আত্মহত্যা
আমরা সবাই একা, আমাদের এই স্বার্থের রাজত্বে। কারও সময় নেই অন্যের জন্য সময় ব্যয় করবার। কারন সময় তো সবচেয়ে মূল্যবান। তবে কি মূল্যমানে জীবনকে পেছনে ফেললো সময়.? চাহিদা আর সময়ের দৌড়ে কি জীবন তুচ্ছ হয়ে যাচ্ছে.? ভাবায়।
বলিউডের সফল নায়ক সুশান্ত সিং রাজপুতের আত্মহত্যার সংবাদ তেমনি ভাবালো। ভারতের লক্ষ লক্ষ ইঞ্জিনিয়ার হতে চাওয়া ছেলেমেয়েদের মধ্যে সুশান্ত সিং অল ইন্ডিয়া ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ট্রান্স এক্সাম-এ র্যাঙ্ক করেছিলেন সাত। ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ফিজিক্স অলিম্পিয়াডে এই রাজপুত ভারতের সকল মেধাবী প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের পেছনে ফেলে বিজয়ী হয়েছিলেন।
এত সফলতা এবং ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা ছেড়ে একদিন মাঝপথে ইঞ্জিনিয়ারিং এর পড়াশোনা ছুটি দিয়ে ছুটেছেন অভিনেতা হওয়ার স্বপ্নপূরণের। হয়েছেন চরম সফলও। কতটা স্বপ্নবাজ মানুষ। কতটা মানসিক দৃঢ়তা। আত্মহত্যা নাকি হত্যা বিষয়টি আশাকরছি পুলিশ খতিয়ে দেখছেন, তবুও এখন পর্যন্ত আত্মহত্যাই সত্য। কিন্তু কেন.? আত্মহত্যা.!
"ছিছোরি" মুভিতে নিজের ছেলে যখন পরীক্ষায় ফেল করে সুইসাইড করার চেস্টা কোরছিল, তখন তিনিই বুঝিয়েছিলেন 'ব্যর্থ' হওয়া মানেই শেষ হওয়া না। সেই সুশান্ত সিং রাজপুত.! বিশ্বাস করা কঠিন। আসলেই কেন.?
চারপাশে কত মানুষ, কত মাধ্যম, কত উপকরন তারপরও হয়ত কেউ একাই থাকে যান। আসলে মনের সময়ে, অসময়ের রহস্যময়তাকে নিজের মত করে জয় করে নিতে হয় মনকেই। রঙিন পৃথিবীতে মনের রঙ জিয়িয়ে রাখতে পারা বেঁচে থাকার অবলম্বন। আবার একটা মানুষের ভিতরে কতটা চাপা কষ্ট জেগে থাকলে সে মৃত্যুকে আগলে নেয় সেটা এই রঙিন পৃথিবীর বুঝে ওঠা জরুরী।
বাহ্যিক কারন যাই হোক মানুষিক ভাবে শক্তি হারিয়ে ফেলা বা অবলম্বন শুন্যতাই আত্মহননে মূল কারন। ডিপ্রেশন। ডিপ্রেশন এমন এক মানসিক ব্যাধি যা একজন মানুষকে সবার অজান্তে তিলে তিলে শেষ করে ফেলে।
অবশ্য এখানে সমাজ একটা মুখ্য ভূমিকা পালন করে। সমাজ সবকিছু খুব নির্দিষ্ট করে দিতে অভ্যস্ত। সময়, পরিস্থিতি বা বাস্তবতায় ব্যাক্তির সত্যতা কেউ বোঝে না বা মানতে রাজি না। কখন কোনটিকে ব্যর্থতা বলবো বা সফলতা বলবো না সেটা নির্ধারণ করে আসছে পরিবার ও সমাজ। আর সেখানে সমষ্টি ভাবনা যতটা শক্তিধর, ততটাই উপেক্ষিত ব্যাক্তি ভাবনা। দুর্ভাগ্যটা এইখানেই।
বাবা-মা সন্তানকে জানিয়ে দিচ্ছে, "তুমি যদি অন্তত ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে চান্স না পাও তাহলে আমাদের বেঁচে থাকা মূল্যহীন। আমরা সমাজে মুখ দেখাবো কি করে।" সন্তানের হয়ত কোন এক স্বপ্ন ছিল, যা সে কেনদিন কাউকে বলতেই পারেনি। তার উপর চাপিয়ে দেয়া বোঝাও তুলতে পারেনি। এদিকে বাবা-মা তাদের স্বপ্নের গল্পে বেঁচে আছে, সাথে যুক্ত করে রেখেছে সমাজকে। এক সময় সন্তানটি চাপ সইতে না পেরে আত্মহত্যাকে বেছে নিল, আর ঐ পরিবার বা সমাজ জানলোই না এই হত্যার দায় তাদের। আবার উল্টোটিও হয়। বাবা-মায়ের হয়তো স্মার্টফোন কেনারই সামর্থ্য নেই। কিন্তু স্কুলের সব বন্ধুরা যেহেতু গাড়ি নিয়ে আসে, সেজন্যে হতাশ হয়ে সন্তানটিও ভুল কোন সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে।
আবার একই অফিসে সহকর্মী হয়ত টয়োটা দিয়ে যাতায়াত করে। তিনি চলাচল করেন বাসে। এমন বাস্তবতায় পরিবার ও সমাজের ব্যর্থতার মোহরের যে গঞ্জনা সেই হতাশাও বিপদগামী করে। আমাদের দেশে মরজিনা'কে না পেয়ে মফিজ আত্মহত্যা করে বসে। লোক লজ্জার ভয়ে ধর্ষনে শিকার মেয়েটি আত্মহত্যা করে বসে। পাপ-বোধে ভুগে কোন ধর্ষক বা ইভ-টিজার আত্মহত্যা করতে শোনা যায় না। তবে কেন সমাজের ভয়ে নিজেকে জীবন দিতে হবে। কি আজব বিষয়, যে সমাজ আমার ব্যাথার অংশিদার নয়, তার উত্তেজনায় আমার অনুশোচনা।
আমরা নিজের অজান্তে সমাজকে সাফল্য বা সুখের মানদন্ড তৈরী করতে দিয়েছি। কিন্তু জীবন তো নিজের। আমার জল অন্যের কাঠ মাপার যন্ত্রে কেন পরিমাপ করা.? বিয়ে, জন্মদিন এমনকি কুলখানি অনুষ্ঠান আড়ম্বরপূর্ণ হতে হবে। কারন সমাজ আছে না.!
আজকাল চারপাশের মানুষগুলো সব ব্যস্ত। অনেক সময় কেউ একজন মনোযোগ আর সহমর্মিতা নিয়ে কথাগুলো শুনলে ভালোলেগে। জীবনটাকে অর্থবহ বলে মনে হয়। সেটা হয় না বলেই আমরা বেছে নিয়েছি সোস্যাল স্পেসকে। সেখানে তো আর এক দৈন্যতা। প্রতিটি ভাবনাকে মাপা হবে সফলতা-ব্যর্থতার মানদন্ডে। তৈরী থাকতে হবে সেকেন্ড-অপিনিয়নের জন্য। ধরুন, কারো পশ্চাৎদেশে ফোঁড়া উঠেছে। করোনার কারনে সে ডাক্তারের কাছে যেতে পারছে না। খুবই বিমর্ষ হয়েই একটা স্ট্যাটাস দিল। কেউ একজন বলবেন, "এত বড় একজন স্টার মারা গেল, করোনায় কতো লোক মারা যাচ্ছে আর তুই আছস তোর ফোঁড়া নিয়া।" আবার ফোঁড়া এমনিতেও রোগদের মধ্যে নীচু জাতের, মানে ফকিন্নিদের হবে। আর 'জাজমেন্টাল' কমেন্ট তো থাকবেই। কেউ যদি খুব সাহস করে Erectile Dysfunction জনিত হতাশা নিয়ে স্ট্যাটাস দেয়- তার বন্ধুরাই লিখবে, 'ভাবীকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিস'। আমরা আমাদের কষ্টকে শেয়ার করতে পারি না কখনই। একদম স্কুল থেকেই শুরু হওয়া নষ্ট প্রতিযোগিতার শিক্ষা আজ খুব স্বার্থপরতা আর হীনমন্নতায় ছেয়ে যাচ্ছে মস্তিষ্কগুলো।
গবেষণায় বলে, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রতি লাখে ৩৯ দশমিক ৬ জন আত্মহত্যা করে। বিশ্বময় ছেলেদের আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি হলেও বাংলাদেশে বিষয়টি উল্টো, নারীদের মঝে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। গবেষণায় আরও দেখা যায়, পারিবারিক সমস্যা (৪১.২%), পরীক্ষায় অকৃতকার্য (১১.৮%), বৈবাহিক সমস্যা (১১.৮%), প্রেমের ব্যর্থতা (১১.৮%), বিবাহবহির্ভূত গর্ভধারণ ও যৌন সম্পর্ক (১১.৮%), স্বামীর নির্যাতন (৫.৯%) এবং অর্থকষ্ট (৫.৯%) থেকে মুক্তির পথ হিসাবে আত্মহত্যাকে বেছে নেয়।
পৃথিবীময় বছরে প্রায় আট লাখ মানুষ আত্মহত্যা করে। অর্থাৎ প্রতি ৪০ সেকেন্ডে ১ জন মানুষ আত্মহত্যা করছেন। বিশ্বে খুব কম যুদ্ধ আছে যেখানে এত মানুষ মারা যায়।
গবেষণা আরও বলে, বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ত্রিশ কোটি ডিপ্রেশনের রোগী আছে। এমনকি প্রতি ৫ জনের ১ জন মানুষ কোনো না কোনো ধরনের ডিপ্রেশন বা এনজাইটিতে ভোগেন। ডিপ্রেশনের ভয়াবহ দিকটি হচ্ছে- এটা একজনকে সবার অগোচরে নীরবে-নিভৃতে শেষ করে দেয়। সবশেষে নিজের অজান্তে আত্মহত্যা করে বসেন। এমনকি বিশ্বের ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণ-তরুণীদের মৃত্যুর প্রধান কারন ডিপ্রেশন জনিত আত্মহত্যা।
বাংলাদেশের শতকরা ১৮ থেকে ২০ ভাগ মানুষ কোনো না কোনো প্রকারের ডিপ্রেশন ভুগছেন। পরিবারের অন্যরা হয়তো জানেই না বা এটাকে সমস্যা ভাবছেনই না। ডিপ্রেশন থেকে ডায়াবেটিস ও হাইপ্রেশার হয়ে থাকে। তখন হয়ত সেটার চিকিৎসা হচ্ছে।
বিশ্বে বহু বিখ্যাত মানুষ ডিপ্রেশনের রোগী ছিলেন। তাদের মধ্যে চাঁদে ভ্রমণকারী এডুইন অলড্রিন, প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন, সাহিত্যিক আর্নেস্ট হেমিংওয়ে, উইস্টন চার্চিল, বিখ্যাত "হেরি পোর্টার" এর লিখিকা জে কে রওলিং, গ্রেমি এওয়ার্ড খেতাব প্রাপ্ত গায়িকা শেরিল ক্রো, যুক্তরাস্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোরের স্ত্রী'।
মার্কিন নভোচারী অলড্রিনের দাদি ও ডিপ্রেশনের রোগী ছিলেন এবং তিনি আত্মহত্যা করেন। হেরি পোর্টারের লেখিকা রো'লিং ডিপ্রেশনের জন্য মাঝেমধ্যে আত্মহত্যার কথা ভাবতেন।
ডিপ্রেশনের মানুষ আত্মহত্যা করেন বেঁচে থাকার কোন অর্থ খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয়ে। একটু সহমর্মিতা, একটু মানুষিক সাপোর্ট একটা জীবনকে ফুটিয়ে তুলতে পারে। একটা জীবনের সাথে জরিয়ে অনেক স্বপ্ন আরও অনেকগুলো জীবন।
বলিউডের সফল নায়ক সুশান্ত সিং রাজপুতের আত্মহত্যার সংবাদ তেমনি ভাবালো। ভারতের লক্ষ লক্ষ ইঞ্জিনিয়ার হতে চাওয়া ছেলেমেয়েদের মধ্যে সুশান্ত সিং অল ইন্ডিয়া ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ট্রান্স এক্সাম-এ র্যাঙ্ক করেছিলেন সাত। ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ফিজিক্স অলিম্পিয়াডে এই রাজপুত ভারতের সকল মেধাবী প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের পেছনে ফেলে বিজয়ী হয়েছিলেন।
এত সফলতা এবং ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা ছেড়ে একদিন মাঝপথে ইঞ্জিনিয়ারিং এর পড়াশোনা ছুটি দিয়ে ছুটেছেন অভিনেতা হওয়ার স্বপ্নপূরণের। হয়েছেন চরম সফলও। কতটা স্বপ্নবাজ মানুষ। কতটা মানসিক দৃঢ়তা। আত্মহত্যা নাকি হত্যা বিষয়টি আশাকরছি পুলিশ খতিয়ে দেখছেন, তবুও এখন পর্যন্ত আত্মহত্যাই সত্য। কিন্তু কেন.? আত্মহত্যা.!
"ছিছোরি" মুভিতে নিজের ছেলে যখন পরীক্ষায় ফেল করে সুইসাইড করার চেস্টা কোরছিল, তখন তিনিই বুঝিয়েছিলেন 'ব্যর্থ' হওয়া মানেই শেষ হওয়া না। সেই সুশান্ত সিং রাজপুত.! বিশ্বাস করা কঠিন। আসলেই কেন.?
চারপাশে কত মানুষ, কত মাধ্যম, কত উপকরন তারপরও হয়ত কেউ একাই থাকে যান। আসলে মনের সময়ে, অসময়ের রহস্যময়তাকে নিজের মত করে জয় করে নিতে হয় মনকেই। রঙিন পৃথিবীতে মনের রঙ জিয়িয়ে রাখতে পারা বেঁচে থাকার অবলম্বন। আবার একটা মানুষের ভিতরে কতটা চাপা কষ্ট জেগে থাকলে সে মৃত্যুকে আগলে নেয় সেটা এই রঙিন পৃথিবীর বুঝে ওঠা জরুরী।
বাহ্যিক কারন যাই হোক মানুষিক ভাবে শক্তি হারিয়ে ফেলা বা অবলম্বন শুন্যতাই আত্মহননে মূল কারন। ডিপ্রেশন। ডিপ্রেশন এমন এক মানসিক ব্যাধি যা একজন মানুষকে সবার অজান্তে তিলে তিলে শেষ করে ফেলে।
অবশ্য এখানে সমাজ একটা মুখ্য ভূমিকা পালন করে। সমাজ সবকিছু খুব নির্দিষ্ট করে দিতে অভ্যস্ত। সময়, পরিস্থিতি বা বাস্তবতায় ব্যাক্তির সত্যতা কেউ বোঝে না বা মানতে রাজি না। কখন কোনটিকে ব্যর্থতা বলবো বা সফলতা বলবো না সেটা নির্ধারণ করে আসছে পরিবার ও সমাজ। আর সেখানে সমষ্টি ভাবনা যতটা শক্তিধর, ততটাই উপেক্ষিত ব্যাক্তি ভাবনা। দুর্ভাগ্যটা এইখানেই।
বাবা-মা সন্তানকে জানিয়ে দিচ্ছে, "তুমি যদি অন্তত ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে চান্স না পাও তাহলে আমাদের বেঁচে থাকা মূল্যহীন। আমরা সমাজে মুখ দেখাবো কি করে।" সন্তানের হয়ত কোন এক স্বপ্ন ছিল, যা সে কেনদিন কাউকে বলতেই পারেনি। তার উপর চাপিয়ে দেয়া বোঝাও তুলতে পারেনি। এদিকে বাবা-মা তাদের স্বপ্নের গল্পে বেঁচে আছে, সাথে যুক্ত করে রেখেছে সমাজকে। এক সময় সন্তানটি চাপ সইতে না পেরে আত্মহত্যাকে বেছে নিল, আর ঐ পরিবার বা সমাজ জানলোই না এই হত্যার দায় তাদের। আবার উল্টোটিও হয়। বাবা-মায়ের হয়তো স্মার্টফোন কেনারই সামর্থ্য নেই। কিন্তু স্কুলের সব বন্ধুরা যেহেতু গাড়ি নিয়ে আসে, সেজন্যে হতাশ হয়ে সন্তানটিও ভুল কোন সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে।
আবার একই অফিসে সহকর্মী হয়ত টয়োটা দিয়ে যাতায়াত করে। তিনি চলাচল করেন বাসে। এমন বাস্তবতায় পরিবার ও সমাজের ব্যর্থতার মোহরের যে গঞ্জনা সেই হতাশাও বিপদগামী করে। আমাদের দেশে মরজিনা'কে না পেয়ে মফিজ আত্মহত্যা করে বসে। লোক লজ্জার ভয়ে ধর্ষনে শিকার মেয়েটি আত্মহত্যা করে বসে। পাপ-বোধে ভুগে কোন ধর্ষক বা ইভ-টিজার আত্মহত্যা করতে শোনা যায় না। তবে কেন সমাজের ভয়ে নিজেকে জীবন দিতে হবে। কি আজব বিষয়, যে সমাজ আমার ব্যাথার অংশিদার নয়, তার উত্তেজনায় আমার অনুশোচনা।
আমরা নিজের অজান্তে সমাজকে সাফল্য বা সুখের মানদন্ড তৈরী করতে দিয়েছি। কিন্তু জীবন তো নিজের। আমার জল অন্যের কাঠ মাপার যন্ত্রে কেন পরিমাপ করা.? বিয়ে, জন্মদিন এমনকি কুলখানি অনুষ্ঠান আড়ম্বরপূর্ণ হতে হবে। কারন সমাজ আছে না.!
আজকাল চারপাশের মানুষগুলো সব ব্যস্ত। অনেক সময় কেউ একজন মনোযোগ আর সহমর্মিতা নিয়ে কথাগুলো শুনলে ভালোলেগে। জীবনটাকে অর্থবহ বলে মনে হয়। সেটা হয় না বলেই আমরা বেছে নিয়েছি সোস্যাল স্পেসকে। সেখানে তো আর এক দৈন্যতা। প্রতিটি ভাবনাকে মাপা হবে সফলতা-ব্যর্থতার মানদন্ডে। তৈরী থাকতে হবে সেকেন্ড-অপিনিয়নের জন্য। ধরুন, কারো পশ্চাৎদেশে ফোঁড়া উঠেছে। করোনার কারনে সে ডাক্তারের কাছে যেতে পারছে না। খুবই বিমর্ষ হয়েই একটা স্ট্যাটাস দিল। কেউ একজন বলবেন, "এত বড় একজন স্টার মারা গেল, করোনায় কতো লোক মারা যাচ্ছে আর তুই আছস তোর ফোঁড়া নিয়া।" আবার ফোঁড়া এমনিতেও রোগদের মধ্যে নীচু জাতের, মানে ফকিন্নিদের হবে। আর 'জাজমেন্টাল' কমেন্ট তো থাকবেই। কেউ যদি খুব সাহস করে Erectile Dysfunction জনিত হতাশা নিয়ে স্ট্যাটাস দেয়- তার বন্ধুরাই লিখবে, 'ভাবীকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিস'। আমরা আমাদের কষ্টকে শেয়ার করতে পারি না কখনই। একদম স্কুল থেকেই শুরু হওয়া নষ্ট প্রতিযোগিতার শিক্ষা আজ খুব স্বার্থপরতা আর হীনমন্নতায় ছেয়ে যাচ্ছে মস্তিষ্কগুলো।
গবেষণায় বলে, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রতি লাখে ৩৯ দশমিক ৬ জন আত্মহত্যা করে। বিশ্বময় ছেলেদের আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি হলেও বাংলাদেশে বিষয়টি উল্টো, নারীদের মঝে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। গবেষণায় আরও দেখা যায়, পারিবারিক সমস্যা (৪১.২%), পরীক্ষায় অকৃতকার্য (১১.৮%), বৈবাহিক সমস্যা (১১.৮%), প্রেমের ব্যর্থতা (১১.৮%), বিবাহবহির্ভূত গর্ভধারণ ও যৌন সম্পর্ক (১১.৮%), স্বামীর নির্যাতন (৫.৯%) এবং অর্থকষ্ট (৫.৯%) থেকে মুক্তির পথ হিসাবে আত্মহত্যাকে বেছে নেয়।
পৃথিবীময় বছরে প্রায় আট লাখ মানুষ আত্মহত্যা করে। অর্থাৎ প্রতি ৪০ সেকেন্ডে ১ জন মানুষ আত্মহত্যা করছেন। বিশ্বে খুব কম যুদ্ধ আছে যেখানে এত মানুষ মারা যায়।
গবেষণা আরও বলে, বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ত্রিশ কোটি ডিপ্রেশনের রোগী আছে। এমনকি প্রতি ৫ জনের ১ জন মানুষ কোনো না কোনো ধরনের ডিপ্রেশন বা এনজাইটিতে ভোগেন। ডিপ্রেশনের ভয়াবহ দিকটি হচ্ছে- এটা একজনকে সবার অগোচরে নীরবে-নিভৃতে শেষ করে দেয়। সবশেষে নিজের অজান্তে আত্মহত্যা করে বসেন। এমনকি বিশ্বের ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণ-তরুণীদের মৃত্যুর প্রধান কারন ডিপ্রেশন জনিত আত্মহত্যা।
বাংলাদেশের শতকরা ১৮ থেকে ২০ ভাগ মানুষ কোনো না কোনো প্রকারের ডিপ্রেশন ভুগছেন। পরিবারের অন্যরা হয়তো জানেই না বা এটাকে সমস্যা ভাবছেনই না। ডিপ্রেশন থেকে ডায়াবেটিস ও হাইপ্রেশার হয়ে থাকে। তখন হয়ত সেটার চিকিৎসা হচ্ছে।
বিশ্বে বহু বিখ্যাত মানুষ ডিপ্রেশনের রোগী ছিলেন। তাদের মধ্যে চাঁদে ভ্রমণকারী এডুইন অলড্রিন, প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন, সাহিত্যিক আর্নেস্ট হেমিংওয়ে, উইস্টন চার্চিল, বিখ্যাত "হেরি পোর্টার" এর লিখিকা জে কে রওলিং, গ্রেমি এওয়ার্ড খেতাব প্রাপ্ত গায়িকা শেরিল ক্রো, যুক্তরাস্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোরের স্ত্রী'।
মার্কিন নভোচারী অলড্রিনের দাদি ও ডিপ্রেশনের রোগী ছিলেন এবং তিনি আত্মহত্যা করেন। হেরি পোর্টারের লেখিকা রো'লিং ডিপ্রেশনের জন্য মাঝেমধ্যে আত্মহত্যার কথা ভাবতেন।
ডিপ্রেশনের মানুষ আত্মহত্যা করেন বেঁচে থাকার কোন অর্থ খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয়ে। একটু সহমর্মিতা, একটু মানুষিক সাপোর্ট একটা জীবনকে ফুটিয়ে তুলতে পারে। একটা জীবনের সাথে জরিয়ে অনেক স্বপ্ন আরও অনেকগুলো জীবন।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
মহিউদ্দিন রমজান ৩০/০৬/২০২০ভালো বলেছেন
-
রেদোয়ান আহমেদ ২১/০৬/২০২০সত্যিই এই ভুত ঘাড় থেকে সরানো উচিত।
-
Md. Rayhan Kazi ২০/০৬/২০২০অসাধারণ লিখনি
-
জানবক্স খান ১৯/০৬/২০২০খুব সুন্দর লিখেছেন। চোখে জল এসে গেল।
জানি না কবে এত সমস্যার সমাধান হবে। -
গোলাম কিবরিয়া সৌখিন ১৭/০৬/২০২০গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে লিখেছেন। ধন্যবাদ
-
স্বপন রোজারিও (মাইকেল) ১৬/০৬/২০২০আত্মহত্যা মহাপাপ।
-
পি পি আলী আকবর ১৬/০৬/২০২০সুন্দর লেখা
-
ফয়জুল মহী ১৫/০৬/২০২০চমৎকার লেখা । ।