পচা মাতুব্বর -উপন্যাস ২য় অধ্যায়
২য় অধ্যায়
সকালে যখন নৌকার সবার ঘুম ভাঙ্গিল তখন সূর্য উচু পাহাড়ের পিছন হইতে উঁকি মারিতেছিল। মোচন মাতুব্বরের মনে হইল আর এক ক্রোশ সামনে গেলেই পাহাড় দেখিতে পাইবে। পাহাড় গুলোর ঠিক মাঝখানে একটা খাদ আছে বলিয়া মনে হইল। তবে কি ঐ খাদের ভিতর দিয়াই নদী চলিয়াছে! নৌকা খানা কী দুই পাহাড়ের মাঝখান দিয়া বহিয়া যাইবে?
মোচন মাতুব্বর কৌতুহল বশত: আদেল খাঁ কে ইহা জিজ্ঞাসা করিলে তিনি একগাল হাসিয়া কহিলেন, আরে দুর, ঐ পাহাড় এহেন থিকাও প্রায় একশ মাইল দূরে। তিনি একবার নাকি ঐ পাহাড়ের কাছে গিয়াছিলেন। পাহাড়ের বুকে রাশি রাশি মেঘ ঘন ধোয়ার মতো ঘোরাফেরা করে, আর পাহাড়ের চূড়াগুলো মেঘের উপর দিয়া সগৌরবে দাড়াইয়া থাকে। একটা নয়, দুইটা নয় শত শত পাহাড়। নিচের দিকে ঘন জঙ্গল, তাহার ভিতর বাস করে জংলী মানুষ। পাহাড়ের চূড়ায় কোন গাছ জন্মায় না। সাদা আর লাল পাথর সূর্যের আলো পড়িয়া চকচক করে।
মোচন মাতুব্বর ভাল করিয়া পাহাড় গুলো দেখিতে লাগিল। তাহার মনে ইচ্ছা হইল পাহাড়ের ঐ লাল চূড়ার উপর দাড়াইয়া চারিদিকে যদি একবার তাকাইয়া দেখিতে পারিত!
ছিরা (সিরাজ উদ্দিন) ভাল রান্না করিতে পারে। সকালের নাস্তা করিতে করিতে সকলে তাহারই প্রশংসা করিতে লাগিল। কিছুক্ষনের মধ্যেই চারিদিকে অন্ধকার হইয়া আসিল। পাহাড়গুলো মেঘ হইয়া গিয়াছে, কিংবা মেঘগুলো পাহাড় হইয়া উঠিয়াছে। এখন আর পাহাড়গুলিকে মেঘ হইতে আলাদা করা যাইতেছে না। দেখিতে দেখিতে সারা আকাশ অন্ধকার হইয়া রাত্রি নামিয়া আসিবার উপক্রম হইল। মৃদু ঠান্ডা বাতাসে নৌকা দোলাইতে লাগিল। ভয় পাইয়া তাহারা নৌকাখানি তীরবর্তী একটি হিজল বনে ঢুঁকাইয়া গাছের সহিত বাধিঁয়া রাখিল।
পানির ভিতর হিজল গাছগুলি আঁটো সাঁটো হইয়া দাঁড়াইয়া ছিল। চারিদিকে ঘন জঙ্গল, কোথাও কোন স্থলভাগ দেখা গেল না, কোন ঘরবাড়ি দেখা গেল না। ঝুপ ঝুপ করিয়া বৃষ্টি আরম্ভ হইল। জঙ্গল হইতে নাম না জানা পাখির ডাক শোনা জাইতে লাগিল। একটি কাক অদূরেই গাছের ডালে ভিজিতেছিল। বৃষ্টি থামিবার কোন নাম করিল না। মোচন মাতুব্বর কিছুক্ষন তার দুই মানিক পচা ও ওয়াহাবের কথা ভাবিতে লাগিল। এক সময় অলস দেহে নৌকার ছইয়ের ভিতর সবাই ঘুমাইয়া পড়িল।
ক্ষুধার তাড়নায় যখন তাদের ঘুম ভাঙ্গিল তখনও বৃষ্টি থামে নাই। চাউল ফুরাইয়া আসিয়াছিল তাই সিরাজুদ্দিন রান্নার নাম করিল না। বস্তার ভিতর হইতে মূড়ি বাহির করিয়া খেজুর গুড় দিয়া সবাইকে খাইতে দিল। এক সময় বৃষ্টি থামিয়া চারিদিকে ফর্সা হইয়া উঠিল। এই হেমন্তেও মেঘের আড়াল হইতে বাহির হইতে পারিয়া সূর্য তাহার তেজ দেখাইতে লাগিল। নৌকা খানা জঙ্গলের ভিতর হইতে বাহির হইয়া আবার নদীতে আসিয়া পূর্বদিকে চলিতে লাগিল।
নিকটেই গ্রাম দেখা গেল। গ্রামের ফাঁকে ফাঁকে বিরাট বিরাট হাওড় আর ধানের সমূদ্রের অংশ বিশেষ দেখা যাইতে লাগিল। সবার হৃদয়ে আনন্দের দোলা দিতে লাগিল। কিন্তু সূর্য মামাও আজকের মত বিদায় লইতে চলিয়াছেন। তাই তাড়াতাড়ি নৌকা তীরে ভিড়াইয়া কয়েকজন নামিয়া পাশ্ববর্তী বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হইল। তাহাদের দেখিয়া বাড়ির গৃহকর্তা আগাইয়া আসিলেন।
আদেল খাঁ দূর হইতেই সালাম দিল, আস্ সালামু আলাইকুম বাই সাব!
গৃহকর্তা উত্তর দিলেন, ওয়া আলাইকুম আস্ সালামাম। কিতা কবর বালা নি?
বাল আছি বাইসাব, আপনাগো দ্যাশে আইলাম কাজ কাম করবার জন্যি। আমাগো দ্যাশে তো দান কাডা শ্যাষ, তাই আরকি।
গৃহকর্তা বললেন, অয় অয় বুজলাম, তা দান তো পাহে নাই। খিতা করতায়? কদ্দিন বাদে আইয়ো।
আদেল খাঁ বলল, তা ঠিক আছে বাইসাব, আমরা না অয় কয়দিন আগেই আইছি। তয় কতা অইল, আমাগো চাইল ফুর্যাইয়া গ্যাছে। যুদি আমাগো কয়সার চাইল দিতেন, এই কয়দিন খাইয়া বাঁচি।
গৃহকর্তা কহিল, ইতা খিতা মাত মাতলায়রে বা! চাউল নিতা আর খাম করতায় না।
আদেল খা বলল, আমরা তো কাম করবারই চাই বাই সাব। আমাগো তয় এডা কাম দ্যান।
এর মধ্যেই আকাশে আবার মেঘ ডাকিয়া উঠিল। সেই শব্দ মনে হইল আকাশে নয় গৃহকর্তার বুকের ভিতর বাজিয়া উঠিল। তাহাকে চিন্তিত দেখাইল। এমনিতেই আজ সকালে একবেলার বৃষ্টিতে নদীর পানি অনেক বাড়িয়া উঠিয়াছে। আবার বৃষ্টি হইলে নিচু জমির ধান তলাইয়া যাইতে পারে। সোনার ধান দেখাইয়া আল্লাহ যেন আবার না নিয়া যায় তাই তিনি মনে মনে কি দোয়া পড়িলেন। অত :পর মোচন মাতুব্বরদের থাকিবার অনুমতি মিলিল। গৃহকর্তা চাউল, ডাউল, মরিচ, তৈল ইত্যাদি দিলেন, আর রান্না করিয়া খাইয়া ঘুমাইয়া পড়িতে বলিলেন। সকালেই নাকি ধান কাটিতে হইবে।
গৃহকর্তা চলিয়া গেলে আদেল খাঁ বলিল, দেখছ! আগে কইল ধান পাঁকে নাই। যহনই আসমানে আবারো মেঘ ডাকল অমনি ধান পাইকা গেল।
সিরাজুদ্দিনকে রান্নায় সাহায্য করিবার উদ্দেশ্য মোচন মাতুব্বর চাউল ধুইতে গিয়া দেখিল চাউল সাদা। সে কহিল, আরে এটা তো আতপ চাউল, ভাত রানবা ক্যামনে?
আদেল খাঁ কহিল, নতুন আইছ তো বুঝবা ক্যামনে? সিলটের মানুষ আলা চাইলের ভাত খায়।
আতপ চাউল রান্না করিয়া দুনিয়ার কোথাও যে কোনো মানুষে ভাত খাইয়া থাকে এই কথা মোচন মাতুব্বর জীবনে শুনেও নাই। তাই সে অবাক হইয়া সিরাজুদ্দিনের মুখের পানে চাহিয়া রহিল।
সকালে যখন নৌকার সবার ঘুম ভাঙ্গিল তখন সূর্য উচু পাহাড়ের পিছন হইতে উঁকি মারিতেছিল। মোচন মাতুব্বরের মনে হইল আর এক ক্রোশ সামনে গেলেই পাহাড় দেখিতে পাইবে। পাহাড় গুলোর ঠিক মাঝখানে একটা খাদ আছে বলিয়া মনে হইল। তবে কি ঐ খাদের ভিতর দিয়াই নদী চলিয়াছে! নৌকা খানা কী দুই পাহাড়ের মাঝখান দিয়া বহিয়া যাইবে?
মোচন মাতুব্বর কৌতুহল বশত: আদেল খাঁ কে ইহা জিজ্ঞাসা করিলে তিনি একগাল হাসিয়া কহিলেন, আরে দুর, ঐ পাহাড় এহেন থিকাও প্রায় একশ মাইল দূরে। তিনি একবার নাকি ঐ পাহাড়ের কাছে গিয়াছিলেন। পাহাড়ের বুকে রাশি রাশি মেঘ ঘন ধোয়ার মতো ঘোরাফেরা করে, আর পাহাড়ের চূড়াগুলো মেঘের উপর দিয়া সগৌরবে দাড়াইয়া থাকে। একটা নয়, দুইটা নয় শত শত পাহাড়। নিচের দিকে ঘন জঙ্গল, তাহার ভিতর বাস করে জংলী মানুষ। পাহাড়ের চূড়ায় কোন গাছ জন্মায় না। সাদা আর লাল পাথর সূর্যের আলো পড়িয়া চকচক করে।
মোচন মাতুব্বর ভাল করিয়া পাহাড় গুলো দেখিতে লাগিল। তাহার মনে ইচ্ছা হইল পাহাড়ের ঐ লাল চূড়ার উপর দাড়াইয়া চারিদিকে যদি একবার তাকাইয়া দেখিতে পারিত!
ছিরা (সিরাজ উদ্দিন) ভাল রান্না করিতে পারে। সকালের নাস্তা করিতে করিতে সকলে তাহারই প্রশংসা করিতে লাগিল। কিছুক্ষনের মধ্যেই চারিদিকে অন্ধকার হইয়া আসিল। পাহাড়গুলো মেঘ হইয়া গিয়াছে, কিংবা মেঘগুলো পাহাড় হইয়া উঠিয়াছে। এখন আর পাহাড়গুলিকে মেঘ হইতে আলাদা করা যাইতেছে না। দেখিতে দেখিতে সারা আকাশ অন্ধকার হইয়া রাত্রি নামিয়া আসিবার উপক্রম হইল। মৃদু ঠান্ডা বাতাসে নৌকা দোলাইতে লাগিল। ভয় পাইয়া তাহারা নৌকাখানি তীরবর্তী একটি হিজল বনে ঢুঁকাইয়া গাছের সহিত বাধিঁয়া রাখিল।
পানির ভিতর হিজল গাছগুলি আঁটো সাঁটো হইয়া দাঁড়াইয়া ছিল। চারিদিকে ঘন জঙ্গল, কোথাও কোন স্থলভাগ দেখা গেল না, কোন ঘরবাড়ি দেখা গেল না। ঝুপ ঝুপ করিয়া বৃষ্টি আরম্ভ হইল। জঙ্গল হইতে নাম না জানা পাখির ডাক শোনা জাইতে লাগিল। একটি কাক অদূরেই গাছের ডালে ভিজিতেছিল। বৃষ্টি থামিবার কোন নাম করিল না। মোচন মাতুব্বর কিছুক্ষন তার দুই মানিক পচা ও ওয়াহাবের কথা ভাবিতে লাগিল। এক সময় অলস দেহে নৌকার ছইয়ের ভিতর সবাই ঘুমাইয়া পড়িল।
ক্ষুধার তাড়নায় যখন তাদের ঘুম ভাঙ্গিল তখনও বৃষ্টি থামে নাই। চাউল ফুরাইয়া আসিয়াছিল তাই সিরাজুদ্দিন রান্নার নাম করিল না। বস্তার ভিতর হইতে মূড়ি বাহির করিয়া খেজুর গুড় দিয়া সবাইকে খাইতে দিল। এক সময় বৃষ্টি থামিয়া চারিদিকে ফর্সা হইয়া উঠিল। এই হেমন্তেও মেঘের আড়াল হইতে বাহির হইতে পারিয়া সূর্য তাহার তেজ দেখাইতে লাগিল। নৌকা খানা জঙ্গলের ভিতর হইতে বাহির হইয়া আবার নদীতে আসিয়া পূর্বদিকে চলিতে লাগিল।
নিকটেই গ্রাম দেখা গেল। গ্রামের ফাঁকে ফাঁকে বিরাট বিরাট হাওড় আর ধানের সমূদ্রের অংশ বিশেষ দেখা যাইতে লাগিল। সবার হৃদয়ে আনন্দের দোলা দিতে লাগিল। কিন্তু সূর্য মামাও আজকের মত বিদায় লইতে চলিয়াছেন। তাই তাড়াতাড়ি নৌকা তীরে ভিড়াইয়া কয়েকজন নামিয়া পাশ্ববর্তী বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হইল। তাহাদের দেখিয়া বাড়ির গৃহকর্তা আগাইয়া আসিলেন।
আদেল খাঁ দূর হইতেই সালাম দিল, আস্ সালামু আলাইকুম বাই সাব!
গৃহকর্তা উত্তর দিলেন, ওয়া আলাইকুম আস্ সালামাম। কিতা কবর বালা নি?
বাল আছি বাইসাব, আপনাগো দ্যাশে আইলাম কাজ কাম করবার জন্যি। আমাগো দ্যাশে তো দান কাডা শ্যাষ, তাই আরকি।
গৃহকর্তা বললেন, অয় অয় বুজলাম, তা দান তো পাহে নাই। খিতা করতায়? কদ্দিন বাদে আইয়ো।
আদেল খাঁ বলল, তা ঠিক আছে বাইসাব, আমরা না অয় কয়দিন আগেই আইছি। তয় কতা অইল, আমাগো চাইল ফুর্যাইয়া গ্যাছে। যুদি আমাগো কয়সার চাইল দিতেন, এই কয়দিন খাইয়া বাঁচি।
গৃহকর্তা কহিল, ইতা খিতা মাত মাতলায়রে বা! চাউল নিতা আর খাম করতায় না।
আদেল খা বলল, আমরা তো কাম করবারই চাই বাই সাব। আমাগো তয় এডা কাম দ্যান।
এর মধ্যেই আকাশে আবার মেঘ ডাকিয়া উঠিল। সেই শব্দ মনে হইল আকাশে নয় গৃহকর্তার বুকের ভিতর বাজিয়া উঠিল। তাহাকে চিন্তিত দেখাইল। এমনিতেই আজ সকালে একবেলার বৃষ্টিতে নদীর পানি অনেক বাড়িয়া উঠিয়াছে। আবার বৃষ্টি হইলে নিচু জমির ধান তলাইয়া যাইতে পারে। সোনার ধান দেখাইয়া আল্লাহ যেন আবার না নিয়া যায় তাই তিনি মনে মনে কি দোয়া পড়িলেন। অত :পর মোচন মাতুব্বরদের থাকিবার অনুমতি মিলিল। গৃহকর্তা চাউল, ডাউল, মরিচ, তৈল ইত্যাদি দিলেন, আর রান্না করিয়া খাইয়া ঘুমাইয়া পড়িতে বলিলেন। সকালেই নাকি ধান কাটিতে হইবে।
গৃহকর্তা চলিয়া গেলে আদেল খাঁ বলিল, দেখছ! আগে কইল ধান পাঁকে নাই। যহনই আসমানে আবারো মেঘ ডাকল অমনি ধান পাইকা গেল।
সিরাজুদ্দিনকে রান্নায় সাহায্য করিবার উদ্দেশ্য মোচন মাতুব্বর চাউল ধুইতে গিয়া দেখিল চাউল সাদা। সে কহিল, আরে এটা তো আতপ চাউল, ভাত রানবা ক্যামনে?
আদেল খাঁ কহিল, নতুন আইছ তো বুঝবা ক্যামনে? সিলটের মানুষ আলা চাইলের ভাত খায়।
আতপ চাউল রান্না করিয়া দুনিয়ার কোথাও যে কোনো মানুষে ভাত খাইয়া থাকে এই কথা মোচন মাতুব্বর জীবনে শুনেও নাই। তাই সে অবাক হইয়া সিরাজুদ্দিনের মুখের পানে চাহিয়া রহিল।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
শামীম ২৪/০৯/২০১৬অত্যন্ত সুন্দর, পরের অধ্যায় গুলো শীঘ্রই পাব আশা করি।
-
পরশ ২৩/০৯/২০১৬ভাল লাগলো
-
আব্দুল মান্নান মল্লিক ২২/০৯/২০১৬খুব ভালো লাগলো.
-
সাইফ রুদাদ ২২/০৯/২০১৬লিখে চলুন, অপেক্ষায়.....
-
স্বপন রোজারিও (মাইকেল) ২২/০৯/২০১৬ভাল লাগলো।
-
সোলাইমান ২২/০৯/২০১৬সুন্দর হয়েছে।