আয়না
...
শাকিল, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র। তার সহপাঠী মিতু তার খুব ভাল বন্ধু। রাসেল নামের একটা ছেলের সাথে মিতুর প্রেম চলছিল। আর এইদিকে শাকিলও রিদিতা নামের এক মেয়েকে অনেকটা উম্মাদের মত ভালবাসতো।তবে কখনো সরাসরি বলতে পারে নাই। আকার ইংগিতে বোঝাতে চেষ্টা করত। মেয়েটি তাকে কোনরূপই পাত্তা দিত না। বোঝেও না বুঝার ভান করত। কিন্তু শাকিল নিরাশ না হয়ে ক্রমাগত লেগেই থাকে। তবে একপর্যায়ে রিদিতার রিতা নামক এক বান্ধুবীকে হাত করে তার মাধ্যমে রিদিতার কাছে প্রেম প্রস্তাব পাঠাল। কিন্তু শাকিল কে রিতার মারফতেই জানাল যে তার বিয়ে পারিবারিক ভাবেই ঠিক হয়ে আছে। সুতরাং সম্ভব না। এতে শাকিল খুবই মনভগ্ন হল। এই দিকে একই সময়ে মিতুর প্রেমিকের সাথেও ব্রেক আপ হয়ে যায়।সে প্রেমিক পারিবারিক চাপ মেনে নিয়ে অন্য আরেকটা মেয়েকে বিয়ে করে। ফলে শাকিল ও মিতু একই সময়ে হতাশ ও মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পরে। এবং উভয়ের একই অবস্থা পরস্পর প্রতি পরস্পরের সহমর্মিতা সৃষ্টি করে। এবং তা একপর্যায়ে নতুন প্রেমে রুপ নেয়। এবং উভয়ের প্রেম চলতে থাকে নির্ভিগ্নে। মাস্টার্স ফাইনাল হয়ে যায় এর মধ্যে। শাকিল আর মিতু উভয়েই ফার্স্টক্লাস পেয়েছে। সব মিলে সময় টা ভালই কেটে যাচ্ছিল।
ছয়মাস পর।
একপরন্ত বিকালে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ইট সিমেন্টের তৈরি বেঞ্চে শাকিল আর মিতু বসে আছে। উভয়ের মাঝে একটি বাদাম ভর্তি কাগজের ঠোংগা। ঠোংগার চারপাশে কিছু বাদামের খোসাও পরে আছে।শাকিল এর মধ্যেই চাকরি পেয়ে গেছে।মিতুর এখনো হয়নি।তবে তার পরিবার তাকে বিয়ে দিতে উঠে পরে লেগেছে।
শাকিল একাই বাদাম খাচ্ছে।মিতু শুকনো মুখে মাথা নিচু করে বসে আছে।
শাকিলের পরিবার একটু রক্ষনশীল ধার্মিক ধরনের। এবং পরিবারের মেঝ সন্তান সে।আর পরিবারের সবচেয়ে মেধাবী সন্তান বলে তার প্রতি সবার ভালবাসা ও প্রত্যাশা অনেক বেশী।তাকে নিয়ে তাদের স্বপ্নও আকাশচুম্বী। শাকিল ভেবেছিল চাকরি পেলেই বন্ধুদের মাধ্যম ধরে মিতুর ব্যাপারে তার পরিবারের সাথে আলাপ করাবে। এবং সফল পরিনয় ঘটাবে। কিন্তু যে ভাবে ভেবেছিল ব্যাপারটা সেইভাবে আগায়নি। চাকরির জয়েন লেটার হাতে পেয়েই বাড়িতে ফোন দেয়। ফোনে মা বাবার সাথে আলাপ হয়। তারা আনন্দিত হয়। এবং খুব খুশি মনে জানায় যে, তার জন্য তারা একটা মেয়েকে দেখে রেখেছে। মেয়েটা তার খালাতো বোনের বান্ধুবী। তাকে তারাতারি বাড়িতে আসার আজ্ঞা করে মা বলেন,মেয়ে একদম পুতুলের মত দেখতে, আবার অনেক ধার্মিক। তুই এলেই বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করবো। এমন সুখকর খবরই শাকিলের মনে বিষাদ নিয়ে এল। ভাবতেই পারছেনা কি করবে? মা বাবা কে মিতুর কথা এইমূহুর্তে জানালে তারা খুব কষ্ট পাবে আবার মিতুকে কিভাবে বা বলবে ব্যাপারটা? এই ভাবতে ভাবতে বাদামের ঠোংগায় হাত বাড়ানো বন্ধ হয়ে গেছে। মিতু কড়া ও রাগত সুরে বলে চলল, বাবা মা আর অপেক্ষা করতে রাজি নয়। ভাল ভাল পাত্রের আনাগোনা বাড়ছে। এতদিন চাকরির সমস্যা ছিল। এখন তা নেই।কি করবে সিদ্ধান্ত নাও।আমার পক্ষে আর অপেক্ষা করা সম্ভব না।তুমি আমাদের বাড়িতে কোনরকমে প্রস্তাব পাঠাও। বাকিটা আমি দেখব।
শাকিল: পাঠাবো, তবে আমাকে আরো কিছুদিন সময় দাও। তুমি তো জান, আমার পরিবার সম্পর্কে। তাদের কে মেনেজ না করে,,,,, কিভাবে কি,,,,,,,,।
মিতু: দেখ একদম ই সময় নেই আমার হাতে।আর কোন ভরসায় অপেক্ষা করবো। তারা যদি আমায় শেষে পছন্দই না করে? তখন আমি কি করব? দেখ, কি করবে, কি করবেনা সেইটা তোমার ব্যাপার। আমি এত কিছু বুঝি না। বুঝতেও চাইনা। কি করবে না করবে ফাইনালি আমাকে কাল বিকালের মধ্যে জানাও। আমি তোমার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকছি।কি ভাবলে ফোন করে জানাবে।
এই বলেই মিতু উঠে সোজা হাটা শুরু করল।একটু দুরে গিয়ে আবার ঘুরে খানিক তাকিয়ে আবার নিজ গন্তব্যে হাটা শুরু করল। শাকিল নির্বিকার ভাবে আরো কিছুক্ষন বসে রইল। খানিক পর সেও চলে গেল। বাদাম সহ ঠোংগা শাকিল চলে যেতে না যেতেই দুইজন টোকাই নিয়ে কাড়াকাড়ি করে খেতে লাগল।
রাতে শাকিল নিজ বিছানায় বিষন্ন মনে শুয়ে আছে। কিন্তু কোন সিদ্ধান্তই নিতে পারছে না।একবার বাবা মা, ভাই বোনের কথা ভাবছে। তাকে নিয়ে তাদের অবর্নণীয় ত্যাগ, ভালবাসা আর স্বপ্নের কথা গুলো ভাবছে। আরেকবার মিতুর মায়াবী চেহারা তার চোখে ভাসছে। তার খুব দুসময়ে সে তার পাশে দাড়িয়েছিল। তাকে কিভাবে সে দুরে ঠেলে দিতে পারে,,, এইসব ভাবতে ভাবতে সে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পরল।
বিশেষ দৃশ্য ::(কল্পনায়) সিদ্ধান্ত ১.
কল্পনায় : ঘুমের ঘোরে সে বার বার দুইটি ছবি দেখছিল। বাবা মা ভাই বোনের পারিবারিক ছবি আর মিতুর ছবি। মিতুর ছবি হঠাত জিবন্ত হয়ে উঠল। এবং শাকিল হতচকিয়ে ঘুম থেকে জেগে উঠল,
মিতুর সম্পর্কে পরিবার কে জানাল।কিন্তু তার বাবা মা এতে রাজি না হওয়ায় নিজেই বন্ধু বান্ধব নিয়ে গিয়ে মিতু কে বিয়ে করে সোজা বাড়িতে গিয়ে উঠল। অনেক রাগারাগী ও আহাজারির পর তদেরকে মেনে নিয়ে ঘরে তুলল। তবে মনের দিক দিয়ে কেউই মিতু কে মেনে নিতে পারল না। যার ফলে যা হয়, যাকে দেখতে না পাড়ি তার চলন বাকা। ফলে এটা ওটা নিয়ে মিতু আর অন্যান্যদের মধ্যে নানাবিদ মনকষা কষি চলতেই থাকে। না তারা মিতুকে বুঝতে চেষ্টা করে, না মিতু তাদের বুঝিতে চেষ্টা করে। এইভাবে কিছুদিন চলার পর মিতু এই যন্ত্রনা থেকে বাচতে একটা ব্যাংকে চাকরি নেয়। এবং চাকরির যাতায়াতের ছুতা দিয়ে শাকিল কে নিয়ে আলাদা বাসায় উঠে। এইনিয়েও শাকিলের সাথে তার পরিবারের মনকষাকষি হয়। তবুও অসস্থিকর পরিবেশ থেকে বাচতে মিতু কে নিয়ে আলাদা বাসায় উঠে।
তবে এতেও শাকিল স্বস্থি পায় না। বরং বাড়ে। মিতুর এক সুদর্শন কলিগ এর সাথে খুব সন্দেহমুলক আচরন শাকিল কে বিষন্ন করে তুলে। মাতিউর নামের ওই কলিগ প্রায়ই তার প্রাইভেটকারে করে মিতুকে বাসা পর্যন্ত নামিয়ে দিয়ে দেখেছে সে। আর এতেই শাকিলের সন্দেহের আগুন প্রকট আকার ধারন করে। একপর্যায়ে দুইয়ের মধ্যে কলহের সুত্রপাত হয়। এবংহাতাহাতি এমনকি তা পাশবিক ঝগড়ায় রূপ নেয়। অনিবার্য বিচ্ছেদের মঞ্চে গিয়ে গিয়ে দাড়ায়।(দৃশ্যটি পিছনের দিকে ঘুরবে)
বিশেষ দৃশ্য:: সিদ্ধান্ত ২.(বাস্তবে)
মিতুকে নাকি পরিবারকে বেছে নিবে, এই ভাবতে ভাবতে শাকিল তন্দ্রাচ্ছন্ন। এবং মিতু ও তার পরিবারের দুটি ছবি আগের মতই ভেসে উঠেছে তার সামনে।এবার তার পরিবারের ছবিটি জীবন্ত হয়ে উঠল। এবং তার বাবা মা,ভাই বোন তার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে স্নেহময় নেত্রে তাকিয়ে আছে। এমতবস্থায় শাকিল হতচকিয়ে জেগে উঠল। ওয়াসরুমে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে ভাবনায় ডুবে গেল।
কিন্তু পরেরদিন স্যরি বলে মিতুকে মুঠফোনে বার্তা পাঠিয়ে দিল। আর মা কে ফোনে জানাল, অফিস শেষ করেই সন্ধায় বাড়ির দিকে রওনা হবে।
রাতের মধ্যেই বাড়ি পৌছল। বাবা মার কে গুরুত্ব দিয়ে মিতু কে বিসর্জন দিয়েছে ঠিকই। কিন্তু মিতুকে কিছুতেই ভুলতে পারছে না। সারাক্ষন মনমরা থাকছে।মিতুকে ভেবে কেদেছেও কয়েকবার।
এইদিকে শাকিলের বাড়ি ফেরার পর বাড়ির সবাই তার বিয়ে নিয়ে নানান জল্পনা কল্পনা করছে। এবং বাড়ি ফেরার পরের দিন সন্ধায় তাকে মেয়ে দেখতে নিয়ে গেল।
পরের দিন সন্ধায়, কনের বাড়িতে, কনে কে দেখার অপেক্ষায় কনের বাড়ির ড্রইংরুমে বসে আছে শাকিল, সাথে আছে তার বাবা,মা ভাই,ভাব,বোন আর মিডিয়া হিসেবে খালাতো বোন। শাকিল প্রথমে আসতে চায়নি।
মাকে বলছিল, তোমাদের যেখানে পছন্দ সেখানে আমার আর দেখার কি আছে? তোমরাই গিয়ে কথাবার্তা সেরে ফেল। কিন্তু কে শোনে কার কথা। বরং তার এই উক্তি কে লাজুকতার প্রতিক ভেবে অনেকটা টেনে নিয়ে এসেছে এখানে। পাত্রীদের ড্রইং রুম এ বসে অনিহা চিত্তে মুঠফোনের বাটন টিপছে। সে ছাড়া বাকিদের চেহারায় উতসবিয় আমেজ। প্রায় আধঘন্টা নির্বিকার বসে থাকার পর মাঝ বয়সী একজন মহিলা ঘোমটা দেওয়া পাত্রীকে নিয়ে ড্রইং রুমে হাজির হল। মেয়েটি সালাম দিয়ে শাকিলের প্রায় সামনা সামনি সোফার সামনে এসে দাড়াল। শাকিলের বাবা স্বভাবসুলভ হাসি দিয়ে সালামের উত্তর করেই বলেন, মা বস। মেয়েটিও নিশ্বব্দে লাজুক হাবভাবে বসে পরল।সেই সাথে শাকিলও মুঠফোন থেকে দৃষ্টি অনেকটা হেয়ালী ভাবে মেয়েটির দিকে ঘুরিয়ে নিল। কিন্তু যখন দৃষ্টি মেয়েটির উপর পরল তখন আর ব্যাপারটি হেয়ালি থাকল না। চোখ ছানাবড়া হয়ে কপালে উঠে যাবে প্রায়। যেন সে স্বপ্ন দেখছে।.... এইতো সেই মেয়ে যার জন্য কতরাত নির্ঘুম কেটেছে। উম্মাদ প্রায় হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তাকে পাওয়া ছিল কেবলই স্বপ্নের মত। আজ কি না সেই স্বপ্নই তার সামনে সেচ্ছায় পাত্রী হয়ে বসে আছে । রিদিতাকে এভাবে আবার দেখবে সেটাই তো তার অবাস্তব মনে হচ্ছে। শাকিল রিদিতাকে একান্তে আলাপের সুযোগ করে দিয়ে অন্যরা অন্য কক্ষে চলে গেল।কি হচ্ছে না হচ্ছে সেই নিয়ে শাকিলের সেই হুশ নেই।
তার সম্বিত ফিরল রিদিতার কৃত্তিম কাশির শব্দে। তারপর শাকিল রিদিতাকে অবাক সুরে জিজ্ঞেস করল, তোমার না কার সাথে যেন বিয়ে ঠিক হয়েছিল? রিদিতা: হুম, ঠিক ছিল না। আসলে তখন আপনাকে ঠেকাতে মিথ্যা বলেছিলাম। অনেক বেপরোয়া ছিলেন তো তখন।
আচ্ছা!! আপনি মিতু আপুকে বিয়ে করেন নি কেন?
শাকিল :তাও জানতে ?
রিদিতা: হুম।
শাকিল: আসলে আমাকে আমার বাবা মা ভাই বোন অনেক বেশী ভালবাসে এবং বিশ্বাস করেন। আর তারা এইরুপ সম্পর্ক কে পছন্দ করেন না। তাই আমি তাদেরে এই ভালবাসা ও বিশ্বাসকে ভাংতে চাইনি। তাদের বিশ্বাসের সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করতে চাইনি।
রিদিতা: আপনি ঠিক কাজ করেছেন।।
শাকিল: কিন্তু আগে এত অপছন্দ করে থাকলে, কিন্তু এখন কেন ?
রিদিতা: আগে অপছন্দ করতাম এটা কে বলল?
শাকিল: এই যে, বেপরোয়া? তাছাড়া অপছন্দ করে না থাকলে সম্ভব না বলে দিয়েছিলে কেন?
রিদিতা: তখন আপনি আমাকে বিয়ের প্রস্তাব করেন নি। আর আমি একজন ধর্মপ্রিয় মানুষ। আমি আমার নিজের বিশ্বাসের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে চাইনি।
শাকিল: হুমম,, তুমি আমার থেকেও অনেক বেশি ঠিক কাজ করেছ।
,,,,এমন সময় তাদের আলাপ থামাতে বাধ্য হল শাকিলের বড় আপুর খোটা সুচক হাক ডাকে।, , , কিরে তোদের আলাপ শেষ হয়েছে? প্রথম তো আসতে চাসনি, এখন দেখি.... যাবিনা নাকি?
,,,
অতপর,,,, রিদিতাকে দেখার পর থেকে শাকিল যে ঘোরে পড়েছে সেই ঘোর থেকে আর বেরুতেই পারেনি। অনেকটা স্বপ্নের মতই আংটি, হলুদ, বিয়ে সব অনুষ্ঠানই সম্পন্ন হল। উভয় পরিবারের সহযোগীতা আর নির্ভেজাল বিশ্বাস ও আস্থায় তাদের সংসার সুখের ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠা পেল।
শাকিল, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র। তার সহপাঠী মিতু তার খুব ভাল বন্ধু। রাসেল নামের একটা ছেলের সাথে মিতুর প্রেম চলছিল। আর এইদিকে শাকিলও রিদিতা নামের এক মেয়েকে অনেকটা উম্মাদের মত ভালবাসতো।তবে কখনো সরাসরি বলতে পারে নাই। আকার ইংগিতে বোঝাতে চেষ্টা করত। মেয়েটি তাকে কোনরূপই পাত্তা দিত না। বোঝেও না বুঝার ভান করত। কিন্তু শাকিল নিরাশ না হয়ে ক্রমাগত লেগেই থাকে। তবে একপর্যায়ে রিদিতার রিতা নামক এক বান্ধুবীকে হাত করে তার মাধ্যমে রিদিতার কাছে প্রেম প্রস্তাব পাঠাল। কিন্তু শাকিল কে রিতার মারফতেই জানাল যে তার বিয়ে পারিবারিক ভাবেই ঠিক হয়ে আছে। সুতরাং সম্ভব না। এতে শাকিল খুবই মনভগ্ন হল। এই দিকে একই সময়ে মিতুর প্রেমিকের সাথেও ব্রেক আপ হয়ে যায়।সে প্রেমিক পারিবারিক চাপ মেনে নিয়ে অন্য আরেকটা মেয়েকে বিয়ে করে। ফলে শাকিল ও মিতু একই সময়ে হতাশ ও মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পরে। এবং উভয়ের একই অবস্থা পরস্পর প্রতি পরস্পরের সহমর্মিতা সৃষ্টি করে। এবং তা একপর্যায়ে নতুন প্রেমে রুপ নেয়। এবং উভয়ের প্রেম চলতে থাকে নির্ভিগ্নে। মাস্টার্স ফাইনাল হয়ে যায় এর মধ্যে। শাকিল আর মিতু উভয়েই ফার্স্টক্লাস পেয়েছে। সব মিলে সময় টা ভালই কেটে যাচ্ছিল।
ছয়মাস পর।
একপরন্ত বিকালে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ইট সিমেন্টের তৈরি বেঞ্চে শাকিল আর মিতু বসে আছে। উভয়ের মাঝে একটি বাদাম ভর্তি কাগজের ঠোংগা। ঠোংগার চারপাশে কিছু বাদামের খোসাও পরে আছে।শাকিল এর মধ্যেই চাকরি পেয়ে গেছে।মিতুর এখনো হয়নি।তবে তার পরিবার তাকে বিয়ে দিতে উঠে পরে লেগেছে।
শাকিল একাই বাদাম খাচ্ছে।মিতু শুকনো মুখে মাথা নিচু করে বসে আছে।
শাকিলের পরিবার একটু রক্ষনশীল ধার্মিক ধরনের। এবং পরিবারের মেঝ সন্তান সে।আর পরিবারের সবচেয়ে মেধাবী সন্তান বলে তার প্রতি সবার ভালবাসা ও প্রত্যাশা অনেক বেশী।তাকে নিয়ে তাদের স্বপ্নও আকাশচুম্বী। শাকিল ভেবেছিল চাকরি পেলেই বন্ধুদের মাধ্যম ধরে মিতুর ব্যাপারে তার পরিবারের সাথে আলাপ করাবে। এবং সফল পরিনয় ঘটাবে। কিন্তু যে ভাবে ভেবেছিল ব্যাপারটা সেইভাবে আগায়নি। চাকরির জয়েন লেটার হাতে পেয়েই বাড়িতে ফোন দেয়। ফোনে মা বাবার সাথে আলাপ হয়। তারা আনন্দিত হয়। এবং খুব খুশি মনে জানায় যে, তার জন্য তারা একটা মেয়েকে দেখে রেখেছে। মেয়েটা তার খালাতো বোনের বান্ধুবী। তাকে তারাতারি বাড়িতে আসার আজ্ঞা করে মা বলেন,মেয়ে একদম পুতুলের মত দেখতে, আবার অনেক ধার্মিক। তুই এলেই বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করবো। এমন সুখকর খবরই শাকিলের মনে বিষাদ নিয়ে এল। ভাবতেই পারছেনা কি করবে? মা বাবা কে মিতুর কথা এইমূহুর্তে জানালে তারা খুব কষ্ট পাবে আবার মিতুকে কিভাবে বা বলবে ব্যাপারটা? এই ভাবতে ভাবতে বাদামের ঠোংগায় হাত বাড়ানো বন্ধ হয়ে গেছে। মিতু কড়া ও রাগত সুরে বলে চলল, বাবা মা আর অপেক্ষা করতে রাজি নয়। ভাল ভাল পাত্রের আনাগোনা বাড়ছে। এতদিন চাকরির সমস্যা ছিল। এখন তা নেই।কি করবে সিদ্ধান্ত নাও।আমার পক্ষে আর অপেক্ষা করা সম্ভব না।তুমি আমাদের বাড়িতে কোনরকমে প্রস্তাব পাঠাও। বাকিটা আমি দেখব।
শাকিল: পাঠাবো, তবে আমাকে আরো কিছুদিন সময় দাও। তুমি তো জান, আমার পরিবার সম্পর্কে। তাদের কে মেনেজ না করে,,,,, কিভাবে কি,,,,,,,,।
মিতু: দেখ একদম ই সময় নেই আমার হাতে।আর কোন ভরসায় অপেক্ষা করবো। তারা যদি আমায় শেষে পছন্দই না করে? তখন আমি কি করব? দেখ, কি করবে, কি করবেনা সেইটা তোমার ব্যাপার। আমি এত কিছু বুঝি না। বুঝতেও চাইনা। কি করবে না করবে ফাইনালি আমাকে কাল বিকালের মধ্যে জানাও। আমি তোমার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকছি।কি ভাবলে ফোন করে জানাবে।
এই বলেই মিতু উঠে সোজা হাটা শুরু করল।একটু দুরে গিয়ে আবার ঘুরে খানিক তাকিয়ে আবার নিজ গন্তব্যে হাটা শুরু করল। শাকিল নির্বিকার ভাবে আরো কিছুক্ষন বসে রইল। খানিক পর সেও চলে গেল। বাদাম সহ ঠোংগা শাকিল চলে যেতে না যেতেই দুইজন টোকাই নিয়ে কাড়াকাড়ি করে খেতে লাগল।
রাতে শাকিল নিজ বিছানায় বিষন্ন মনে শুয়ে আছে। কিন্তু কোন সিদ্ধান্তই নিতে পারছে না।একবার বাবা মা, ভাই বোনের কথা ভাবছে। তাকে নিয়ে তাদের অবর্নণীয় ত্যাগ, ভালবাসা আর স্বপ্নের কথা গুলো ভাবছে। আরেকবার মিতুর মায়াবী চেহারা তার চোখে ভাসছে। তার খুব দুসময়ে সে তার পাশে দাড়িয়েছিল। তাকে কিভাবে সে দুরে ঠেলে দিতে পারে,,, এইসব ভাবতে ভাবতে সে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পরল।
বিশেষ দৃশ্য ::(কল্পনায়) সিদ্ধান্ত ১.
কল্পনায় : ঘুমের ঘোরে সে বার বার দুইটি ছবি দেখছিল। বাবা মা ভাই বোনের পারিবারিক ছবি আর মিতুর ছবি। মিতুর ছবি হঠাত জিবন্ত হয়ে উঠল। এবং শাকিল হতচকিয়ে ঘুম থেকে জেগে উঠল,
মিতুর সম্পর্কে পরিবার কে জানাল।কিন্তু তার বাবা মা এতে রাজি না হওয়ায় নিজেই বন্ধু বান্ধব নিয়ে গিয়ে মিতু কে বিয়ে করে সোজা বাড়িতে গিয়ে উঠল। অনেক রাগারাগী ও আহাজারির পর তদেরকে মেনে নিয়ে ঘরে তুলল। তবে মনের দিক দিয়ে কেউই মিতু কে মেনে নিতে পারল না। যার ফলে যা হয়, যাকে দেখতে না পাড়ি তার চলন বাকা। ফলে এটা ওটা নিয়ে মিতু আর অন্যান্যদের মধ্যে নানাবিদ মনকষা কষি চলতেই থাকে। না তারা মিতুকে বুঝতে চেষ্টা করে, না মিতু তাদের বুঝিতে চেষ্টা করে। এইভাবে কিছুদিন চলার পর মিতু এই যন্ত্রনা থেকে বাচতে একটা ব্যাংকে চাকরি নেয়। এবং চাকরির যাতায়াতের ছুতা দিয়ে শাকিল কে নিয়ে আলাদা বাসায় উঠে। এইনিয়েও শাকিলের সাথে তার পরিবারের মনকষাকষি হয়। তবুও অসস্থিকর পরিবেশ থেকে বাচতে মিতু কে নিয়ে আলাদা বাসায় উঠে।
তবে এতেও শাকিল স্বস্থি পায় না। বরং বাড়ে। মিতুর এক সুদর্শন কলিগ এর সাথে খুব সন্দেহমুলক আচরন শাকিল কে বিষন্ন করে তুলে। মাতিউর নামের ওই কলিগ প্রায়ই তার প্রাইভেটকারে করে মিতুকে বাসা পর্যন্ত নামিয়ে দিয়ে দেখেছে সে। আর এতেই শাকিলের সন্দেহের আগুন প্রকট আকার ধারন করে। একপর্যায়ে দুইয়ের মধ্যে কলহের সুত্রপাত হয়। এবংহাতাহাতি এমনকি তা পাশবিক ঝগড়ায় রূপ নেয়। অনিবার্য বিচ্ছেদের মঞ্চে গিয়ে গিয়ে দাড়ায়।(দৃশ্যটি পিছনের দিকে ঘুরবে)
বিশেষ দৃশ্য:: সিদ্ধান্ত ২.(বাস্তবে)
মিতুকে নাকি পরিবারকে বেছে নিবে, এই ভাবতে ভাবতে শাকিল তন্দ্রাচ্ছন্ন। এবং মিতু ও তার পরিবারের দুটি ছবি আগের মতই ভেসে উঠেছে তার সামনে।এবার তার পরিবারের ছবিটি জীবন্ত হয়ে উঠল। এবং তার বাবা মা,ভাই বোন তার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে স্নেহময় নেত্রে তাকিয়ে আছে। এমতবস্থায় শাকিল হতচকিয়ে জেগে উঠল। ওয়াসরুমে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে ভাবনায় ডুবে গেল।
কিন্তু পরেরদিন স্যরি বলে মিতুকে মুঠফোনে বার্তা পাঠিয়ে দিল। আর মা কে ফোনে জানাল, অফিস শেষ করেই সন্ধায় বাড়ির দিকে রওনা হবে।
রাতের মধ্যেই বাড়ি পৌছল। বাবা মার কে গুরুত্ব দিয়ে মিতু কে বিসর্জন দিয়েছে ঠিকই। কিন্তু মিতুকে কিছুতেই ভুলতে পারছে না। সারাক্ষন মনমরা থাকছে।মিতুকে ভেবে কেদেছেও কয়েকবার।
এইদিকে শাকিলের বাড়ি ফেরার পর বাড়ির সবাই তার বিয়ে নিয়ে নানান জল্পনা কল্পনা করছে। এবং বাড়ি ফেরার পরের দিন সন্ধায় তাকে মেয়ে দেখতে নিয়ে গেল।
পরের দিন সন্ধায়, কনের বাড়িতে, কনে কে দেখার অপেক্ষায় কনের বাড়ির ড্রইংরুমে বসে আছে শাকিল, সাথে আছে তার বাবা,মা ভাই,ভাব,বোন আর মিডিয়া হিসেবে খালাতো বোন। শাকিল প্রথমে আসতে চায়নি।
মাকে বলছিল, তোমাদের যেখানে পছন্দ সেখানে আমার আর দেখার কি আছে? তোমরাই গিয়ে কথাবার্তা সেরে ফেল। কিন্তু কে শোনে কার কথা। বরং তার এই উক্তি কে লাজুকতার প্রতিক ভেবে অনেকটা টেনে নিয়ে এসেছে এখানে। পাত্রীদের ড্রইং রুম এ বসে অনিহা চিত্তে মুঠফোনের বাটন টিপছে। সে ছাড়া বাকিদের চেহারায় উতসবিয় আমেজ। প্রায় আধঘন্টা নির্বিকার বসে থাকার পর মাঝ বয়সী একজন মহিলা ঘোমটা দেওয়া পাত্রীকে নিয়ে ড্রইং রুমে হাজির হল। মেয়েটি সালাম দিয়ে শাকিলের প্রায় সামনা সামনি সোফার সামনে এসে দাড়াল। শাকিলের বাবা স্বভাবসুলভ হাসি দিয়ে সালামের উত্তর করেই বলেন, মা বস। মেয়েটিও নিশ্বব্দে লাজুক হাবভাবে বসে পরল।সেই সাথে শাকিলও মুঠফোন থেকে দৃষ্টি অনেকটা হেয়ালী ভাবে মেয়েটির দিকে ঘুরিয়ে নিল। কিন্তু যখন দৃষ্টি মেয়েটির উপর পরল তখন আর ব্যাপারটি হেয়ালি থাকল না। চোখ ছানাবড়া হয়ে কপালে উঠে যাবে প্রায়। যেন সে স্বপ্ন দেখছে।.... এইতো সেই মেয়ে যার জন্য কতরাত নির্ঘুম কেটেছে। উম্মাদ প্রায় হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তাকে পাওয়া ছিল কেবলই স্বপ্নের মত। আজ কি না সেই স্বপ্নই তার সামনে সেচ্ছায় পাত্রী হয়ে বসে আছে । রিদিতাকে এভাবে আবার দেখবে সেটাই তো তার অবাস্তব মনে হচ্ছে। শাকিল রিদিতাকে একান্তে আলাপের সুযোগ করে দিয়ে অন্যরা অন্য কক্ষে চলে গেল।কি হচ্ছে না হচ্ছে সেই নিয়ে শাকিলের সেই হুশ নেই।
তার সম্বিত ফিরল রিদিতার কৃত্তিম কাশির শব্দে। তারপর শাকিল রিদিতাকে অবাক সুরে জিজ্ঞেস করল, তোমার না কার সাথে যেন বিয়ে ঠিক হয়েছিল? রিদিতা: হুম, ঠিক ছিল না। আসলে তখন আপনাকে ঠেকাতে মিথ্যা বলেছিলাম। অনেক বেপরোয়া ছিলেন তো তখন।
আচ্ছা!! আপনি মিতু আপুকে বিয়ে করেন নি কেন?
শাকিল :তাও জানতে ?
রিদিতা: হুম।
শাকিল: আসলে আমাকে আমার বাবা মা ভাই বোন অনেক বেশী ভালবাসে এবং বিশ্বাস করেন। আর তারা এইরুপ সম্পর্ক কে পছন্দ করেন না। তাই আমি তাদেরে এই ভালবাসা ও বিশ্বাসকে ভাংতে চাইনি। তাদের বিশ্বাসের সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করতে চাইনি।
রিদিতা: আপনি ঠিক কাজ করেছেন।।
শাকিল: কিন্তু আগে এত অপছন্দ করে থাকলে, কিন্তু এখন কেন ?
রিদিতা: আগে অপছন্দ করতাম এটা কে বলল?
শাকিল: এই যে, বেপরোয়া? তাছাড়া অপছন্দ করে না থাকলে সম্ভব না বলে দিয়েছিলে কেন?
রিদিতা: তখন আপনি আমাকে বিয়ের প্রস্তাব করেন নি। আর আমি একজন ধর্মপ্রিয় মানুষ। আমি আমার নিজের বিশ্বাসের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে চাইনি।
শাকিল: হুমম,, তুমি আমার থেকেও অনেক বেশি ঠিক কাজ করেছ।
,,,,এমন সময় তাদের আলাপ থামাতে বাধ্য হল শাকিলের বড় আপুর খোটা সুচক হাক ডাকে।, , , কিরে তোদের আলাপ শেষ হয়েছে? প্রথম তো আসতে চাসনি, এখন দেখি.... যাবিনা নাকি?
,,,
অতপর,,,, রিদিতাকে দেখার পর থেকে শাকিল যে ঘোরে পড়েছে সেই ঘোর থেকে আর বেরুতেই পারেনি। অনেকটা স্বপ্নের মতই আংটি, হলুদ, বিয়ে সব অনুষ্ঠানই সম্পন্ন হল। উভয় পরিবারের সহযোগীতা আর নির্ভেজাল বিশ্বাস ও আস্থায় তাদের সংসার সুখের ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠা পেল।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
sudipta chowdhury ২৮/১২/২০১৯See the face of loving person in the mirror of heart.
-
হাদী মুহাম্মাদ রকিব উদ্দীন ০৩/০৯/২০১৮বেশ রোমান্টিক
-
ন্যান্সি দেওয়ান ১৫/০৮/২০১৮Darun.
-
আভিক শ্যাম ১৫/০৮/২০১৮দারুন গল্প ।।
-
ঐশিকা প্রজীতা বসু ১৪/০৮/২০১৮প্রেমের গল্প হিসেবে খুব সুন্দর।
-
সয়েল সেলিম হাসান ১৪/০৮/২০১৮ভালো