সৌরশক্তির বিশাল সম্ভাবনার দেশ বাংলাদেশ
নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের মতে বাঁচতে হলে মানব সভ্যতাকে শক্তির উৎস হিসেবে সূর্যের দিকেই তাকাতে হবে। কেননা বর্তমানে ব্যবহৃত অনবায়নযোগ্য জ্বালানি খুব দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের হিসেবে জ্বালানি তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস ও ইউরেনিয়ামের মজুত আগামী ৫০ বছরে এবং কয়লার মজুত আগামী ১৫০ বছরের মধ্যে নিঃশেষ হয়ে যাবে। অন্যদিকে পারমাণবিক জ্বালানির ব্যবহার ভয়াবহ ঝুঁকিপূর্ণ, দুর্ঘটনাপ্রবণ ও ব্যয়বহুল। তা ছাড়া বিশ্বে বর্তমানে থোরিয়াম-নির্ভর যেসব পারমাণবিক জ্বালানি প্রকল্পগুলো নির্মাণাধীন সেগুলো চালু করতে কিছুটা ইউরেনিয়ামের প্রয়োজন হয় বলে এটিও বিকল্প জ্বালানির উৎস হতে পারছে না। জ্বালানির সংকটে শুধু যানবাহন বা শিল্পকারখানা অচল হবে তা নয়, আমাদের প্রাত্যহিক গার্হস্থ্য জীবনও বিপন্ন হবে, মানুষকে ফিরে যেতে হবে আদিম জীবনব্যবস্থায়। অন্যদিকে অনবায়নযোগ্য জীবাশ্মভিত্তিক জ্বালানির ব্যবহার অব্যাহত থাকলে বৈশ্বিক উষ্ণতা আগামী কয়েক দশকে এমন এক পর্যায়ে পৌঁছাবে যে পৃথিবীর অস্তিত্বই তখন মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে। এসব হুমকি মোকাবিলার উপায় ও সুযোগ নবায়নযোগ্য জ্বালানির অফুরন্ত ভান্ডার সূর্য। ১৫ কোটি কিলোমিটার দূরের সূর্য থেকে প্রতি ঘণ্টায় যে বিকিরিত শক্তি পৃথিবীতে আসে, তা দিয়ে পৃথিবীর এক বছরের সব জ্বালানির চাহিদা মেটানো সম্ভব। সোলার এনার্জি বা সৌরশক্তি পৃথিবীতে আলো, উত্তাপ, বাতাস, পানিপ্রবাহ ও ফটোসিনথেসিস—মূলত এই পাঁচ নবায়নযোগ্য প্রক্রিয়ায় সঞ্চালিত হয়। পৃথিবীকে অনিবার্য ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে আমাদের এসব শক্তির ব্যবহারের ওপর নির্ভরশীল হতে হবে। তেল, গ্যাস, কয়লার ব্যবহার ক্রমান্বয়ে কমিয়ে একপর্যায়ে বন্ধ করতে হবে। কিন্তু বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে মানুষের যথেষ্ট উদ্বেগ থাকলেও করণীয় বিষয় এবং এর বৈশ্বিক কর্মকৌশল নিয়ে রাষ্ট্রসমূহের যথেষ্ট ঐকমত্য নেই। তবে আশার কথা ১৯৯৭ সালের কিয়েটো প্রটোকলের উত্তরসূরি হিসেবে ১২ ডিসেম্বর ২০১৫ বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকি মোকাবেলায় প্যারিস চুক্তি গ্রহণ করা হয়েছে। প্যারিস চুক্তিতে বরং প্রতিটি দেশকে স্বেচ্ছায় নিজের এমিশন কমানোর লক্ষ্যমাত্রা এবং এর কর্মকৌশল নির্ধারণের (ইনটেনডেড ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন—সংক্ষেপে আইএনডিসি) বাধ্যবাধকতা তৈরি করা হয়েছে। এতে প্রতিটি দেশের গ্রিনহাউস এমিশন ২০৫০ সালের মধ্যে শূন্য মাত্রায় নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। শূন্যমাত্রা বা নেট জিরো এমিশনের মূল কথা হচ্ছে এ সময়ে প্রতিটি দেশ ততটুকুই গ্রিনহাউস গ্যাস উৎপন্ন করতে পারবে, যা তার নিজস্ব বন, জলাশয় প্রভৃতি প্রাকৃতিক ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে ধারণ করে নিতে পারবে। তবে উন্নত প্রযুক্তি ও উন্নয়ন কর্মকৌশলের মাধ্যমে শুধু তেল, গ্যাসের ব্যবহার কমিয়ে বা ব্যাপক বনায়ন করে গ্রিনহাউস গ্যাস কমানোর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যাবে না। এটি করতে হলে ব্যাপকভাবে সৌরশক্তির ওপর নির্ভর করতে হবে। পৃথিবীর ভবিষ্যত সংকিত প্রতিটি দেশই নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারের পরিকল্পনা করে সৌরশক্তির উপর সবচেয়ে বেশি জোর দেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। সারা পৃথিবীর নেতৃস্থানীয় বহু ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, উন্নয়ন-সহযোগী ও বেসরকারি সংস্থা সৌরশক্তিসংক্রান্ত প্রকল্পে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়ার নীতি গ্রহণ করেছে। আমাদেরে গণমুখী সরকারও অচিরেই নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার নিশ্চিতে সৌরশক্তি ব্যবহারের অবকাঠামো তৈরিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে দেশের গণমানুষের নিরাপদ ভবিষ্যত নিশ্চিত করবে – এটাই সকলের প্রত্যাশা।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
আব্দুল হক ১৮/০৩/২০১৭ভালো কথা,
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ১৮/০৩/২০১৭আমাদের সৌরশক্তি বাড়াতে হবে।