এটাই কি তবে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের চালচিত্র
এ দেশের একটি চিহ্নিত রাজনৈতিক গোষ্ঠির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যই এমন যে, শুধুমাত্র নিজেদের কোন স্বার্থের মাথায় লাঠির বাড়ি পড়লেই তাদের গণতন্ত্রের কথা মনে পড়ে। তবে স্বার্থান্বেষী ঐ মহলটির কাছ থেকে এই প্রতিক্রিয়াই স্বাভাবিক। তারা নানা ইস্যুতে গণতন্ত্রের সংজ্ঞা প্রদান করে নিজেদের মনের মাধুরী মিশিয়ে। আচ্ছা প্রমাণিত কোন অপকর্মের ক্ষেত্রেও নিজেদের নির্দোষ মনে করা এবং প্রতিপক্ষের ব্যাপারে অব্যাহতভাবে কাল্পনিক অভিযোগ তুলে তিলকে তাল করার অপচেষ্টার নামই কি গণতন্ত্র? বিএনপির মহাসচিব সম্প্রতি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় যে হামলার শিকার হয়েছেন, তাকে দেশের কোন বিবেকবান ব্যক্তিই ভাল বলেনি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও এ বিষয়ে নিন্দা জানাতে দেরি করেননি। তদন্তেরও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। এরপরও বিএনপির একগুঁয়েমিতে আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে ঘটনাটি। আর এ বিষয়ে বিষোদ্গার চলছে এখনও। দেশের একটি পাহাড়ি এলাকায় এই বিচ্ছিন্ন ঘটনাটি ঘটেছে, সেটাকেই গণতন্ত্রের জানাজা বলে চালাবার চেষ্টা দেখে পুরো জাতি আজ হতবাক। সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করার পর ক্ষমতায় থাকাকালীন সরকারি কোষাগারের টাকায় যে দলটি জন্মলাভ করেছে তার আগাগোড়া ইতিহাসই তো অসাংবিধানিক। তাদের সাম্প্রতিক ‘আওয়ামী-বাকশালীদের খতম কর’, এই বক্তব্যেও তো গণতন্ত্রের কোন প্রতিধ্বনি খুঁজে পাওয়া যায় না। যুদ্ধাপরাধী-ফ্যাসিবাদী একটি গোষ্ঠিকে দেশের মূলধারার রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করা এবং সে দলের সঙ্গে সম্পর্ক অটুট রাখা তো গণতন্ত্রের চর্চার মধ্যে পড়ে না। এতো সব অপকর্মের পরেও গণতন্ত্রের জন্য তাদের গলা ফাটানো কি উচিত? তাদের নিজেদের দাঁড়িপাল্লা তো আর সার্বজনীন গণতন্ত্রের মাপকাঠি নয়। এদের প্রশ্রয়েই স্বাধীনতার শত্রুরাও এদেশে গণতন্ত্রের জন্য মেকি কান্না কেদেঁছে। ২০০১ সালের ১ অক্টোবর নির্বাচনের পর এ দেশে যা ঘটেছে, তার রক্তাক্ত ইতিহাস অনেক লম্বা, অনেক লোমহর্ষক। তাদের হটকারীতাতেই এ সময়ের তরুণ প্রজন্ম ১৯৭১ এর চেহারা দেখার সুযোগ পেয়েছে। প্রশ্ন হলো আমরা গণতন্ত্রের প্রতীক ধরব কাকে? এসএম কিবরিয়া সাহেবকে না সাকা চৌধুরীকে? কিবরিয়া সাহেবকে হত্যা করার পর তৎকালীন সংসদের স্পিকার, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং স্বয়ং বেগম খালেদা জিয়া কী ভূমিকা নিয়েছিলেন? কী বক্তব্য দিয়েছিলেন? সাকা চৌধুরী সংসদে রংঢঙ করে শেখ হাসিনা সম্পর্কে যে কুরুচিপূর্ণ কথা বলত, সে সব বুঝি খুব গণতন্ত্রসম্মত ছিল? গণতন্ত্রের আর্জেস গ্রেনেড ব্যবহার করা হয়েছিল ২১ আগস্টে, বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউতে, শেখ হাসিনার জনসভায়। তাদের সময়ে তো হাওয়া ভবন থেকে গণতন্ত্রের জলীয়বাষ্প বের হয়ে আসত। পুরো আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার নীলনক্সা প্রণয়ন করা হয়েছিল হাওয়া ভবনে। যারা সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দিয়েছে, স্বাধীনতার শত্রুদের ক্ষমতার অংশীদার করেছে, তাদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা উঠিয়ে দিয়েছে, যাদের আমলে ১০ ট্রাক অস্ত্র এসেছিল বাঙালী জাতিকে খতম করার জন্য, যারা মানি লন্ডারিং করেছে, কানাডার আদালতে যারা সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত, তারা সামান্যতেই দেশে গণতন্ত্রের ‘অশনি সঙ্কেত’ দেখতে পান কিভাবে? আম জনতার প্রতিনিধি হিসেবে আমি কোন মন্দ কাজকে সমর্থন করতে চাই না। তাই বলে কী স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মির্জা ফখরুলের গাড়ি বহরে হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন? শেখ হাসিনার রাজনীতির স্ট্যাটাস এতটা নিচে পড়ে আছে নাকি? কি সব হাস্যকর অভিযোগ! গাড়ি বহরে হামলার নির্দেশ দেয়া তো কোন রাজনৈতিক কৌশলের মধ্যে পড়ে না। শেখ হাসিনা অপকৌশলের রাজনীতি করেছেন, এমন প্রমাণ আছে কী? তিনি বরং রাজনীতিতে আবেগপ্রবণতার পরিচয় দিয়েছেন, এমন দৃষ্টান্তই কম-বেশি আছে। বর্তমানে অনেক ধরনের ষড়যন্ত্রই দেশের শিরা-উপশিরায় প্রবাহিত হচ্ছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়ি বহরে হামলাও একটা ষড়যন্ত্র, চিহ্নিত অপশক্তির নেতিবাচক রাজনীতির দৃষ্টান্ত। এসব হচ্ছে সরল রাজনীতিকে জটিল করার চক্রান্ত, সরকারের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার পদক্ষেপ। গাড়ি বহরে হামলার এই মূলত সামান্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিএনপির গলাফাটানো চিৎকার, ২০০১ সালের ১ অক্টোবর নির্বাচন ও তার পরে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডকে আড়াল করার অপকৌশলেরই পুনরাবৃত্তি মাত্র। তবে হামলার ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন, যাতে কেউ যেন সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করতে সাহস না পায়। তবে ঐ চিহ্নিত দলটি যদি তাদের গণতান্ত্রিক চেতনা আর দৃষ্টিভঙ্গীতে ইতিবাচক পরিবর্তনে সচেষ্ট না হয় তবে দেশের সার্বিক গণতন্ত্রের উত্তরণ ঘটবে কি? সচেতন প্রতিটি মানুষই আজ ভাবতে বাধ্য হচ্ছে, এটাই কি তবে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের চালচিত্র?
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।