সম্ভাবনাময় বৈদেশিক শ্রমবাজারের জন্য প্রয়োজন প্রশিক্ষিত জনবল
বাংলাদেশের প্রেক্ষিত বিবেচনায় দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির অগ্রগতি, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ বৃদ্ধিসহ দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে বিদেশ থেকে পাঠানো রেমিটেন্সের গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশের শ্রমিক বিশ্বস্থ, কর্মঠ, নিষ্ঠাবান, দায়িত্বশীল, প্রতিশ্রুতিশীল বলেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ দেশের শ্রমিকদের চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। আন্তর্জাতিক শ্রম বাজারের এ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে প্রয়োজন নতুন নতুন শ্রমবাজার অনুসন্ধান এবং কূটনৈতিক তৎপরতা, বিদেশে চাহিদা অনুযায়ী খাতভিত্তিক শ্রমিকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ভাষা শিক্ষা প্রভৃতির ব্যবস্থা করে জনশক্তি রফতানির উদ্যোগ নেয়ার বিষয়টি গুরুত্বসহ বিবেচনায় নেয়া। কেননা দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনশক্তি প্রেরণ করলে বৈদেশিক রেমিটেন্স প্রবাহ যেমন আরও বাড়বে, তেমনি একই সঙ্গে দেশের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল হবে। বর্তমানে দেশের প্রায় এক কোটি মানুষ কর্মসংস্থানের আশায় প্রিয়জন, বন্ধু, সতীর্থ ছেড়ে বিদেশ পাড়ি দিয়ে হাড়ভাঙ্গা খাটুনিতে দিনানিপাত করছে। তাদের সীমাহীন শ্রমে, ঘামে অর্জিত অর্থই দেশের অর্থনীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সমৃদ্ধ করছে। জনশক্তি রফতানি খাত দেশের অর্থনীতিতে নতুন প্রাণ সঞ্চার করেছে। ২০০৮ সালের পর ২০১৬ সালেই বাংলাদেশ থেকে সর্বোচ্চসংখ্যক কর্মী বিদেশে গেছে। সরকারি ও বেসরকারিভাবে গত বছর দেশের বাইরে গেছে প্রায় সাড়ে সাত লাখ কর্মী। পুরনো শ্রমবাজার খোলার পাশাপাশি নতুন নতুন বাজারেও লোক পাঠানো শুরু হচ্ছে। সদ্য প্রকাশিত জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত জনশক্তি রফতানিতে গত আট বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। চলতি বছরে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে সাত লাখ ৪৯ হাজার ২৪৯ শ্রমিক গেছে। বাংলাদেশের জন্য মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজার কিছুটা সঙ্কোচিত হলেও জনশক্তি রফতানির নতুন বাজার হিসেবে যুক্ত হতে যাচ্ছে বেশ কয়েকটি উন্নত দেশ। বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়াসহ কয়েকটি দেশের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি সই হয়েছে। রুশ সরকার তৈরি পোশাক, নির্মাণশিল্পসহ বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে আগ্রহী। ইতোমধ্যে ৪০০ জনের ডিমান্ড লেটার পাওয়া গেছে। অল্প সময়ের মধ্যে অস্ট্রেলিয়াও বাংলাদেশের কর্মীদের জন্য বড় শ্রম বাজারের অংশ হতে যাচ্ছে। থাইল্যান্ড, ম্যাকাও, জাপান, হংকং, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, কানাডা, সুইডেন, এ্যাঙ্গোলা, গ্রিস, জর্দান, ইতালি, সাইপ্রাস, সুদান, লাইবেরিয়া, তানজানিয়া, আজারবাইজান, তাইওয়ান, স্পেন, পোল্যান্ডসহ আরও বেশ কয়েকটি দেশে শ্রমবাজার সৃষ্টির উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। জনশক্তি রফতানি খাত থেকে রেমিটেন্স বাড়াতে তাই অদক্ষ কর্মীর পাশাপাশি দক্ষকর্মী পাঠানোর উদ্যোগ প্রয়োজন। বর্তমানে সরকারের সময়োপযোগী উদ্যোগের অংশ হিসেবে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে নতুন নতুন শ্রমবাজার অনুসন্ধান ও বিদ্যমান শ্রমবাজার ধরে রাখার লক্ষ্যে কাজ চলছে। পাশাপাশি দক্ষ শ্রমিক গড়ে তুলতে সারাদেশে প্রশিক্ষণ সেন্টারও নির্মাণ করা হচ্ছে; যেখান থেকে একটি বিশেষ কাজে দক্ষ হয়ে বিদেশে যেতে পারবে শ্রমিকরা। উন্নত যেসব দেশ বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কর্মী নিতে চায়, সেসব দেশের চাহিদাকে গুরুত্ব দিয়ে আরও ১৫টি নবনির্মিত কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্রের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম খুব শীঘ্রই শুরু হবে। অধিক হারে দক্ষ জনশক্তি তৈরির লক্ষ্যে উপজেলা পর্যায়েও ৪৩৯টি কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ‘৪০টি উপজেলায় ৪০টি কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্র এবং চট্টগ্রাম জেলায় একটি ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পের কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্রের প্রশিক্ষণের মান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত করতে ইতোমধ্যে কয়েকটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। কেননা জনশক্তি রফতানির প্রত্যাশা পূরণে প্রশিক্ষিত শ্রমশক্তি তৈরির লক্ষ্যে ব্যাপক হারে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা জরুরী। একই সঙ্গে প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর পাশাপাশি বিদেশগামী কর্মীদের বিমানবন্দরে হয়রানি, ভোগান্তি, দীর্ঘসূত্রিতা বন্ধেও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরী। এসব বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ও নেতৃত্বে বাস্তবায়ন হলেই এই খাতে গতি ফিরে আসবে। বাড়বে দেশে রেমিটেন্সের প্রবাহ।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
ডঃ সুজিতকুমার বিশ্বাস ১৩/০৭/২০১৭সুন্দর। শুভেচ্ছা।
-
আব্দুল হক ১২/০৭/২০১৭কোন দেশই এখন শ্রমিক চায়না, আর কাজ করতে পারলে বিদেশ যাওয়া লাগনা। বিদেশীরাই এসে সালাম দিয়ে আমাদের প্রড়াক্শন কিনবে। আপনাকে সুন্দর লিখার জন্য মোবারকবাদ!