www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

এ লড়াই জিততেই হবে

তরুণেরাই যেকোন দেশের প্রধান সম্পদ। এরা যদি বিপথগামী হয় তাহলেই জাতির সর্বনাশ। তরুণদের ভাল কাজে নিয়োজিত করতে পারলে যেমন সুফল মেলে হাতে হাতে, তেমনি মন্দ কাজেও এদের জুড়ি মেলা ভার। তাই দ্রোহের কবি সুকান্ত তাঁর কবিতায় চরণে তারুণ্যের আবাহনে এ-দেশের বুকে আঠারো আসুক নেমে বলে প্রার্থনা করেছিলেন। কিন্তু এই তরুণ সমাজ আজ অনেকটাই বিপথগামী। যাপিত জীবনের নানা সমস্যা থেকে উদ্ভূত হতাশা থেকে দেশের তরুণ সমাজের বিরাট একটি অংশ আজ বিপথগামী। আর তাদের এক উল্লেখযোগ্য অংশের কাছে মাদকাসক্তিই হয়ে উঠেছে সেই হতাশা থেকে মুক্তির পথ। সাংসারিক টানাপোড়েন, বেকারত্ব, কাঙ্খিত লক্ষ্যে পেীঁছতে না-পারার দুঃসহ যন্ত্রনাই তাদের হতাশার কারণ। সমস্যা মোকাবেলার মানসিক দৃঢ়তার অভাবেই সাংসারিক সকল ঝামেলা থেকে নিস্কৃতি পেতে মাদকাসক্তরা ভাবছে মাদকসেবনই বুঝি উত্তম পন্থা। সমাজে থাকাও গেল অথচ কোনো ধরনের দায়দায়িত্ব বর্তালো না। কিন্তু এই ভুল ধারণাই যে এক সময় কাল হয়ে উঠবে, এ-কথা বোঝার অবকাশ তারা খুব কমই পায়। কেননা মাদকের ছোবলে এরা জীবনের বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাতকে জয় করার মানসিকতা হারিয়ে জীবন্মৃত হয়ে পড়ে। সমাজের কাছে, পরিবার-পরিজনের কাছে বোঝা হয়ে ক্রমে একঘরে হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে একাকিত্বের জ্বালা, হতাশার পথ বেয়ে মাদকাসক্তির শেষ পরিণাম হয়ে দাঁড়ায় মৃত্যু। তাই মাদকের নেশা কেবল আত্মঘাতী নয়, সমাজ, দেশ, মনুষ্যত্ব সর্বোপরি বিশ্বব্যাপী ডেকে আনছে চরম বিপর্যয়। ব্যক্তিজীবনে যেমন মাদক স্বাস্থ্য, সম্পদ, মানসম্মান, প্রভাব-প্রতিপত্তি নষ্ট করে ব্যক্তিকে সমাজের ঘৃণা ও নিন্দার পাত্র করে তোলে তেমনি সমাজজীবনেও নেমে আসে অস্বাস্থ্য, অলসতা, অকর্মন্যতা এবং সামাজিক অপরাধের সীমাহীন নিষ্ঠুরতা। ধ্বসে যায় তার রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, চাকরি, সামাজিক মূল্যবোধের মতো অমূল্য গুণগুলো। আজকের পৃথিবীতে এই ব্যাধি পরিব্যাপ্ত দেশ থেকে দেশান্তরে। তাই মাদক কেবল ব্যক্তিজীবন নয়, সমাজ, সমষ্টি এবং বিশ্বজীবনেও ডেকে আনছে বিপর্যয়। বিশ্বের প্রায় সবক’টি মহাদেশেই অবৈধ ড্রাগ উৎপাদিত হয় কিংবা ব্যবহৃত হয় যা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। বাংলাদেশেও এই বিষয়ে খুব একটা পিছিয়ে নয়। বিগত তিন দশকে হেরোইন, এম্ফিটামিন, কোকেন এবং নানা ভেষজ ওষুধ রাজধানীসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোতে প্রবেশ করেছে যা অবৈধ ড্রাগের ভয়াবহতাকে আরও উস্কে দিয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষ নেশাসক্ত যার মধ্যে কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতীদের সংখ্যাই বেশী। ক্রমবর্ধমান এই সংখ্যাটি ক্রমশ শহরতলি ও অন্যান্য পিছিয়ে পড়া এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে। বাংলাদেশ সরকার এবং জাতিসংঘের ড্রাগ ও অপরাধ নিবারক সংস্থার যৌথ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ১২ থেকে ১৮ বছরের কিশোরদের মধ্যে অ্যালকোহল ২১.৪ শতাংশ, ভাং ৩ শতাংশ, আফিম ০.৭ শতাংশ এবং অন্যান্য অবৈধ ড্রাগ ৩.৬ শতাংশ সেবনের প্রবণতা দেখা গেছে। বিভিন্ন সূত্র হতে জানা যায় ইদানিং যুবতীরাও মাদকাসক্ত হয়ে বিপথে পরিচালিত হচ্ছে। মাদকাসক্তদের নেশায় আসক্ত হওয়ার পেছনে বহুবিধ কারণ রয়েছে। কিন্তু কারণ যাই হোক না-কেন, নেশা সমাজের প্রধান পাঁচটি অংশকে অর্থনৈতিকভাবে দারুণ ক্ষতিগ্রস্ত করে। এই অংশগুলো হচ্ছে স্বাস্থ্য, উৎপাদন, অপরাধ, নিরাপত্তা এবং সরকারি কার্যপ্রণালী। নেশাগ্রস্ত লোকেরা যে শুধু নিজের ক্ষতি করে এমন নয়, পারিপার্শ্বিক মানুষের নিরাপত্তাও সঙ্কটাপূর্ণ করে তোলে। তাই সমাজের কল্যাণ আর রাষ্ট্রের সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে হলে দেশের তরুণ প্রজন্মকে মাদকের আগ্রাসন থেকে রক্ষা করতেই হবে – এর কোন বিকল্প নেই। মাদকাসক্ত তরুণদের পলায়নকামী মানসিকতা কখনো স্বনির্ভর বাংলাদেশ বিনির্মাণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার সাথে সংগতি রাখতে সক্ষম হতে পারে না। দুনির্বার জাতি আজ সার্বিক উন্নয়নের অব্যাহত অগ্রযাত্রায় উজ্জীবিত হয়ে যে সমৃদ্ধ আগামীর স্বপ্ন বুনছে তা পূরণ করতে হলে তরুণ প্রজন্মকে নেশার নীল ছোবল থেকে বাঁচাতে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। সকলের সম্মিলিত প্রতিরোধে নিশ্চিত হবে মাদকমুক্ত বাংলাদেশ – অব্যাহত হবে স্বনির্ভর বাংলাদেশের স্বপ্নযাত্রা – এটাই সকলের প্রত্যাশা। সুন্দর আগামীর জন্য মাদকের বিরুদ্ধে এ লড়াই জিততেই হবে।
বিষয়শ্রেণী: অন্যান্য
ব্লগটি ৭০৫ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৫/০৬/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

 
Quantcast