www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

একটি ভালোবাসার গল্প

"তোর সাথে আমার শেষ দেখা হয়েছিল কবে?মনে আছে কিছু?"
নীলু হেসে অভিমানের সুরে উত্তর দিল,"কেন মনে থাকবেনা?আমার বিয়ের দিনই তো শেষ দেখা।শেষ কথা।এতবছর তো তুমি কোনো খোঁজই নিলে না।"

হাসান তার খোঁজখবর নেয় নি,এমনটা নয়।নিয়েছে,বেশ ভালোভাবেই নিয়েছে,কিন্তু নিরবে-নিভৃতে।ব্যর্থ প্রেমিকরা যেভাবে আজীবন পছন্দের মানুষটির খোঁজ রাখে।

হাসান দীর্ঘশ্বাস ফেলল।শরীর ঘামছে।অনেকদিন পর আজ আবার পালপিটেশন শুরু হয়েছে।নীলুকে কোনোভাবেই এসব বুঝতে দেয়া যাবে না।

"নীলু,তোর হাতের এক কাপ চা খাওয়া তো।দেখি,আগের মতোই বানাস কি না!"

নীলু প্রায় দৌড়ে গেল।তার চা বানানোর হাত বেশ ভালো।

হাসান সোফায় বসল।চোখ থেকে চশমা নামিয়ে রাখলো।মাথা প্রচণ্ড ব্যথা করছে।মনে হয় প্রেশার বেড়েছে।মানসিক তীব্র যন্ত্রনা হলে হয়ত মস্তিষ্ক শরীরকেও একটা সিগন্যাল পাঠিয়ে দেয় আর বলে,"আমার যন্ত্রনার ভার তুমিও একটু নাও।"

নীলুদের বসার ঘরটা খুব চমৎকার।সাজানো,গোছানো।দেয়ালে একটা পেইন্টিং।একটা নীল পাখি কোনো একটা গাছের ডালে বসে আছে।
হাসান চারদিক দেখে।তার যন্ত্রনা আরো বাড়ে,নিঃশ্বাস প্রায় বন্ধ হয়ে আসছে।না,এখানে আর থাকা যাবে না।নীলু চা নিয়ে আসার আগেই সে হঠাৎ বাইরের দরোজা দিয়ে বেরিয়ে গেল।

পাঁচ বছর আগে একদিন ঠিক এভাবেই সে নীলুদের বাড়ি থেকে নিরবে বেরিয়ে গিয়েছিল।পার্থক্য শুধু,ওটা ছিল নীলুর বাবার বাড়ি আর এইটা ওর শ্বশুর বাড়ি।

তখন নীলুর বিয়ের কথা চলছিল,হাসান তার সারাজীবনের সব সাহস সঞ্চয় বুকে নিয়ে নীলুদের বাড়ি যায়।যেতেই পারে,চাচাতো বোনের কাছে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।সে আগেও অনেক গিয়েছে,থেকেছে।ছোটবেলায় নীলুর সাথে কত্ত সময় কাটিয়েছে,একসাথে খেলেছে!তার চাচা চাচীও খুব ভালোবাসে তাকে।ছেলের মতো যত্ন করে।হয়ত নিজেদের ছেলে নেই বলেই।
কিন্তু,হাসানের ঐবারের যাওয়ার উদ্দেশ্য ছিল অন্য।তার চাচাকে সরাসরি বলবে নীলুকে বিয়ে করার ব্যাপারে।কিন্তু ভাগ্য তার সহায় ছিলনা।
সবকথা গুছিয়ে বলার আগেই সে জানতে পারে নীলুর পছন্দের ছেলে রবির সাথে ওর বিয়ে ঠিকঠাক প্রায়।বাড়িতে তাই বিয়ের আয়োজনের পূর্ব প্রস্তুতি চলছে।

হাসান নিরবে বেরিয়ে আসে।পথে হাঁটতে থাকে।সে ভাবে,অনেককিছুই ভাবে।নীলুকে সব বলবে।নীলুর জন্য তার আবেগ,উৎকণ্ঠা,ভালোবাসা সব ভেঙে বলবে।নীলু নিশচয়ই তাকে ফিরিয়ে দিবে না।পরেই আবার বুঝতে পেরেছে,নীলুর পছন্দের একজন আছে।তাকে ছেড়ে ওকে কেন মেনে নেবে!।কিন্তু,কি আজব!নীলুর নাকি রবির সাথে কয়েক বছরের সম্পর্কও আছে।হাসান এ ব্যাপারে কিছুই জানেনা।এতদিন তো ও হাসানের সাথে অনেক সময়ই কাটিয়েছে।ভার্সিটিতে পড়ার সময়ও তো একসাথে ঘুরে বেড়িয়েছে।মনের কথা একে অপরকে বলেছে।কিন্তু রবির ব্যাপারে নীলু কখনো কিছু বলেনি।
সেইদিন,সামনের মোড়েই নীলুর সাথে হাসানের শেষ দেখা।হাসান বলে,"ভালো থাকিসরে।তোর বিয়েতে আমি থাকতে পাচ্ছিনা।বাইরে যাচ্ছি।একেবারে পাঁচ বছরের জন্য।এমফিল,পিএইচডি করেই একেবারে আসব।"
নীলুর কাছ থেকে দূরে চলে যাওয়ার এটাই হাসানের সুযোগ।নীলুকে কাছে দেখে কষ্ট পেতে চায়না হাসান।
কিন্তু, নীলুর বিয়েতে হাসানকে থাকতে হলো।হাসান চলে যাবে বলে তার চাচা দু সপ্তাহের মধ্যেই বিয়ের আয়োজন করে ফেলেন।নীলুকে বৌসাজে দেখে যে হাসানের বুকে হাহাকার,ব্যথাময় তীব্র বিষাদ অনুভূতি হলো তা সে ছাড়া আর কেউ জানলনা।জানার কথাও না।নীলুর বিয়ের পরদিনই সে আমেরিকায় চলে গেল।
নীলুর জন্য কষ্ট পাওয়ার বিষয়টি লুকানোর এই চেষ্টাটি তার সফল হয়েছে।নীলুর কাছ থেকে অনেক দূরে চলে যাওয়ার এই চেষ্টার ক্ষেত্রে ভাগ্য তার সহায় ছিল।
এরপর আর কখনো নীলুর সাথে যোগাযোগ করেনি।

আজ পাঁচবছর পর একইভাবে নীলুর বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো হাসান।হাঁটতে পাচ্ছেনা সে।পা দুইটা কেমন যেন শক্ত হয়ে আসছে।হঠাৎ তার ফোনে বাইভ্রেট শুরু হলো।
হাসান রাস্তার পাশে কোনোভাবে দাঁড়িয়ে পকেট থেকে ফোন বের করল।জারার কল।জারা তার স্ত্রী।বাঙালী মেয়ে না,সুইডিশ।চার বছর আগেই তাদের বিয়ে হয়েছে।সুন্দরী হলেও জারাকে মায়াবতী মনে হয়না হাসানের।আসলে জারাকে পুরোপুরি মনের আসনে বসাতেও পারেনি সে।নিছক নীলুর কষ্ট ভুলার জন্য তড়িঘড়ি করে এই বিদেশিনীকে বিয়ে করেছে সে।তবু,জারাকে কিছু বুঝতে দেয়না হাসান।তার জন্য শুধু শুধু অন্য একটা মেয়ে কেন কষ্ট পাবে!

"কোথায় তুমি?তাড়াতাড়ি আসো।"জারা হাসানকে অপটু বাংলায় কিছুটা নেকি সুরে বলল।বিয়ের পর থেকেই বাংলা শিখছে ও,তবুও যে কেনো ভাল করে বলতে পারেনা!

"এইতো আসছি।"
হাসানের যন্ত্রনা কিছুটা কমেছে।তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে হবে।

বাসায় ফিরে হাসান বেশ অবাক হয়েছে।'বেশ'বল্লেও কম বলা হয়।আজ পর্যন্ত মনে হয় সে এতো অবাক ও আশ্চর্য হয়নি।এই প্রথম জারাকে দেখে তার মায়াবতী মনে হয়েছে!
হাসানের মা মনোয়ারা তার ছেলের বউ কে নিজ হাতে সাজাচ্ছেন।একদম বাংলা সাজে।শাড়ি পড়িয়েছেন গাঢ় নীল রঙের।এটা উনারই শাড়ি;বিয়ের পর হাসানের বাবার পক্ষ থেকে প্রথম উপহার ছিল এইটা।সে প্রায় ত্রিশ বছর আগের কথা।

হাসান উদ্ভ্রান্ত সুরে কথা বলার আর কিছু না পেয়ে প্রায় বোকার মতো প্রশ্ন করলো,"মা,ও শাড়ি পেল কোথায়?আর সাজাচ্ছ কেন তুমি?"

"দেখ আমার বউমা কত সুন্দরী!আর কে বলেছে ও বাঙালী না?আজকে থেকে ও বাঙালি।"
হাসানকে কাছে টেনে নিয়ে আবার বললেন,"ভালো করে দেখ তো।কোথাও ভুল হলো কি না!"

হাসান অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে জারার দিকে।এতোদিন এতরুপ কোথায় ছিল জারার? নীল শাড়ি পরা খাটো চুল আর অপরুপ চাহনির এই মেয়েকে যেন হাসান আজই প্রথম দেখলো।সৃষ্টিকর্তা এ পৃথিবীতে এত মায়া আর রুপ কেন দিয়েছেন,কে জানে!

জারা মুচকি হেসে বল্লো,"কি দেখ অমন করে?"
হাসান কিছু বলে না।একমুহূর্তের জন্য তার সব কেমন যেন অন্যরকম হয়ে যায়।তার সমগ্র ইন্দ্রিয়ব্যাপী একটা শিহরন,অনুভূতি বয়।সে যেন জীবনে নতুন কিছু খুঁজে পায়।তার চোখে আনন্দ কিংবা সুখের পানি আসে যা আগে কখনো হয়নি।
হাসান নিজেকে আড়াল করতে দক্ষিনের বারান্দাটায় চলে যায়।

"মা,তুমি আজ থেকে শাড়িই পরবা সবসময়।ও,আবার ওখানে গেলে তো পরা যাবেনা..."

"এই হাসান,এইদিকে আয়।বৌমা কে নিয়ে কোথাও ঘুরে আয় তো।উফ!কি যে সুন্দর লাগছে আমার মা টাকে,দেখিস কারো নজর যেন না লাগে।"
মনোয়ারা তার ছেলের বৌয়ের কপালে আদরের চুমো এঁকে দেয়।

হাসান পেছনে তাকিয়ে আড়চোখে দেখল জারা মুখ নিচু করে অসম্ভব সুন্দরভাবে মিষ্টি হাসছে।

অনেক বছর আগে নীলুও হাসানের সাথে বেড়াতে যাওয়ার সময় ঠিক এমনভাবে হাসছিল।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৪৮৯ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৩/০৫/২০২০

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast