শেষ হচ্ছে দুর্ভোগের দিন
দেশের গণমানুষের কল্যাণের দায়বদ্ধতায় উজ্জীবিত বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের যুগান্তকারী সিদ্ধান্তে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের দুর্ভোগের দিন শেষ হতে যাচ্ছে। আগামী সেপ্টেম্বর মাস থেকেই অবসরপ্রাপ্ত সাড়ে ৬ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ঘরে বসেই পেনশনের টাকা পাবেন। পেনশন বাবদ বরাদ্দ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে না রেখে অর্থ বিভাগের অনুকূলে নিয়ে আসা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে আলাদা একটি পেনশন অফিস করারও উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সরকারের এ উদ্যোগ সফলভাবে বাস্তবায়নে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। পেনশন সুবিধাভোগীরা যে কোন ব্যাংকের, যে কোন শাখার হিসাব নম্বরে তাদের প্রাপ্য নিতে পারবেন। এমনকি যাদের ব্যাংক হিসাব নেই বা থাকলেও বিকাশ বা মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবে পেনশন পেতে চান, তাদের টাকা সেখানেই পাঠানো হবে। অর্থাৎ ঘরে বসেই সব ধরনের আর্থিক সুবিধা পাবেন একজন পেনশনভোগী, দূর হবে পেনশনভোগীদের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ। অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, পেনশনার ডাটাবেজে এ পর্যন্ত ৬ লাখ ২৯ হাজার ৫৯৯ জনের নাম নিবন্ধিত হয়েছে। তারা সবাই বেসামরিক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী বা তাদের পরিবারের পেনশন সুবিধাভোগী। উল্লেখ্য, পর্যায়ক্রমে দেশের সব পেনশনভোগীকে এ সুবিধার আওতায় নিয়ে আসা হবে। যাতে অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আর মাসে মাসে পেনশনের টাকার জন্য এজি অফিস বা ব্যাংকে গিয়ে আর লাইন ধরতে হবে না। প্রতি মাসের নির্দিষ্ট তারিখে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ব্যাংক হিসাব বা বিকাশ হিসাব নম্বরে টাকা পৌঁছে যাবে। এরপর যে কোন সময়, যে কোন স্থান থেকে তা তোলা যাবে। আগামী সেপ্টেম্বর মাস থেকেই যাতে পেনশনভোগীরা এ সুবিধা পেতে পারেন সে লক্ষ্যে পুরোদমে কাজ শুরু করা হয়েছে। সরকারের এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে কারিগরি সহায়তা প্রদানকারী বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে জুলাই-আগস্ট মাসের মধ্যেই বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এদিকে, প্রস্তাবিত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনায় বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থা সংস্কার করে আধুনিক, যুগোপযোগী ও বৈষম্যহীন ব্যবস্থা প্রবর্তনে বর্তমান সরকারের প্রতিশ্রুতির কথা বলা হয়েছে। সংস্কারের প্রথম ধাপে শতভাগ পেনশন নগদায়নের বিধান রহিত করে পেনশন বাবদ বরাদ্দ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে বিক্ষিপ্তভাবে রাখার পরিবর্তে অর্থ বিভাগের অনুকূলে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া পুরো প্রক্রিয়াটি বাস্তবায়নে অফিস অব দ্য কন্ট্রোলার জেনারেল অব এ্যাকাউন্টসের বা মহাহিসাব নিয়ন্ত্রকের (সিজিএ) অধীনে আলাদা একটি পেনশন অফিস প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। পেনশন ব্যবস্থা সহজ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়কে বেশকিছু নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। এর আলোকে কল্যাণ তহবিল, সরকারী প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা চাকরিজীবী অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) যাওয়ার আগেই যাতে পান, ইতোমধ্যে সে বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এখন থেকে পেনশনের জন্য যেসব দফতরের ছাড়পত্র নিতে হয়, সেগুলো আর পেনশনারকে সংগ্রহ করতে হবে না। কল্যাণ কর্মকর্তা নিজ দায়িত্বেই তা সংগ্রহ করবেন। নির্ধারিত সময়ে সংগ্রহ করতে না পারলে পেনশনার সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কোন আপত্তি নেই বলে ধরে নেয়া হবে। এছাড়া বর্তমানে চাকরিজীবী স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রী আজীবন পেনশন সুবিধা পান। কিন্তু চাকরিজীবী স্ত্রীর মৃত্যুর পর স্বামী সর্বোচ্চ ১৫ বছর পর্যন্ত এ সুবিধা পান। এ বৈষম্যও দূর করার কথাও ভাবা হচ্ছে। অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘরে বসেই পেনশনের টাকা উত্তোলনের সুবিধা প্রদানের মতো ইতিবাচক ভাবনা বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের কল্যাণকামী মানসিকতা আর দায়বদ্ধতারই প্রতিফলন। এ কারণেই উন্নয়ন অগ্রযাত্রার অব্যাহত অগ্রগতি দেশকে প্রতিনিয়ত উন্নয়নের মহাসড়ক ধরে দুর্নিবার গতিকে সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সমৃদ্ধ বাংলাদেশ তাই আজ আর কোন অধরা স্বপ্ন নয়, এক দৃশ্যমান বাস্তবতা।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
মোঃ নূর ইমাম শেখ বাবু ৩০/০৪/২০১৮বেশ
-
সৌম্যকান্তি চক্রবর্তী ১৭/০৬/২০১৭বাংলাদেশ আরও সমৃদ্ধ হোক