গরিবের ডাক্তার জহিরন বেওয়া লেখাটি পড়ে ভাল লাগল
মানুষের জন্য কিছু করার ইচ্ছা থাকলে অর্থের প্রয়োজন হয় না, এমনকি বয়সও সেখনে বাধাঁ নয়। দেশ ও জাতির জন্য যদি কিছু করার ইচ্ছা থাকে তাহলে অভাব ও বয়স আপনাকে আটকে রাখতে পারবেনা। তারই জলন্ত এক উদারহণ আজকের এই বৃদ্ধা গ্রাম্য চিকিৎসক জহিরন বেওয়া। এখন বয়স ৯৫ বছর। দীর্ঘ ৪৪ বছর ধরে বাইসাইকেল চালিয়ে গ্রামের অসহায় মানুষের স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসছেন এই নারী। এই বয়সে এসে একটুও কমেনি তার উদ্যম, সাহস ও কর্ম দক্ষতা। লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার ভেলাবাড়ী ইউনিয়নের ভারত সীমান্ত ঘেঁষা তালুক দুলালী গ্রামের জহিরন বেওয়া। যে বয়সে তার অন্যের উপর বোঝা হয়ে থাকার কথা, বাড়ীর বারান্দায় কিংবা কোন গাছের ছায়ায় গুটিঁসুটি হয়ে বসে ঝিমানোর কথা আর তা না হয় নাতি-নাতনিদেরকে বসে রূপকথার গল্প শোনানোর কথা অথবা তাদের উচ্ছল খেলাধুলা দেখে সময় কাটানোর কথা। তবে তিনি তা না করে প্রতিদিন ঝড়, বৃষ্টি রোদ উপেক্ষা করে ছুটে বেড়াচ্ছেন গ্রামের পর গ্রাম মাইলের পর মাইল। কারো অসুস্থতার সংবাদ পেলেই নাওয়া-খাওয়া ভুলে বাইসাইকেলে চড়ে ছুটে যান সেই রোগীর বাড়িতে চিকিৎসা সেবা দিতে। ১৯৬৮ সালে স্বামী সায়েদ আলীর মৃত্যুর পর জহিরন শারীরিক ও মানুষিকভাবে ভেঙে পড়েন। ৩ ছেলে আর ২ মেয়েকে নিয়ে তিনি দুখের সমুদ্রে পড়েন। তবে যার উদ্যম, সাহস, কর্ম দক্ষতা থাকে তাকে কী কেউ দমিয়ে রাখতে পারে। আর তাই সমাজের প্রচলিত রীতিনীতি ভেঙে ১৯৭৩ সালে জহিরন পরিবার পরিকল্পনার অধীনে স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ে ছয় মাসের প্রশিক্ষণ নেন। পরে চুক্তিভিত্তিক মাসিক মজুরিতে কাজে যোগ দেন। নিজ গ্রামসহ আশ-পাশের গ্রামগুলোতে সাইকেল চালিয়ে গ্রামবাসীদের স্বাস্থ্যসেবা দিতেন। ২শ থেকে ৩শ অবশেষে ৫শ টাকা মাসিক মজুরি পেয়ে ১০ বছর চাকরি করে অবসরে যান জহিরন। চাকরি বাদ দিলেও অর্জিত অভিজ্ঞতা বাদ দেননি তিনি। তাই বাড়িতে বসে না থেকে আবারো গ্রামবাসীর স্বাস্থ্যসেবায় মনোযোগী হয়ে উঠেন জহিরন। এখনো কাজ করছেন হাসি মুখে। গ্রামের লোকজনের কাছে তার বেশ সুনাম রয়েছে। কেউবা জহিরন দাদি, কেউবা নানি আবার কেউবা জহিরন আপা বলে সম্বোধন করেন তাকে। তার আদিতমারী উপজেলার ৩০টি গ্রামে দু’ হাজারের বেশি পরিবারের সঙ্গে রয়েছে নিবিড় যোগাযোগ। তিনি প্রতিদিন সাইকেল চালিয়ে কমপক্ষে ৭টি গ্রামের ৭০টি বাড়িতে যান। তাদের খোঁজখবর নেয়। তিনি গেল ৫০ বছরে কোন রোগে আক্রান্ত হননি। সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি নারীর প্রতি অবিচার রোধ, শিক্ষা আর পছন্দানুযায়ী পেশা নির্বাচনের সুযোগ নিয়েও কাজ করছেন তিনি। এই সংগ্রামী নারী এখনো সচল, সজাগ আর তাই বাকি জীবনেও কর্মউদ্যমী হয়ে বেঁচে আছেন সবার মাঝে এটাই তার শেষ ইচ্ছা। এরূপ উদ্যমী মানুষ কজন-ইবা হতে পারে।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
রেজাউল আবেদীন ২২/০৫/২০১৭সহমত পোষণ করছি আপনার সাথে। আমি নিজে ও এই নিউজটি দৈনিক পত্রিকায় " দ্যা ডেইলি স্টার" এর প্রথম পাতায় ছিল। গরিবের ডাক্তার জহিরন বেওয়ার বিষয়ে আমি কি আর বলব ভাষা নেই তবে দেশ ও জাতি তিনার জন্যে অতী গর্ব বোধ করতে পারেন সন্দেহ নাই। উনার জন্যে আল্লাহ্র কাছে দোয়া করছি যেন সুস্বাস্থ ও হায়াত পান, আমিন।
-
শেলি ২৭/০৪/২০১৭ভাল মানুষ এখনও আছে
-
মোঃ ইমরান হোসেন (ইমু) ২১/০৪/২০১৭তোমাদের মত মানুষদের জন্য আমরা গর্বিত (জহিরন বেওয়া!!)
-
ফয়সাল রহমান ২১/০৪/২০১৭সুন্দর