যুক্তরাষ্ট্রে প্রকাশিত গ্রন্থে শেখ হাসিনা
পিতা তার হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী হিসেবে সর্বজন স্বীকৃত। তবে ব্যক্তিগত অর্জন, নানা বিষয়ে ঈর্ষনীয় সাফল্য আর অগণিত সুকীর্তির দেশি-বিদেশি স্বীকৃতিতে ইতোমধ্যে তিনি নিজেকে মহান পিতার সুযোগ্য কন্যা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। ব্যক্তিগত নানা অর্জনের কারণেই আজ তিনি ইতিহাসের অংশ হয়ে উঠেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় এবার বিশ্বের নারী রাজনীতিবিদদের নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন থেকে প্রকাশিত একটি বইয়ে তাকে গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে তার সাহস, ঝুঁকি, প্রজ্ঞা এবং অবদান নিয়ে সাজানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট অংশটি। বিশ্বের আরও ছয় নারী রাষ্ট্রনায়কের পাশাপাশি তার ছবিও স্থান পেয়েছে বইটির কভার পেজে। তার উদ্ধৃতি দিয়ে প্রচ্ছদে ঝলমল করছে একটি অবিস্মরণীয় উচ্চারণ, ‘যেদিন আমি বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে পারব, সেদিন গর্বিত বোধ করব’। যাকে নিয়ে এই অনন্য আয়োজন, তিনি আর কেউ নন – সর্বজন শ্রদ্ধেয় বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই স্বীকৃতি শুধু ব্যক্তি শেখ হাসিনার সাফল্যের মুকুটে নতুন রত্নের সংযোজন নয় একই সাথে বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতিকেও গর্বিত করেছে। সম্প্রতি ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে প্রেরিত এক প্রেস বিজ্ঞতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ওয়াশিংটনের ‘ওম্যানস ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক ক্লাব’ এ গত বুধবার বইটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়। ‘নারী রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী’ শীর্ষক বইটির প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক, নারী নেতৃত্ব এবং সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বইটির লেখকের নাম ‘রিচার্ড ও ব্রায়েন’। তিনি শিক্ষাবিদ এবং মানবাধিকার কর্মী। বইটিতে বর্তমান বিশ্বের ১৮ নারী নেতৃত্বকে তুলে ধরা হয়েছে। বইটিতে তিন পৃষ্ঠাজুড়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক সংগ্রাম এবং অবদানের কথা লেখা হয়েছে। লেখক বঙ্গবন্ধু কন্যার প্রশংসা করে বলেছেন, ‘শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে আরও গণতান্ত্রিক এবং সেদেশে সহিংসতা কমিয়ে আনার চেষ্টা করছেন। দেশটিতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে কাজ করছেন তিনি।' ও ব্রায়েন উল্লেখ করেছেন, শেখ হাসিনার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি এবং প্রথম রাষ্ট্রপতি। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা ছাড়া তাদের পরিবারের সবাইকে মেরে ফেলা হয়। তারা দু’বোন দেশের বাইরে থাকায় বেঁচে যান। অনিচ্ছাকৃত দীর্ঘ প্রবাস জীবন শেষে ১৯৮১ সালে দেশে ফিরেই শেখ হাসিনা নির্বাচনী জালিয়াতি এবং নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করেন। আন্দোলন-প্রতিবাদ গড়ে তোলার কারণে তিনি সে সময় নানা অন্যায়-অত্যাচারের শিকার হন। এক পর্যায়ে তাকে গৃহবন্দীও করা হয়। কিন্তু এত কিছুর পরও শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এতটাই প্রভাবশালী নেতা হয়ে ওঠেন যে, তার আন্দোলন-সংগ্রামের কারণেই ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের পতন হয়। এ বইয়ে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শেখ হাসিনাকে হত্যার অপচেষ্টার বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে। লেখক লিখেছেন, তাকে গুপ্তহত্যার চেষ্টা করা হয়, যাতে অনেক লোক নিহত হয় (আসলে সেদিন আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা করে শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়)। এর পর ২০০৭ সালে শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করা হয়। যদিও প্রায় এক বছর জেলে কাটিয়ে মুক্ত হবার পর নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করেন। শেখ হাসিনার তিনবারের প্রধানমন্ত্রীত্বের আমলে বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে, সহিংসতা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে বলে লেখক তার নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। বইটিতে ’৭১ পরবর্তী এদেশে রাজনৈতিক সহিংসতা ও অস্থিতিশীলতা ছিল মন্তব্য করে লেখক বলেন, বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে তিনি অদ্যাবধি নিজের জীবন বাজি রেখে কাজ করছেন। পার্বত্য শান্তিচুক্তি, স্থল মাইন ব্যবহার নিষিদ্ধকরণসহ শেখ হাসিনার বিভিন্ন পদক্ষেপও তুলে ধরা হয়েছে বইটিতে। বইটিতে তার ‘মাদার তেরেসা’ এবং ‘মহাত্মা গান্ধি’ পুরস্কার পাওয়ার কথাও তুলে ধরা হয়েছে।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।