সরকারি চাকরিজীবীদের আবাসন সুবিধার নিশ্চিতে নির্মাণ হচ্ছে পাঁচ হাজার ফ্ল্যাট
বর্তমানে সারাদেশে সরকারি চাকরিজীবীর সংখ্যা প্রায় ১৩ লাখ। এর মধ্যে প্রায় দেড় লাখই ঢাকায় কর্মরত। চাকরিজীবীদের তুলনায় আবাসন সুবিধার পরিমাণ খুবই নগণ্য। আবার ক্ষেত্র ও স্থান বিশেষে সরকারি চাকরিজীবীদের বাড়ি ভাড়া হিসেবে দেয়া ভাতার পরিমাণ বাস্তব ভাড়ার তুলনায় অনেক কম। ফলে ওইসব চাকরিজীবী পরিবার নিয়ে রাজধানী বা বিভাগীয় শহরে বসবাস করতে পারেন না। নিম্ন আয়ের সরকারি চাকরিজীবীদের বেশিরভাগেরই আবাসন সুবিধা না থাকায় গ্রামে বাস করছেন। আবার মধ্যম শ্রেণির কর্মকর্তাদের অনেকেই সরকারের নির্ধারিত অঙ্কের চেয়েও বেশি বাড়ি ভাড়া দিয়ে সন্তান ও পরিবার নিয়ে শহরে বাস করছেন। প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রেও দেয়া সরকারি আবাসন সুবিধা উল্লেখযোগ্য নয়। এ অবস্থায় সরকারি চাকরিজীবীদের আবাসন সুবিধা বাড়ানোর লক্ষ্যে চাকরিতে যোগদানের পাঁচ বছরের মধ্যেই সরকারি কর্মচারীদের ফ্ল্যাট বরাদ্দের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। যা চাকরিকালীন মাসিক ভাড়া থেকে সমন্বয়পূর্বক সহজ শর্তে হস্তান্তর করা হবে। ঢাকাসহ সারাদেশে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে সরকারি চাকুরেদের সহজ শর্তে ও দীর্ঘমেয়াদি কিস্তিতে এসব প্লট-ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেয়া হবে। প্রাথমিকভাবে ঢাকা ও চট্টগ্রামে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য প্রায় পাঁচ হাজার আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এ ফ্ল্যাটগুলো সংশ্লিষ্টদের আগামী ২০১৯ সালের মধ্যে হস্তান্তর করা হবে। সরকারি চাকরিজীবীদের আবাসন সুবিধা দিতে সারাদেশে প্রায় পাঁচ হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণ করছে সরকার। এর মাধ্যমে আবাসন সুবিধা নিশ্চিত হবে ৪০ শতাংশ সরকারি চাকরিজীবীর। এর পরও আবাসন সুবিধার বাইরে থাকতে হবে ৬০ শতাংশ সরকারি চাকরিজীবীকে। সব শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য যেসব এলাকায় আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মিত হচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য শেরেবাংলা নগরে বহুতল বিশিষ্ট ৪৪৮টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের আওতায় ৮টি ১৬ তলা ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের কাজ ৯৮ শতাংশ সমাপ্ত হয়েছে। শিগগিরই প্রকল্পটি হস্তান্তর করা হবে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের জন্য সুউচ্চ আবাসিক ভবন নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ১টি ২০ তলা ভবন নির্মাণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ভবনে মোট ফ্ল্যাট ৭৬টি। ঢাকার আজিমপুরে সরকারি কলোনিতে বহুতলবিশিষ্ট আবাসিক ভবন নির্মাণের একটি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় ছয়টি ২০ তলা ভবন নির্মাণ করা হবে। এসব ভবনে মোট ফ্ল্যাটের সংখ্যা ১ হাজার ১০৪টি। মতিঝিলে সরকারি কলোনিতে বহুতল বিশিষ্ট আবাসিক ভবন নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ৪টি ২০তলা ভবন নির্মাণের ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ছয়শ’ বর্গফুট ৪টি ভবনে ফ্ল্যাট থাকছে ৫৩২টি। মিরপুরে ৬নং সেকশনে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ১ হাজার ৬৪টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ, ঢাকার মিরপুর পাইকপাড়ায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ৬০৮টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ, মিরপুর ৬নং সেকশনে গণপূর্ত অধিদফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ২৮৮টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে। এ প্রকল্পের আওতায় চারটি ১৩তলা ভবন নির্মাণ করা হবে। বেইলি রোডে মন্ত্রীদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ১টি ৬তলা ভবন নির্মিত হবে। এখানে পাঁচ হাজার ছয়শ’ ৩৩ বর্গফুটের ১০টি ফ্ল্যাট হবে। ইস্কাটনে সিনিয়র সচিব, সচিব ও গ্রেড-১ পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের জন্য তিনটি ২০-তলা ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। এ প্রকল্পে ফ্ল্যাট থাকছে ১১৪টি। ৬ দশমিক ৮৭ বিঘা জমির ওপর বাস্তবায়নাধীন এ ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২৭৩ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। ভবনগুলোর প্রতিটিতে ফ্ল্যাট থাকছে ৩৮টি করে। প্রত্যেক ফ্ল্যাটের আয়তন হবে ৩ হাজার ৪৮৯ বর্গফুট। ভবনগুলোয় পৃথক সুইমিং পুল, ফিটনেস সেন্টার, লনটেনিস কোর্ট, ব্যাডমিন্টন কোর্ট, হাঁটার পথ, ১৮১টি কার পার্কিংসহ নানা সুযোগ-সুবিধা থাকবে। এ ছাড়া মালিবাগে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ৪৫৬টি ফ্ল্যাট, নারায়ণগঞ্জের আলীগঞ্জে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ৮টি ১৫তলা ভবনে ৬৭২টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হচ্ছে। বর্তমানে সারাদেশে বসবাসরত সরকারি চাকরিজীবীদের মাত্র ৮ শতাংশ সরকারি আবাসন সুবিধা পেয়ে থাকেন। আগামী তিন বছরের মধ্যে ৪০ শতাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য সরকারি আবাসন সুবিধা গড়ে তোলার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
ধ্রুবক ১৮/০৮/২০১৭বাংলাদেশ সরকার ভালো কাজ করছে।
-
মোনালিসা ১৮/০৮/২০১৭ভাল
-
সাঁঝের তারা ১৮/০৮/২০১৭অনেক কিছু জানলাম ...
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ১৭/০৮/২০১৭সরকারের এই মহৎ উদ্যোগ সফল হোক।
-
মল্লিকা রায় ১৭/০৮/২০১৭অনেককিছু জানা গেল ।ধন্যবাদ।