www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

শহীদ

আমার লাশটা পড়েছিল রায়ের বাজারের ঐ বদ্ধ ভূমিতে,
বিবস্ত্র, নগ্ন, হাত পা বাঁধা গুলিতে ঝাঁঝরা রক্তাক্ত অবস্থায়,
আমি একা ছিলাম না, আমার সাথে ছিল আরো অসংখ্য লাশ।
চিল, শকূন, শিয়াল কুকুরের সে কি মহা উৎসব আমাদের লাশ নিয়ে।
সেদিন ছিল ১৪ই ডিসেম্বার, হ্যাঁ বেশ মনে আছে আমার মৃত্যুর তারিখটা,
সবে মাত্র ট্রানজিস্টারে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে
মুক্তি বাহিনীর আরো একটা বিজয়ের সংবাদ শুনে আনন্দে আত্মহারা হচ্ছিলাম।
আর ঠিক তখনই দরজায় স্বজোড়ে ধাক্কানোর শব্দ তার সাথে বুটের লাথি,
আমার ছোট সোনা মণিটা আমার কুর্তাটা পিছন থেকে টেনা ধরে রেখেছে,
আমার প্রিয়তম স্ত্রী মাথা নেড়ে আমায় ইশারায় দরজা খুলতে নিষেধ করছে,
আমিতো ভীতু নই, ভীতুর মত গর্তে লুকিয়ে থাকা আমার স্বভাবের বাইরে,
আমি যে জয় বাংলার লোক, আমি যে স্বাধীন বাংলার লোক, আমি যে বীর বাঙ্গালী।
আমি দৃঢ় পায়ে হেঁটে গেলাম দরজা পর্যন্ত, একবার পিছনে ফিরে তাকালাম
দেখালাম আমার সোনা মণিটার মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে,
আমার স্ত্রীর চোখ জোড়া যেন ভয়ে কোটর ছেড়ে বের হয়ে যাবার জোগার।
আমি দরজার ছিটকিনি খুললাম, জানি ওরা আমায় গ্রেফতার করতে নয় মারতে এসেছে।
খাকি রঙের পোশাক পড়া আট, দশ জন পাক আর্মি দরজাটায় স্বজোড়ে লাথি দিয়ে ঘরে ঢুকে গেল,
সাথে ছিল আলবদর, আল সামস সহ এই দেশের বাঙ্গালী নামক কিছু পাকি জাররজ ।
‘ডাক্তার সাব আপকো হামারি সাথ আনা পারেগা’
আমি দৃঢ় কণ্ঠে বললাম ‘আমি প্রস্তুত, চল কোথায় যেতে হবে’
এক ঝাটকায় ওরা আমায় নিয়গেলো বাঘ যেমন তার শিকার নিয়ে যায় ঠিক সেই ভাবে।
বের হবার আগে শুধু রেনুর পাগলের মত প্রলাপ শুনলাম
‘ ও কে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ তোমরা ও কে ছেড়ে দাও আল্লাহর দোহাই।’
ওটাই ছিল আমার শ্রাব্যে রেনুর শেষ কণ্ঠ স্বর।
ওরা আমায় ওদের আর্মি ট্রাকে নিয়ে বসালো,
চোখে কাল পট্টির সাথে হাত জোড়াও পিছমোড়া করে বেঁধে দিল।
কোথায় নিয়ে যাচ্ছে কিছুই বুঝতে পারলাম না, শুধু অনুভব করলাম
একটু পড় পড় ট্রাকটা থামছে আর আমার মতই বন্দীদের তুলছে।
হঠ্যাৎ ট্রাকটি থেমে যায়, ট্রাকের সাথে সাথে যেন প্রকৃতিও থেমে যায়,
এখন যে জঘন্যতম হত্যার একটি ইতিহাস লেখা হবে এই বাংলার বুকে।
ওরা একে একে আমদের লাইন করে দাঁড় করালো,
মাথায় রাজ্যের চিন্তার ঝড় বয়ে গেল।
মরার আগে স্বাধীন দেখে যেতে পারলাম না আমার সোনার বাংলা কে,
মরার আগে আমার দুঃখিনী বাংলার বুক থেকে পাক হানাদারদের পতন
দেখে যেতে পারলাম না, দেখে যেতে পারলাম না আমার সোনার বাংলার
লাল সবুজের পতাকা উড়ছে স্বাধীন বাংলার স্বাধীন আকাশে।
কি করছে রেনু? আমার ছোট্ট সোনা মণিটা কি করছে?
রেনু কে শেষ কথাটাও বলে যেতে পারলাম না,
রেনু আমার ছোট্ট সোনা মনিকে বলো ওর বাবা শহীদ হয়েছে বাংলা মার জন্য,
যদি ও জানি আমার লাশ পাবে না তোমরা তাই আমায় লাশের মিছিলে খুঁজে লাভ নেই।
আমিতো মিশে থাকবো এই স্বাধীন বাংলার আকাশে বাতাসে, ধূল কণায়,
আমি জানি আমার বাংলা স্বাধীন হবেই। জয় বাংলা জয় বাংলা জয় বাংলা..।।

১৩ই ডিসেম্বার ২০১৫ইং
টোলামোর, আয়ারল্যান্ড।
বিষয়শ্রেণী: কবিতা
ব্লগটি ৭৫৯ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৩/১২/২০১৫

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • অসাধারণ আত্মশুদ্ধির লেখা।
  • সাইদুর রহমান ১৭/১২/২০১৫
    খুব সুন্দর।
  • খুব ভালো লাগলো
  • হাসান কাবীর ১৪/১২/২০১৫
    চমৎকার লেখা, শুভেচ্ছা রইলো।
  • আপনাকেও শ্রদ্ধা ও ভালবাসা। অনেক ভাল লাগল এ রকম একজনের অনুভূতির প্রকাশ। এবং একজন শহীদ বুদ্ধিজীবির আত্মকথায় রচিত কবিতালেখ্যটি। জয় বাংলা।
 
Quantcast