উন্নয়ন এবং শিক্ষা
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহের অন্যতম প্রধান হিসেবে অর্থাত্ লক্ষ্য সপ্তদশের মধ্যে চার নম্বরে স্থান দেওয়া হয়েছে মানসম্মত শিক্ষাকে। সর্বস্তরে শিক্ষার মানোন্নয়নের গুরুত্ব সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহের (এমডিজি) মধ্যেও ছিল এবং সঙ্গত কারণেই টেকসই উন্নয়ন রূপরেখায়ও একে ব্যাপক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বস্তুত নতুন সহস্রাব্দে মানবজাতি একটি নতুন সময়ে, নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলার জন্য নতুন নতুন প্রস্তুতি গ্রহণ শুরু করে। আর এর সবচাইতে বেশি অভিঘাত লক্ষ করা যায় শিক্ষা ও গবেষণায়। বাংলাদেশও এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। বিশেষ করে ২০০৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)-এর তত্ত্বাবধানে HEQEP (Higher Education Quality Enhancement Project) এর কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে। বাংলাদেশ সরকার এবং বিশ্বব্যাংকের যৌথ অর্থায়নে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের পরিচালনায় দেশের ৩৮টি সরকারি এবং ৯৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠন পাঠন ও গবেষণায় কমবেশি কোয়ালিটি অ্যাশিউরেন্স পদ্ধতির ছোঁয়া লেগেছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্ডারগ্রাজুয়েট এবং গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামসমূহ মূল্যায়নের জন্য সেলফ অ্যাসেসমেন্ট এবং পিয়ার রিভিউ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। কারিকুলাম এবং সিলেবাসে অভিনবত্ব ও আন্তর্জাতিকতার ছাপ লাগছে। ক্লাসরুমে শিক্ষার পাশাপাশি গবেষণাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। QA পদ্ধতির সকল দিক অর্থাৎ অ্যাসেসমেন্ট, অ্যাক্রেডিটেশন এবং অডিট কার্যক্রম চালু হয়েছে। বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষা সংস্কারের অনুকূলে সবচাইতে বড়ো প্রেরণা হলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিক্ষানুরাগ এবং গবেষণা বোধ। একটি কার্যকর ও টেকসই ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য তিনি এ মুহূর্তে প্রয়োজনানুগ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার ওপর সবিশেষ গুরুত্ব আরোপ করছেন। উচ্চ শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করার জন্য জাতীয় সংসদে বাংলাদেশ অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল বিল ২০১৭ পাস করা বর্তমান সরকারের একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ। বস্তুত উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণার মাননিয়ন্ত্রণের ব্যাপারটি শক্ত আইনী কাঠামোর মধ্যে না আনতে পারলে তা কার্যকর করা যে কোনোমতেই সম্ভব নয়— বর্তমান সরকার তা যথাযথভাবেই উপলব্ধি করতে পেরেছেন। ইতোমধ্যে ভারত, শ্রীলংকা এবং থাইল্যান্ডের মতো দেশ জাতীয় অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল/বোর্ডের মাধ্যমে উচ্চ শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা যেমন আমাদের অপার সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিতে পারে, তেমনি অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ শিক্ষা পরিবেশ পারে নিত্যনতুন সংকট সৃষ্টি করতে। সময়ের প্রয়োজনেই হু হু করে বাড়ছে উচ্চ শিক্ষায় অংশগ্রহণের সংখ্যা। দেশের বর্তমান ৩৮টি পাবলিক এবং ৯৩টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৩ দশমিক ২ মিলিয়ন ছেলেমেয়ে লেখাপড়া করছে। এদেরকে দেশ ও জনগণের প্রতি দায়িত্বশীল অথচ উচ্চ মানসম্পন্ন করে গড়ে তুলতে গেলে অবশ্যই সুষ্ঠু, সুন্দর ও সুসমন্বিত শিক্ষা পলিসি ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন দরকার। যে জন্য দরকার যথাযথ কারিকুলাম, সিলেবাস, পরিবেশ এবং অভিজ্ঞ প্রশিক্ষক। আমাদের প্রয়োজন ভিশন মিশননির্ভর কার্যক্রম এবং তা বাস্তবায়নের কৌশলগত পরিকল্পনা। আমাদের এ মুহূর্তে প্রাকৃতিক সম্পদের সর্বোচ্চ আহরণ নিশ্চিত করতে হবে। এনার্জি জেনারেশনের দেশজ কৌশল রপ্ত করতে হবে। বন্যা খরা লবণাক্ততা সহিষ্ণু শস্যের উত্পাদন বাড়াতে হবে। পানি ব্যবস্থাপনার বহুমাত্রিক কৌশল রপ্ত করতে হবে। দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন ও রপ্তানির বন্দোবস্ত করতে হবে। আরএমজি, ফার্মাসিউটিক্যালসের বাজার সম্প্রসারণ করতে হবে। নীল অর্থনীতি উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। আইসিটি খাতে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটাতে হবে। রেমিট্যান্সের প্রবাহ বাড়াতে হবে। জাতীয় প্রবৃদ্ধির হার গতিশীল রাখতে হবে। আর এসব কিছু টেকসইভাবে করার জন্য প্রয়োজন ১৬০ মিলিয়ন জনগণকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত করা। আর সেজন্য দরকার শিক্ষা— বিশেষ করে উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণার মানোন্নয়ন। বাংলাদেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগকে যদি একেকটি গবেষণাগার হিসেবে গড়ে তোলা যায়, তাহলে আমরা ২০২১ সালে যে মধ্যম আয়ের দেশের কিংবা ২০৪১ সালে যে উন্নত দেশের স্বপ্ন দেখছি তার জন্য হয়তো এত দেরি নাও করতে হতে পারে।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
আব্দুল হক ০৭/০৯/২০১৭সুন্দর, বেশ লিখেছেন!!