www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

দুই বান্ধবীর গল্প

এই গল্প দুই বান্ধবীর, আরেকটু বেশী করে বললে বন্ধুত্বের ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া রঙের । একজনের নাম বনানী, ছোট করে বনা আর অন্যজনের পুকুল । ওরা দুজনেই নার্সারি ক্লাস থেকে একই স্কুলে পড়তো, শিশু সদন । ওদের দুজনের বাবারই কর্মস্থল ছিল এক জায়গাতেই সেকারনেই ওরা থাকত প্রায় পাশাপাশি কোয়ার্টারে ।
দুই বান্ধবীর গৃহশিক্ষিকাও ছিল এক, সদর স্কুলের মন্দিরাদি । পুকুল শুরু থেকেই পড়াশোনাতে বনার চেয়ে অনেক বেশি ভাল ছিল। বনার মনে হোত ওই জন্য মন্দিরাদি পুকুলকে যেন একটু বেশি পছন্দ করেন । কোন উপহার দিলে পুকুলের জন্যই ভাল জিনিসটা আনতেন । বনা সেটা স্বাভাবিক ভেবে মেনে নিয়েছিল আর তাতে দুই বান্ধবীর বন্ধুত্বে কোনো বিভেদ সৃষ্টি হয়নি ।

ওদের জুনিয়ার স্কুলের পড়াশোনা শেষ হলে হাইস্কুলেও ওরা একই সাথে ভর্তি হলো । তখন দুজনের গৃহশিক্ষিকা আর এক না থাকলেও স্কুল যাতায়াতের মাধ্যমটি কিন্তু একই ছিল, এক রিক্সাতেই স্কুলে যেত দুই বন্ধু । দুজনের বন্ধুত্ব আরও গভীর হতে শুরু করে । একই সাথে বড় হওয়া দুজনের । অন্য বন্ধুরা ওদের নিয়ে মজার সাথে হিংসে মিশিয়ে কথা বলত , ওরা পাত্তাও দিত না। ওদের পৃথিবী তখন পুতুল খেলা , রান্না বাটি সে সব থেকে অনেক বড় হয়ে গিয়েছে। এখন ওদের মধ্যে আরো বিভিন্ন অন্য গল্পও শুরু হয়ে গিয়েছিল। তারা তখন কিশোরী পথযাত্রী । তাই পালটেছিল গল্পের বিষয় বস্তুও ।সপ্তম শ্রেনীর ছাত্রী দুজনেই ।পুকুলের মা বাবা দুজনেই চাকরি করতেন ,ঘরে একা থাকার চেয়ে বনার সাথে খেলাধুলো, খুনসুটি, গান এসব অনেক বেশি ভালবাসত পুকুল ।

পুকুল দেখতেও বেশ সুন্দরী ছিল বনার তুলনায় । বনাদের কোয়ার্টারে বনার দূর সম্পর্কের এক দাদা থাকত, নাম অমিত । সেই অমিতের মা বাবা মারা গিয়েছিল কোন এক দুর্ঘটনায়, তাই সে তার মাসির বাড়িতে থাকত। অমিত দেখতে ভালো ছিল, স্বাস্থ্য ও ভালো। ফুটবল খেলায় পাড়ার সেরা। বনাদের ঘরের সমস্ত কাজ করে দিত অমিত । বাপ মা মরা ছেলেটির পৃথিবীতে আর কেউ ছিল না ওই মাসি - মেসো ছাড়া । তাই অনেক কষ্ট সহ্য করেও মুখ বুজে পড়ে থাকত সে মাসির বাড়িতে । বনার বাড়িতে আসা যাওয়া করতে করতে এসে ওই অমিতের সাথে পরিচিত হয় পুকুল । তারপর থেকে পুকুল কেমন যেন দুর্বল হয়ে পড়ে অমিতের প্রতি । ছেলেমানুষি প্রেমে পড়ে যায় অমিত পুকুল দুজনে । বনা অবশ্য পুকুলকে বুঝিয়েছিল যে ওদের দুজনের কোনো সামঞ্জস্য নেই । পুকুলের মা বাবা দুজনেই চাকুরিজীবি আর অমিত নিজেই থাকে মাসির বাড়িতে প্রায় কাজের লোকের মত ,তার উপর অমিত পড়াশুনো ও বিশেষ করেনি । এই সম্পর্কটা সেই বয়সেই বনার চোখে অসম্ভব লেগেছিল, কিন্তু পুকুলের ছেলেমানুষী ধারনা ছিল ও নিজে চাকরি করে ওদের সংসার চালাবে, আর অমিত মস্ত বড় খেলোয়ার হবে । সপ্তম শ্রেনীর পুকুল যেন অমিতের সাথে নিজের সংসার জীবন কল্পনা করে ফেলেছিল মনে মনে ।


একদিন বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত, পুকুল আর অমিতের ব্যাপারটা পুকুলের বাবা - মা জেনে ফেললেন। পুরো দোষটা পড়ল বনার উপর। বনা অবাক হয়ে দেখল কেমন সুন্দর করে সব দোষ তার বান্ধবী তার আর অমিতের ঘাড়ে ফেলে দিল। বনা হারালো বন্ধু, অমিত হারালো আশ্রয়। অষ্টম শ্রেণীতে সেকসন আলাদা হওয়ার কারনে বনা পুকুল পুরো আলাদা হয়ে যায় । বনার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয় পুকুল । স্কুলে বোনকে দেখেও না দেখার ভান করত। বনার শুরু থেকেই মেনে নেবার অভ্যেস , তাই এটাও মেনে নিল । ধীরে ধীরে পুকুলের শূন্যস্থান পূরনে আরো অনেক বন্ধুরা আসে বনার জীবনে । নবম শ্রেনীর শুরুতেই বনার বাবার কর্মস্থলের বদলি হয়ে যায় । শহর ছাড়ার আগে বনা অনেক বার ভেবেছিল পুকুলের সাথে কথা বলে ব্যাপারটা মিটমাট করে নিতে, কিন্তু পুকুল সে সুযোগ দেয়নি ।
নতুন জায়গায় এসে নতুন স্কুলে অনেক নতুন বন্ধুদের পেয়েছে বনা । তিন বছর পরে একদিন কোন বিশেষ কাজে মালদা যেতে হয়েছিল বনাকে, দুদিনের জন্য । তখন সে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে গিয়েছে । পুরোনো কিছু বন্ধুদের সাথে দেখা করে বেশ আনন্দ হচ্ছিল তার মনে । বারবার মনে হচ্ছিল পুকুলের কথা , কিন্তু কেন যেন সাহস করে ওদের বাড়ীতে গিয়ে দেখা করে উঠতে পারলনা তা নিজেই জানে না , না কি জানে !
তার পর বারো বছর কেটে গিয়েছে আজকের দিনে দাঁড়িয়ে বনা পুকুল দুজনেই পরিনত । বনার ফেসবুকের বন্ধুত্বের অনুরোধ যদিও পুকুল ফিরিয়ে দিয়েছে, তবু অন্য বন্ধু মারফৎ বনা আজও পুকুলের কিছু কিছু খবর রাখে । জীবিকা সূত্রে পুকুল শিক্ষিকা ,বিয়ে হয়ে এক পুত্র সন্তানের মা হয়েছে । বনার ও বিয়ে হয়ে সেও এখন সংসারি । দুজনে দুজনের জীবনে ভালোই আছে । ভাবতে অবাক লাগে একসময় বনা - পুকুল দুজনেই ভাবত , ওরা একে অপরকে ছেড়ে একদিন ও ভালো থাকবে না।
আবার একবার মালদা যেতে হলো বনা কে। কত পাল্টে গেছে , চারদিক, রাস্তাঘাট , মানুষ জন ! সব পাল্টে যায়।

কি আশ্চর্য হঠাৎ করেই সেই রিক্সা কাকুর সাথে দেখা হয়ে যায় বনার, বনা আর কাকু দুজনেই খুব খুশি । হটাত কি মনে হলো কাকুর কাছে আবদার করল পুকুলের বাড়ি নিয়ে চলো । বিয়ের পরে পুকুল মালদাতেই থাকে আর রিক্সা কাকু বাড়িটা চেনে , তাই অমত করেনি । মনে অনেক শংকা , অপমানিত হওয়ার ভয় নিয়ে বনা পুকুলের বাড়ীর কাছে এসে পৌঁছালো । দূর থেকে দেখল একটা বাড়ীর গেট খুলে একটা ছেলের হাত ধরে একজন মহিলা বেরিয়ে এলেন। পুকুল , কোনো ভুল নেই পুকুল। কিন্তু বাচ্চা ছেলেটা তো একেবারে ছোটবেলার অমিত দা ! চোখ মুখ একেবারে বসানো !
বনার মাথায় বিদ্যুত খেলে গেল। রিক্সা কাকু কে বললো, " কাকু রিক্সা ঘুরিয়ে নাও। ফিরবো "
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ১৬৯৪ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২১/১২/২০১৫

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • সীমা সান্যাল ২৫/১২/২০১৫
    আজ সারাদিন বনার কথাই নয় ভাবি? দারুন লাগল।।।।
  • ভাল লাগল শেষ চমকটা...।
  • হাসান কাবীর ২২/১২/২০১৫
    চমৎকার। ঝরঝর করে পড়ে গেলাম।
  • মাহাবুব ২২/১২/২০১৫
    লেগেছে ভালো, কবি।
  • পরশ ২২/১২/২০১৫
    ভাল লাগলো
  • পাকা হাতের লেখা গল্প। শেষে তো চমকে দিয়েছ ভাই (দিদিভাই). উহ! এরকম সাংঘাতিক লেখা। শেষ না করে মুখ ঘুরাতেই পারলাম না। পাঠককে বেশ বে কায়দায় ফেলতে পারবে। আপন মনে সবাই সিদ্ধান্ত নেবে।. লেখক মনের কথা লেখে ... পাঠক বুঝে নেয় সমাপিকা। .... এ একরকম স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতা হাতে হাতে দিল কে ..... মহাত্মা না মাউন্ট ?

    ও বুঝেছি ! অমিতের সাথে পাছে দেখা .........
  • শ্যাম ২১/১২/২০১৫
    চমতকার
    মৌলিদি, আঁটোসাটো।মনে হয় না প্রথম হাতের লেখা।
    চলুক। ভাল থাকুন।
  • আজিজ আহমেদ ২১/১২/২০১৫
    ভাল লাগলো।
    একটু কাব্যিকতার অভাব থেকে গেছে, গল্পের বর্ননায়।
    ভাল চেষ্টা।
  • নূরুল ইসলাম ২১/১২/২০১৫
    ভাল লাগল। সুন্দর বন্ধুত্বের কাহন।
    ধন্যবাদ।
    • মৌলী দাস ২১/১২/২০১৫
      প্রথম গল্প লেখার প্রয়াস করেছি ।আপনাদের সহযোগীতা আমাকে উৎসাহ দিয়েছে।অনেক ধন্যবাদ
  • ভালো লাগল মৌলী । খুব সুন্দর লিখেছিস
    • মৌলী দাস ২১/১২/২০১৫
      দাদা অসংখ্য ধন্যবাদ
      • আজকে কাঠির স্বরূপ উন্মোচন করেছি । একবার পড়িস সময় পেলে । প্রবন্ধে পাবি ।
  • অভিষেক মিত্র ২১/১২/২০১৫
    ভাল লাগল দিদি।
  • জে এস সাব্বির ২১/১২/২০১৫
    well-come blogger.. আপনি আজকে প্রমাণ করলেন ,ভালবাসা টিকে থাকে বন্ধুত্ব নয় । দ্বিমত থাকলেও মেনে নিচ্ছি ।।।
    • মৌলী দাস ২১/১২/২০১৫
      ধন্যবাদ কবি
      • জে এস সাব্বির ২১/১২/২০১৫
        কিন্তু আমার কাছে এরকম ভুরি ভুরি প্রমাণ আছে ,যা প্রমাণ করবে- ভালবাসা ভুলা যায় বন্ধুত্ব না । I request to not to hit the friendships-relation by your writting,any-more. thank you.
        • মৌলী দাস ২১/১২/২০১৫
          গল্প আর বাস্তব টা এক হয় কি কবি ।তবুও আমরা যখনই গল্প পড়ি তাতে বাস্তবকে খোঁজার চেষ্টা সচরাচর করেই থাকি ।।যাক তবুও গল্প তো কলমেই শেষ হয় ।বাস্তবে তা হয় না ।ধন্যবাদ আপনাকে অনেক ।আমার প্রথম গল্পকে ভাল ভাবে পড়াড় জন্য ।
  • তারুণ্যে স্বাগত। ভালো গল্প।
    • মৌলী দাস ২১/১২/২০১৫
      আপনার সহযোগীতা না পেলে গল্পের গঠন এত সুন্দর কোন মতেই হতে পারত না ।।আমি কৃতজ্ঞ ।
 
Quantcast