কুচক্রের পথিকৃত
বীর মুক্তিযোদ্ধা, স্বাধীনতার ঘোষক ইত্যাদি শব্দের মোড়কে প্রচারিত জেনারেল জিয়া ক্ষমতায় এসেই একাত্তরে যারা পাকিস্তান রক্ষার্থে মুক্তিকামী বাঙালীদের নিধনে মেতে উঠেছিল, বাংলার অসংখ্য মা-বোনের ইজ্জত কেড়ে নিয়েছিল, বাংলার মায়েদের গর্ভে পাঞ্জাবী সেনাদের সন্তান জন্মানোর জঘন্য ও বর্বরোচিত আয়োজন করেছিল, সেই কুলাঙ্গারদের এক কলমের খোঁচায় বাঁচিয়ে দিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার মাত্র ৪ মাসের মাথায় দালাল আইনটি বাতিল করে দিলেন। বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে ধর্মান্ধ রাজনীতির পুনঃপ্রতিষ্ঠা করলেন; সূক্ষ্মভাবে ভারতবিদ্বেষ আর পাকিস্তান-প্রীতি তার রাজনীতির মূল চেতনা হয়ে দেখা দিতে থাকল। শাসনযন্ত্রের সঙ্গে তিনি একে একে পাকিস্তানী মনোবৃত্তিসম্পন্ন বড় বড় চাঁইকে জুড়ে দিতে শুরু করলেন। তার বিরুদ্ধে অনেক ক্যু সংঘটিত হলে তিনি নির্বিচারে সামরিক বাহিনীর মধ্যকার মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করা শুরু করলেন। মশিউর রহমান যাদু মিয়া, শাহ আজিজুর রহমান এমনকি গোলাম আযমের অনুসারীর মতো বাংলাদেশবিরোধীদের ক্ষমতার কেন্দ্রে নিয়ে এলেন ও দেশের রাজনীতিতে পুনঃপ্রবেশের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দিলেন। জনগণের চোখে পট্টি বেঁধে তাদের ধোঁকা দেয়ার জন্য গেঞ্জি গায়ে কোদাল হাতে খাল কাটা ‘বিপ্লব’ শুরু করলেন। জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করতে এই লোক দেখানো- ছেলে ভোলানো কর্মকান্ডকে জিয়ার তল্পিবাহকেরা হযরত ওমরের (রা) ‘মহত্ত্ব’ আরোপের চেষ্টা চালাল। তার শাসনামলে তাকে স্বাধীনতার ঘোষক বানানোর চেষ্টা হলে তা ধোপে টিকত না এ কথাটি এই চতুর ব্যক্তিটির অজানা ছিল না। তাই তার আমলে সে চেষ্টা না হলেও তার পত্নী বেগম খালেদা জিয়াকে পরবর্তীকালে রাজনীতির কেন্দ্রে নিয়ে আসার জন্য তার পাকিস্তানী মেন্টররা ঠিকই জিয়াকে ‘স্বাধীনতার ঘোষক’ অভিধায় অভিহিত করল জাতিকে আরেক দফা বিভ্রান্ত করার লক্ষ্যে।মুক্তিযুদ্ধে জেনারেল জিয়ার অবদানের বা কোন বীরোচিত ভূমিকার উল্লেখযোগ্য তথ্যই কিন্তু মেলে না। পাকিস্তানী সোয়াত জাহাজ থেকে (একাত্তরের মার্চে) বাঙালী নিধনের অস্ত্র খালাস করতে যাওয়া মেজর জিয়া ঘটনাচক্রে এবং নিতান্তই ভাগ্যগুণে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর হয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধের ডাক দেবার সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি কেমন উচ্চাভিলাষী ছিলেন তা বোঝা যাবে তার প্রথম ঘোষণায় নিজেকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি দাবির মধ্য দিয়ে। এসব বিষয়ে গভীর দ্বন্দ সৃষ্টি করে জিয়ার অনুসারীরা দেশে কত বিভ্রান্তিই না ছড়িয়েছে! কিন্তু সত্যকে ধামাচাপা দেয়া সম্ভব হয়নি। তাদের এইসব দাবিই আজ বুমেরাং হয়ে বিএনপি নামক দলটিকে ঠুঁটো জগন্নাথে পরিণত করেছে। বিএনপির জন্ম বৃত্তান্ত ও তার চাল-চলন সর্বতোভাবে নীতি-আদর্শহীন আর মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশবিরোধী, বাংলাদেশের কৃষ্টি-সংস্কৃতিবিরোধী এক ধরনের জগাখিচুড়ি বলেই প্রতিভাত হয়। জিয়ার মৃত্যুর পর তদীয় পত্নী আর অতঃপর তাদের গুণধর পুত্র তারেক দলটিকে আরও ছেড়াবেড়া করে ফেলেছেন আইএসআইএর প্রেসক্রিপশন হুবহু ফলো করতে গিয়ে। তাই এককালে দলের বিশাল নেতা বদরুদ্দোজা চৌধুরী গংরা প্রায়শই অভিযোগ করেন যে, জিয়ার আদর্শচ্যুতি তথা তার ১৮ দফা থেকে খালেদা-তারেকের বিচ্যুতিই আজ বিএনপির এই দৈন্যদশার জন্য দায়ী। কথাটির সত্যাসত্য নির্ধারণের দায় বিএনপির নেতাকর্মীদের। তবে দেশবাসী এখন বোঝে যে, জিয়ার গোটা রাজনীতি ও কর্মকান্ডই ছিল পাকিস্তানী প্রতিক্রিয়াশীল ভাবধারাটিকে পুনরায় এই দেশে প্রতিষ্ঠিত করা। তাই ভুয়া গণভোটের মাধ্যমে নিজেকে প্রেসিডেন্ট বানানো, ক্যান্টনমেন্টে বসে মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের রাষ্ট্র-সমাজ-অর্থনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তাদের হয়ে বিএনপি নামক একটি দলের গোড়াপত্তন করা, আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে একটি রাবারস্ট্যাম্প পার্লামেন্ট বানানো, বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ইনডেমনিটির আওতায় আনা ইত্যাদি সকল মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী উদ্যোগ গ্রহণ ও বাঙালী জাতিসত্তার সুষ্ঠু-স্বাভাবিক গতিধারাকে বিপর্যস্ত করে জিয়া বাংলার ইতিহাসে অনন্তকাল খল নায়ক হয়রি থাকবে।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ০৭/০৩/২০১৭
মিথ্যাবাদীরা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।