সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য খাবার ও আইনী সহায়তা দিচ্ছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন
স্কুল থেকে ঘরে ফেরার সুযোগ পায়নি রুবিনা। মা তাকে নিয়ে হাজির হয়েছে এক টাকায় চিকিৎসা ক্যাম্পে। যদি ডাক্তার চলে যায় তাই তো এত তাড়াহুড়ো। অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর তাঁর সিরিয়াল আসে। ফোঁকলা দাঁতের লাজুক হাসিতে ডাক্তারের দেখাদেখি বিভিন্ন চিকিৎসা যন্ত্রপাতি মনোযোগ দিয়ে দেখতে থাকে সে। হঠাৎ রুবিনা ডাক্তারের কাছ থেকে তার স্টেথেস্কোপটি নিয়ে নিজ কানে লাগিয়ে ডাক্তারের হার্টবিট মাপতে শুরু করে। ডাক্তারও হাসি মুখে রুবিনাকে জিজ্ঞাসা করে, বড় হয়ে তুমি কি হতে চাও। সে বলে, ‘আমি ডাক্তার হতে চাই ঠিক আপনার মত’। বিহারী পল্লীতে বসবাস করে সাত বছরের রুবিনা। গাবতলী, এয়ারপোর্ট স্টেশনের সামনেসহ ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় মেডিক্যাল ক্যাম্পের মাধ্যমে রুবিনার মতো অনেক সুবিধাবঞ্চিত শিশুসহ বয়স্করা এক টাকার বিনিময়ে স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে। প্রেসক্রিপশনের পাশাপাশি এ সংগঠন চেষ্টা করছে গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ রোগীদের প্রদান করতে। রোগ ভেদে ৫০ থেকে ৫০০ টাকা হয় একেকজনের ওষুধের দাম, তিন দিন প্রর্যন্ত ওষুধ পাচ্ছে রোগীরা। ১২ বছরের নিচে এবং ৬০ বছর বয়স্ক মানুষের এই সেবা শুরু হয়েছে চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি থেকে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এক টাকার এই স্বাস্থ্যসেবা। যা চলছে প্রতিদিন। দেশের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে অধ্যায়নরত স্বেচ্ছাসেবী ডাক্তাররা এমনকি এমবিবিএস ডাক্তাররা এ সংগঠনের হয়ে সুবিধাবঞ্চিতদের মাঝে চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দিতে কাজ করে যাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার মানুষকে দেয়া হয়েছে এই সেবা। শুধু এক টাকায় স্বাস্থ্যসেবা নয়, সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য খাবার এমনকি আইনী সহায়তা প্রদান করছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। বর্তমান যুগে যেখানে এক টাকায় একটি চকলেট ছাড়া আর কিছুই মেলে না সেখানে এক টাকায় খাবার, চিকিৎসা ও আইনী সহায়তা পাওয়ার কথা সবার চিন্তার বাইরে। কিন্তু বাস্তবেই এখন এক টাকায় খাবার, চিকিৎসা ও আইন সেবা দেওয়া হচ্ছে। এই অসাধ্য সাধন করে আসছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। ২০১৩ সালের ২২ নবেম্বর নারায়ণগঞ্জ থেকে যাত্রা শুরু হয় এই ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা কিশোর কুমার দাশের হাত ধরে। নানা প্রতিকূলতার কারণে শৈশবে নিজেও সুবিধাবঞ্চিতদের কাতারে ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা কিশোর। টাকার অভাবে মাধ্যমিকের পর লেখাপড়ার বিরতি ঘটে। এরপর কয়েক বছর বিরতি শেষে চট্টগ্রামের একটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে প্রবেশ করেন চুয়েটে। সেখান থেকে পড়া শেষ করে ২০০৬ সালে যোগদান করেন ওয়ারিদ টেলিকমে (এয়ারটেল)। বর্তমানে তিনি পেরুতে ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ‘ওলো’তে কর্মরত রয়েছেন। কিশোর কুমার দাশ সম্পূর্ণ নিজের অর্থায়নে প্রতিষ্ঠা করেছেন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। সুবিধাবঞ্চিত হওয়া এবং নানা প্রতিকূলতাই তাকে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে ভাবার প্রেরণা জাগিয়েছে। সংগঠনটি চলছে মূলত স্বেচ্ছাসেবকদের হাতেই। মানুষের জন্য কিছু করার উদ্দেশ্যেই নিজ উদ্যোগেই এখানে কাজ করেন সবাই। প্রতিদিন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের খাবার রান্না ও বিতরণের কাজে নিয়োজিত আছেন প্রায় ৩০০ স্বেচ্ছাসেবক। প্রথম থেকে প্রতিষ্ঠাতা কিশোরের নিজ অর্থায়নে চললেও বর্তমানে সমাজের নানা পেশার মানুষের অর্থায়নে চলছে এর কার্যক্রম। কিন্তু অর্থ সংগ্রহে রয়েছে একটি প্রক্রিয়া এবং সচ্ছতা। যে কেউ চাইলেই অর্থ সাহায্য করতে পারে না। এর জন্য তাদের একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ০১/০৫/২০১৭বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের মহৎকর্ম আরও সম্প্রসারিত হোক।
-
মুক্ত মনের বিহঙ্গ ভাবনা ৩০/০৪/২০১৭চমৎকার প্রেরণাদান মূলক লেখনী!
ধন্যবাদ -
মোঃ ইমরান হোসেন (ইমু) ৩০/০৪/২০১৭দারুণ তথ্যময় লেখনী!