একুশ আমার অহংকার
ফেব্রুয়ারি বাঙ্গালী জাতির কাছে একটি গৌরবোজ্জল মাস। এ মাসেই বাংলার দামাল ছেলেরা তাদের বুকের তাজা রক্ত দিয়ে ছিনিয়ে নিতে চাওয়া মায়ের ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষার মর্যাদার আসনে অধিষ্টিত করেছে। পরবর্তীতে তা আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষার মর্যাদা পেয়েছে। বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়ার প্রশ্নটি উত্থাপিত হয় ১৯৪৭ সালের ভারত বিভাগের আগে থেকেই। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পূর্বেই আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. জিয়াউদ্দিন উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব করেন, তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ পাল্টা বাংলা ভাষার প্রস্তাব দেন। বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক ভাষার প্রথম আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব আসে ‘গণআজাদী লীগের’ পক্ষ থেকে ১৯৪৭ সালের জুলাই মাসে। তারা তাদের দাবির পক্ষে জোর প্রচার চালায়। সে সময়ের সংবাদপত্রগুলো পাকিস্তানে বাংলা ভাষার সম্ভাবনা নিয়ে বুদ্ধিজীবীদের কলাম এবং নিবন্ধ একের পর এক প্রকাশ করে। ১৯৪৭ সালের ২২ জুন দৈনিক ইত্তেহাদে প্রকাশিত আবদুল হকের কলাম ছিল প্রথম। ২৯ জুলাই মুহম্মদ শহীদুল্লাহর নিবন্ধটি ছিল বিরাজমান প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তবে এসব নিবন্ধের অধিকাংশের বিষয়বস্তু ছিল বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক ভাষার মর্যাদা দেয়া প্রসঙ্গে। ১৯৪৭ সালের ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান গণতান্ত্রিক যুব লীগের এক সভায় একই দাবি উত্থাপিত হয়। ভারত বিভাগকালে অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে নিজ হাতে দৈনিক ইত্তেহাদ পত্রিকা প্রকাশ করেন। ১৯৪৬ সালে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত এই পত্রিকা অল্প কয়েকদিনেই মানুষের মন জয় করে। এ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন সাহিত্যিক ও সাংবাদিক আবুল মনসুর আহমদ এবং সোহরাওয়ার্দীর ভাবশিষ্য তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত এ পত্রিকার পরিচালনা বোর্ডের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রবন্ধকার আব্দুল হকের ‘বাংলা বিষয়ক প্রস্তাব’, ‘উর্দু রাষ্ট্রভাষা হলে’, মাহাবুব জামালের ‘রাষ্ট্রভাষা বিষয়ক প্রস্তাব’সহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ এ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এছাড়া পূর্ব বাংলার প্রথম পর্বের ভাষা আন্দোলনের অনেক খবর গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ হতো নিয়মিতভাবে। যে কারণে বিভিন্ন সময়ে দৈনিক ইত্তেহাদ পূর্ব বাংলায় আসতে বাধাগ্রস্ত হয়। ১৯৫০ সালে পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায়। বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার লক্ষ্যে নতুন সংগঠন তমদ্দুন মজলিশ একটি বই প্রকাশ করে যার নাম ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা নাকি উর্দু?’ বইটিতে তিন জনের লেখা ছিল, তারা হলেন অধ্যক্ষ আবুল কাশেম, আবুল মনসুর আহমদ ও কাজী মোতাহার হোসেন। তারা এ বইয়ে বাংলা ও উর্দু উভয়কেই রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়ার সুপারিশ করেন। বাংলা ভাষা আন্দোলন ছিল তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে (বাংলাদেশ) সংঘটিত একটি সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন। মৌলিক অধিকার রক্ষাকল্পে বাংলা ভাষাকে ঘিরে সৃষ্ট এ আন্দোলনের মাধ্যমে তৎকালীন পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গণ দাবির বহির্প্রকাশ ঘটে। এভাবেই বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা করার দাবীতে সোচ্চার হয় বাংলার মানুষ। অবশেষে সংঘাত ও রক্তক্ষয়ী সংগ্রামেই বাংলা ভাষা জয়ী হয়।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
এস এম আলমগীর হোসেন ১৮/০২/২০১৭ভাষা আন্দোলনের তাৎপর্য অনেক এটা থেকেই পরবর্তীতে বাঙলীরা মুক্তিযুদ্ধসহ অন্যন্য সংগ্রাম করতে অনুপ্রেরণা পেয়েছে।
-
ফয়সাল রহমান ১৬/০২/২০১৭সুন্দর
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ১৪/০২/২০১৭বাংলাই আমাদের ভাষা।
-
মোঃ ইমরান হোসেন (ইমু) ১৪/০২/২০১৭২১ আমাদেরও অহংকার!!!