www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

দেশের ওষুধ শিল্প উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর অবদান

বাংলাদেশের উন্নত রাষ্ট্রের অভিযাত্রায় অন্যান্য পেশাজীবীদের সঙ্গে দেশের ফার্মাসিস্টরাও অংশগ্রহণ করেছে। আজকের বাংলাদেশে ওষুধ শিল্পের যে বলিষ্ঠ অবস্থান, এর পেছনে বঙ্গবন্ধুর যে অবদান ছিল তা ওষুধবিজ্ঞানীরা গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছে। বঙ্গবন্ধু শক্ত হাতে বিভিন্ন সেক্টরে বিধ্বস্ত অর্থনীতিকে গড়ে তোলার কাজ শুরু করেন। তখন ওষুধ সেক্টরের পরিস্থিতি ছিল অত্যন্ত নাজুক। দেশের চাহিদার ৮০% এরও বেশি ওষুধ অত্যন্ত মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে আমদানি করতে হতো। দেশে যে সামান্য উৎপাদন হতো তারও সিংহভাগ ছিল বিদেশী কোম্পানিগুলোর উৎপাদিত। ওষুধ সেক্টরে সরকারী নিয়ন্ত্রণও অত্যন্ত সীমিত ছিল, কারণ এই নিয়ন্ত্রণের জন্য কোন কার্যকর সরকারী সংস্থা ছিল না। যা ছিল তা হলো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বদলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি ‘ড্রাগ কন্ট্রোলারের অফিস।’ দেশের মানুষ যাতে প্রয়োজনের সময় প্রয়োজনীয় ওষুধটুকুই কিনতে পারে এবং মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় বন্ধ করা যায় সে লক্ষ্যে স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু দেশের কয়েকজন প্রখ্যাত চিকিৎসককে নিয়ে ১৯৭৩ সালে একটি কমিটি গঠন করেন। এই কমিটিকে এ বিষয়ক নীতিমালা প্রণয়ন ও বিদেশ থেকে আমদানিকৃত ওষুধ বাছাই, মান যাচাই, পরিমাণ ও মূল্য নির্ধারণের মাধ্যমে আমদানি নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা দেয়া হয়। এর মাধ্যমে অনেক ওষুধের আমদানি নিষিদ্ধ এবং অনেকগুলোর আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। বাস্তব অর্থে বাংলাদেশে এটিই ছিল প্রথম একটি ‘ছায়া ওষুধনীতি’, পূর্ণাঙ্গ না হলেও যা ছিল তখনকার পরিপ্রেক্ষিতে উল্লেখযোগ্য। এর ফলে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ওষুধ আমদানি খাতে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় বন্ধ হয়, জনগণ অপ্রয়োজনীয় ওষুধের পেছনে কষ্টার্জিত পয়সা খরচ না করে জীবন রক্ষাকারী ও অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের পেছনে তা খরচ করতে সক্ষম হয় এবং গরিব জনগণের জন্য সাশ্রয়ী খরচে চিকিৎসা সেবা প্রদান চালু করা সম্ভব হয়। বঙ্গবন্ধু জনস্বাস্থ্য রক্ষার স্বার্থে বিভিন্ন বিদেশী কোম্পানির পেটেন্টকৃত ওষুধও দেশীয় কোম্পানি কর্তৃক উৎপাদনের জন্য গরিব দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে পেটেন্ট আইনের বাইরে রাখেন। ফলে দেশীয় কোম্পানিগুলো বিপুল প্রণোদনা লাভ করে এবং প্রতিযোগিতামূলক বাজারের কারণে জীবন রক্ষাকারী ওষুধগুলোর দাম কমে আসার পাশাপাশি এগুলো সহজলভ্য হয়। এবং দেশের অর্থনীতিতেও তা অবদান রাখতে শুরু করে। কিন্তু ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকান্ডের পর তদানীন্তন সরকার বঙ্গবন্ধুর আমলের আমদানি-নিষিদ্ধ ওষুধগুলোর ওপর থেকে নিয়ন্ত্রণ প্রত্যাহার করে নেয়। এর ফলে ক্ষতিকর ও অপ্রয়োজনীয় ওষুধগুলো পুনরায় এদেশে আমদানি ও স্থানীয়ভাবে উৎপাদন শুরু হয়। ওষুধের বাজার পুনরায় প্রায় একচ্ছত্রভাবে বিদেশীদের হাতে চলে যায়। এ অবস্থা ১৯৮২ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। এর অবসানে দেশের মানুষকে ক্ষতিকর ও অপ্রয়োজনীয় ওষুধের হাত থেকে রক্ষা করতে এবং দেশীয় ওষুধ শিল্পকে পুনরায় প্রণোদনা দিতে ১৯৮২ সালে দেশে প্রথম পূর্ণাঙ্গ জাতীয় ওষুধনীতি প্রণীত হয়। কিন্তু তাতেও বঙ্গবন্ধু সরকারের সময়ে অর্থাৎ ১৯৭৩ সালে যে ওষুধ আমদানি নীতিমালা বা ‘ছায়া ওষুধনীতি’ প্রণয়ন করা হয়েছিল তাই ছিল মূলনীতি। আজ যে আমরা পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় কমদামে জীবন রক্ষাকারী ওষুধগুলো তৈরি করতে পারছি এবং ওষুধের পেটেন্ট আমাদের দেশের ওপর ২০৩২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রয়োজ্য হবে না, তার তৎপরতার জন্য আমরা বর্তমান সরকার এবং পথ দেখানোর জন্য বঙ্গবন্ধুর কাছে ঋণী। ওষুধ সেক্টরে বঙ্গবন্ধুর এসব অবদানের ফলে আজ আমরা ওষুধ উৎপাদনে প্রায় স্বনির্ভর। বঙ্গবন্ধু আমাদের শুধু একটি দেশ-মানচিত্র-পতাকা-সংবিধান আর জাতীয় সঙ্গীতই দিয়ে যাননি। তিনি আমাদের দিয়েছেন একটি চেতনা বা বিশ্ব দরবারে বুক ফুলিয়ে ‘বাঙালী’ হিসেবে পরিচয় দেয়ার সাহস।
বিষয়শ্রেণী: সংবাদ
ব্লগটি ৭৯৪ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২০/০৮/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast