ট করবেন।
-
রোজারিও ০৭/১০/২০১৬সিরিয়াস একটা ঘটনার এভাবে ইউটার্ন পছন্দ হলো না! আপনার শারিরীক অবস্থার প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করছি ।
৩য় পর্ব পড়ে বাকি ২পর্বও পড়তে আসলাম।