জ্বালানি নিরাপত্তা ও সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন
দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে অগ্রযাত্রা নিশ্চিত করতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ ও দীর্ঘমেয়াদী জ্বালানি নিরাপত্তার কোন বিকল্প নেই। বর্তমান সরকারেরে সময়োপযোগী নানা পদক্ষেপ এবং দূরদর্শী নেতৃত্বকে পুঁজি করে বাংলাদেশ এখন নিম্নমধ্য আয়ের দেশ থেকে ২০২৩ সাল নাগাদ মধ্যম এবং ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত দেশের তালিকাযুক্ত হওয়ার জন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রয়োজন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ, অবকাঠামোসহ শিল্প-কারখানা নির্মাণ, কর্মসংস্থান ও বহুমুখী শিল্পোৎপাদন। আর এ সবের জন্যই নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতসহ জ্বালানি নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা বাঞ্ছনীয়। দেশে এসব ক্ষেত্রে এখনও কম-বেশি ঘাটতি রয়েছে। জলবিদ্যুত উৎপাদনের সুযোগ ও সম্ভাবনা সীমিত, গ্যাস সম্পদও শীঘ্রই শেষ হওয়ার পথে। সমস্যার সমাধানে সরকার তাই বঙ্গোপসাগরে গ্যাস অনুসন্ধানের পাশাপাশি চট্টগ্রামের মহেশখালীতে নির্মাণ করতে যাচ্ছে বৃহত্তম এমএনটি টার্মিনাল, মূলত কাতার থেকে যা আমদানি করা হবে। পাশাপাশি গ্যাসের সঙ্কট মেটাতে প্রতিবেশী মিয়ানমার থেকে আমদানিসহ ইরান-তুর্কমেনিস্তান-আফগানিস্তান-পাকিস্তান-ভারতের সঙ্গে পাইপ লাইনের মাধ্যমে সংযুক্ত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দামের উত্থান-পতনকে বিবেচনায় নিয়ে একাধিক কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রও নির্মাণ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ, যা হবে পায়রা, রামপাল ও চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে। পাশাপাশি ২০ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণেও হাত দিয়েছে বাংলাদেশ। মূলত জ্বালানি খাত ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে আগামী এক শ’ বছরকে সামনে রেখেই দেশে দীর্ঘমেয়াদী জ্বালানি নিরাপত্তা গড়ে তোলার মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই বর্তমান সরকারের অগ্রাধিকারের তালিকায় ছিল দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটানোজনিত সমস্যার সমাধান করা। এই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্যই সরকার ২০১৬ সাল নাগাদ ১৬ হাজার মেগাওয়াট, ২০২৪ সাল নাগাদ ২৪ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৩০ সাল নাগাদ ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। সময়োপযোগী নানা উদ্যোগ বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় সরকার ইতোমধ্যেই তার উদ্দেশ্য পূরণে অনেকটাই সফল হয়েছে। বর্তমানে দেশে প্রায় ১২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে এবং এর সুফল পাচ্ছে দেশের প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ। আগামী ২০২১ সালের মধ্যে সরকার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে বদ্ধপরিকর। পাশাপাশি সরকার দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে শিল্পোৎপাদনে ক্ষেত্রেও নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে সমধিক আগ্রহী। এ জন্য দেশে নতুন ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বিনিয়োগ ও শিল্পে উৎপাদন বাড়ানোর অন্যতম উদ্দেশ্য হলো বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ দেশকে নিম্ন মধ্য আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করে তোলা। সরকারের সময়োপযোগী নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সমূহ ও বিদ্যুৎ বিভাগ এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে যেভাবে অগ্রসর হচ্ছে তাতে সাফল্য এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র, ইতোমধ্যেই দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে নানা ইতিবাচক পরিবর্তন। বাস্তবতা বিবেচনায় সরকারের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সময়োপযোগী উদ্যোগ তাই প্রশংসার যোগ্য। বর্তমানে জ্বালানি তেল নির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন নিঃসন্দেহে ব্যয়বহুল। সে তুলনায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ব্যয়সাশ্রয়ী, সহজলভ্য ও সুলভ। আগামীতে বড়পুকুরিয়া ও ফুলবাড়ির কয়লা ব্যবহার শুরু হলে উৎপাদন খরচ আরও কমে আসবে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে কার্বন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রিত থাকবে বিধায় এতে পরিবেশের ওপর কিছু বিরূপ প্রভাব পড়ারও কোন ঝুঁকি নেই। পাশাপাশি সরকার পরিবেশবান্ধব ও নবায়নযোগ্য সৌরবিদ্যুৎ এবং বায়ুবিদ্যুতের একাধিক প্রকল্প ও পরিকল্পনা নিয়েও অগ্রসর হচ্ছে। সরকারের আন্তরিকতা, সদিচ্ছা আর দূরদর্শীতায় এ দেশে নিশ্চিত হতে চলেছে দীর্ঘমেয়াদী জ্বালানি নিরাপত্তা – যা দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে অগ্রযাত্রা নিশ্চিতকরণেও প্রভূত সহায়ক হবে।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
ধ্রুবক ১২/০৮/২০১৭ভালো খবর।