সাইবার অপরাধ রোধে সচেতন হতে হবে এখনি
প্রযুক্তির উৎকর্ষতার এই যুগে মানুষ বাস্তব জগতের চেয়ে ভার্চুয়াল জগতে বিচরণ করছে অনেক বেশি। এই ভার্চুয়াল জগতের কারণে বদলে যাচ্ছে মানুষের জীবনাচার, চিন্তাজগত ও মনোবৃত্তি। তাতে মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হচ্ছে ভিন্ন প্রকৃতির অপরাধ প্রবৃত্তি। হ্যাকিং, সাইবার বুলিং, ইমেইল স্পাম ও পিশিং, অনলাইন কেলেঙ্কারি ও প্রতারণা, পরিচয় ও তথ্যচুরি, ক্লাউড থেকে তথ্যচুরি, ইকমার্স ও অনলাইন ব্যবসায় প্রতারণা, বিভিন্ন সেক্সুয়াল সাইটে নারী ও শিশুদের অপব্যবহার, বিদ্রূপাত্নক ও অনায্য মন্তব্য ছাড়াও রয়েছে নানাবিধ সাইবার অপরাধ। আরও রয়েছে ইলেক্ট্রনিক মানি লন্ডারিং, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের জন্য পারস্পারিক যোগাযোগ, টেলিযোগাযোগের মাধ্যমে ষড়যন্ত্র, সাইবার সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ইত্যাদি। সাইবার অপরাধ ও সাইবার নিরাপত্তা বর্তমান বিশ্ব সর্বাধিক আলোচিত বিষয়। ‘উইকিলিকস’-এর প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ ও ‘সিআইএ’-এর তথ্য ফাঁসকারী এডওয়ার্ড স্নোডেনের কল্যাণে বিষয়টি এজেন্ডা হিসেবে রাজনৈতিক আলোচনার টেবিলে চলে আসে। তা ছাড়া ‘পানামা পেপার্স’ কেলেঙ্কারি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরি এতে নতুন মাত্রা যোগ করে। বিশ্ব মোড়ল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সদ্য অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজিত প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের ইমেইল ফাঁসের ঘটনায় সাইবার নিরাপত্তা ভোটের রাজনীতিতে নতুন ইস্যু হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বাংলাদেশের মতো তথ্যপ্রযুক্তিতে দ্রুত উন্নয়নশীল দেশের জন্য এটি চরম উদ্বেগের বিষয়। চলতি বছরের শুরুর দিকে সাইবার হ্যাকারেরা বাংলাদেশ ব্যাংকের ৯৫১ মিলিয়িন মার্কিন ডলার চুরি করে। ২০১২ সালে ফেসবুকে গুজব ছড়িয়ে কক্সবাজারে বৌদ্ধ সম্প্রাদায়ের ওপর হামলা করা হয়। এরকম ছোট-বড়, অদৃশ্য, আর অনাকাঙ্ক্ষিত অসংখ্য ঘটনা ঘটছে নিত্য নৈমত্তিকভাবে। বছর কয়েক আগের কথাও যদি বলি আমাদের দেশে এর প্রতিরোধের জন্য প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ছিল না। কিন্তু বর্তমানে সরকারের আন্তরিকতা এবং সময়োপযোগী পদক্ষেপের ফলে এক আমূল পরিবর্তন এসেছে। একটা সময়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে ব্যঙ্গ করা হত। কিন্তু ২০১৬ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ একটি বাস্তবতার নাম। সময়ের এই পরিবর্তনকে সামনে রেখে আমাদের দেশের প্রযুক্তিগত ব্যবহারকে আরও গতিশীল এবং আরও সময়োপযোগী করে তুলতে হবে। অতিসম্প্রতি সরকার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে ‘কাউন্টার টেরোরিজম ও ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট’ গঠন করা হয়েছে, যা সাইবার অপরাধের বিষয়গুলো দেখছে। সাইবার অপরাধ দমনের জন্য সংশোধনমূলক আইন প্রণয়ন করা উচিত। তথ্যপ্রযুক্তি আইনকে আরও যুগোপযোগী করতে হবে। কারণ, আইনের ফাঁকফোকর গলে অনেক অপরাধী পার পেয়ে যাচ্ছে, আবার আইনের অপব্যবহারে অনেক নিরাপরাধী ফেঁসে যাওয়ার মত ঘটনাও ঘটে যা কাম্য নয়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্বকে বদলে দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। আগামী দশ বছরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কল্যাণে বদলে যাবে আমাদের এ পৃথিবী। মানুষ হয়তো চাঁদে বসতি স্থাপন করবে। মঙ্গল গ্রহে মানুষ যাবে। এলিয়ানেরা হয়তো পৃথিবীতে চলে আসবে। সুপার কম্পিউটার ও কোয়ান্টাম কম্পিউটার আসবে। কোয়ান্টাম টেলিকমিউনিকেশন আসছি আসছি করছে। বদলে যাবে আইন-কানুন, জীবানাচার, সাহিত্য-সংস্কৃতি ও মানুষের ইতিহাস। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বদলাতে হবে মানবিক, সামাজিক বিজ্ঞান ও বাণিজ্যের বিষয়সমূহ। কেবল আইন তৈরি করে নয়, আইন প্রয়োগের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষায় পরিবর্তন আনতে হবে। যুগোপযোগী ও যথাযথ আইন প্রণয়ন করে সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক। না হলে বিশ্বের অপরাপর অংশের তুলনায় পিছিয়ে পড়ব আমরা।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
পরশ ১২/০৪/২০১৭এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ
-
পরশ ২৫/০৩/২০১৭সহমত
-
মোঃ আল-আমিন সাব্বির ০৪/০৩/২০১৭এতে আমিও একমত
-
আব্দুল হক ১৯/০২/২০১৭এসব বেশীরভাগই মুক্ত চিন্তার অন্তরায়।
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ১৮/০২/২০১৭আসলেই মানুষকে সচেতন হতে হবে।
-
মোঃ ইমরান হোসেন (ইমু) ১৮/০২/২০১৭একমত..............
তোমার সাথে, বন্ধু!!
::::::::::::::::::::::::