অভিশপ্ত হার (শেষ পর্ব )
দুপুর প্রায় দুটো বেজে গেলো এইসব করতে করতে. আর ফোন এলো না. মা মাত্র চান করে আসলো. খেতে ডাকলো. আমি ডাইনিং টেবিল এ বসে মাকে বললাম ফোন এর কথা. মা বললো "তুই জিজ্ঞেস করলি না, আপনি কে?" আমি বললাম, "সুযোগ পেলাম কি?" আমি বললাম কোরিয়ার এ আসা হলুদ খামের কথা. মা বললো, "কোথ্যেকে এসেছে?" আমি আঁতকে উঠলাম. ভাবলাম, "ইশ, এইটা তো খেয়াল করি নি". তাড়াতাড়ি চেয়ার ছেড়ে উঠে গেলাম. খামটা হাতে নিয়ে দেখলাম, না! কিছু লিখা নেই. শুধু আমার এড্রেস আর আমার ফোন নম্বর. মনে করার চেষ্টা করলাম কোরিয়ার ডেলিভারির ছেলেটার ড্রেস. "হ্যান. সেতো মনে হচ্ছে ডিটি ডিসি থেকেই এসেছিলো. কিন্তু ফ্রম এড্রেস নেই কেন?" সব কেমন গুলিয়ে গেলো. মা ডাকছে, "কি রে তোর কি হয়. বলতো? কি ভাবিস? ব্যাড দে খাম খুলে দেখ কি দিয়েছে? এতো ভাবছিস কি?" সত্যি, মা কত সরল, কিছুতেই কোনো নেগেটিভ দেখে না. যাই হোক আমি লাঞ্চ সেরে আবার টেবিল এর কাছে এলাম. খামটা হাতে নিয়ে ভাবছি খুলবো কিনা. ভালো করে হাতিয়ে উপলব্ধি করার চেষ্টা করলাম, কি থাকতে পারে, না! কিছু বুঝলাম না. কৌতূহল আটকাতে না পেরে খামটা খুলেই ফেললাম. দেখলাম বড়ো একটা সাদা কাগজ, কিছু লিখা নেই. পাশে একটা চিরকুট মতো আছে. সেটাতে লিখা আছে, "কাগজে জল ঢেলে দাও". বৃষ্টিও ততক্ষনে থেমে গেছে. আমি জানালা খুলে বাইরেটা ভালো করে দেখলাম. সব স্বাভাবিকই আছে. কোথাও কোনো বিপদের গন্ধ নেই. মনে সাহস পেলাম. সত্যি সত্যি কাগজে জল ঢেলে দিলাম. দেখি কয়েকটি ইংরেজি অক্ষর ভেসে উঠলো. সেটা হলো অনেকটা এইরকম, "DDCINo?UORNeLc 2DNBKR 🌼." আমি অনেকটাই আজব বনে গেলাম. এইটার মানে কি? দৌড়ে মাকে গিয়ে দেখতে যাচ্ছি, "না! দেখাবো না, যদি চিন্তা করে?" আমি কাগজটা নিয়ে শুয়ে পড়লাম. বার বার পড়তে লাগলাম. কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না. হটাৎ একটু খটকা লাগলো. বিকেল প্রায় ৫ টা বাজে. ঘুম ভেঙে গেলো. কখন ঘুমিয়ে গেছি টেরই পাই নি. বাবা আসার সময় হয়ে গেছে. কাগজের কথা মনে পড়লো. তাড়াতাড়ি করে মুখ ধুয়ে আমি মাকে বললাম, "মা, আমি আর কিছু এখন খাবো না, মামার বাড়ি যাবো". মা বললো, "সে কিরে কথা নেই, বার্তা নেই, এখন তুই এয়ারপোর্টের কাছে যাবি? একা একা? মাথা খারাপ নাকি?" আমি বললাম না যেতেই হবে. "চিন্তা করো না মা, প্রদীপ দার অটো করে চলে যাবো, দুই দিন থেকে আসি".
". মা অগত্যা আর কিছু বললো না. আমার যাবতীয় জিনিসপত্র গেস্ট রুমেই থাকে. তাই, তাড়াতাড়ি গেস্ট রুম এ গিয়ে, আলমারি
খুলে, আমার প্রিয় প্রিয় সাজার জিনিস পরে, সুন্দর চুড়িদার পরে রেডি হয়ে গেলাম. ইতিমধ্যে বাবা এসে গেছে. বাবাকে আর এতো বর্ণনা না দিয়ে, পারমিশন নিয়ে প্রদীপ দার অটো করে মামা বাড়ি চলে গেলাম. এখন পর্যন্ত সব ঠিক ঠাক আছে. মামা বাড়িতে রাত্রিবেলা প্রচুর মজা করলাম. ঘুমাতে ঘুমাতে রাত ১ টা. পরদিন সকালে ঘুম ভাঙলো ছোট মাসির চিৎকারে. "এই, স্নেহা, তাড়াতাড়ি ওঠ!! দেখ তোর মা ফোন করেছে. তোদের বাড়ি নাকি রাত্রিবেলা কেউ গেস্ট রুম তছনছ করে গেছে.কিন্তু কিছু নেই নি. তোর মা খুব ভয় পেয়ে গেছে রে." আমি ধড়ফড়িয়ে উঠে গেলাম. সকাল তখন ৬ টা বাজে. ছোট মাসি সেই মেয়েলোকি প্রথা মেনেই হায় হায় করতে লাগলো. চোখের জল পড়তে লাগলো. আমি এক দৌড়ে ব্যাগ থেকে কাগজ টা হাতে নিলাম. ভাবলাম, "যা ভেবেছি ঠিকই ভেবেছি বোধ হয় ". আমার ভীষণ নিশাদের কথা মনে হলো. আজ প্রায় দু বছর হবে নিশাদ আমায় ছেড়ে চলে গেছে. কি যে ব্যামো হলো নিশাদের, রোগ ধরাই পড়লো না. আয়নায় দাঁড়িয়ে গলায় পড়া সেই নিশাদের দেওয়া নেকলেস টার দিকে তাকিয়ে রইলাম. কত কথা মনে হতে লাগলো. একসাথে দুজনাতে মিলে সেই "মানস" জুয়েলারিতে যাওয়া. ম্যারেজ ডে তে এই হারটা নিশাদ আমায় উপহার দিয়েছিলো. দোকানের মালিকের সাথে কি বিষম ঝগড়া হয়েছিল, হারটা কেনার সময়. নিশাদ আমায় হারটা দিয়ে বলেছিলো, "স্নেহা এইটা আমার ভালোবাসা, সাবধানে রেখো." বড়ো মামা আমায় ডাকলেন. আমি গেলাম, বললেন, "স্নেহা, তোর একবার বাড়ি যাওয়া উচিত. পরে আবার আসিস, সব যদি ঠিক থাকে." আমি আর না করলাম না. আমি হাত মুখ ধুয়ে তৈরী হতে লাগলাম. ঠিক সেই মুহূর্তেই ফোন বেজে উঠলো. "হ্যান, সেই ল্যান্ড লাইন নম্বর". ফোন তুলে হ্যালো বললাম. "কি দিদি, কয়দিন বাচাইবেন?" ব্যাস, কিছু বলতে যাবো, "ট্যাঁ...ট্যাঁ. লাইন কেটে গেলো. আমি আর ধার ধারলাম না. রেডি হয়ে একটা অটো করে বাড়ি ফিরে আসলাম. ঘরে ঢুকতেও পারিনি, মা চিৎকার করে বলতে লাগলো, "কি রে স্নেহা, কার দৃষ্টি পড়লো আমার বাড়ি? কে করলো? তুই হঠাৎ চলে গেলি কেন? রাতে তো টের পাই নি। সকালে মাসি ঝাড়ু দিতে গিয়ে চিতকার করে ডাকল।" বাবা তো পুরো ফায়ারিং করলেন. বললেন "কি রে ফোনের কথা, খামের কথা কিছুই বললি না, মন উঠলো, মামা বাড়ি চলে গেলি, তোর যদি কিছু হতো, তাহলে আমরা কি করতাম? তা, ফোন আর খামের সাথে এই চুরীর চেষ্টার কি কোন যোগাযোগ আছে?" আমি খুব স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দিলাম, "বাবা, আমি কিছু জানি না।" বাবা আর কথা বাড়ালেন না। আমি ব্যাগ রেখেই দৌড়ে গেলাম গেস্ট রুম এ । সব তছ হয়ে আছে। খুব ভালো করে খুঁটিয়ে দেখার চেষ্টা করলাম. দেখলাম আলমারির লকার টাও ভাঙা . হঠাৎ মনে হল, বিছানার নীচে পঞ্চাশ হাজার টাকা ছিল। বুঝলাম বেটা বা বেটারা ধরেছে, কিন্তু নেয় নি। বড় অবাক হলাম। "উদ্দেশ্য কি? আমি যা ভাবছি, বুঝছি, তাই?
ঘরের মেঝেতে আমার চার পাঁচটা শাড়ি পড়েছিল . এগুলি তুলতেই দেখি আরেকটা চিরকুট , কিন্তু কিছু লিখা নেই. আমি গতকালের কথা মনে করে জল ঢেলে দিলাম . দেখলাম দশ , বারোটা ইংরেজি অক্ষর । অনেকটা এইরকম , "KELO. UNo . AME NKLS NABO . B RD. A T MGK LKT" যা বুঝার বুঝলাম. ঠিক না ভুল জানি না। ঘর থেকে বেরিয়ে গেলাম. সোজা বাবাকে গিয়ে বললাম, "বাবা অরিজিৎ আনকল কে খবর দাও". বাবা বললেন, "কেন, কিছু নিয়েছে নাকি? তাহলে পুলিশ কেন?" আমি বললাম, "না নেয় নি, তবে আমার কথা আছে. ডাকলেই ভালো হবে. নইলে অনভিপ্রেত কিছু হতে পারে।" আমি মাদের বেড রুমে গিয়ে একটু একাকী ভাবতে লাগলাম। নিশাদের বন্ধু অমিতের কথা মনে হল। কাল একবার অমিতের বাড়ি যাব। ওর সাংকেতিক শব্দ খুব ভাল বুঝে। দেখি যদি কিছু জট খোলে। আজ সারাদিন আকাশ কেমন যেন গুমরা হয়ে আছে. বৃষ্টি বৃষ্টি ভাব, কিন্তু হচ্ছে না. এখন প্রায়,সন্ধে সাতটা বাজে. বাবা মনে হয় ফোন এ
কারো সাথে কথা বলছেন. "কে? অরিজিৎ আঙ্কেল?" কি জানি, যা হয় হোক. অরিজিৎ আঙ্কেল আসলে দেখা যাবে. পরদিন সকাল প্রায়,
আটটা হবে. আমি ব্রেকফাস্ট করে মাকে বললাম, "মা, আমি একটু অমিতের বাড়ি যাই". মা বললেন, "বাবু, সাবধানে যেয়ো, যা দিনকাল
পড়েছে!". আমি একটা রিক্সা নিয়ে চলে গেলাম, ধলেশ্বর. অনেক দিন পর অমিতের বাড়ি গেলাম. সাথে সেই রহস্য কাগজ. অমিত দা কে
সব কথা বললাম. অমিত দা বললো, "দে, দেখি কাগজে কি লিখা আছে? হুম, মনে হচ্ছে, কিছু উদ্ধার করা যাবে. আগে বলতো নিশাদের
সাথে হারটা কেনার সময় মানস জুয়েলারিতে ঠিক কি হয়েছিল?" আমি সেই দু বছর আগে ফিরে গেলাম. মনে করার চেষ্টা করলাম. বললাম, "অমিত, সেদিন ২নড অক্টোবর ২০১৫ ছিল. ম্যারেজ ডেতে আমায় গিফট দেবে বলে নিশাদ একটা ডায়মন্ড নেকলেস কিনতে গেলো. তুই তো জানিস মানস জুয়েলারি বেশ নাম করা. তাই সেখানেই গেলাম. ওরা আমাদের অনেকগুলি নেকলেস দেখালো. আমি একটা পছন্দ করলাম. নিশাদ আরেকটা. ও, আমায় বললো, ও নাকি হীরা চেনে. তাই ও যেইটা পছন্দ করেছে ঐটা বেশি ভালো ও সুন্দর. আমি অগত্যা আর না করলাম না. দোকানের মালিক বললো, যে দাদা এই নেকলেস টা ভালো হবে না. আপনি অন্যটা পছন্দ করুন. নিশাদ কম ঘাড় তেরা না. কিছুতেই মানলো না. ও ঐটাই নেবে. আমিও কিছু বুঝছিলাম না. দোকানের মালিক কেন না করছে. তারপর তো বিশাল ঝগরা. মালিক তো দোকানের সেলস ম্যান গুলিকে কি গালিগালাজ দিলো. ওরা কেন এই নেকলেস টা বের করলো? সে যাই হোক নিশাদ ঐটাই কিনলো শেষপর্যন্ত. তারপর তো তুই জানিস. নিষাদের সেই কঠিন ব্যামো আর দুমাসের মধ্যে পরলোকে যাওয়া." অমিত সব শুনলো মন দিয়ে. তারপর বললো "দাড়া, ২০১৫ তে জুলাই মাসের একটা দৈনিক পত্রিকাতে একটা হীরার হার নিয়ে কিছু রোমাঞ্চকর আর্টিকেল বেরিয়েছিল. ওই পেপারটা লাগবে, এই রহস্যের জট খুলতে. তবে তুই সাবধানে থাকিস. আর একটা কাজ করিস. আজি একটা লটারির টিকেট কিনে না. বড়ো এমাউন্টের কিনিস. দেখ, মনে হচ্ছে তুই পাবি." আমি তো হতভম্ব, বলে কি? এর সাথে আবার লটারির টিকেটের কি সম্পর্ক? অমিত দা গ্রাহ্য করলো না. বললো, "কাল বা পরশু আমি তোকে আবার আসতে বলবো. এখন এই চিরকুট গুলি আমার কাছেই থাক". আমি অমিতের বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেলাম। মনে বেশ সাহস পেলাম। চলে গেলাম সোজা লটারীর টিকিটের দোকানে। এক কোটি মূল্যের টিকিট কিনে নিলাম। অবশ্যই অমিতের কথামত। লটারীর ফল বের হবে ঠিক দুদিন পর। আজ পয়লা জুন। জুনের তিন তারিখ ফল। আমি বাড়ি চলে এলাম। অমিত বলেছিল নেকলেসটা কিছু দিন গলাতেই রাখতে। আমিও তাই করলাম। মা বলল "কি রে এই দামী হীরার হার ঘরে পড়ে থাকবি? তোর কি ছাটা আছে? " আমি বিনদাস কিছু না বলে বেশ দায়িত্ব নিয়ে রিস্ক নিলাম। হঠাত কলিং বেল বাজল। আই হোল দিয়ে দেখলাম অরিজিত আনকল। দরজা খুলে দিলাম।
"কি রে স্নেহা কেমন আছিস? Anything serious didi?" আমি বললাম "হ্যাঁ ও না দুটোই।" অমিতের সাথে হওয়া কথা বাদ দিয়ে সবই বললাম। "কাকু দরকার হলে তুমি হেল্প করবে কিন্তু।" কাকু বললেষ অবশ্যই। "বান্দা হাজির আপকে লিয়ে দিদি।" আমি স্বস্তির নিশ্বাস নিলাম। মা মাঝে এক পশলা দুঃখের গান গাইল। কাকু চলে গেল। আমি অমিতের ফোনের আশায় বসে রইলাম। প্রথম খামে লিখা কোডগুলি চিন্তা করতে লাগলাম। মনে পড়ল অক্ষর গুলি। DDINo?UORNeLc 2DNBKR🌼. ডিকোড করার চেষ্টা করলাম। যদি বাংলায় পড়ি, "দিদি আই নো,?- বুঝলাম না। ইউওর নেলেস অর্থাৎ নেকলেস টু ডি ন অর্থাৎ টু ডে নাইট বি কেআর ফুল।" এইটা ভেবেই আমি নেকলেস পড়ে মামা বাড়ী চলে যাই। অমিতের সন্দেহও অনেকটা তাই। কিন্তু কেন? কে? টাকা চায় না বুঝলাম। নইলে পঞ্চাশ হাজার পেয়েও নিল না কেন? কি করে জানল নেকলেস গেস্ট রুমের আলমারিতে আছে? তবে কি....? আজ জুন দুই. বিকেল তিনটে বাজে. অরিজিৎ এইমাত্র ফোন করলো. বললো, "স্নেহা, আয় তাড়াতাড়ি, কিছু কথা আছে.". আমি বললাম, "দাড়াও, আসছি." দেরি না করে অটো করে চলে গেলাম. অমিতের ঘরে ঢুকে দেখি, কতগুলি পুরানো পত্রিকা নিয়ে বসে আছে. আমি বললাম, "কি গো কি আছে এই পেপার গুলো তে?", দেখলাম, 'এক', 'দুই' করে লাল, নীল ট্যাগ লাগানো আছে. অমিত, আমায়, প্রথমে এক নম্বর দিলো. একটি দৈনিক পেপার এর কাটিং. একজন নাম করা রিপোর্টার এর প্রতিবেদন, তারিখ-১২/৭/২০১৫. সেখানে মোটামুটি যা পড়লাম তা অনেকটা এইরকম-"মানস জুয়েলারির কোটিপতি হবার রহস্য" এইটাই ছিল হেডিং. মানস জুয়েলারির বর্তমান মালিকের নাম হীরালাল বণিক. ওনার বাবা পান্নালাল বণিক, আজ থেকে ঠিক দু বছর আগে (অর্থাৎ ধরে নিচ্ছি , ২০১৩) এক কঠিন ব্যামোতে পরলোকগমন করেন. এরপর এই জুয়েলারির মালিক হন ওনার বড়ো ছেলে হীরালাল বণিক. উনি উত্তরাধিকার সূত্রে দোকানের মালিকানা নেবার পরই, মানস জুয়েলারি একের পর এক উচ্চ অংকের লটারি জিতে যান. এখন পর্যন্ত কোটি মূল্যের লটারি তিনটা জেতা হয়ে গেছে হীরালালের. আর পঞ্চাশ লক্ষ বা তার কম তো পাঁচ, ছটা হবেই. তাই এই জুয়েলারিকে এখন সবাই "লটারি জুয়েলারি" বলে." "সবার প্রশ্ন, হীরালাল কি যাদু জানে?" এইটুকুই ওই কাটিংটা তে ছিল. এরপর অমিত আমায় "দুই" ট্যাগ লাগানো পেপার কাটিং দিলো. এই প্রতিবেদন টা ২/২/২০১৬.বিশদ বিবরণটা অনেকটা এইরকম----হেডিঙটা ছিল, "ফ্লপ হচ্ছে লটারি কেনা- হীরালাল মানসিক রোগাক্রান্ত"বিষদ বিবরণটা অনেকটা এইরকম। হীরালাল বনিক অনেকদিন ধরে মানসিক অবসাদে ভুগছেন। হীরালাল বনিকের পরিবারের কথা অনুযায়ী 2015 এর আগষ্ট মাস থেকে যে কটা লটারী কিনেছেন একটিতেও জেতেননি। এইটা তিনি মানতে না পেরে অবসাদে ভুগছেন। হীরালালের ছেলে মতিলাল তার বাবাকে খুব ভালবাসেন। উনি পাগলের মত হয়ে গেছেন বাবাকে সুস্হ করার জন্য। ডাক্তারের কথা অনুযায়ী , যদি আবার লটারী জেতেন তবেই ওনার এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। ঐটুকুই ছিল ঐ প্রতিবেদনে। অমিত আমায় বলল কি বুঝলি? আমি বললাম " কিছু না। ভীষন গোলমেলে ব্যাপার।" অমিত বলল , "হারটা খুলিশ না। লটারীর ফল কালকে তো, দেখা যাক। কি হয়।" এখন সময় হয়েছে দ্বিতীয় কোড ওয়ার্ড ডিকোড করার। প্রথমটা মোটামুটি ঠিকই বলেছিস। আমি অমিতকে বললাম, "এখন যাই, কাল ঠিক আটটায় চলে আসব। বাড়ি ফিরে আমি পেপার কাটিংয়ের কথাগুলি ভাবতে লাগলাম। "লটারীর রহস্য কি?" রাতটা খুব অস্বস্তিতে কাটল। পরদিন ব্রেকফাস্ট সেরে অমিতের বাড়ি যেতে যেতে প্রায় সাড়ে আটটা বেজে গেল। অমিতের ঘরে ঢোকা মাত্রই অমিত বলল, "দাড়া লটারির ফল একটু পরেই দেবে। ফল দেখলেই অনেকটা পরিষ্কার হয়ে যাবে ব্যাপার টা। চল চা খাই।" চা পান করতে করতে নটা বেজে গেল। অনলাইন হল অমিত। ঠিক ফল বেড়িয়েছে। অমিতের সন্দেহ ঠিক। আমি লটারি জিতেছি। কিন্তু এককোটি জেতার আনন্দ কিছুই হল না। রহস্য আরও ঘনীভূত হল। এবার অমিত বলল "যা টেবিল থেকে চিরকুটটা নিয়ে আয়।" আমি নিয়ে এলাম। অমিত বলল, "কোড ওয়ার্ড গুলি বল।" কোড ওয়ার্ডগুলি হলো, "KELO. UNo . AME NKLS NABO . B RD. A T MGK LKT". অমিত বলল, "কে এল, ইউ নো, আমি নেকলেস নেব। বি রেডি। এ টি মেজিক লকেট।" আমি আকাশ থেকে পড়লাম। অমিত বলল, "একবার মানস জুয়েলারীর বাড়িতে যেতে হবে। হারটা খুলে ব্যাগে ভরে নে। মতিলালের সঙ্গে কথা বলতে হবে। সোজা আঙ্গুলে ঘী না উঠলে আঙ্গুল তেরা করতে হবে।" আমি বললাম, "বাড়ি চেনো?" অমিত কিছু উত্তর দিল না। হাবেভাবে বুঝলাম চেনে। ঘর থেকে বেড়িয়ে ও রিক্সা নিল। বলল কলেজ টিলা যেতে। আমরা দশ মিনিটে পৌঁছে গেলাম সেই রহস্যময় পরিবেশে। বিশাল বাড়ি। উঠোনে আরাম কেদারায় শুয়ে আছেন হীরালাল। আমার চিনতে অসুবিধা হল না। কয়েকজন মহিলা দেখা গেল বারান্দায়। এরমধ্যে একজন মাঝ বয়সী মহিলা আমাদের দিকে এগিয়ে এলেন। জিজ্ঞাসা করলেন, "কাকে চান?" অমিত বলল, "মতিলাল বাবুকে একটু ডেকে দেবেন?" মহিলা বললেন, "আসুন। আপনারা ড্রয়িংরুমে বসুন, আমি ডেকে দিচ্ছি। তবে পরিচয়টা জানতে পারি কি?" অমিত বলল, বলবেন আমরা ওনার কাস্টমার। মহিলা চলে গেলেন।আমরা ড্রয়িং রুমে বসলাম। প্রায় পাঁচ মিনিটের মাথায় কফি এল। কফি খাওয়া শেষ। তখনই ঘরে ঢুকলেন, নিতান্তই খাটো একজন লোক। বললেন, "নমস্কার আমি মতিলাল।" আমার দিকে চোখ পড়তেই দেখলাম মতিলাল খুব ঘাবড়ে গেলেন। অমিত আড়ঁচোখে আমার দিকে তাকাল। খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে মতিলালকে বলল, "জানেন আমার এই বন্ধু আজ এককোটি মূল্যের লটারী জিতেছে।" মতিলালের মনে হল গলা শুকিয়ে গেল। সামনে রাখা জলের গ্লাস তুলে জল খেলেন। বললেন, "কন গ্রেটুলেশন। তা আমি জেনে কি করব?" অমিত বলল,"যে হীরার হার চাইছেন, সেটা পেয়েছেন?" এইবার ভদ্রলোকেল হাত থেকে মোবাইলটা পড়ে গেল। হঠাৎই খুব রেগে গেলেন। বললেন,"কেন এসছেন? এইসব কি বলছেন?" অমিত বলল, "আপনার বাবার অসুহতার কারনটা জানিয়ে দিলে ভাল হবে। নইলে মতিলাল বাবু কি হবে বলা যায় না।" অমিতের প্রশ্নের জবাবে মতিলাল বললেন, "পত্র পত্রিকাতে কত কিছুই ওঠে। আমার বাবার বার্ধক্য জনিত রোগ।" অমিত বলল, "ডাক্তার নাকি বলেছেন লটারী জিতলে ঠিক হতে পারে?" মতিলাল বললেন, "সে ডাক্তারদের অভিমত, সত্যি, মিথ্যা জানি না।" অমিত বলল, "এককালে লটারী জেতার রেকর্ড় ছিল আপনাদের, হঠাৎ কি হল?" মতিলাল হঠাৎ মনে হল অসুস্হতা বোধ করলেন। বললেন, "আপনারা যান প্লিস।" অমিত কথা বলতে বলতে পুংখানুপুংখভাবে সমস্ত ঘর, আসবাবপত্র দেখছিল। মাঝে মাঝে উঠে গিয়ে কিছু কিছু জিনিস উল্টে পাল্টে দেখছিল। মতিলালকে আর বিরক্ত না করে হঠাৎ বলল, "চল, দিদি যাই"। এত জোড়ে দিদি বলে সম্বোধন করায় আমি যারপরনাই অবাক হয়েছিলাম। আমরা বেরিয়ে গেলাম। যেতে যেতে অমিত বলল, এবার অরিজিৎ আনকেলের কাছে যেতে হবে। চল। আমরা চলে গেলাম পূর্ব থানায়. রাস্তায় অরিজিৎ আঙ্কেল কে ফোন করে নিয়েছিলাম. উনি বলেছিলেন উনি অফিস এ আছেন. আমরা সোজা ঢুকে গেলাম ওনার ঘরে. অমিত আদ্য পান্তো সব বর্ণনা করে বললো. এরপর চিরকুটগুলি দেখালো. ঐগুলির যা মানে আমরা বের করেছিলাম তা বললো. এরপর অরিজিৎ একটা ছোট্ট ডাইরি দেখালো. আমি বললাম এটা কোথায় পেলে? অমিত বললো, একটু আগে মতিলালের ঘর থেকে পেলাম. তুলে নিলাম. আমি বললাম, "রিয়েলি, ইউ আর গ্রেট". ও বললো, "না হাতের লিখাগুলির জন্য নিলাম, সন্দেহজনক." অরিজিৎ আঙ্কেল লিখাগুলি দেখে বললেন," yes চিরকুটের লিখার সাথে মিল আছে". এইবার অরিজিৎ আঙ্কেল বললেন,"স্নেহা, তুই তাড়াতাড়ি একটা FIR করে দে, তোকে ভয় দেখানোর কথা বলে, আর বলবি, তুই মানস জুয়েলারিকে সন্দেহ করছিস". আমি তাই করলাম. অরিজিৎ আঙ্কেল বললেন, "কালই, মোতিলালকে ডাকবো, কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে হবে."
আমরা পূর্ব থানা থেকে বেরিয়ে গেলাম. অমিত চলে গেলো অমিতের বাড়ি. আমি ফিরে এলাম আমার ঘরে. আবার পরদিনের অপেখ্যা. মতিলাল বাবুকে ডেকে পাঠানো হয়েছে কাল. কি জিজ্ঞাসা করবে অরিজিৎ আঙ্কেল মতিলাল বাবুকে? যাই হোক ঘুমিয়ে পড়লাম. পরদিন সকাল ১০ টা, অমিত ফোন করলো. বললো, "কিরে কিছু চিন্তা করছিস? আমি, মনে হয় মনে মনে সমাধান করে ফেলেছি. হারটা আছে তো ঠিক ঠাক?" আমি বললাম, "হ্যান, হার আছে ব্যাগেই." প্রায় ১২ টা নাগাদ অরিজিৎ আঙ্কেল নিজেই এলো. অমিত কে ডাকতে বললেন. আমি অমিতকে ফোন করে বললাম, "চলে আসতে." অমিত ২০ মিনিটের মধ্যে চলে এলো. অরিজিৎ আঙ্কেল বললেন," বস সবাই. দরজা বন্ধ করে দাও." আমি তাই করলাম. এবার অরিজিৎ আঙ্কেল মতিলাল বাবুর সাথে আলাপ আলোচনার বৃত্যান্ত দিতে লাগলেন.
অরিজিৎ: মিস্টার বণিক, দেখুন একটা হারের ছবি. এইটা চেনেন?
মতিলাল: হ্যান, এই হারটা আমার দোকানের.
অরিজিৎ: এখন কোথায় হারটা?
মতিলাল: বিক্রি হয়ে গেছে.
অরিজিৎ: এখানে দুটো চিরকুট আছে. লিখাগুলি চেনেন?
মতিলাল: না.
অরিজিৎ: এই ডাইরিটা কি আপনার?
মতিলাল: হ্যান.
অরিজিৎ: ডাইরি আর চিরকুটের লিখাগুলি একইরকম, তাই না?
মতিলাল: জানি না, আমি কিছু জানি না.
অরিজিৎ: জানেন তো মিস্টার বণিক, আমি কিন্তু পুলিশ. সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙ্গুল বাঁকাতে জানি. লক আপ এ ঢুকিয়ে এমন চাবুক মারবো না, সব বমি করে দেবেন. আপনার উপর একটি মহিলাকে ভয় দেখানোর কেস করে দিয়ে পুরো বণিক ফ্যামিলি বরবাদ করে দেব. সব কথা খুলে বলুন.
মতিলাল: মাপ করে দেন প্রভু. আপনি জিজ্ঞাসা করুন আমি বলছি.
অরিজিৎ: হারের রহস্যটা কি?
মতিলাল: ২০১৩ তে আমার দাদু হীরার হারটা কিনেছিলেন একজন বড়ো ব্যবসায়ীর কাছ থেকে. এরপরই দাদু খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন. আমার বাবাকে ডেকে তিনি বলেছিলেন, এই লকেট সহ হারটার জাদুকরী ক্ষমতা আছে. দাদু বাবাকে বলেছিলেন এই হারটা যার কাছে থাকবে সে লটারি জিততে পারবে. এটা কোনোদিন বিক্রি করতে না. যে ই এই হারটা কিনবে, সে অজানা কঠিন ব্যামোতে ভুগবে এবং দু মাসের মধ্যেই শেষ নিঃস্বাস ত্যাগ করবে. তখন বাবা বলেছিলেন, "তবে তুমি হার কিনলে কেন?". কিন্তু দাদু কোনো উত্তর দেন নি. আর ঠিক দু মাসের মধ্যেই দাদু চলে যান. বাবা ভুল করে এই নেকলেস টা ২০১৫ এর জানুয়ারী মাসে বাক্স এ তে দোকানে রেখে দিয়েছিলেন. আর কর্মচারীরা সেই ভুলটাই করে ফেলেছিলো. স্নেহা ম্যাডামরা যখন নেকলেস কিনতে এলো, ওই হারটা দেখিয়ে ছিল. তাই যখন স্নেহা ম্যাডামের স্বামী এই হারটা কিনতে গেলেন, বাবা ভয় পেয়ে না করেছিলেন. এর ফলেই স্নেহা ম্যাডামের স্বামীও দু মাসের মধ্যে কঠিন ব্যামোতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান. আর লটারি জিততে না পারে বাবা মানসিক রোগাক্রান্ত হয়ে পড়েন. হারটা থাকার জন্য স্নেহা ম্যাডাম ও এইবার লটারি জিতে যান.
অরিজিৎ: তা আপনি পুলিশ এর কাছে না এসে কেন চিরকুটের খেলা খেললেন? আপনি কি করে জানলেন, স্নেহা গেস্ট রুম এ নেকলেস রাখে?
মতিলাল: ওদের বাড়ির কাজের মাসিকে আমি টাকা দিয়ে হাত করেছিলেম. ওই সব খবর দিতো.
অরিজিৎ: ঠিক আছে আপনি বাড়ি যান. কিন্তু অন্য কোথাও যাবেন না .
সব শুনে অমিত বললো,"এক্সাক্টলি, আমিও সেটাই মনে মনে সমাধান করেছি." আমার খুব মন খারাপ লাগছিলো. নিশাদকে খুব মনে পড়ছিলো. নিশাদ তো আর জানতো না, সে একটা অভিশপ্ত হার আমার জন্যে নিচ্ছে. আমি কাঁদলাম, খুব কাঁদলাম.....সমাপ্ত
". মা অগত্যা আর কিছু বললো না. আমার যাবতীয় জিনিসপত্র গেস্ট রুমেই থাকে. তাই, তাড়াতাড়ি গেস্ট রুম এ গিয়ে, আলমারি
খুলে, আমার প্রিয় প্রিয় সাজার জিনিস পরে, সুন্দর চুড়িদার পরে রেডি হয়ে গেলাম. ইতিমধ্যে বাবা এসে গেছে. বাবাকে আর এতো বর্ণনা না দিয়ে, পারমিশন নিয়ে প্রদীপ দার অটো করে মামা বাড়ি চলে গেলাম. এখন পর্যন্ত সব ঠিক ঠাক আছে. মামা বাড়িতে রাত্রিবেলা প্রচুর মজা করলাম. ঘুমাতে ঘুমাতে রাত ১ টা. পরদিন সকালে ঘুম ভাঙলো ছোট মাসির চিৎকারে. "এই, স্নেহা, তাড়াতাড়ি ওঠ!! দেখ তোর মা ফোন করেছে. তোদের বাড়ি নাকি রাত্রিবেলা কেউ গেস্ট রুম তছনছ করে গেছে.কিন্তু কিছু নেই নি. তোর মা খুব ভয় পেয়ে গেছে রে." আমি ধড়ফড়িয়ে উঠে গেলাম. সকাল তখন ৬ টা বাজে. ছোট মাসি সেই মেয়েলোকি প্রথা মেনেই হায় হায় করতে লাগলো. চোখের জল পড়তে লাগলো. আমি এক দৌড়ে ব্যাগ থেকে কাগজ টা হাতে নিলাম. ভাবলাম, "যা ভেবেছি ঠিকই ভেবেছি বোধ হয় ". আমার ভীষণ নিশাদের কথা মনে হলো. আজ প্রায় দু বছর হবে নিশাদ আমায় ছেড়ে চলে গেছে. কি যে ব্যামো হলো নিশাদের, রোগ ধরাই পড়লো না. আয়নায় দাঁড়িয়ে গলায় পড়া সেই নিশাদের দেওয়া নেকলেস টার দিকে তাকিয়ে রইলাম. কত কথা মনে হতে লাগলো. একসাথে দুজনাতে মিলে সেই "মানস" জুয়েলারিতে যাওয়া. ম্যারেজ ডে তে এই হারটা নিশাদ আমায় উপহার দিয়েছিলো. দোকানের মালিকের সাথে কি বিষম ঝগড়া হয়েছিল, হারটা কেনার সময়. নিশাদ আমায় হারটা দিয়ে বলেছিলো, "স্নেহা এইটা আমার ভালোবাসা, সাবধানে রেখো." বড়ো মামা আমায় ডাকলেন. আমি গেলাম, বললেন, "স্নেহা, তোর একবার বাড়ি যাওয়া উচিত. পরে আবার আসিস, সব যদি ঠিক থাকে." আমি আর না করলাম না. আমি হাত মুখ ধুয়ে তৈরী হতে লাগলাম. ঠিক সেই মুহূর্তেই ফোন বেজে উঠলো. "হ্যান, সেই ল্যান্ড লাইন নম্বর". ফোন তুলে হ্যালো বললাম. "কি দিদি, কয়দিন বাচাইবেন?" ব্যাস, কিছু বলতে যাবো, "ট্যাঁ...ট্যাঁ. লাইন কেটে গেলো. আমি আর ধার ধারলাম না. রেডি হয়ে একটা অটো করে বাড়ি ফিরে আসলাম. ঘরে ঢুকতেও পারিনি, মা চিৎকার করে বলতে লাগলো, "কি রে স্নেহা, কার দৃষ্টি পড়লো আমার বাড়ি? কে করলো? তুই হঠাৎ চলে গেলি কেন? রাতে তো টের পাই নি। সকালে মাসি ঝাড়ু দিতে গিয়ে চিতকার করে ডাকল।" বাবা তো পুরো ফায়ারিং করলেন. বললেন "কি রে ফোনের কথা, খামের কথা কিছুই বললি না, মন উঠলো, মামা বাড়ি চলে গেলি, তোর যদি কিছু হতো, তাহলে আমরা কি করতাম? তা, ফোন আর খামের সাথে এই চুরীর চেষ্টার কি কোন যোগাযোগ আছে?" আমি খুব স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দিলাম, "বাবা, আমি কিছু জানি না।" বাবা আর কথা বাড়ালেন না। আমি ব্যাগ রেখেই দৌড়ে গেলাম গেস্ট রুম এ । সব তছ হয়ে আছে। খুব ভালো করে খুঁটিয়ে দেখার চেষ্টা করলাম. দেখলাম আলমারির লকার টাও ভাঙা . হঠাৎ মনে হল, বিছানার নীচে পঞ্চাশ হাজার টাকা ছিল। বুঝলাম বেটা বা বেটারা ধরেছে, কিন্তু নেয় নি। বড় অবাক হলাম। "উদ্দেশ্য কি? আমি যা ভাবছি, বুঝছি, তাই?
ঘরের মেঝেতে আমার চার পাঁচটা শাড়ি পড়েছিল . এগুলি তুলতেই দেখি আরেকটা চিরকুট , কিন্তু কিছু লিখা নেই. আমি গতকালের কথা মনে করে জল ঢেলে দিলাম . দেখলাম দশ , বারোটা ইংরেজি অক্ষর । অনেকটা এইরকম , "KELO. UNo . AME NKLS NABO . B RD. A T MGK LKT" যা বুঝার বুঝলাম. ঠিক না ভুল জানি না। ঘর থেকে বেরিয়ে গেলাম. সোজা বাবাকে গিয়ে বললাম, "বাবা অরিজিৎ আনকল কে খবর দাও". বাবা বললেন, "কেন, কিছু নিয়েছে নাকি? তাহলে পুলিশ কেন?" আমি বললাম, "না নেয় নি, তবে আমার কথা আছে. ডাকলেই ভালো হবে. নইলে অনভিপ্রেত কিছু হতে পারে।" আমি মাদের বেড রুমে গিয়ে একটু একাকী ভাবতে লাগলাম। নিশাদের বন্ধু অমিতের কথা মনে হল। কাল একবার অমিতের বাড়ি যাব। ওর সাংকেতিক শব্দ খুব ভাল বুঝে। দেখি যদি কিছু জট খোলে। আজ সারাদিন আকাশ কেমন যেন গুমরা হয়ে আছে. বৃষ্টি বৃষ্টি ভাব, কিন্তু হচ্ছে না. এখন প্রায়,সন্ধে সাতটা বাজে. বাবা মনে হয় ফোন এ
কারো সাথে কথা বলছেন. "কে? অরিজিৎ আঙ্কেল?" কি জানি, যা হয় হোক. অরিজিৎ আঙ্কেল আসলে দেখা যাবে. পরদিন সকাল প্রায়,
আটটা হবে. আমি ব্রেকফাস্ট করে মাকে বললাম, "মা, আমি একটু অমিতের বাড়ি যাই". মা বললেন, "বাবু, সাবধানে যেয়ো, যা দিনকাল
পড়েছে!". আমি একটা রিক্সা নিয়ে চলে গেলাম, ধলেশ্বর. অনেক দিন পর অমিতের বাড়ি গেলাম. সাথে সেই রহস্য কাগজ. অমিত দা কে
সব কথা বললাম. অমিত দা বললো, "দে, দেখি কাগজে কি লিখা আছে? হুম, মনে হচ্ছে, কিছু উদ্ধার করা যাবে. আগে বলতো নিশাদের
সাথে হারটা কেনার সময় মানস জুয়েলারিতে ঠিক কি হয়েছিল?" আমি সেই দু বছর আগে ফিরে গেলাম. মনে করার চেষ্টা করলাম. বললাম, "অমিত, সেদিন ২নড অক্টোবর ২০১৫ ছিল. ম্যারেজ ডেতে আমায় গিফট দেবে বলে নিশাদ একটা ডায়মন্ড নেকলেস কিনতে গেলো. তুই তো জানিস মানস জুয়েলারি বেশ নাম করা. তাই সেখানেই গেলাম. ওরা আমাদের অনেকগুলি নেকলেস দেখালো. আমি একটা পছন্দ করলাম. নিশাদ আরেকটা. ও, আমায় বললো, ও নাকি হীরা চেনে. তাই ও যেইটা পছন্দ করেছে ঐটা বেশি ভালো ও সুন্দর. আমি অগত্যা আর না করলাম না. দোকানের মালিক বললো, যে দাদা এই নেকলেস টা ভালো হবে না. আপনি অন্যটা পছন্দ করুন. নিশাদ কম ঘাড় তেরা না. কিছুতেই মানলো না. ও ঐটাই নেবে. আমিও কিছু বুঝছিলাম না. দোকানের মালিক কেন না করছে. তারপর তো বিশাল ঝগরা. মালিক তো দোকানের সেলস ম্যান গুলিকে কি গালিগালাজ দিলো. ওরা কেন এই নেকলেস টা বের করলো? সে যাই হোক নিশাদ ঐটাই কিনলো শেষপর্যন্ত. তারপর তো তুই জানিস. নিষাদের সেই কঠিন ব্যামো আর দুমাসের মধ্যে পরলোকে যাওয়া." অমিত সব শুনলো মন দিয়ে. তারপর বললো "দাড়া, ২০১৫ তে জুলাই মাসের একটা দৈনিক পত্রিকাতে একটা হীরার হার নিয়ে কিছু রোমাঞ্চকর আর্টিকেল বেরিয়েছিল. ওই পেপারটা লাগবে, এই রহস্যের জট খুলতে. তবে তুই সাবধানে থাকিস. আর একটা কাজ করিস. আজি একটা লটারির টিকেট কিনে না. বড়ো এমাউন্টের কিনিস. দেখ, মনে হচ্ছে তুই পাবি." আমি তো হতভম্ব, বলে কি? এর সাথে আবার লটারির টিকেটের কি সম্পর্ক? অমিত দা গ্রাহ্য করলো না. বললো, "কাল বা পরশু আমি তোকে আবার আসতে বলবো. এখন এই চিরকুট গুলি আমার কাছেই থাক". আমি অমিতের বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেলাম। মনে বেশ সাহস পেলাম। চলে গেলাম সোজা লটারীর টিকিটের দোকানে। এক কোটি মূল্যের টিকিট কিনে নিলাম। অবশ্যই অমিতের কথামত। লটারীর ফল বের হবে ঠিক দুদিন পর। আজ পয়লা জুন। জুনের তিন তারিখ ফল। আমি বাড়ি চলে এলাম। অমিত বলেছিল নেকলেসটা কিছু দিন গলাতেই রাখতে। আমিও তাই করলাম। মা বলল "কি রে এই দামী হীরার হার ঘরে পড়ে থাকবি? তোর কি ছাটা আছে? " আমি বিনদাস কিছু না বলে বেশ দায়িত্ব নিয়ে রিস্ক নিলাম। হঠাত কলিং বেল বাজল। আই হোল দিয়ে দেখলাম অরিজিত আনকল। দরজা খুলে দিলাম।
"কি রে স্নেহা কেমন আছিস? Anything serious didi?" আমি বললাম "হ্যাঁ ও না দুটোই।" অমিতের সাথে হওয়া কথা বাদ দিয়ে সবই বললাম। "কাকু দরকার হলে তুমি হেল্প করবে কিন্তু।" কাকু বললেষ অবশ্যই। "বান্দা হাজির আপকে লিয়ে দিদি।" আমি স্বস্তির নিশ্বাস নিলাম। মা মাঝে এক পশলা দুঃখের গান গাইল। কাকু চলে গেল। আমি অমিতের ফোনের আশায় বসে রইলাম। প্রথম খামে লিখা কোডগুলি চিন্তা করতে লাগলাম। মনে পড়ল অক্ষর গুলি। DDINo?UORNeLc 2DNBKR🌼. ডিকোড করার চেষ্টা করলাম। যদি বাংলায় পড়ি, "দিদি আই নো,?- বুঝলাম না। ইউওর নেলেস অর্থাৎ নেকলেস টু ডি ন অর্থাৎ টু ডে নাইট বি কেআর ফুল।" এইটা ভেবেই আমি নেকলেস পড়ে মামা বাড়ী চলে যাই। অমিতের সন্দেহও অনেকটা তাই। কিন্তু কেন? কে? টাকা চায় না বুঝলাম। নইলে পঞ্চাশ হাজার পেয়েও নিল না কেন? কি করে জানল নেকলেস গেস্ট রুমের আলমারিতে আছে? তবে কি....? আজ জুন দুই. বিকেল তিনটে বাজে. অরিজিৎ এইমাত্র ফোন করলো. বললো, "স্নেহা, আয় তাড়াতাড়ি, কিছু কথা আছে.". আমি বললাম, "দাড়াও, আসছি." দেরি না করে অটো করে চলে গেলাম. অমিতের ঘরে ঢুকে দেখি, কতগুলি পুরানো পত্রিকা নিয়ে বসে আছে. আমি বললাম, "কি গো কি আছে এই পেপার গুলো তে?", দেখলাম, 'এক', 'দুই' করে লাল, নীল ট্যাগ লাগানো আছে. অমিত, আমায়, প্রথমে এক নম্বর দিলো. একটি দৈনিক পেপার এর কাটিং. একজন নাম করা রিপোর্টার এর প্রতিবেদন, তারিখ-১২/৭/২০১৫. সেখানে মোটামুটি যা পড়লাম তা অনেকটা এইরকম-"মানস জুয়েলারির কোটিপতি হবার রহস্য" এইটাই ছিল হেডিং. মানস জুয়েলারির বর্তমান মালিকের নাম হীরালাল বণিক. ওনার বাবা পান্নালাল বণিক, আজ থেকে ঠিক দু বছর আগে (অর্থাৎ ধরে নিচ্ছি , ২০১৩) এক কঠিন ব্যামোতে পরলোকগমন করেন. এরপর এই জুয়েলারির মালিক হন ওনার বড়ো ছেলে হীরালাল বণিক. উনি উত্তরাধিকার সূত্রে দোকানের মালিকানা নেবার পরই, মানস জুয়েলারি একের পর এক উচ্চ অংকের লটারি জিতে যান. এখন পর্যন্ত কোটি মূল্যের লটারি তিনটা জেতা হয়ে গেছে হীরালালের. আর পঞ্চাশ লক্ষ বা তার কম তো পাঁচ, ছটা হবেই. তাই এই জুয়েলারিকে এখন সবাই "লটারি জুয়েলারি" বলে." "সবার প্রশ্ন, হীরালাল কি যাদু জানে?" এইটুকুই ওই কাটিংটা তে ছিল. এরপর অমিত আমায় "দুই" ট্যাগ লাগানো পেপার কাটিং দিলো. এই প্রতিবেদন টা ২/২/২০১৬.বিশদ বিবরণটা অনেকটা এইরকম----হেডিঙটা ছিল, "ফ্লপ হচ্ছে লটারি কেনা- হীরালাল মানসিক রোগাক্রান্ত"বিষদ বিবরণটা অনেকটা এইরকম। হীরালাল বনিক অনেকদিন ধরে মানসিক অবসাদে ভুগছেন। হীরালাল বনিকের পরিবারের কথা অনুযায়ী 2015 এর আগষ্ট মাস থেকে যে কটা লটারী কিনেছেন একটিতেও জেতেননি। এইটা তিনি মানতে না পেরে অবসাদে ভুগছেন। হীরালালের ছেলে মতিলাল তার বাবাকে খুব ভালবাসেন। উনি পাগলের মত হয়ে গেছেন বাবাকে সুস্হ করার জন্য। ডাক্তারের কথা অনুযায়ী , যদি আবার লটারী জেতেন তবেই ওনার এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। ঐটুকুই ছিল ঐ প্রতিবেদনে। অমিত আমায় বলল কি বুঝলি? আমি বললাম " কিছু না। ভীষন গোলমেলে ব্যাপার।" অমিত বলল , "হারটা খুলিশ না। লটারীর ফল কালকে তো, দেখা যাক। কি হয়।" এখন সময় হয়েছে দ্বিতীয় কোড ওয়ার্ড ডিকোড করার। প্রথমটা মোটামুটি ঠিকই বলেছিস। আমি অমিতকে বললাম, "এখন যাই, কাল ঠিক আটটায় চলে আসব। বাড়ি ফিরে আমি পেপার কাটিংয়ের কথাগুলি ভাবতে লাগলাম। "লটারীর রহস্য কি?" রাতটা খুব অস্বস্তিতে কাটল। পরদিন ব্রেকফাস্ট সেরে অমিতের বাড়ি যেতে যেতে প্রায় সাড়ে আটটা বেজে গেল। অমিতের ঘরে ঢোকা মাত্রই অমিত বলল, "দাড়া লটারির ফল একটু পরেই দেবে। ফল দেখলেই অনেকটা পরিষ্কার হয়ে যাবে ব্যাপার টা। চল চা খাই।" চা পান করতে করতে নটা বেজে গেল। অনলাইন হল অমিত। ঠিক ফল বেড়িয়েছে। অমিতের সন্দেহ ঠিক। আমি লটারি জিতেছি। কিন্তু এককোটি জেতার আনন্দ কিছুই হল না। রহস্য আরও ঘনীভূত হল। এবার অমিত বলল "যা টেবিল থেকে চিরকুটটা নিয়ে আয়।" আমি নিয়ে এলাম। অমিত বলল, "কোড ওয়ার্ড গুলি বল।" কোড ওয়ার্ডগুলি হলো, "KELO. UNo . AME NKLS NABO . B RD. A T MGK LKT". অমিত বলল, "কে এল, ইউ নো, আমি নেকলেস নেব। বি রেডি। এ টি মেজিক লকেট।" আমি আকাশ থেকে পড়লাম। অমিত বলল, "একবার মানস জুয়েলারীর বাড়িতে যেতে হবে। হারটা খুলে ব্যাগে ভরে নে। মতিলালের সঙ্গে কথা বলতে হবে। সোজা আঙ্গুলে ঘী না উঠলে আঙ্গুল তেরা করতে হবে।" আমি বললাম, "বাড়ি চেনো?" অমিত কিছু উত্তর দিল না। হাবেভাবে বুঝলাম চেনে। ঘর থেকে বেড়িয়ে ও রিক্সা নিল। বলল কলেজ টিলা যেতে। আমরা দশ মিনিটে পৌঁছে গেলাম সেই রহস্যময় পরিবেশে। বিশাল বাড়ি। উঠোনে আরাম কেদারায় শুয়ে আছেন হীরালাল। আমার চিনতে অসুবিধা হল না। কয়েকজন মহিলা দেখা গেল বারান্দায়। এরমধ্যে একজন মাঝ বয়সী মহিলা আমাদের দিকে এগিয়ে এলেন। জিজ্ঞাসা করলেন, "কাকে চান?" অমিত বলল, "মতিলাল বাবুকে একটু ডেকে দেবেন?" মহিলা বললেন, "আসুন। আপনারা ড্রয়িংরুমে বসুন, আমি ডেকে দিচ্ছি। তবে পরিচয়টা জানতে পারি কি?" অমিত বলল, বলবেন আমরা ওনার কাস্টমার। মহিলা চলে গেলেন।আমরা ড্রয়িং রুমে বসলাম। প্রায় পাঁচ মিনিটের মাথায় কফি এল। কফি খাওয়া শেষ। তখনই ঘরে ঢুকলেন, নিতান্তই খাটো একজন লোক। বললেন, "নমস্কার আমি মতিলাল।" আমার দিকে চোখ পড়তেই দেখলাম মতিলাল খুব ঘাবড়ে গেলেন। অমিত আড়ঁচোখে আমার দিকে তাকাল। খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে মতিলালকে বলল, "জানেন আমার এই বন্ধু আজ এককোটি মূল্যের লটারী জিতেছে।" মতিলালের মনে হল গলা শুকিয়ে গেল। সামনে রাখা জলের গ্লাস তুলে জল খেলেন। বললেন, "কন গ্রেটুলেশন। তা আমি জেনে কি করব?" অমিত বলল,"যে হীরার হার চাইছেন, সেটা পেয়েছেন?" এইবার ভদ্রলোকেল হাত থেকে মোবাইলটা পড়ে গেল। হঠাৎই খুব রেগে গেলেন। বললেন,"কেন এসছেন? এইসব কি বলছেন?" অমিত বলল, "আপনার বাবার অসুহতার কারনটা জানিয়ে দিলে ভাল হবে। নইলে মতিলাল বাবু কি হবে বলা যায় না।" অমিতের প্রশ্নের জবাবে মতিলাল বললেন, "পত্র পত্রিকাতে কত কিছুই ওঠে। আমার বাবার বার্ধক্য জনিত রোগ।" অমিত বলল, "ডাক্তার নাকি বলেছেন লটারী জিতলে ঠিক হতে পারে?" মতিলাল বললেন, "সে ডাক্তারদের অভিমত, সত্যি, মিথ্যা জানি না।" অমিত বলল, "এককালে লটারী জেতার রেকর্ড় ছিল আপনাদের, হঠাৎ কি হল?" মতিলাল হঠাৎ মনে হল অসুস্হতা বোধ করলেন। বললেন, "আপনারা যান প্লিস।" অমিত কথা বলতে বলতে পুংখানুপুংখভাবে সমস্ত ঘর, আসবাবপত্র দেখছিল। মাঝে মাঝে উঠে গিয়ে কিছু কিছু জিনিস উল্টে পাল্টে দেখছিল। মতিলালকে আর বিরক্ত না করে হঠাৎ বলল, "চল, দিদি যাই"। এত জোড়ে দিদি বলে সম্বোধন করায় আমি যারপরনাই অবাক হয়েছিলাম। আমরা বেরিয়ে গেলাম। যেতে যেতে অমিত বলল, এবার অরিজিৎ আনকেলের কাছে যেতে হবে। চল। আমরা চলে গেলাম পূর্ব থানায়. রাস্তায় অরিজিৎ আঙ্কেল কে ফোন করে নিয়েছিলাম. উনি বলেছিলেন উনি অফিস এ আছেন. আমরা সোজা ঢুকে গেলাম ওনার ঘরে. অমিত আদ্য পান্তো সব বর্ণনা করে বললো. এরপর চিরকুটগুলি দেখালো. ঐগুলির যা মানে আমরা বের করেছিলাম তা বললো. এরপর অরিজিৎ একটা ছোট্ট ডাইরি দেখালো. আমি বললাম এটা কোথায় পেলে? অমিত বললো, একটু আগে মতিলালের ঘর থেকে পেলাম. তুলে নিলাম. আমি বললাম, "রিয়েলি, ইউ আর গ্রেট". ও বললো, "না হাতের লিখাগুলির জন্য নিলাম, সন্দেহজনক." অরিজিৎ আঙ্কেল লিখাগুলি দেখে বললেন," yes চিরকুটের লিখার সাথে মিল আছে". এইবার অরিজিৎ আঙ্কেল বললেন,"স্নেহা, তুই তাড়াতাড়ি একটা FIR করে দে, তোকে ভয় দেখানোর কথা বলে, আর বলবি, তুই মানস জুয়েলারিকে সন্দেহ করছিস". আমি তাই করলাম. অরিজিৎ আঙ্কেল বললেন, "কালই, মোতিলালকে ডাকবো, কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে হবে."
আমরা পূর্ব থানা থেকে বেরিয়ে গেলাম. অমিত চলে গেলো অমিতের বাড়ি. আমি ফিরে এলাম আমার ঘরে. আবার পরদিনের অপেখ্যা. মতিলাল বাবুকে ডেকে পাঠানো হয়েছে কাল. কি জিজ্ঞাসা করবে অরিজিৎ আঙ্কেল মতিলাল বাবুকে? যাই হোক ঘুমিয়ে পড়লাম. পরদিন সকাল ১০ টা, অমিত ফোন করলো. বললো, "কিরে কিছু চিন্তা করছিস? আমি, মনে হয় মনে মনে সমাধান করে ফেলেছি. হারটা আছে তো ঠিক ঠাক?" আমি বললাম, "হ্যান, হার আছে ব্যাগেই." প্রায় ১২ টা নাগাদ অরিজিৎ আঙ্কেল নিজেই এলো. অমিত কে ডাকতে বললেন. আমি অমিতকে ফোন করে বললাম, "চলে আসতে." অমিত ২০ মিনিটের মধ্যে চলে এলো. অরিজিৎ আঙ্কেল বললেন," বস সবাই. দরজা বন্ধ করে দাও." আমি তাই করলাম. এবার অরিজিৎ আঙ্কেল মতিলাল বাবুর সাথে আলাপ আলোচনার বৃত্যান্ত দিতে লাগলেন.
অরিজিৎ: মিস্টার বণিক, দেখুন একটা হারের ছবি. এইটা চেনেন?
মতিলাল: হ্যান, এই হারটা আমার দোকানের.
অরিজিৎ: এখন কোথায় হারটা?
মতিলাল: বিক্রি হয়ে গেছে.
অরিজিৎ: এখানে দুটো চিরকুট আছে. লিখাগুলি চেনেন?
মতিলাল: না.
অরিজিৎ: এই ডাইরিটা কি আপনার?
মতিলাল: হ্যান.
অরিজিৎ: ডাইরি আর চিরকুটের লিখাগুলি একইরকম, তাই না?
মতিলাল: জানি না, আমি কিছু জানি না.
অরিজিৎ: জানেন তো মিস্টার বণিক, আমি কিন্তু পুলিশ. সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙ্গুল বাঁকাতে জানি. লক আপ এ ঢুকিয়ে এমন চাবুক মারবো না, সব বমি করে দেবেন. আপনার উপর একটি মহিলাকে ভয় দেখানোর কেস করে দিয়ে পুরো বণিক ফ্যামিলি বরবাদ করে দেব. সব কথা খুলে বলুন.
মতিলাল: মাপ করে দেন প্রভু. আপনি জিজ্ঞাসা করুন আমি বলছি.
অরিজিৎ: হারের রহস্যটা কি?
মতিলাল: ২০১৩ তে আমার দাদু হীরার হারটা কিনেছিলেন একজন বড়ো ব্যবসায়ীর কাছ থেকে. এরপরই দাদু খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন. আমার বাবাকে ডেকে তিনি বলেছিলেন, এই লকেট সহ হারটার জাদুকরী ক্ষমতা আছে. দাদু বাবাকে বলেছিলেন এই হারটা যার কাছে থাকবে সে লটারি জিততে পারবে. এটা কোনোদিন বিক্রি করতে না. যে ই এই হারটা কিনবে, সে অজানা কঠিন ব্যামোতে ভুগবে এবং দু মাসের মধ্যেই শেষ নিঃস্বাস ত্যাগ করবে. তখন বাবা বলেছিলেন, "তবে তুমি হার কিনলে কেন?". কিন্তু দাদু কোনো উত্তর দেন নি. আর ঠিক দু মাসের মধ্যেই দাদু চলে যান. বাবা ভুল করে এই নেকলেস টা ২০১৫ এর জানুয়ারী মাসে বাক্স এ তে দোকানে রেখে দিয়েছিলেন. আর কর্মচারীরা সেই ভুলটাই করে ফেলেছিলো. স্নেহা ম্যাডামরা যখন নেকলেস কিনতে এলো, ওই হারটা দেখিয়ে ছিল. তাই যখন স্নেহা ম্যাডামের স্বামী এই হারটা কিনতে গেলেন, বাবা ভয় পেয়ে না করেছিলেন. এর ফলেই স্নেহা ম্যাডামের স্বামীও দু মাসের মধ্যে কঠিন ব্যামোতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান. আর লটারি জিততে না পারে বাবা মানসিক রোগাক্রান্ত হয়ে পড়েন. হারটা থাকার জন্য স্নেহা ম্যাডাম ও এইবার লটারি জিতে যান.
অরিজিৎ: তা আপনি পুলিশ এর কাছে না এসে কেন চিরকুটের খেলা খেললেন? আপনি কি করে জানলেন, স্নেহা গেস্ট রুম এ নেকলেস রাখে?
মতিলাল: ওদের বাড়ির কাজের মাসিকে আমি টাকা দিয়ে হাত করেছিলেম. ওই সব খবর দিতো.
অরিজিৎ: ঠিক আছে আপনি বাড়ি যান. কিন্তু অন্য কোথাও যাবেন না .
সব শুনে অমিত বললো,"এক্সাক্টলি, আমিও সেটাই মনে মনে সমাধান করেছি." আমার খুব মন খারাপ লাগছিলো. নিশাদকে খুব মনে পড়ছিলো. নিশাদ তো আর জানতো না, সে একটা অভিশপ্ত হার আমার জন্যে নিচ্ছে. আমি কাঁদলাম, খুব কাঁদলাম.....সমাপ্ত
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
জয়শ্রী রায় মৈত্র ৩০/০৬/২০১৭অপূর্ব ... । সুন্দর গল্পের উপস্থাপনা ।
-
মোনালিসা ৩০/০৬/২০১৭ভাল
-
ফয়জুল মহী ২৮/০৬/২০১৭অনন্যসুলভ
-
পরশ ২২/০৬/২০১৭বুঝিনা
-
মোঃ সাখাওয়াত হোসেন ২১/০৬/২০১৭ভালো লেখনী,ধন্যবাদ গল্পকারকে।